ইলাহী অবস্থা, জন্মগত স্বভাব ও শয়তানী খাছলাতের মধ্যকার পার্থক্য: হ্যালো বন্ধুরা আজকে আমরা এই সুন্দরতম বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো, যা আপনাদের সবার জানা দরকার। আপনি যদি এই বিষয়টি না জানেন তাহলে আপনার জীবন স্বার্থক হবে না। এই জন্য এই পোস্টটি সম্পর্ণ পড়ুন।
ইলাহী অবস্থা, জন্মগত স্বভাব ও শয়তানী খাছলাতের মধ্যকার পার্থক্য
রব্বানী অবস্থা, স্বভাবগত অবস্থা এবং শয়তানী প্রকৃতির মধ্যে পার্থক্য জ্ঞান লাভ করা অত্যাবশ্যক যাতে বস্তুর ক্ষেত্রে উহাদের মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব হয়।
হাজারাতে সূফীয়ায়ে কেরাম বলেছেন, ধর্ম সংগীতের দাবীদারের তিনটি অবস্থা আছে।
(১) প্রথম অবস্থা যা সংগীতের সামান্য কিছুর উপর সীমাবদ্ধ। উহা এই যে, মানুষের মধ্যে যখন সত্যের ধারণা সৃষ্টি হয় তখন তার রূহ (আত্মা) উহার সাথে লিপ্ত হয়ে যায় এবং অংগ প্রত্যংগও উহার অনুগত হয়ে যায়, কিন্তু স্বভাব ও মেজায উহা থেকে বিচ্ছিন্ন ও বিকৃত হয়ে যায়। কেননা, শরীরের রক্ষক রূহ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইলহামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হয়ে যায়।
যখন উহা থেকে মালাকী নূর হটে যায় তখন এমন অবস্থার অধিকারী হয় যেন তাকে রশি দিয়ে আটকান হয়েছে। সালেকের এ অবস্থাকে হালাতে মুহাদাসা বলে । আল্লাহ পাকের অলীদের জন্য এ অবস্থার মধ্যে বিভিন্ন চাহিদা ও রুচি নিহিত আছে।
(২) দ্বিতীয় অবস্থা হলাে, মানুষের অবস্থা যখন কঠিন হয়ে যায় এবং পঞ্চইন্দ্রিয়ের অনুভূতি থেকে গায়ব (অদৃশ্য) হয়ে যায় এমতাবস্থায় তার মধ্যে এমন জ্ঞান উদ্রেক হয় যা সে ঐ সময় হৃদয়ঙ্গম করতে পারে অথবা ইন্দ্রিয় অনুভূতির দিকে ফিরে আসার পর বুঝতে পারে এবং উহাকে আল্লাহ পাকের দানকৃত ইবাদত হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারে তাহলে এ অবস্থাকে ইলাহী অবস্থা হিসেবে গণ্য করা যাবে ।
হুশ আসার পর উহা তার অন্তরকে ভরে দিবে। আর যদি সে অচেতন হয় অতঃপর চেতনার দিকে ফিরে আসে এবং কোন কিছু না পায়, তবে সে কিছুটা ঐশী কল্যাণ প্রাপ্ত হয় কিন্তু উহাতে পূর্ণ ফায়দা না হয় এবং উহা তা থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় তাহলে এ অবস্থা তার মেজায় থেকে সঞ্চারিত।
যেহেতু কলবকে জিকরের দ্বারা যিন্দা করা হয়েছে অথবা কলব জিকরের ধ্যানে নিবদ্ধ যদ্বরুন তার আকল। বঞ্চিত এবং রূহে হায়ওয়ানী চলমান অবস্থা থেকে বাধাপ্রাপ্ত এবং ঐ ব্যক্তি মল্লযুদ্ধে পরাজিত ব্যক্তির ন্যায় নিক্ষিপ্ত।
এ অবস্থা সাধারণ। তবে স্বভাবগত মেজায থেকে উদগত বিধায় উহাতে কোন ফায়দা নেই। এ অবস্থায় ব্যক্তি প্রায় সময় খােলা আকাশ বা মেঘ বা বাগান বা স্থলভাগ বা সমুদ্র ইত্যাদি দেখতে পায়। আর এটাই হলাে শরীরের তাপ।
(৩) তৃতীয় অবস্থাঃ উহা হলাে বড় মিথ্যাবাদীর জন্য। সে অবশ্যই তার জলসায় উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে সংগীতের সময় চিনতে পারে অথবা একাকী অবস্থায় ও চিনতে পারে। এহেন ব্যক্তি শয়তানী ওয়াছওয়াছার অধিকারী এবং স্বীয় নফসের সাথে আলাপকারী ।
এ ব্যক্তির সাথে শয়তান ঠাট্টা মশকারী করে থাকে এহেন ব্যক্তির অন্তরে যা কিছু নিক্ষেপ করা হয় উহাকে সে ইলম হিসেবে খেয়াল করে অথচ উহা বিষ মাখানাে। এমতাবস্থায়। যা কিছুই বলে মানুষকে সম্বােধন করুক না কেন সে দিকে কোন গুরুত্ব দেয়া যাবে না যদিও সত্যের সাথে উহার সংমিশ্রণ ঘটে যায়।
যেমন- শরীয়তের ফকীহগণ বলেছেন, যে ব্যক্তি অজু, নামায ও কেবলার জরুরী মাছয়ালা-মাছায়েল সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে নামাজ পড়বে তার নামায দুরস্ত হবেনা যদি ও উহা বিশুদ্ধ হওয়ার সাথে মিলে যায়। এ মাছয়ালাটি যেমন ফকীহগণের নিকট দীনের একটি মৌলিক বিষয় তদ্রুপ উহা সূফীগণের নিকট ও সঠিক ও গ্রহণযােগ্য।
সুতরাং মূর্খ ব্যক্তি যে কোন প্রকারে যাই কিছু বলুক কেন উহার মূল্যায়ন করা যাবেনা।
কেননা, সে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যই করতে জানেনা । এমতাবস্থায় কি করে তার কথার উপর আস্থা রাখা যায়? কেননা, তার এ অবস্থা শয়তানী অবস্থা ছাড়া আর কিছু নয়।
আর সে শয়তানী প্রভাবের মধ্যে থেকে কখনাে তােমাকে অনুভূতি থেকে অদৃশ্যে নিতে পারবেনা যে, ঐ অবস্থায় তােমার প্রতি কিছু ঢেলে দিবে এবং তুমি উহা বুঝে নিবে।
হ্যা শয়তানী অবস্থার দু’টি দিক আছে
(১) সে তােমাকে মল্লযুদ্ধে পরাজিত ব্যক্তির ন্যায় তােমাকে তােমার অনুভূতি শক্তি থেকে অদৃশ্য করে দিতে পারে, কিন্তু সে তােমার প্রতি কিছু ঢালতে পারবে না। কেননা সে এমন কাওকে পাবেনা যে তার থেকে তার কথা গ্রহণ করবে। কেননা তােমার তাে কোন জ্ঞানই নেই।
(২) অথবা সে তােমাকে তােমার অনুভূতি শক্তি থেকে অদৃশ্য করতে পারবেনা যেহেতু তােমার মধ্যে কিছু ঢালতেও পারবেনা এবং তুমি অনুভূতি সম্পন্ন আছে। তবে তােমার অন্তরে রয়েছে তাপ, কল্পনা কোন কিছুর প্রতি কর্ণপাত অথবা কোন প্রকার সম্বােধনের যােগ্যতা।এতে করে সে প্রাপ্ত বিষয়গুলাে অনুযায়ী সঠিক হতে পারে এবং প্রাপ্ত বিষয়গুলাে সম্পর্কে অবহিত করতে পারে। আর তার অন্তরে প্রাপ্ত বিষয় সম্পর্কে সংবাদ প্রদান সঠিক হতে পারে।
অনেক সময় সে সম্বােধন স্থলে বলতে পারে
عبدى أنا ربك لا تنظر ا ابي فان نظرت الى ربك أشرك فانا الناظ
والمنظور وانا المساجد والمسجود وانا الذاكر والمذكور.
এধরণের আরাে অনেক কথা এবং ইবলিছ তার সম্পর্কে এ জন্ আনন্দিত ও আশ্বস্ত হয় যে, সে বিশ্বাস করে লয় যে, এ কথাগুলাে আল্লাহ। পাকের পক্ষ থেকে ফলাও করা হয়েছে।
এভাবে শয়তান তার উপর প্রভুত্ব কায়েম করে। তখন জীবনভর সে শয়তানের আশ্রয়ে চলে যায়। যদি এ মূখ জানত যে, আল্লাহ পাকের সম্বােধন বান্দার অনুভূতিকে দূরীভূত করেনা এবং এটা ধ্যান, কল্পনা ও বান্দার যােগ্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বা কোন আক্ষেপ বা অন্তরের চিন্তা ভাবনার সাথেও জড়িত নয় অথবা অনুভূতি বা কথার সাথে সম্পর্কিত নয় তাহলে সে তার মূর্খতা থেকে ফিরে আসত ।
আর তুমি যদি জানতে যে, এটা তােমার নফসের মূখর্তা ও শয়তানী ধােকার কারণে হচ্ছে তাহলে তুমি অবশ্যই তাওবা করতে এবং তােমার মুর্শিদের নিকট বিষয়টা পেশ করতে যিনি সত্য সম্পর্কে তােমাকে অবহিত করার ক্ষমতা রাখেন।
যদি ঐ অবস্থায় শয়তান তােমাকে কোন প্রকারের ইবাদত করতে বা কোন কিছু থেকে নিষেধ করে তাহলে উহা শয়তানী ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু মনে করবেনা।
অতএব, হে সালেক! তুমি বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ কর। বেশী বেশী আয়াতুল কুরসী পাঠ কর, সূরা ফালাক ও সূরা নাছ, সূরা ফাতেহা ও তাছমিয়া এবং ইস্তেগফার পাঠ কর।
লােভ-লালসা ও দুনিয়ার মােহ পরিত্যাগ কর। বস্তুতঃ এ আটটি আমল শয়তানের বিরুদ্ধে তােমার অস্ত্র । আর যদি তােমার নফস তােমাকে আদেশ না করে বরং তােমাকে এমন সংবাদ দেয়। যে, তােমার দ্বারা কোন আলৌকিক কিছু ঘটে গেছে তাহলে এটাও শয়তানের ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত কর ।
অথবা অন্য কিছু হিসেবে ধরে নেও। মােট কথা, কলবে কোন কিছু রেখাপাত করলে উহা গ্রহণযােগ্য হবে না একমাত্র পূর্ণ ফানা হওয়া ব্যতীত। কেননা, মুশাহাদার ভেদ হতভম্ব হওয়ার মধ্যে নিহিত, কাশফের ভেদ ইলমের মধ্যে নিহিত,
বাকার ভেদ আদবের মধ্যে সীমিত, ফানার মর্যাদা তৌহীদের মধ্যে বিদ্যমান, কাজের ভেদ দারিদ্রের মধ্যে নিহিত, ফকরের ভেদ ছুওয়ালের মধ্যে কেন্দ্রিভূত এবং যারেফতের ভেদ বিনয় ও অপরাগতার মধ্যে সীমিত, ভেদ সমূহ অসংখ্য । অতএব, এ সম্পর্কে সাবধান হও।
ধন্যবাদ
আশা করি আপনাদের এই “ইলাহী অবস্থা, জন্মগত স্বভাব ও শয়তানী খাছলাতের মধ্যকার পার্থক্য” বিষয়টি বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি। যদি কোনো বিষয় না বোঝেন তাহলে আমাদের ফেসবুক পেইজ এ নক দিতে পারেন।