পদ কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | পদের প্রকারভেদ

পদ আমাদের বাক্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা যখন কোনো শব্দ ব্যবহার করি, তখন সেটি একটি পদ হিসেবে কাজ করে। পদ কাকে বলা হয় এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানলে ভাষা বোঝা আরও সহজ হয়। 

পদ কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | পদের প্রকারভেদ

এই পোস্টে আমরা পদ, এর প্রকারভেদ, এবং তাদের উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব। তাই আসুন, বিস্তারিত জেনে নিই পদ সম্পর্কে!

পদ কাকে বলে?

শব্দ যখন বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে পদ বলে।

‘পদ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি এসেছে √পদ্ + অ = পদ থেকে। বাক্য গঠনের প্রতিটি শব্দই এক একটি পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। যখন কোনো শব্দ বিভক্তিসহ বাক্যে ব্যবহৃত হয়, তখন সেটি পদের রূপ ধারণ করে। 

উদাহরণ হিসেবে, “ছেলেটি রুমাকে ডাকছে” বাক্যে 'ছেলে', 'রুমা', 'ডাকা' প্রত্যেকটি শব্দই বিভক্তিযুক্ত, যা আলাদা আলাদা পদ হিসেবে ব্যবহৃত। বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলা হয়।

পদের প্রকারভেদ

পদ মূলত দুই প্রকারের: নামপদ ও ক্রিয়াপদ।

  • নামপদ: প্রাতিপদিকের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে গঠিত পদকে নামপদ বলে।
  • ক্রিয়াপদ: ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে গঠিত পদকে ক্রিয়াপদ বলা হয়।

নামপদের প্রকারভেদ

নামপদ চার প্রকারের হতে পারে:

  • বিশেষ্য পদ: যে পদ কোনো কিছুর নাম বুঝায়। এটি ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, সময়, গুণ ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • বিশেষণ পদ: যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম বা ক্রিয়ার গুণ, দোষ, অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • সর্বনাম পদ: যে পদ ব্যক্তি বা বস্তু বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন 'আমি', 'তুমি' ইত্যাদি।
  • অব্যয় পদ: যে পদ বাক্যের অন্যান্য পদ বা অংশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে।

বিশেষ্য পদের প্রকারভেদ

বিশেষ্য পদ ছয় প্রকার:

  • নামবাচক বিশেষ্য: ব্যক্তি, স্থান, বই ইত্যাদির নাম বুঝায়। যেমন: নজরুল, ঢাকা, গীতাঞ্জলি।
  • জাতিবাচক বিশেষ্য: যে পদ কোনো এক জাতীয় প্রাণী বা বস্তু বোঝায়। যেমন: মানুষ, গরু।
  • ভাববাচক বিশেষ্য: ক্রিয়ার ভাব বা কাজ বোঝায়। যেমন: দর্শন, ভোজন।
  • গুণবাচক বিশেষ্য: দোষ বা গুণ বোঝায়। যেমন: সততা, মধুরতা।
  • বস্তুবাচক বিশেষ্য: বস্তু বা উপাদানের নাম বোঝায়। যেমন: চেয়ার, পানি।
  • সমষ্টিবাচক বিশেষ্য: একাধিক ব্যক্তির সমষ্টি বোঝায়। যেমন: জনতা, দল।

বিশেষণ পদ

বিশেষ্য বা সর্বনামের গুণ, দোষ, অবস্থা, সংখ্যা ইত্যাদি প্রকাশ করে যে পদ, তাকে বিশেষণ পদ বলা হয়। যেমন: ‘ফুলটি সুন্দর’, এখানে 'সুন্দর' বিশেষণ পদ।

বিশেষণ পদের প্রকারভেদ

বিশেষণ দুই প্রকার:

  • নাম বিশেষণ: যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনামের গুণ প্রকাশ করে। যেমন: নীল আকাশ।
  • ভাব বিশেষণ: যা বিশেষ্য ও সর্বনামের বাইরে অন্য পদকে বিশেষিত করে। যেমন: দ্রুত চল।

বিশেষণের অতিশায়ন

বিশেষণের অতিশায়ন তখন হয়, যখন দুই বা ততোধিক বস্তুর মধ্যে তুলনা করা হয়। যেমন: "পদ্মা দীর্ঘতর, মেঘনা দীর্ঘতম।"

  • বাংলা শব্দের অতিশায়নে 'চেয়ে', 'থেকে' ইত্যাদি ব্যবহার হয়।
  • তৎসম শব্দে 'তর' এবং 'তম' প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন: গুরু-গুরুতর-গুরুতম।

একই পদের বিশেষ্য ও বিশেষণরূপে ব্যবহার

কিছু পদ একই সাথে বিশেষ্য এবং বিশেষণ উভয় রূপে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন:

  • ‘ভাল’: বিশেষ্য হিসেবে- “আপন ভাল কে না চায়?”
  • ‘ভাল’: বিশেষণ হিসেবে- “ভাল বাড়ি পাওয়া কঠিন।”
  • ‘মন্দ’: বিশেষ্য হিসেবে- “এখানে কী মন্দটা তুমি দেখলে?”
  • ‘মন্দ’: বিশেষণ হিসেবে- “মন্দ বাক্য বলা অনুচিত।”
পদ সম্পর্কিত এই তথ্যগুলো আপনাকে ভাষার গভীরে যেতে সাহায্য করবে। আশা করি, আপনার পদ সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। আরও শিক্ষামূলক এবং আকর্ষণীয় পোস্টের জন্য studytika.com-এ আসতে ভুলবেন না!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.