তেলাকুচা, একটি প্রাকৃতিক গাছ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারে আসে, আজকের এই ব্লগ পোস্টের আলোচ্য বিষয়। এই গাছটি সহজেই বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় এবং এর পাতা ও ফল নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
তেলাকুচার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে, এই পোস্টটি আপনার জন্য। চলুন, একসাথে জেনে নিই কীভাবে তেলাকুচা আমাদের জীবনকে সুস্থ ও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
তেলাকুচা পাতার উপকারিতা
- শরীরের অবসন্নতা কাটে: ১০০ গ্রাম তেলাকুঁচোয় ১.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। আয়রন শরীরের অবষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে।
- বৃক্ক বা মূত্রথলিতে (কিডনিতে) পাথর জমতে দেয় না: বৃক্কের পাথর মূলত ক্যালশিয়াম এবং আরো কিছু খনিজ পদার্থের মিশ্রণ যা প্রস্রাবের সাথে নিয়মিত বের না হওয়ায় ধীরে ধীরে পাথর আকারে জমা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে কৃত্রিম ক্যালশিয়ামের পাশাপাশি প্রাকৃতিক উৎস হতে প্রাপ্ত ক্যালশিয়াসমও পাথর হিসেবে জমতে পারে। দেখা গেছে, তেলাকুঁচোয় যে ক্যালশিয়াম থাকে তা পাথর হিসেবে জমে না।
- ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখতে: বেঙ্গালোরের একদল ডাক্তার গবেষণা করে বের করেছেন, এটি ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রেণে রাখতে সমর্থ। তেলাকুঁচো প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে।
- স্নায়ুতন্ত্র রক্ষা করে: ভিটামিন বি২ পানিতে দ্রবণীয়, কিন্তু এটি শরীরে জমা থাকে না। ফলে প্রতিদিন ভিটামিন বি২ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তেলাকুঁচোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভিটামিন বি২ থাকে। পাশাপাশি এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তেলাকুঁচো স্নায়ুবিক দূর্বলতা দূর করে।
- পরিপাকক্রিয়া সহজ হয়: থায়ামিন কার্বহাইড্রেট গ্লুকোজে পরিণত করতে সাহায্য করে। যেহেতু তেলাকুঁচোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ থায়ামিন থাকে, তাই এটি পরিপাক সহায়ক। এটি প্রোটিন এবং চর্বি ভাঙতেও সহযোগিতা করে। ১০০ গ্রাম তেলাকুঁচোয় ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ থাকে যা প্রতিদিনের প্রয়োজনের ১৫.৮৩%।
- পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে: তেলাকুঁচো ফল এবং পাতায় প্রচুর অাঁশ থাকাতে তা পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে, মল বাড়ে এবং সফট হয়। ফলে গ্যাস্ট্রিক এবং আলসারজনিত সমস্যা কাটে।
উপকারিতা (Benefits)
✅ মাথা ঠান্ডা রাখা (Helps in cooling the head)
✅ পাতার রস মাথা ঠান্ডা রাখতে সহায়ক। (Leaf juice helps in cooling the head.)
✅ ডায়াবেটিস কমানো (Helps in reducing diabetes)
✅ পাতার রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। (Leaf juice is beneficial for diabetic patients.)
✅ শাক হিসেবে খাওয়া (Eaten as greens)
✅ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়, এতে পুষ্টি রয়েছে। (The leaves are eaten as greens, providing nutrition.)
অপকারিতা (Drawbacks)
❌ স্বাদ তেতো (Bitter taste)
❌ পাকা ফলের স্বাদ তেতো, যা সবাই সহ্য করতে পারে না। (The taste of the ripe fruit is bitter, which some people cannot tolerate.)
❌ সঠিক ব্যবহার না জানা (Improper use)
❌ অনেকেই সঠিকভাবে ব্যবহার জানেন না, যা ফলস্বরূপ অপকার হতে পারে। (Many people don't know the proper way to use it, which could lead to harm.)
❌ কিছু লোকের জন্য অ্যালার্জি (Allergic for some people)
❌ কিছু মানুষ এর প্রতি অ্যালার্জিক হতে পারে। (Some people may be allergic to it.)
উপকারিতা (Benefits) | |
✅ মাথা ঠান্ডা রাখা (Helps in cooling the head) | ✅ পাতার রস মাথা ঠান্ডা রাখতে সহায়ক। (Leaf juice helps in cooling the head.) |
✅ ডায়াবেটিস কমানো (Helps in reducing diabetes) | ✅ পাতার রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। (Leaf juice is beneficial for diabetic patients.) |
✅ শাক হিসেবে খাওয়া (Eaten as greens) | ✅ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়, এতে পুষ্টি রয়েছে। (The leaves are eaten as greens, providing nutrition.) |
অপকারিতা (Drawbacks) | |
❌ স্বাদ তেতো (Bitter taste) | ❌ পাকা ফলের স্বাদ তেতো, যা সবাই সহ্য করতে পারে না। (The taste of the ripe fruit is bitter, which some people cannot tolerate.) |
❌ সঠিক ব্যবহার না জানা (Improper use) | ❌ অনেকেই সঠিকভাবে ব্যবহার জানেন না, যা ফলস্বরূপ অপকার হতে পারে। (Many people don't know the proper way to use it, which could lead to harm.) |
❌ কিছু লোকের জন্য অ্যালার্জি (Allergic for some people) | ❌ কিছু মানুষ এর প্রতি অ্যালার্জিক হতে পারে। (Some people may be allergic to it.) |
তেলাকুচা: উপকারিতা, ব্যবহার ও গুণাগুণ
গাজীপুরের পুবাইলের একটি ছোট গ্রাম, ভাদুন, যেখানে অনেক ধরনের গাছপালা পাওয়া যায়। এখানে একটি বিশেষ জায়গা আছে, ‘জল জঙ্গলের বাড়ি’, যেখানে প্রায় সব গাছের ফল এবং ফুল পাখি ও অন্যান্য বন্য প্রাণীদের জন্য রাখা হয়। এখানে পাখিরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়, আর তেলাকুচার ঝোপে পাখিরা পাকা ফল খেতে আসে। সাদা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে কালো ভোমরাও আসে।
গ্রামের পাশে বা শহরের সড়কে তেলাকুচা নামের একটি লতা দেখা যায়। এই লতা অন্য গাছ বা বিদ্যুতের তারে ধরে বেড়ে ওঠে। তেলাকুচা পাতার রস ডায়াবেটিসের জন্য খুব উপকারী। গ্রামে মাথা ঠান্ডা রাখতে এই রস ব্যবহার করা হয়। তেলাকুচা পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়, এবং পাড়া-মহল্লায় এটি বিক্রি হয়। তেলাকুচার পাতায় ক্যালসিয়াম, লোহা, ভিটামিন A এবং C থাকে। বাংলাদেশে সব জায়গায় তেলাকুচা প্রাকৃতিকভাবে জন্মে।
তেলাকুচা Cucurbitaceae পরিবারের একটি গাছ, এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Coccinia grandis। তেলাকুচার সবুজ ফল পেকে সিঁদুর লাল হয়ে যায়, তখন পাখিরা এই লতার ঝোপে আসে। ফল দেখতে শসার মতো, কিন্তু স্বাদে তেতো। পাকা ফল পাখির খুব প্রিয়, বিশেষ করে বুলবুলি, বসন্তবৌড়ী, শালিক, এবং বেনেবউ পাকা ফল খেতে এখানে আসে। সারা বছর ফুল ফোটে, তবে বর্ষাকালে ফুল বেশি হয়। ফুলের রং সাদা, এবং দেখতে লাউ ফুলের মতো।
তেলাকুচা: ঐতিহ্যবাহী ওষুধ
তেলাকুঁচো পাতা এবং ফল ঐতিহ্যগতভাবে অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এর ফল ও পাতার রস কুষ্ঠ, জ্বর, অ্যাসমা, ব্রঙ্কাইটিস এবং জন্ডিসের চিকিৎসায় সাহায্য করে। তবে, এটি আঞ্চলিকভাবে ব্যবহৃত হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে এর প্রমাণ খুব বেশি পাওয়া যায়নি।
খাবারের জন্য তেলাকুচো পাতা ও ফল খাওয়া হয়। থাইল্যান্ডে এটি বিভিন্ন তরকারী এবং সুপে ব্যবহৃত হয় এবং সেখানে চাষ করা হয়। ভারতেও এটি খাওয়া হয়, তবে সেখানে চাষ সাধারণত দেখা যায় না। বাংলাদেশে সাধারণত তেলাকুচো পাতা শাক হিসেবে রান্না করা হয়, যদিও গ্রামের মানুষরা খুব বেশি এটি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন না। তবে, পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর বাজারে তেলাকুচো শাক কেনা যায়।
তেলাকুচার বৈশিষ্ট্য
লতা জাতীয় এ গাছটি প্রধানত দক্ষিণ এশিয়ায় দেখা যায়। একেক দেশে একেক নামে ডাকা হয়। যেমন, বাংলাদেশে এটি তেলাকুঁচো নামে পরিচিত। নেপালে বলা হয় গোল কানক্রি। বিভিন্ন গাছের উপর ভর করে তেলাকুঁচো বাড়তে পারে। অপেক্ষাকৃত ছায়া জায়গাতে এ গাছ জন্মে।
পাতা ৬-৮ সে.মি. লম্বা এবং ৭-৮ সে.মি চওড়া। ফুল দেখতে অনেকটা তারার মত, পাপড়ি একটাই, তবে পাঁচভাগে বিভক্ত, রং সাদা। ফল দুই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে টকটাকে লাল রংয়ের। কাঁচা ফল দেখতে অনেকটা পটলের মত, আবছা সাদা ডোরা রয়েছে গায়।
ফল খেতে অনেকটা শষার মত। ভেতরে ছোট ছোট বিচি রয়েছে।
তেলাকুচার পুষ্টিগুণ
স্বাদের পাশাপাশি তেলকুঁচো অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বিশেষ করে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। একশো গ্রাম তেলাকুঁচোয় ১.৪ মিলি গ্রাম আয়রন, ০.০৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লোবিন), ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), ১.৬ গ্রাম আঁশ এবং ৪০ মিলি গ্রাম ক্যালশিয়াম থাকে। তেলাকুঁচো ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। তাছাড়া প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে।
পটলের মত ভাজি করে খাওয়া যায়।
যেভাবে তেলাকুচা খাওয়া হয়
কাঁচা ফল তরকারী হিসেবে খাওয়া যায়, পাতা শাক হিসেবে ভেজে খাওয়া যায়। এছাড়া কাঁচা ফল এবং কচি পাতা দিয়ে সুপ এবং সালাদ তৈরি করা হয়। কাঁচা ফল পটলের মত চিরে দুইভাগ করে ভেজে খাওয়া যায়।
আশা করি, তেলাকুচার উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে আপনার ধারণা এখন অনেক বেশি স্পষ্ট হয়েছে। আপনি যদি আরও স্বাস্থ্য উপকারিতা ও প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে জানতে চান, তাহলে আমার ওয়েবসাইটে আরও পোস্ট রয়েছে যা আপনাকে সাহায্য করবে। সেগুলো পড়তে ভুলবেন না!