রেওয়ামিল কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | রেওয়ামিলের উদ্দেশ্য

হিসাব-ব্যবস্থাপনা অনেক সময় জটিল মনে হতে পারে, তাই অনেকেই মনে করে সঠিক হিসাব রাখা কঠিন। কিন্তু কিছু সহজ পদ্ধতি থাকলে আমরা অনেক সহজেই হিসাবের ভুল খুঁজে বের করতে পারি। আজ আমরা এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব যা ব্যবসায়িক লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিটের হিসাব ঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে সাহায্য করে। এটি আপনার হিসাবের কাজকে অনেক সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলবে। চলুন, বিস্তারিতভাবে জানি।

রেওয়ামিল কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

রেওয়ামিল কাকে বলে?

যে বিবরণীতে ব্যবসায়ের সকল হিসাবকে ডেবিট এর গুলো ডেবিট ও ক্রেডিট এর উদ্ধৃত গুলো ক্রেডিট এর কলামে অন্তর্ভুক্ত করে উভয় পাশের টাকা সমান আছে কিনা তা যাচাই করা হয়, তাকেই রেওয়ামিল বলে।

আরো বিস্তারিত বললে, রেওয়ামিল হলো একটি হিসাবের তালিকা, যেখানে ব্যবসায়ের সব খতিয়ানের ডেবিট ও ক্রেডিটের তথ্য আলাদা কলামে লেখা হয়। এরপর উভয় কলামের মোট টাকা মিল আছে কি না তা যাচাই করা হয়। এটি মূলত হিসাবের গণনাগত শুদ্ধতা পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

রেওয়ামিল কাকে বলে ও এর বৈশিষ্ট্য

রেওয়ামিল হিসাব চক্রের কোনো ব্যাধ্যতা মুলক নয়। এটি শুধুমাত্র ডেবিট ও ক্রেডিট পাশের যোগফলের সমতা যাচাই করার মাধ্যম। রেওয়ামিল হিসাব বিজ্ঞানে অন্য কোনো ভুমিকা পালন করে না।

রেওয়ামিলের বৈশিষ্ট্য

  • রেওয়ামিল কোনো হিসাব বা হিসাবের অংশ নয়, এটি শুধুই একটি বিবরণী।
  • হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা হয়।
  • আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতে সহায়তা করে।
  • ডেবিট ও ক্রেডিট দুটি টাকার কলাম থাকে। খতিয়ানের ডেবিট উদ্ধৃত ডেবিট কলামে, ক্রেডিট উদ্ধৃত ক্রেডিট কলামে বসে।
  • এটি আলাদা কাগজে করা হয়, কোনো হিসাবের বই ব্যবহার করা হয় না।
  • সাধারণত হিসাবকালের শেষ তারিখে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের আগে করা হয়।

রেওয়ামিল কিভাবে প্রস্তুত করবেন

প্রথমে ব্যবসায়িক লেনদেনগুলো নথিভুক্ত করা হয় এবং খতিয়ানে স্থানান্তর করা হয়। নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী খতিয়ানের তথ্য নিয়ে আলাদা কাগজে রেওয়ামিল তৈরি করা হয়। 

রেওয়ামিলের ছক সাধারণত ৫টি কলাম নিয়ে গঠিত: ক্রমিক নম্বর, হিসাবের নাম, রেফারেন্স বা সূত্র, ডেবিটের টাকা এবং ক্রেডিটের টাকা।

রেওয়ামিলের ছক উদাহরণ

ক্রমিক নং বিবরণ ডেবিট টাকা ক্রেডিট টাকা
-- -- -- --

রেওয়ামিলের কলামের বিস্তারিত

ক্রমিক নং কলামে খতিয়ানের ক্রমিক সংখ্যা লিখতে হয়। হিসাব শিরোনাম কলামে খতিয়ানের নাম। ডেবিট জের থাকলে ডেবিট কলামে, ক্রেডিট জের থাকলে ক্রেডিট কলামে লেখা হয়।

সব খতিয়ান সঠিকভাবে লেখা হলে ডেবিট ও ক্রেডিট টাকার যোগফল সমান হবে। সম্পত্তি, ব্যয় ও উত্তোলন খতিয়ানের জের সাধারণত ডেবিট হয়। দায়, আয় ও মূলধন খতিয়ানের জের সাধারণত ক্রেডিট হয়।

রেওয়ামিলের উদ্দেশ্য

রেওয়ামিলের মূল উদ্দেশ্য হলো হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা এবং আর্থিক বিবরণীকে সহজতর করা। প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো:

১. গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই

রেওয়ামিল তৈরি করে খতিয়ানভুক্ত হিসাবসমূহের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা হয়।

২. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতিতে সহায়তা

নির্দিষ্ট সময়ে আর্থিক বিবরণী ও উদ্বর্তপত্র তৈরিতে রেওয়ামিল সাহায্য করে।

৩. শ্রম ও সময়ের অপচয় রোধ

সব হিসাবের জের একত্রে উপস্থাপন করা যায়, ফলে অতিরিক্ত শ্রম ও সময় বাঁচে।

৪. উদ্বৃত্ত বা জের সরবরাহ

প্রয়োজনের সময় বিভিন্ন হিসাব খাতের জের সরবরাহ করা যায়।

৫. লেনদেনের যথাযথতা যাচাই

জাবেদা ও খতিয়ানে লেনদেন সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিনা রেওয়ামিল দিয়ে যাচাই করা যায়।

৬. আর্থিক অবস্থার ধারণা

প্রতিষ্ঠানের হিসাব চূড়ান্ত করার আগে আর্থিক অবস্থার ধারণা পাওয়া যায়।

৭. দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির প্রয়োগ

ডেবিট ও ক্রেডিট যথাযথভাবে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিনা যাচাই করা হয়।

৮. ভুলত্রুটি উদ্ঘাটন

হিসাবের ভুলত্রুটি খুঁজে বের করে হিসাবের কাজ সহজতর করা যায়।

উপসংহার

রেওয়ামিলের মাধ্যমে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা সহজে যাচাই করা যায় এবং আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতিতে সহায়ক হয়। এটি লেনদেনের ভুল চিহ্নিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ। আরও অনেক সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ হিসাব বিষয়ক তথ্য জানতে StudyTika.com এ অন্যান্য পোস্টগুলো দেখুন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.