লেবু আমাদের সবার পরিচিত একটি ফল। সাধারণত অন্যান্য খাবারের সঙ্গে লেবুর ব্যবহার দেখা যায়, বিশেষ করে ভাতের সঙ্গে। লেবুর শরবত কিংবা লেবু চা-ও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশ জনপ্রিয়।
তবে লেবু খাওয়ার আরও অনেক দারুণ উপকারিতা আছে যা আমরা হয়তো জানি না। এই ছোট্ট ফলটি আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। তাহলে, চলুন এক নজরে দেখে নিই লেবু খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা!
লেবু খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন
লেবু আমাদের সবচেয়ে পরিচিত ফলগুলোর মধ্যে একটি। যদিও এটি বেশি খাওয়া হয় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে। বিশেষ করে বাঙালির ভাতের থালায় এক টুকরো লেবু থাকা চাই-ই চাই। আবার লেবুর শরবত, লেবু চা-ও বেশ জনপ্রিয়। লেবু তো খান, কিন্তু এর উপকারিতা জানেন কি?
ভিটামিন সি-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস হলো এই লেবু। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। চলুন জেনে নেওয়া যাক লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে।
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
লেবুতে একগুচ্ছ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আমাদের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী রাখার জন্য বেশ কার্যকরী। এটি বিরক্তিকর সর্দি এবং ফ্লু প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। তাই তো এ ধরনের সমস্যায় সব সময় লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
২. হজমে সাহায্য করে
দ্রবণীয় ফাইবার দিয়ে পরিপূর্ণ লেবু আমাদের অন্ত্রের জন্য বেশ সহায়ক। এটি অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হজমের উন্নতি করতে সহায়তা করে। যে কারণে লেবু খেলে হজমশক্তি ভালো হয়। এতে মুক্তি পাওয়া যায় হজমের অনেক সমস্যা থেকে।
৩. ওজন কমায়
লেবুর পানিতে মধু দিয়ে চুমুক দিচ্ছেন? দেখা যাচ্ছে, এটি কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়। বরং লেবুতে থাকা ফাইবার আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করতে সহায়তা করে। যার ফলে বার বার নাস্তা করার সম্ভাবনা কমে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৪. পানি ধারণ কমায়
লেবু প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক। এর মানে এটি আপনার শরীরকে অতিরিক্ত পানি থেকে মুক্তি দিতে এবং পিএইচ মাত্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরে ফোলার সমস্যা কমে যায়। তাই এ ধরনের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে নিয়মিত লেবু খেতে হবে।
৫. ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
লেবুর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য আপনার ত্বককে অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা দিতে পারে। এটি শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল কমাতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ মোকাবিলা করে। এর ফলে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া সম্ভব হয়।
বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা
দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়:
অতিরিক্ত লেবু খেলে এর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড থেকে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। দাঁতের ওপর সাদা স্তর পড়ে যায়। সম্প্রতি ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেন্টাল অ্যান্ড ক্র্যানিওফেসিয়াল রিসার্চের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে সফট ড্রিংক খেলে দাঁতের যে সমস্যা হয়, লেবু থেকেও ঠিক একই সমস্যা হয়। এ ছাড়াও যারা প্রতিদিন সকালে উঠে লেবু পানি খান, তারা যদি দিনে অন্তত দুবার ব্রাশ করেন তাহলে দাঁতের সমস্যা অনেক কম হয়।
মুখমণ্ডলের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়:
দীর্ঘদিন ধরে লেবু খেলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে মুখের মধ্যে ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ যে কোনও ফল খেলেই এই সমস্যা হতে পারে।
অ্যাসিড এবং বমির আশঙ্কা থাকে:
ভিটামিন সি শরীরের জন্য প্রয়োজন, কিন্তু অতিরিক্তও ভালো নয়। অতিরিক্ত লেবু বা লেবুর রস খেলে সেখান থেকে অ্যাসিড তো হবেই, সেই সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। শুধুমাত্র লেবু পানি নয়, যে কোনও ডিটক্স ডায়েট ড্রিংক থেকেই এ সমস্যা হতে পারে। অ্যাসিডিটির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
পেট খারাপ:
খাবার হজম করতে অনেকেই লেবুর রস পান করে থাকেন। কারণ, লেবুতে থাকা অ্যাসিড হজমে সহায়তা করে। কিন্তু জানেন কি, অতিরিক্ত অ্যাসিডের কারণেও পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সব সময় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে লেবু খাওয়া উচিত।
মাইগ্রেনের সমস্যা:
বিশেষজ্ঞদের মতে, লেবু বা অন্যান্য সাইট্রাস জাতীয় ফল কোনও ব্যক্তির মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। সাইট্রাস ফলগুলিতে থাকা টাইরামাইন নামক একটি বিশেষ উপাদানের জন্যই এমনটা হয়।
ডিহাইড্রেশন:
গরমকালে ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে বাঁচতে লেবু পানি পান করে থাকেন? কিন্তু এই লেবু পানি খাওয়ার ফলেই আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লেবু পানি পান করার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যা থেকে শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়। আসলে ইলেক্ট্রোলাইটস এবং সোডিয়ামের মতো উপাদানগুলিও প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়। যা ডিহাইড্রেশনের অন্যতম কারণ।
রক্তে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায়:
ভিটামিন সি রক্তে আয়রনকে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। এবার লেবু পানি অতিরিক্ত পান করলে শরীরে ভিটামিন সি-র পরিমাণ বেড়ে যায়। যা রক্তে অধিক পরিমাণ আয়রন সংরক্ষণ করে। যা ক্ষতিকর।
উৎসেচক ভেঙে যায়:
খালি পেটে লেবু খেলে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক পেপসিন ভেঙে যায়। পেপসিন আমাদের হজমে সাহায্য করে। মূলত প্রোটিন হজম করায়। এদিকে লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড পেপসিনকে ভেঙে ক্ষতিকর এনজাইম তৈরি করে। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। এমনকি পেপটিক আলসারের আশঙ্কা থাকে।
সানবার্ন:
লেবুতে অনেকের অ্যালার্জি আছে। অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। পরে লেবু খেয়ে রোদে বের হলে স্কিনে লাল র্যাশ দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কালো ছোপও দেখা দেয়। যাকে আমরা সানবার্ন বলে ভুল করি। ডাক্তারি পরিভাষায় একে সাইটোফোটোডার্মাটাইটিস বলা হয়। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে সূর্যালোকের বিক্রিয়ায় এই সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়াও অতিরিক্ত লেবুর রস স্কিন ক্যানসার ডেকে আনে।
লেবু খাওয়ার উপকারিতা শুধু শরীরের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আপনার ত্বক এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কেও অনেক ভালো প্রভাব ফেলে। প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে লেবু যোগ করলে আপনি সহজেই উপকৃত হতে পারেন।
নিয়মিত লেবু খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। আরও অনেক দরকারী স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য জানতে আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলোও দেখুন!