প্রচুরক হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানিক ধারণা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচুরভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি সহজে বুঝতে এবং কাজে লাগাতে সাহায্য করে কোন সংখ্যা বা তথ্য সবচেয়ে বেশি এসেছে তা জানতে।
এই ব্লগপোস্টে আমরা প্রচুরক কী, তার ধরন এবং গণনার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। আশা করি, পুরো পোস্টটি পড়লে প্রচুরক সম্পর্কে আপনার ধারণা পরিষ্কার হবে।
প্রচুরক কাকে বলে?
যে কোনো পরিসংখ্যানে উপাত্তের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তাকে প্রচুরক বলে।
ধরি, ৭ জন শিক্ষার্থীর গণিতে নম্বরগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
- ৭৮
- ৬৭
- ৮৩
- ৬৪
- ৮৩
- ৫৯
- ৮৩
উপরের নম্বরগুলো দেখলে বুঝতে পারি ৮৩ নম্বরটি তিনবার এসেছে। তাই, ৮৩ এখানে প্রচুরক।
প্রচুরক নির্ণয়ের সূত্র
প্রচুরক নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- ছক বিহীন সাধারণ তথ্যের প্রচুরক নির্ণয়
- ছক যুক্ত সাধারণ তথ্যের প্রচুরক নির্ণয়
- ছক যুক্ত শ্রেণীবিন্যাসকৃত প্রচুরক নির্ণয়
- আয়তলেখ থেকে প্রচুরক নির্ণয়
প্রচুরকের ব্যবহার
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচুরকের ব্যবহার অনেক জায়গায় দেখা যায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি—এখানে প্রচুরক খুব কাজে আসে। আমরা যখন পরিমাণ নিয়ে কথা বলি তখন প্রচুরক গুরুত্বপূর্ণ। বাজারের গবেষণায় প্রচুরক ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদার কথা জানাতে সাহায্য করে।
সাধারণ তথ্যের প্রচুরক নির্ণয়
যদি উপাত্ত ছক বিহীন হয়, তবে প্রচুরক বের করার জন্য দেখতে হবে, কোন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এসেছে। সাধারণ তথ্যের প্রচুরক বের করতে দুইটি ধাপ রয়েছে:
- প্রথমে উপাত্তগুলোকে সাজাতে হবে।
- গণনা করে, সবচেয়ে বেশি আসা সংখ্যা বের করতে হবে।
নিচে কিছু নম্বর দেওয়া হলোঃ
- ৫
- ১০
- ৫
- ১৫
- ২০
- ১৮
- ১৫
- ১৫
উপরের নম্বরগুলোকে সাজালে পাবো: ৫, ৫, ১০, ১৫, ১৫, ১৫, ১৮, ২০। এখানে ৫ দুইবার এসেছে, ১৫ তিনবার এসেছে এবং অন্য সংখ্যা গুলো একবার। সুতরাং, ১৫ হলো প্রচুরক। মনে রাখতে হবে:
- ১. যেই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বার এসেছে, সেটি প্রচুরক।
- ২. যদি কোন সংখ্যা বেশি বার না আসে, তবে বলা হবে প্রচুরক নেই। যেমন—৫, ১০, ১৫ এর প্রচুরক নেই।
- ৩. যদি একাধিক সংখ্যা বেশি বার আসে, তবে সেগুলো উভয়ই প্রচুরক হবে। যেমন—৫, ৫, ৫, ৭, ৯, ১০, ১০, ১০। এখানে প্রচুরক হলো ৫ ও ১০।
শ্রেণীবিন্যাসকৃত তথ্যের প্রচুরক নির্ণয়
ছক যুক্ত শ্রেণী বিন্যাসকৃত তথ্যের প্রচুরক বের করার জন্য সূত্র হলো:
প্রচুরক নির্ণয়ের সূত্র
প্রচুরক নির্ণয়ের জন্য একটি সূত্র আছে:
Mo = L + (f1 + (f1 + f2)) * h
অথবা,
Mo = L + (D1 - (D1 + D2)) * h
এই সূত্রগুলো মূলত একই জিনিস, তবে বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে Mo হচ্ছে প্রচুরক।
আয়তলেখের সাহায্যে প্রচুরক নির্ণয়
আয়ত লেখের মাধ্যমে প্রচুরক বের করতে প্রথমে অবিচ্ছিন্ন শ্রেণী যুক্ত গণসংখ্যার ছক তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে X অক্ষ বরাবর অবিচ্ছিন্ন শ্রেণী এবং Y অক্ষ বরাবর গণসংখ্যা থাকতে হবে। এরপর শ্রেণীর সর্বোচ্চ আয়ত লেখটি আলাদা করে দেখা যাবে।
প্রচুরক নির্ণয়ের কৌশল
- যে শ্রেণীতে সবচেয়ে বেশি গণসংখ্যা আছে, সেটিকে প্রচুরক শ্রেণী বলা হয়।
- প্রচুরক নির্ণয়ে গণসংখ্যার ছক কাটা প্রয়োজন হয় না।
- প্রচুরক বের করার সূত্র: L + f1 + (D1 + D2) * h
- প্রচুরক শব্দটি প্রচুর বা বেশি থেকে এসেছে।
- প্রচুরক একটি কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক পদ্ধতি।
প্রচুরক একটি বিশেষ্য
প্রচুরক হলো এক ধরনের বিশেষ্য যা কোনো নির্দিষ্ট বস্তু বা সংখ্যাকে বোঝায় না। উদাহরণস্বরূপ, "অনেক" শব্দটি একটি প্রচুরক যা নির্দিষ্ট পরিমাণ বোঝায় না।
প্রচুরকের প্রকারভেদ
বাংলা ব্যাকরণে প্রচুরককে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ঃ
- সীমিত প্রচুরক: নির্দিষ্ট পরিমাণ বোঝায়। যেমন: “একটি”, “দুই”, “তিন” ইত্যাদি।
- অসীম প্রচুরক: নির্দিষ্ট পরিমাণ বোঝায় না। যেমন: “অনেক”, “অসীম” ইত্যাদি।
প্রচুরকের ব্যবহার
বাংলা ভাষায় প্রচুরক বিশেষ্যগুলির ব্যবহার খুব সাধারণ। বিভিন্ন প্রসঙ্গে এগুলি ব্যবহার করা হয়। যেমন, “একটি কলম”, “কতজন মানুষ” ইত্যাদি।
প্রচুরকের উদাহরণ
নিচে কিছু প্রচুরক বিশেষ্যের উদাহরণ দেওয়া হল:
- সীমিত প্রচুরক: একটি, দুটি, তিনটি, চারটি, পাঁচটি, ছয়টি, সাতটি, আটটি, নয়টি, দশটি
- অসীম প্রচুরক: অনেক, কত, অসংখ্য, অগণিত, অপরিমিত