পদার্থ কাকে বলে: পদার্থ কী? আমাদের চারপাশে দেখা যাওয়া প্রতিটি জিনিস—যেমন চেয়ারের কাঠ, টেবিলের ধাতু, পানি বা বাতাস—সবই পদার্থ। পদার্থ হল সেই সব উপাদান যা ভর ও আয়তন রাখে এবং যা স্থান দখল করে। আসুন, পদার্থের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্যগুলি জানি এবং বুঝি, পদার্থ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থ কাকে বলে?
যার ভর এবং আয়তন আছে এবং যা জায়গা দখল করে তাকে পদার্থ বলে। যেমন: বাতাস, পানি, তেল,চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি। পদার্থের ওজন এবং আয়তন আছে। এটি বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং নতুন পদার্থ তৈরি করে।
বৈশিষ্ট্য সমূহ
বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসারে পদার্থের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
- পদার্থের আকার আছে।
- পদার্থের ভর আছে।
- এটি জায়গা দখল করে।
- তাপ দিলে প্রসারিত হয়।
- এটি প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এবং কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়।
- এটি ক্ষুদ্র কণা, এটম দ্বারা গঠিত।
- বল প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে।
- রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নতুন পদার্থ তৈরি করে।
পদার্থ কী
আমাদের চারপাশে যেসব জিনিস দেখা যায় (যেমন চেয়ার, টেবিল, মাটি, পানি, বাতাস, লোহা ইত্যাদি) – এগুলো সবই পদার্থ। পৃথিবীতে কোনো বস্তু পদার্থ ছাড়া থাকতে পারে না।
পদার্থের প্রকারভেদ
পদার্থ সাধারণত গঠন ও অবস্থার ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। গঠন ও অবস্থার ভিত্তিতে পদার্থের প্রকারভেদ জানতে হবে।
পদার্থের অবস্থা
পদার্থ সাধারণত তিন অবস্থায় থাকতে পারে:
- কঠিন পদার্থ
- তরল পদার্থ
- গ্যাসীয় পদার্থ
কঠিন পদার্থ
যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও দৃঢ়তা আছে তাকে কঠিন পদার্থ বলা হয়। এর অনুসমূহ খুব কাছাকাছি থাকে। যেমন: ইট, বালু, পাথর ইত্যাদি।
কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে।
- এর ভর বা ওজন আছে।
- বল প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে।
- তাপ দিলে তরল পদার্থের রূপ নেয়।
- আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বেশি।
তরল পদার্থ
যে পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু আকার নেই, তাকে তরল পদার্থ বলা হয়। এটি যে পাত্রে রাখা হয়, তার আকার ধারণ করে। যেমন: পানি, তেল ইত্যাদি।
অথবা: যেসব পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন ও ওজন আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই, তাদের তরল পদার্থ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, পানি, দুধ এবং তেল।
তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- তরল পদার্থের আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই।
- এর ভর বা ওজন আছে।
- তাপ দিলে গ্যাসে রূপ নেয়।
- যে পাত্রে রাখা হয়, তার আকার ধারণ করে।
- আন্তঃআণবিক আকর্ষণ কঠিনের চেয়ে কম।
গ্যাসীয় পদার্থ
যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই, তাকে গ্যাসীয় পদার্থ বলা হয়। এর অনুসমূহ খুব দূরত্বে থাকে। যেমন: নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ইত্যাদি।
গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- গ্যাসের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই।
- এটির ওজন আছে।
- অনুসমূহের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ খুবই কম।
- একে ঠান্ডা করলে তরল পদার্থে পরিণত করা যায়।
পদার্থের গঠন
গঠনের উপর ভিত্তি করে পদার্থকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
- মৌলিক পদার্থ
- যৌগিক পদার্থ
মৌলিক পদার্থ কাকে বলে
যে সকল পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে ওই পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক পদার্থ বলা হয়। যেমন: হাইড্রোজেন (H₂) পরমাণুকে ভাঙলে শুধু হাইড্রোজেন পরমাণু পাওয়া যায়। সুতরাং হাইড্রোজেন (H) একটি মৌলিক পদার্থ।
মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- মৌলিক পদার্থ সাধারণত ধাতু, অধাতু, উপধাতু এবং নিষ্ক্রিয় মৌল হতে পারে।
- মৌলিক পদার্থকে কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় পাওয়া যায়।
- মৌলিক পদার্থের নির্দিষ্ট ভর রয়েছে এবং এগুলোকে সাজানো যায়।
- ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক পদার্থ যুক্ত করে যৌগিক পদার্থ তৈরি করা যায়।
যৌগিক পদার্থ কাকে বলে
যে সকল পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে বিভিন্ন মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, তাদের যৌগিক পদার্থ বলা হয়। যেমন: পানি (H₂O) এর একটি অণুকে ভাঙলে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, পানি একটি যৌগিক পদার্থ।
যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- অনেক যৌগের পদার্থের আকার ও আয়তন থাকে না।
- দুটি বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থ সৃষ্টি হয়।
- যৌগিক পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে।
- যৌগিক পদার্থকে ভাঙলে ভিন্ন মৌল পাওয়া যায়।