দোয়ার শর্তাবলি ও আদাব সমূহ

দোয়ার শর্তাবলি ও আদাব সমূহ: হ্যালো বন্ধুরা আজকে আমরা এই সুন্দরতম বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো, যা আপনাদের সবার জানা দরকার। আপনি যদি এই বিষয়টি না জানেন তাহলে আপনার জীবন স্বার্থক হবে না। এই জন্য এই পোস্টটি সম্পর্ণ পড়ুন।

দোয়ার শর্তাবলি ও আদাব সমূহ

দোয়ার শর্তাবলি ও আদাব সমূহ

بیان شروط الدعاء وادابه) ويقبضون ایدیهم অর্থাৎ তারা হাজারাতে উলামায়ে হক মতভেদ করেছেন, মহান আল্লাহর নিকট বান্দার দোয়া করা (মৌখিক আবেদন নিবেদন ও প্রার্থনা করা) উত্তম, না সর্বাবস্থায় যৌনতা অবলম্বন করে তার প্রতি সন্তুষ্ট ও খুশী থাকা উত্তম?

দোয়া করাই উত্তম

এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের একদলের মত হলাে, দোয়া করাই উত্তম । যেহেতু এর সমর্থনে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বহু দলীল বিদ্যমান আছে। আরাে যুক্তি হলাে এই যে, আল্লাহ পাকের সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে বান্দা দোয়া করারই হকদার। কেননা, এতে স্বীয় দাসত্বের ক্রটি ও হীনতা প্রকাশ করা হয়। আর এ জন্যই আল্লাহ পাক ঐ সব লােকের সমালােচনা করেছেন যারা তাঁর নিকট কিছু চায়না।

এরশাদ হয়েছে-তাদের হাতকে গুটিয়ে নেয় অর্থাৎ আল্লাহ পাকের নিকট কিছু পাওয়ার জন্য
হাত উত্তোলন করেনা। (দোয়া করেনা)। কারাে কারাে মতে এ কথার অর্থ হলাে তারা আল্লাহ পাকের নিকট কিছু প্রার্থনা করতে গিয়ে তাদের হাতকে  সম্প্রসারণ করেনা।

উলামায়ে কেরামের আরেক দলের মতে, মহান আল্লাহর ফায়সালার অধীনে চুপ থাকা, মৌনতা অবলম্বন করাই বান্দাহর চরম সন্তুষ্টির পরিচায়ক ঐ অবস্থার প্রতি, যার সম্পর্কে মহান আল্লাহর ইচ্ছা ইতিপূর্বে (তকদীরে) স্থিরকৃত হয়ে আছে। এ সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, আমার জিকর যে বান্দাকে আমার নিকট ছওয়াল করা থেকে বিরত রেখেছে অর্থাৎ যে বান্দা আমার নিকট দোয়া করার পরিবর্তে আমার জিকরে মশগুল আমি তাকে দোয়া কারীগণকে যা দান করি তার চাইতে উত্তম বস্তু দান করি ।

অন্য উলামায়ে কেরামের মত

উলামায়ে কেরামের অন্য এক দলের মতে, বান্দার প্রতি অত্যাবশ্যক যে, সে মৌখিক দোয়া করবে এবং আন্তরিকভাবে মহান আল্লার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে তাহলে উভয় মতের মধ্যে সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়ে যায়  আল্লামা কুশাইরী (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে উত্তম কথা হলাে এই যে, সময়ের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। কোন কোন সময়ে দোয়া করাই উত্তম।

এর কোন কোন সময় মৌনতা অবলম্বন করাই উত্তম। এ উভয় আমলের (দেয়া। ও যৌনতার) মধ্যে পার্থক্যকারী হলাে মনের ইংগিত ও আকর্ষণ। যদি বন্দর। অন্তরে দোয়ার প্রতি ইংগিত ও আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তাহলে ঐ সময়টা নােয়ার সময় হিসেবে বিবেচিত। আর দোয়ার প্রতি ইংগিত বা ঝোঁক সৃষ্টি না হলে সেটা দোয়ার সময় নয় বরং যৌনতা অবলম্বনের সময়।

এ ছাড়া অন্তরের বিস্ত র ও সংকীর্ণতার দ্বারা দোয়া করা না করার সময়ের মধ্যে পার্থক্য করা যায় ।
তাই, দোয়া করতে গিয়ে যদি উহা অন্তরের বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণ সৃষ্টি করে তাহলে দোয়া করবে। আর যদি দোয়া করতে গিয়ে উহা অন্তরের সংকীর্ণতা। সৃষ্টি করে তাহলে দোয়া না করে চুপ থাকবে। আর যদি দোয়া করতে গিয়ে।

অন্তরের বিস্তৃতি বা সংকীর্ণতা কোনটিই পাওয়া না যায় তাহলে দোয়া করা করা তার ইচ্ছাধীন ব্যাপার যদি ঐ সময় ইলম ও মারেফতের ১া তার নিকট সমান হয় । কিন্তু ঐ সময় ইলম ও মারেফতের চর্চা যদি তার নিকট
প্রাধান্য লাভ করে তাহলে দোয়া করাকে প্রাধান্য দিবে। আর যদি মারেফাতের চর্চা তার নিকট প্রনিধান যােগ্য হয় তাহলে মৌনতা অবলম্বনকে প্রাধান্য দিবে ।

আল্লামা কুশাইরী (রহঃ) বলেন, উক্ত বিষয়ে একথাও বলা যেতে পারে৷ যে, যে বিষয়ে বান্দাদের স্বার্থ জড়িত অথবা যাতে আল্লাহ পাকের পাওনা বিদ্যমান সেক্ষেত্রে দোয়া করাই উত্তম। আর যে বিষয়ে দোয়াকারীর নিজস্ব
স্বার্থ জুড়িত সে ক্ষেত্রে চুপ থাকাই উত্তম।

হাদীস

হাদীস শরীফে এসেছে, বান্দা আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করতে থাকে এবং আল্লাহ পাক তাকে ভালবাসেনও বটে, তখন আল্লাহ পাক ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ) কে বলেন, হে জিব্রাঈল! আমার বান্দার হাজত ও প্রয়ােজন মিটাতে বিলম্ব কর। কেননা আমি তার দোয়ার আওয়াজ শুনতে ভালবাসি।

পক্ষান্তরে, এমন বান্দাহ আহে যে আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করতে থাকে কিন্তু আল্লাহ পাক তার প্রতি বিরক্ত। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক বলেন, হে জিব্রাঈল! তুমি আমার এ বান্দার হাজত মিটায়ে দাও। কেননা, আমি তার দোয়ার শব্দ শুনতে অপছন্দ করি ।

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত লাইছ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি ভীত উকবা বিন নাফেকে অন্ধ দেখেছি। কিছু দিন পর আমি তাকে দৃষ্টি নক্তি- সম্পন্ন দেখতে পেলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি কণো খুন ফিরে পেলেন? তিনি উত্তরে বল্লেন, আমি একদিন স্বপ্নযােগে জনৈক ব্যক্তিকে
বলতে শুনলাম, ওহে! তুমি বল,
یا قریب یا مجيب يا سميع العاء يا لطيفا بما يشاء على بصری এ দোয়া পাঠ করায় আমি দৃষ্টিশক্তির অধিকারী হয়েছি।

হজরত মুহাম্মদ বিন খুযাইমা থেকে বর্ণিত

হজরত মুহাম্মদ বিন খুযাইমা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যখন হজরত আহমদ বিন হাম্বল ইন্তেকাল করলেন আমি তখন ইসকান্দরিয়ায় ছিলাম । আমি তার ইন্তেকালে শােকাহত হলাম । আমি তাকে স্বপ্নে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মহান আল্লাহ আপনার সাথে কি ব্যবহার করলেন? তিনি উত্তর দিলেন তিনি আমাকে ক্ষমা করেছেন, আমাকে সম্মানী টুপী পরিয়েছেন এবং স্বর্ণের দুটি জুতাে পরিয়েছেন।

আর তিনি বলেছেন, হে আহমদ! তুমি এ নিয়ামতের অধিকারী হয়েছ তােমার ঐ মতের কারণে যে তুমি বলেছ
“কুরআন আমার কালাম য গায়রে মাখলুক- কাদীম তথা অবিনশ্বর। অতঃপর মহান আল্লাহ বলেন, হে আহমদ! তুমি আমার নিকট ঐ দেয়ার মাধ্যমে দোয়া কর যা হজরত সূফীয়ানে ছাওরীর মাধ্যমে তােমার নিকট
পৌছেছে এবং যা দিয়ে তুমি দুনিয়ায় আমার নিকট দোয়া করতে ।

তখন আমি বল্লাম,
ارب لي بقدرك على كل شي اغفرلى گل شی ولاتانی عی হে নিখিল সৃষ্টির প্রতিপালক, আপনার কুদরত নিখিল সৃষ্টির উপর আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। তারপর তিনি বলেন, হে আহমদ! এটা বেহেশত তুমি উহাতে প্রবেশ
কর ।

হারানাে মাল পাওয়া

কথিত আছে যে, হারানাে মাল পাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নের দোয়াটি ফলপ্রসু যা পরীক্ষিত  یاجامع اللا ليؤم ريب فيه اجمع على التي   হজরত খিজির (আঃ) জনৈক ব্যক্তিকে রােগ মুক্তির দোয়া শিক্ষা দিতে
গিয়ে বল্লেন, তুমি তােমার অসুখের স্থানে হাত রেখে বল, وبالحق انزلناه وبالحق نزل ঐ লােক ঐরূপ আমল করে রােগমুক্ত হয়ে যায়।

পরীক্ষিত দোয়া সমূহের মধ্যে নিম্নের দোয়াটি অন্যতম । দোয়া হলাে অপরাধীদের নিরাপত্তা। কথিত আছে, অপরাধীদের ভাষা হলাে তাদের অশ্র। কথিত আছে, দোয়া হলাে- বন্ধুর প্রতি অনুরাগ ও আকর্ষণ ভাব । কথিত আছে, দোয়া বান্দাকে মাওলার দরবারে উপস্থিত করে দেয়।

এবং দান খাইরাত বান্দাকে মর্যাদা ও পুরস্কারের অধিকারী করে । একথা সত্য যে, মাওলার  দরবারে  হাজির হওয়া তাঁর থেকে পুরস্কার নিয়ে ফেরার চাইতে উত্তম ও শ্রেয় । আল্লামা ছালেহ মুররী (রহঃ) বলেন, যে বান্দা সতত মাওলার ধনভাণ্ডারের দরজায় দস্তক দিতে থাকে এক পর্যায়ে তার জন্য দরজা
খুলে দেয়া হয়।

অর্থাৎ লাগাতার দোয়া ও ছুওয়াল করতে থাকলে তার হাজত শেষ পর্যন্ত মিটিয়ে দেয়া হয়। একথা শুনে রাবেয়া বসরী (রহঃ) বললেন, ধনভাণ্ডারের দরজা কবে বন্ধ করা হয়েছে যে উহা খুলতে হবে? সুবহানাল্লাহ
রাবেয়া বসরী (রহঃ) এর এ আধ্যাত্মিক বাণী শুনে ছালেহ মুররী বললেন,

দোয়া আহবান

শায়খ (মুররী) একজন নাদান। জনৈক ব্যক্তি এক বুজুর্গের নিকট আরজ  করল, আমার জন্য দোয়া করুন। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক ও তােমার মধ্যে সম্পর্ক থাকলে তুমিত তাঁর অচেনা থেকে মুক্ত ।

আদাবে দোয়াঃ প্রার্থিত উদ্দেশ্য লাভের ক্ষেত্রে সবিশেষ গুরুত্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা, অনুনয় বিনয় করা, সুখ সমৃদ্ধি ও অভাব-অনটন উভয় অবস্থায় দোয়া
করার প্রতি লক্ষ্য রাখা, দোয়ার সময় দৃঢ় আশা রাখা, কমপক্ষে তিনবার প্রার্থিত বিষয় উল্লেখ করা, দোয়ায়ে মাসুরার উপর ক্ষান্ত হওয়া, দরুদ শরীফের মাধ্যমে দোয়া খতম করা,

যথাসম্ভব পবিত্রাবস্থায় দোয়া করা, কেবলামুখী হওয়া, হাত কাব পর্যন্ত উত্তোলন করা, আস্তে আস্তে দোয়া করা,
দোয়া শেষে মুখমণ্ডল মাছেহ করা, দোয়া কবুল হয়েছে বুঝতে পারলে মহান আল্লাহর প্রশংসা করা, দোয়ার প্রথমে হামদ এবং শেষে দরুদ শরীফ পাঠ করা ইত্যাদি আদাব সমূহের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত ।

উল্লেখ্য যে, দোয়া মুনাজাতের আরকান, সময়-কাল, সময়-অবস্থা, কবুলিতের আলামত, কার দোয়া কবুল হয় এবং দোয়ার প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট সমূহ সম্পর্কে আমাদের রচিত “নাতায়েজুল ইখলাছ” নামক কিতাবে বিস্তারিত বিররণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।


আশা করি আপনাদের এই “দোয়ার শর্তাবলি ও আদাব সমূহ” বিষয়টি বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি। যদি কোনো বিষয় না বোঝেন তাহলে আমাদের ফেসবুক পেইজ এ নক দিতে পারেন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.