খতিয়ান কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | খতিয়ান কত প্রকার ও কি কি | খতিয়ানের বৈশিষ্ট্য | খতিয়ানের প্রয়োজনীয়তা

খতিয়ান শব্দটি হয়তো আপনার পরিচিত, কিন্তু এর আসল গুরুত্ব কী? ব্যবসায়ের সব লেনদেনের নিখুঁত হিসাব রাখার প্রধান হাতিয়ার হল খতিয়ান। এটি এমন একটি বই, যেখানে ব্যবসায়িক লেনদেন শ্রেণীবদ্ধভাবে লেখা থাকে। যদি আপনি ব্যবসায়ের সঠিক আর্থিক অবস্থা জানতে চান, তাহলে খতিয়ান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। আসুন, খতিয়ানের বিস্তারিত জেনে নেই।

খতিয়ান কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | খতিয়ান কত প্রকার ও কি কি | খতিয়ানের বৈশিষ্ট্য | খতিয়ানের প্রয়োজনীয়তা

খতিয়ান কাকে বলে?

যে বইতে ব্যবসার সব লেনদেনের হিসাব লিখে পরে তা শ্রেণীভুক্ত করে আলাদা আলাদা শিরোনামে সংক্ষেপে স্থায়ীভাবে রাখা হয়, তাকে খতিয়ান বলা হয়।

খতিয়ান হলো একটি হিসাবের বই, যা ইংরেজি শব্দ Ledger থেকে এসেছে। এটি সেইসব হিসাব রাখা হয়, যা ব্যবসায়ের লেনদেনগুলোর জন্য দরকার। যেমন, ঘরের জিনিসপত্র শেলফে রাখা হয়, তেমনি লেনদেনগুলো খতিয়ানে রাখা হয়।

যে বইতে ব্যবসায়ের সব লেনদেনের হিসাব রাখা হয়, সেটিকে খতিয়ান বলা হয়। এখানে হিসাবগুলো শ্রেণীবদ্ধভাবে লিখা হয়, যাতে সহজে দেখা যায়।

হিসাববিজ্ঞানের জন্য সাধারণত দুটি বই ব্যবহৃত হয়। একটি হলো প্রাথমিক বই বা জাবেদা। অন্যটি হলো খতিয়ান। ব্যবসায় লেনদেন হলে প্রথমে ডেবিট ও ক্রেডিট ঠিক করে জাবেদায় লেখা হয়। পরে সেই হিসাব খতিয়ানে স্থায়ীভাবে লেখা হয়। তাই খতিয়ানকে পাকা হিসাবের বই বলা হয়।

খতিয়ানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা যায়। তাই খতিয়ানকে প্রধান হিসাব বই বলা হয়।

বিভিন্ন হিসাববিজ্ঞাণী খতিয়ানের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। এখানে কিছু সংজ্ঞা দেওয়া হলো:

অধ্যাপক চেম্বারস বলেন, খতিয়ান হলো ব্যবসায়ীদের হিসাবের প্রধান বই।

Shyamal Banerjee বলেন, খতিয়ান হলো হিসাবের চূড়ান্ত বই যেখানে লেনদেন লেখা হয়।

Oxford Dictionary বলছে, খতিয়ান হলো একটি বড় হিসাবের বই, যেখানে প্রতিটি হিসাব আলাদা থাকে।

খতিয়ান কত প্রকার ও কি কি?

ছোট ব্যবসায়ে সাধারণত একটি খতিয়ানে সব হিসাব রাখা যায়। কিন্তু বড় প্রতিষ্ঠানে অনেক লেনদেন হয়, তাই সেখানে অনেক খতিয়ান দরকার। খতিয়ানকে প্রধানতঃ দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

ক) অব্যক্তিক খতিয়ান।
খ) ব্যক্তিক খতিয়ান।

১. ব্যক্তিক খতিয়ান

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রক্ষিত হিসাবগুলো ব্যক্তিক খতিয়ানে লেখা হয়। এখানে বাকীতে কেনা-বেচার হিসাব রাখা হয়।

ব্যক্তিক খতিয়ানকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

ক) দেনাদারদের খতিয়ান।
খ) পাওনাদারদের খতিয়ান।

ক) দেনাদারদের খতিয়ান

যাদের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়, তাদের নামের হিসাব দেনাদারদের খতিয়ানে রাখা হয়।

খ) পাওনাদারদের খতিয়ান

যাদের কাছে পণ্য পাওনা থাকে, তাদের নামের হিসাব পাওনাদারদের খতিয়ানে রাখা হয়।

২. অব্যক্তিক খতিয়ান

ব্যক্তিগত হিসাব ছাড়া সব ধরনের হিসাব অব্যক্তিক খতিয়ানে রাখা হয়। এটি দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

ক) প্রাইভেট খতিয়ান।
খ) নামক খতিয়ান।

ক) প্রাইভেট খতিয়ান

এতে ব্যবসায়ের সম্পত্তি ও মূলধনের হিসাব লেখা হয়।

খ) নামক খতিয়ান

এতে আয়-ব্যয় ও লাভ-ক্ষতির হিসাব লেখা হয়।

খতিয়ানের বৈশিষ্ট্য

খতিয়ানের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের আয়, লাভ, ক্ষতি ও সম্পত্তির হিসাব জানতে পারেন। এটি হিসাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই। এখানে খতিয়ানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:

১. নির্দিষ্ট ছক বা কাঠামো: প্রতিটি হিসাব একই কাঠামোতে লেখা হয়।
২. শিরোনাম: প্রতিটি হিসাবের জন্য আলাদা শিরোনাম থাকে।
৩. তারিখের অনুক্রম: লেনদেনের তারিখ সঠিকভাবে লেখা হয়।
৪. দিক: খতিয়ানের দুই দিক থাকে, একদিকে ডেবিট এবং অন্যদিকে ক্রেডিট।
৫. টাকার পরিমাণ: লেনদেনের টাকার পরিমাণ লেখা হয়।
৬. জাবেদা পৃষ্ঠা: জাবেদা পৃষ্ঠার নম্বর লেখার জন্য ঘর থাকে।
৭. ঘোরের ধরন: খতিয়ানের ডেবিট বা ক্রেডিট হতে পারে।
৮. জের টানা: সময় শেষে হিসাবের জের টানা হয়।

খতিয়ানের প্রয়োজনীয়তা

খতিয়ান সঠিক আর্থিক চিত্র জানায়। এটি আধুনিক হিসাবরক্ষণ পদ্ধতির হাতিয়ার। খতিয়ানের গুরুত্ব হলো:

১. প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়।
২. পূর্ণাঙ্গ হিসাব ব্যবস্থা থাকে।
৩. ভুলত্রুটি সহজে ধরা পড়ে।
৪. দেনা-পাওনা জানা যায়।
৫. লাভ-লোকসান নির্ণয় সম্ভব হয়।

আশা করি, আপনি খতিয়ানের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আরও জানার জন্য এবং এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে পড়তে, আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো দেখুন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.