ভূগোল কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | ভূগোলের প্রধান কাজ কি? | ভূগোলের পরিধি ও বিষয়বস্তু

ভূগোল আমাদের পৃথিবীকে বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এটি কেবল স্থান ও সময়ের মধ্যে সম্পর্ক নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রা, পরিবেশ এবং আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক সম্পদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। 

ভূগোলের সাহায্যে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে মানুষ এবং প্রকৃতি একে অপরকে প্রভাবিত করে। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা ভূগোলের ধারণা, বিভিন্ন শাখা এবং এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব। আসুন, এই বিষয়টি আরও গভীরভাবে জানি এবং বুঝি!

ভূগোল কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | ভূগোলের প্রধান কাজ কি? | ভূগোলের পরিধি ও বিষয়বস্তু

ভূগোল কি বা কাকে বলে?

মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনাকে ভূগোল বলে।

ভূগোল হলো এমন একটি বিষয়/শাস্ত্র যেখানে স্থানীক ও কালীক পর্যায়ে মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়। সংক্ষেপে মানুষের বাসভূমি হিসাবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল। এখন প্রশ্ন হলো ভূগোল কাকে বলে? কোনো কোনো ভূগোলবিদ ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিবরণ, কেউ কেউ বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান।

অধ্যাপক কার্ল রিটার (Professor Carl Ritter) ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান। অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্প (Professor Dudley Stamp) ভূগোল কি এ সম্পর্কে আরও সহজভাবে বলেছেন, পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের বর্ণনাই হলো ভূগোল।

ভূগোল কাকে বলে এ সম্পর্কে অধ্যাপক রিচার্ড হার্টশোন (Professor Richard Hartshorne) বলেন, পৃথিবী পৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের যথাযথ যুক্তিসংগত ও সুবিন্যন্ত বিবরণের সঙ্গে সংশিরি বিষয় হলো ভূগোল। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের (Alexander Von Humboldt) মতে, ভূগোল হলো প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তার বর্ণনা ও আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণি, নদ-নদী, সাগর, খনি সম্পদ অর্থাৎ পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, পৃথিবীতে বাসকৃত মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। অপরদিকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপও প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন ঘটায়।

বনভূমি কেটে তৈরি হয় শহর, জলাশয় ভরাট হয়, অতিরিক্ত কলকারখানাও যানবাহনের কারণে বায়ু দূষণ হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন, বন্যা, খরা, টর্নেডো, ভূমিকম্প, সুনামী ইত্যাদি সংঘটিত হয়। অর্থাৎ মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এক ধরনের মিথস্ক্রিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কটি মূলত কার্যকারণ সম্পর্ক।

ভূগোলের পরিধি ও বিষয়বস্তু

ভূগোল চর্চা মূলত দুইটি মূল ধারায় বিভক্ত। যথা- প্রাকৃতিক ও মানব ভূগোলে। প্রাকৃতিক ভূগোলে প্রাকৃতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং মানব ভূগোলে মানুষ ও তার কর্মকান্ড সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রধান শাখাসমূহ হলো- ভূমিরূপ বিদ্যা, জলবায়ু বিদ্যা, সমুদ্র বিদ্যা, গাণিতিক ভূগোল এবং মানব ভূগোলের প্রধান শাখাসমূহ হলো অর্থনৈতিক ভূগোল, জনসংখ্যা ভূগোল, পরিবহণ ভূগোল, আঞ্চলিক ভূগোল, নগর ভূগোল প্রভৃতি।

এছাড়া মানুষের চিন্তা চেতনার বিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ ভূগোলের পরিধিকে অনেক বিস্তৃত করেছে। 

বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়বস্তু যেমন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রাণি ভূগোল, মৃত্তিকা ভূগোল এবং ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (GIS) প্রভৃতি ভূগোলের পরিধিকে সমৃদ্ধ করেছে এবং ভবিষ্যতে ভূগোলের পরিধি আরো অধিক বিস্তৃত হবে।

ভূগোলের প্রধান কাজ কি?

ভূগোলের প্রধান কাজ হলো এই কার্যকারণ সম্পর্ক উদ্ঘাটন করা। মূলত সময় ও স্থানের আলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের কর্মকান্ডের এই সম্পর্কই ভূগোলের মুখ্য বিষয়।

ভূগোলের শাখা

ভূগোলের প্রধান দুইটি শাখা রয়েছে। যথা:

১. প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography)

ভূগোলের যে শাখা পৃথিবীর জন্ম, ভূ-প্রকৃতি অর্থাৎ পাহাড়, পর্বত, বায়ুমণ্ডল ও বারিমন্ডল প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং ভৌত পরিবেশ ও এর মধ্যে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। প্রাকৃতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

১.১ ভূমিরূপবিদ্যা (Geomorphology)

ভূমিরূপবিদ্যা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা, পৃথিবীর উৎপত্তি, ভূ-আলোড়ন, বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ, নদ-নদীর উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, ভূ-ত্বকের পরিবর্তন, খনিজ ও শিলা এবং পৃথিবীর উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করে।

১.২ জলবায়ুবিদ্যা (Climatology)

এ শাখায় বায়ুর গঠন, উপাদান, বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুপুঞ্জ, বায়ুপ্রাচীর, মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে আলোচনা করে।

১.৩ সমুদ্রবিদ্যা (Oceanography)

পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্র। এ শাখায় সাগর মহাসাগরের তলদেশের ভূমিরূপ, সমুদ্রস্রোত, মানব জীবনের উপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব, বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে সমুদ্র পথে যোগাযোগ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

১.৪ মৃত্তিকা ভূগোল (Soil Geography)

মৃত্তিকা ভূগোল অশ্মমণ্ডলের উপরিভাগের মৃত্তিকার গঠন, উপাদান, বণ্টন ও বিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করে।

১.৫ জীব ভূগোল (Biogeography)

এ শাখা পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রাণিজগৎ ও উদ্ভিদের বন্টন নিয়ে আলোচনা করে।

১.৬ গাণিতিক ভূগোল (Mathematical Geography)

গাণিতিক ভূগোলে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী, সৌরজগৎ, পৃথিবী ও এর আকৃতি, গতি, আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ও সময়, আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির ফলাফল প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

২. মানব ভূগোল (Human Geography)

স্থান এবং কালের ভিত্তিতে মানুষ কীভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন পরিবেশের সাথে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে তার কার্যকারণ অনুসন্ধান মানবিক ভূগোলের প্রধান আলোচ্য বিষয়।

২.১. অর্থনৈতিক ভূগোল (Economic Geography)

কৃষিকাজ, পশুপালন, বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ভূগোলের যে শাখায় অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।

২.২. জনসংখ্যা ভূগোল (Population Geography)

জনসংখ্যার বিভিন্ন বিষয় যেমন লিঙ্গ, জন্মহার, মৃত্যুহার, বয়স কাঠামো, বৈবাহিক অবস্থা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর জনসংখ্যার প্রভাব প্রভৃতি জনসংখ্যা বিষয়ক বিষয়াদি ভূগোলের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকে জনসংখ্যা ভূগোল বলে।

২.৩. আঞ্চলিক ভূগোল (Regional Geography)

আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক বিষয়বস্তু অনুশীলন করা আঞ্চলিক ভূগোলের প্রধান বিষয়।

২.৪. রাজনৈতিক ভূগোল (Political Geography)

রাজনৈতিক বিভাগ, পরিসীমা, বিবর্তন প্রভৃতি ভৌগোলিক বিষয় রাজনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।

২.৫. পরিবহন ভূগোল (Transport Geography)

পরিবহন ভূগোলে মানুষ ও পণ্যের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

২.৬. নগর ভূগোল (Urban Geography)

নগর ভূগোল শহর, শহরতলী, গ্রাম ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।

আমরা ভূগোলের গুরুত্ব এবং এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানলাম। এটি আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং বোঝার উপযোগী করে তোলে। যদি আপনি আরও বিস্তারিত এবং আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু পড়তে চান, তাহলে দয়া করে আমার ওয়েবসাইট studyika.com-এ আরও পোস্ট পড়ুন। আপনার জ্ঞান অর্জনে এটি সহায়ক হবে!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.