বাবা মার জন্য সন্তানের দোয়া ও করণীয় (সঠিক দোয়া)

বাবা মার জন্য সন্তানের দোয়া ও করণীয়ঃ পৃথিবীতে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হলো বাবা-মা। তাদের ভালোবাসা, স্নেহ, এবং ত্যাগ আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্যের মূল ভিত্তি। বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাদের জন্য দোয়া করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা আলোচনা করেছি বাবা-মায়ের জন্য দোয়া এবং ইসলামি নির্দেশিত করণীয় বিষয়গুলো। এটি জানলে আপনার হৃদয়ে বাবা-মায়ের প্রতি আরও ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ জাগ্রত হবে।

বাবা মার জন্য সন্তানের দোয়া ও করণীয় (সঠিক দোয়া)

দুনিয়ার জীবনে সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ বাবা-মা

বাবা-মা সন্তানের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাদের অবর্তমানে সন্তান সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। ধনসম্পদ দিয়ে বাবা-মায়ের অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়। জীবিত বা মৃত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করা এবং ইসলামি নির্দেশিত করণীয়গুলো পালন করা প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য।

বাবা-মার জন্য দোয়া

কুরআনুল কারিমে বাবা-মার জন্য বিশেষ দোয়ার উল্লেখ রয়েছে। এগুলো সব সময় পাঠ করা উচিত। দোয়াগুলো হলো:

  1. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
    উচ্চারণ: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।
    অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)
  2. رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ
    উচ্চারণ: রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।
    অর্থ: হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে এবং মুমিনদের ক্ষমা করুন। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
  3. رَّبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارًۢا
    উচ্চারণ: রাব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়া লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়া লা তাযিদিজ জ্বালিমিনা ইল্লা তাবারা।
    অর্থ: হে আমাদের রব! আমাকে, আমার বাবা-মাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন। (সুরা নুহ : আয়াত ২৮)

দোয়া উচ্চারণ অর্থ
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের প্রতি দয়া কর, যেমন তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন।
رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আমাকে, আমার বাবা-মাকে এবং মুমিনদের ক্ষমা করুন।
رَّبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ রাব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও... হে আমাদের রব! আমাকে, আমার বাবা-মাকে, ঈমানদারদের ক্ষমা করুন।

করণীয় ব্যাখ্যা
দান-সাদকাহ করা পানির কূপ খনন বা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে মৃত বাবা-মায়ের জন্য সওয়াব অর্জন।
রোজা পালন মৃত বাবা-মায়ের বাকি থাকা রোজা সন্তানের জন্য পালন করা উত্তম।
কুরবানি করা মৃত বাবা-মায়ের জন্য কুরবানি করা তাদের জন্য সওয়াবের কাজ।

বাবা-মার জন্য করণীয়

সন্তানের জন্য বাবা-মা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অসাধারণ অনুগ্রহ। তাদের জন্য সন্তানের রয়েছে নানা করণীয়।

১. বাবা-মার জন্য দান-সাদকাহ করা

মৃত বাবা-মায়ের জন্য দান-সাদকাহ করা উত্তম আমল। যেমন, পানির কূপ খনন করা, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। হাদিসে এসেছে:

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। যদি আমি তার পক্ষ থেকে সাদকাহ করি, তবে কি তিনি সওয়াব পাবেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। (মুসলিম)

২. বাবা-মার জন্য রোজা রাখা

যদি বাবা-মার কোনো মানতের বা কাজা রোজা বাকি থাকে, তবে সন্তান তা আদায় করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ মারা গেলে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে রোজা পালন করবে।’ (বুখারি)

৩. বাবা-মার জন্য হজ ও ওমরাহ

বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ করা তাদের জন্য বড় সওয়াবের কাজ। তবে নিজের হজ বা ওমরাহ আদায় করার পরই এটি করা উচিত। (বুখারি)

৪. বাবা-মার জন্য কুরবানি

মৃত বাবা-মায়ের জন্য কুরবানি করা তাদের জন্য কল্যাণকর। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার উম্মতের জন্য কুরবানি করেছেন। (মুসলিম)

৫. বাবা-মার ওসিয়ত পূরণ

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী বাবা-মায়ের ওসিয়ত পূরণ করা সন্তানের কর্তব্য। (আবু দাউদ)

৬. বাবা-মার বন্ধুদের সম্মান করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বাবার বন্ধুদের সম্মান করা সর্বোত্তম নেকির কাজ।’ (মুসলিম)

৭. বাবা-মার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা

বাবা-মায়ের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সন্তানের দায়িত্ব। (ইবন হিববান)

৮. বাবা-মার ঋণ পরিশোধ

যদি বাবা-মা কোনো ঋণ রেখে যান, তবে তা সন্তানের পরিশোধ করা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে, ‘ঋণের কারণে মুমিনের রূহ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।’ (ইবনে মাজাহ)

৯. বাবা-মার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা

সন্তান যখন বাবা-মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। (আদাবুল মুফরাদ)

১০. বাবা-মার কবর জিয়ারত

কবর জিয়ারত মৃতদের জন্য দোয়া এবং সন্তানের জন্য শিক্ষণীয়। (তিরমিজি)

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

বাবা-মার জন্য বিশেষ কোন দোয়া রয়েছে?
মৃত বাবা-মার জন্য সন্তানের করণীয় কী?
জীবিত বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কী?

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জীবিত এবং মৃত বাবা-মায়ের জন্য করণীয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। বাবা-মা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সহায়। তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া, তাদের জন্য দোয়া করা এবং ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী করণীয়গুলো পালন করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

আপনারা আরও ভালো ভালো ইসলামি এবং শিক্ষামূলক লেখার জন্য অবশ্যই StudyTika.com-এ ঘুরে আসবেন। আপনার সময়ের জন্য ধন্যবাদ! আল্লাহ আমাদের সবাইকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন। আমিন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.