বন্ধুরা, আমাদের চারপাশের বাজারগুলো অনেক রকমের। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন, এমন বাজারও থাকতে পারে যেখানে একমাত্র একজন বিক্রেতা সমস্ত নিয়ন্ত্রণ রাখে? এমন বাজারের গল্প শুনলে হয়তো একটু অবাক হবেন। এই পোস্টে আমরা একচেটিয়া বাজার সম্পর্কে সহজভাবে বুঝব, তার বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা সবকিছু। পোস্টটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে বাজারে শুধু একজন বিক্রেতা থাকলে দাম, যোগান এবং সমাজের উপর তার প্রভাব পড়ে। তাই বন্ধু, সম্পূর্ণ পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন, মজা ও নতুন কিছু শেখার মতো অনেক তথ্য আছে।
একচেটিয়া বাজার কাকে বলে?
একদল সংঘবদ্ধ উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা একটি দ্রব্যের সমুদয় যোগান নিয়ন্ত্রণ করলেও তাকে একচেটিয়া বাজার বলে।
আরো বিস্তারিত বললে, একচেটিয়া বাজারের অর্থ হলো এমন একটি বাজার যেখানে অনেক ক্রেতা থাকলেও শুধুমাত্র একজন বিক্রেতা থাকে। ইংরেজিতে একচেটিয়া বাজারকে Monopoly বলা হয়। "Mono" মানে একমাত্রা এবং "poly" মানে বিক্রেতা। সুতরাং, যখন কোনো দ্রব্য শুধুমাত্র একজন বিক্রেতা দ্বারা বিক্রি হয়, তখন সেই বাজারকে একচেটিয়া বাজার বলা হয়।
অধ্যাপক এ. কুর্টসোয়ানিসের সংজ্ঞা
একচেটিয়া বাজার হলো এমন একটি বাজার কাঠামো যেখানে একক বিক্রেতা থাকে, দ্রব্যের কোনো ঘনিষ্ঠ বিকল্প নেই এবং নতুন কোনো উৎপাদক বাজারে প্রবেশ করতে পারে না।
একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য
১. একজন বিক্রেতা
এ বাজারে কেবল একজন বিক্রেতা থাকে। এজন্য বিক্রেতার হাতে দ্রব্যের যোগানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
২. ক্রেতার সংখ্যা
বাজারে বহু সংখ্যক ক্রেতা থাকে। ক্রেতারা দাম পরিবর্তনে প্রভাব ফেলতে পারে না। বিক্রেতা যেই দাম ঠিক করে, ক্রেতারা সেই দামে ক্রয় করে।
৩. পরিবর্তক দ্রব্য নেই
এ বাজারে কোনো ঘনিষ্ঠ বিকল্প দ্রব্য নেই। ফলে ক্রেতা অন্য কোনো দ্রব্য কিনে তার চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
৪. যোগান নিয়ন্ত্রণ
বিক্রেতা দ্রব্যের উৎপাদন এবং যোগান সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. দাম নিয়ন্ত্রণ
বিক্রেতা উৎপাদনের পরিমাণ অনুযায়ী দাম পরিবর্তন করতে পারে। কম উৎপাদন করলে দাম বেশি হয়, বেশি উৎপাদন করলে দাম কম হয়।
৬. চাহিদা ও দাম নির্ধারণ
বিক্রেতারা চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার ওপর নির্ভর করে পণ্য বা সেবার দাম নির্ধারণ করেন। যেখানে চাহিদা অস্থিতিস্থাপক, সেখানে দাম বেশি রাখা হয়, আর যেখানে চাহিদা স্থিতিস্থাপক, সেখানে দাম কম রাখা হয়।
৭. গড় আয় (AR) ও প্রান্তিক আয় (MR)
বিক্রয় বাড়াতে হলে দাম কমাতে হয়। তাই গড় আয় রেখা নিচের দিকে নেমে যায় এবং প্রান্তিক আয় রেখা গড় আয়ের নিচে থাকে।
৮. শিল্পে প্রবেশ ও প্রস্থান
নতুন উৎপাদক বাজারে প্রবেশ করতে পারে না এবং বিদ্যমান বিক্রেতা বাজার থেকে সহজে বের হতে পারে না।
৯. বিজ্ঞাপন খরচ
প্রতিযোগিতা না থাকায় সাধারণত বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন কম হয়।
১০. মুনাফা
বিক্রেতার লক্ষ্য থাকে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা।
১১. নিয়ন্ত্রণ
একচেটিয়া বাজার সাধারণত সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
একচেটিয়া বাজারের সুবিধা
১. মাত্রাগত সুবিধা
যেসব শিল্পে বেশি মূলধন লাগে, সেখানে এককভাবে ব্যবসা করলে জনগণ উপকৃত হয়। যেমন: মোটরগাড়ি বা রাসায়নিক শিল্প। এতে সাধারণ মানুষ কম দামে পণ্য পেতে পারে।
২. উন্নয়নমূলক সুবিধা
একচেটিয়া ব্যবসায়ী গবেষণা ও উন্নয়নে বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারে। ফলে উৎপাদন খরচ কমে যায় এবং কম দামে বিক্রয় সম্ভব হয়।
৩. ভোগ বৃদ্ধি
দীর্ঘ সময়ে একচেটিয়া ব্যবসায়ী নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমাজের জন্য বেশি দ্রব্য তৈরি করতে পারে।
একচেটিয়া বাজারের অসুবিধা
১. আয় বৈষম্য
একচেটিয়া ব্যবসায়ীর কারণে সমাজের অর্থ তার হাতে বেশি জমা হয়। এতে সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
২. অদক্ষতা
বিক্রেতা উৎপাদনের খরচ তার প্রান্তিক ব্যয়ের চেয়ে বেশি হলে সম্পদের ব্যবহার অদক্ষ হয়। ফলে দ্রব্যের দাম বেশি হয়।
৩. অতিরিক্ত মূল্য আদায়
একচেটিয়া ব্যবসায়ী অনেক সময় অতিরিক্ত মুনাফার জন্য দ্রব্যের মূল্য বেশি রাখে। দরিদ্র মানুষ এতে বঞ্চিত হয়।
৪. গুণগত মান হ্রাস
প্রতিযোগিতা না থাকায় বিক্রেতা পণ্যের মান রক্ষা না করেও বিক্রি করতে পারে। এতে সমাজের মানুষ মানসম্মত দ্রব্য থেকে বঞ্চিত হয়।
বন্ধুরা, একচেটিয়া বাজার আমাদের অর্থনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এর সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে, যা বোঝা খুব জরুরি। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক কিছু শিখেছেন। StudyTika.com-এ আরও অনেক সহজ এবং শিক্ষামূলক পোস্ট পাবেন। তাই বন্ধুরা, আমাদের আরও পোস্ট পড়তে ভুলবেন না।