অটিজম কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | অটিজমের কারণ | অটিজমের লক্ষণ | অটিজমে করণীয়

প্রতিটি শিশুই আলাদা এবং বিশেষ, তাই না? কিন্তু কখনও কখনও কিছু শিশুদের আচরণ বা শেখার ধরন অন্যদের থেকে একটু ভিন্ন হয়। কেউ কথা বলতে দেরি করে, কেউ চোখে চোখ রেখে কথা বলে না, আবার কেউ নিজের জগতে ডুবে থাকে। অনেকেই ভাবেন—এটা কি শুধু লজ্জা নাকি অন্য কিছু? আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জানব, যা অনেক বাবা-মা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জানা খুব জরুরি। তাহলে চলুন, ধীরে ধীরে জেনে নেওয়া যাক — আসলে অটিজম কাকে বলে এবং এটি সম্পর্কে সহজভাবে কী জানা দরকার। 🌼

অটিজম কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

অটিজম কাকে বলে?

অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) হলো একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা। এটি এমন একটি অবস্থা যা একজন মানুষের আচরণ, কথা বলা, শেখা এবং অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। সাধারণত এটি শৈশব থেকেই শুরু হয় এবং পুরো জীবন জুড়ে থাকতে পারে।

অটিজমের ধরণ

অটিজমের কিছু প্রধান ধরণ রয়েছে। নিচে সহজভাবে তা ব্যাখ্যা করা হলো:

১. অটিস্টিক ডিজঅর্ডার (ক্লাসিক অটিজম)

এটি অটিজমের সাধারণ ধরন। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কথা বলা, যোগাযোগ করা এবং সামাজিক মেলামেশায় সমস্যা দেখা যায়। এদের আচরণে কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা যায় এবং অনেক সময় তাদের বুদ্ধির বিকাশও ধীরগতির হয়।

২. এসপারজার সিন্ড্রোম

এটি তুলনামূলকভাবে হালকা ধরণের অটিজম। এদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশায় অসুবিধা ও কিছু অস্বাভাবিক আচরণ থাকতে পারে। তবে সাধারণত এদের ভাষা বা বুদ্ধির সমস্যা থাকে না।

৩. পার্ভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (PDD-NOS)

এটিকে “এটিপিকাল অটিজম” বলা হয়। যেসব শিশুর মধ্যে অটিজম বা এসপারজার সিন্ড্রোমের কিছু উপসর্গ থাকে, কিন্তু সব নয় — তাদের সাধারণত PDD-NOS হিসেবে ধরা হয়। এদের উপসর্গ সাধারণত হালকা হয় এবং মূলত সামাজিক বা ভাষা সংক্রান্ত সমস্যায় সীমিত থাকে।

অটিজমের লক্ষণ

অটিজম সাধারণত শিশুর জীবনের প্রথম তিন বছরের মধ্যে দেখা যায়। অনেক সময় জন্মের পর থেকেই এর কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত স্বাভাবিক মনে হলেও পরে তারা কথা বলা বা নতুন দক্ষতা অর্জন বন্ধ করে দেয়।

অটিজম আক্রান্ত শিশুর সাধারণ লক্ষণসমূহ:

  • ১২ মাস বয়সেও নিজের নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া।
  • ১৮ মাস বয়সেও খেলতে না পারা।
  • নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ থাকা।
  • হাত ঝাপটানো, শরীর দোলানো বা ঘোরা ধরনের আচরণ করা।
  • প্রশ্নের অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দেওয়া।
  • ছোট পরিবর্তন সহ্য না করা।
  • কিছু শব্দ, গন্ধ বা চেহারায় অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখানো।
  • অন্যের চোখের দিকে না তাকানো এবং একা থাকতে পছন্দ করা।
  • অন্যের অনুভূতি বোঝা বা নিজের অনুভূতি প্রকাশে অসুবিধা হওয়া।
  • কথা বলতে দেরি হওয়া বা খুব কম শব্দ ব্যবহার করা।
  • একই শব্দ বা বাক্য বারবার বলা (ইকোলালিয়া)।

অটিজমের কারণ

অটিজমের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি জেনেটিক (বংশগত) এবং পরিবেশগত কারণের মিশ্র প্রভাবে হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজম আক্রান্তদের মস্তিষ্কে কিছু নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সেরোটোনিনের মাত্রা অস্বাভাবিক থাকে। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কোনো গোলমাল দেখা দিলে পরবর্তীতে অটিজমের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

অটিজম নির্ণয়

অটিজম শনাক্ত করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা বা ল্যাব টেস্ট নেই। চিকিৎসক শিশুর আচরণ, বিকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করেই এটি নির্ণয় করেন।

প্রয়োজনে শিশুর শ্রবণ পরীক্ষা এবং অটিজমের জন্য বিশেষ চেকলিস্ট বা স্ক্রিনিং টেস্ট করা যেতে পারে।

অটিজমে করণীয়

অটিজমের এখনো কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। তবে যথাযথ যত্ন, শিক্ষা, থেরাপি ও ঔষধের মাধ্যমে শিশুর আচরণ ও শেখার ক্ষমতা অনেকটা উন্নত করা সম্ভব।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুর চিকিৎসা শুরু করলে তার উন্নতি দ্রুত হয়। এতে কথা বলা, হাঁটা, ও অন্যদের সাথে যোগাযোগের ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পায়।

তাই শিশুর মধ্যে অটিজমের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অটিজম কি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব?

দুঃখজনকভাবে অটিজম সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য নয়। তবে সঠিক চিকিৎসা, থেরাপি, কাউন্সেলিং এবং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে শিশুর জীবনের ৯০–৯৫% অংশ স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হতে পারে।

বাংলাদেশে অনেক শিশুই এখন সঠিক থেরাপির মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে। এজন্য নিউরোজেন (Neurogen) প্রতিষ্ঠানটি দেশে বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে সেরা থেরাপিস্ট, জেনেটিক এক্সপার্ট ও কাউন্সিলরদের সহায়তায় শিশুর জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

শেষ কথা

অটিজম কোনো অভিশাপ নয়, এটি একটি বিশেষ অবস্থা। সঠিক যত্ন, ভালোবাসা এবং চিকিৎসা দিলে অটিজম আক্রান্ত শিশুরাও সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে।

এই ধরনের আরও শিক্ষামূলক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে প্রতিদিন ভিজিট করুন StudyTika.com

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.