মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে: মৌলিক সংখ্যা, একটি গাণিতিক ধারণা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজ আমরা আলোচনা করবো মৌলিক সংখ্যার সংজ্ঞা, তার প্রকারভেদ এবং মৌলিক সংখ্যা চিহ্নিত করার পদ্ধতি সম্পর্কে। আপনি জানবেন কীভাবে মৌলিক সংখ্যা একমাত্র ১ এবং নিজ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হয় এবং এর অসীম বৈচিত্র্য সম্পর্কে। এই পোস্টটি পড়ার পর আশা করছি আপনি মৌলিক সংখ্যার গভীরতা উপলব্ধি করবেন এবং গাণিতিক বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী হবেন।
মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে
যে সংখ্যাকে শুধু এক (১) ও সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না, তাকে মৌলিক সংখ্যা বলা হয়।
মৌলিক সংখ্যা হল সেই সংখ্যা, যাকে ১ এবং ঐ সংখ্যা ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ থাকে। অন্যভাবে বললে, যে সংখ্যা নিজে ও ১ ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য নয়, তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। অর্থাৎ, মৌলিক সংখ্যা হল ১ এর থেকে বড় যে সংখ্যার গুণনীয়ক বা উৎপাদক কেবল ১ এবং ঐ সংখ্যা নিজে।
উদাহরণ
যেমন, সংখ্যা ৩ কে ৩=১*৩ আকারে প্রকাশ করা যায়। এখানে ৩ এর গুণক কেবল ১ ও ৩। তাই ৩ একটি মৌলিক সংখ্যা।
অনুরূপভাবে মৌলিক সংখ্যা হল: ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩…
মৌলিক সংখ্যার আরো কিছু উদাহরণ
গুণনীয়ক | ফল |
---|---|
৭*১ | ৭ |
১*১৯ | ১৯ |
১*২ | ২ |
১১*১ | ১১ |
১*৩ | ৩ |
১৩*১ | ১৩ |
৩*১ | ৩ |
১৭*১ | ১৭ |
১৯*১ | ১৯ |
১*২৯ | ২৯ |
১*১১ | ১১ |
১*৫ | ৫ |
৩*২ | ৬ |
মৌলিক সংখ্যার প্রকারভেদ
প্রধান (Prime number): যে মৌলিক সংখ্যাকে ২ আকারে ভাগ করা যায় না, সেগুলোকে প্রধান মৌলিক সংখ্যা বলে।
সম্পর্কিত (Twin prime number): যদি দুটি মৌলিক সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য ২ হয়, সেসব সংখ্যাকে সম্পর্কিত মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমন: (৩, ৫), (৫, ৭), (১১, ১৩)…
ফার্মেটের (Fermat prime number): যে মৌলিক সংখ্যাগুলোকে ২^(২^n)+১ আকারে প্রকাশ করা যায়, সেগুলো ফার্মেটের মৌলিক সংখ্যা।
প্রিমোরিয়াল (Primorial prime number): যে মৌলিক সংখ্যাগুলোকে p#+১ বা p#-১ আকারে প্রকাশ করা যায়, সেগুলো প্রিমোরিয়াল মৌলিক সংখ্যা।
সোফি জর্জম্যান (Sophie Germain prime number): যে মৌলিক সংখ্যাগুলোকে ২p+১ আকারে প্রকাশ করা যায়, সেগুলো সোফি জর্জম্যান মৌলিক সংখ্যা।
সম্ভাব্য (Probable prime number): যে মৌলিক সংখ্যাগুলোকে মৌলিক সংখ্যা হিসেবে ধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে, সেসব সংখ্যাকে সম্ভাব্য মৌলিক সংখ্যা বলে।
ইতিহাসিক (Historic prime number): গণিতের ইতিহাসে যে মৌলিক সংখ্যাগুলো উল্লেখযোগ্য, সেগুলো ইতিহাসিক মৌলিক সংখ্যা। যেমন: ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩…
মৌলিক সংখ্যা কি কি বৈশিষ্ট্য আছে
- মৌলিক সংখ্যা ১ এর থেকে বড় হতে হবে।
- এক এর চেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যাকে এক বাদে সকল মৌলিক সংখ্যার গুণফল হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
- মৌলিক সংখ্যা গুলোকে আয়তকারে সাজানো যায় না।
- ১ এর চেয়ে বড় যে সংখ্যা মৌলিক নাও হতে পারে।
মৌলিক সংখ্যা বের করার পদ্ধতি
মৌলিক সংখ্যা বের করার নিয়ম খুবই সহজ। যদি সংখ্যা মৌলিক কিনা জানতে হয়, তাহলে ওই সংখ্যাকে বিভিন্ন সংখ্যা দ্বারা ভাগ করতে হবে।
যদি ভাগ করার পর ভাগশেষ থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সংখ্যা মৌলিক। কিন্তু যদি ভাগশেষ না থাকে, তাহলে সংখ্যা মৌলিক নয়, এটি যৌগিক সংখ্যা।
যদি ৩১ সংখ্যাটি মৌলিক কিনা পরীক্ষা করতে চান, তবে ৩১ এর কাছাকাছি বর্গমূল পূর্ণ সংখ্যা বের করুন। ৩১ এর জন্য বর্গমূল ৫, কারণ ৫ এর বর্গ ২৫, যা ৩১ থেকে ছোট। এখন ৫ এর নিচে মৌলিক সংখ্যা ২ এবং ৩। ২ এবং ৩ উভয়ই ৩১ কে ভাগ করে না, তাই ৩১ মৌলিক সংখ্যা।
অন্যদিকে, ৩২ সংখ্যাটি মৌলিক নয়। ৩২ এর কাছাকাছি বর্গমূল ৫ এবং মৌলিক সংখ্যা ২ এবং ৩। ২ দিয়ে ৩২ কে ভাগ করা যায়, তাই ৩২ মৌলিক নয়।
মৌলিক সংখ্যা
মৌলিক সংখ্যা মোট কতটি বলা সম্ভব নয়, কারণ মৌলিক সংখ্যা অসীম। সবচেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যা হল ২।
মৌলিক সংখ্যা আমাদের গাণিতিক জ্ঞানের ভিত্তি গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন গণনা ও সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। এই পোস্টে মৌলিক সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যা আপনার গাণিতিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। আরও শিক্ষণীয় এবং আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু পেতে আমাদের ওয়েবসাইট studytika.com-এ আরও পোস্ট পড়তে ভুলবেন না। আপনার জ্ঞান বিস্তারের এই যাত্রায় আমাদের সঙ্গ দিন!