গোসলের সময়ের নিয়ম এবং দোয়া নিয়ে অনেকেই জানেন না ঠিক কীভাবে সঠিকভাবে গোসল করতে হয়। ইসলামে গোসল করার কিছু ফরজ এবং সুন্নত রয়েছে, যা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই পোস্টে আপনি জানতে পারবেন গোসলের সঠিক নিয়ম এবং কীভাবে দোয়া পড়তে হবে, যাতে আপনি পুরোপুরি পবিত্র হতে পারেন। এটি জানলে আপনার গোসল হবে আরো সঠিক এবং পরিপূর্ণ। চলুন, বিস্তারিত জানতে থাকুন।
গোসলের নিয়ম ও দোয়া
গোসলের জন্য সাধারণত কোনো নিয়ম নেই। তবে, গোসল কারও ওপর ফরজ হলে তাকে গোসল করতে হয় এবং সেই গোসল করতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। সাধারণ গোসলেও এই নিয়মগুলো অনুসরণ করা উত্তম।
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য যৌনসঙ্গম, বীর্যপাত, হায়েজ-নেফাস সমাপ্তির পর, সন্তান প্রসবের পর এবং মৃত্যুর পর গোসল করা ফরজ (বাধ্যতামূলক)।
এছাড়া, শুক্রবার জুমার নামাজের পূর্বে, ঈদের নামাজের পূর্বে, ইহরাম বাধার পূর্বে, হজের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পূর্বে, অজ্ঞান হওয়ার পর সচেতন হলে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে গোসল করা মোস্তাহাব (উৎসাহিত করা হয়)।
- প্রথমে উভয় হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর অজু এবং গোসল শুরু করতে হবে।
- গোসল বা অজুর শুরুতে 'بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم' (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) বলুন, অর্থাৎ "দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি"।
- অজু বা গোসলের মাঝে বার বার আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যেতে পারে। দোয়া: 'اَللّهُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِىْ وَوَسِّعْ لِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ' (আল্লাহুম্মাগফিরলি জামনি, ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিকলি ফি রিযক্বি)। (দোয়া অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমার পাপ মাফ করুন, আমার বাসস্থানে প্রশস্ততা দিন, এবং আমার রিজিকে বরকত দিন।)
- অজু ও গোসল শেষে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় এবং দোয়া পড়ুন: 'اَشْهَدُ اَنْ لَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ' (আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহু)। (দোয়া অর্থ: "'আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং তার কোন অংশী নেই, এবং আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল এবং তার বান্দা।'" )
- অজু ও গোসলের আগে এবং পরে মেসওয়াক করাটা উত্তম।
গোসলের নিয়ম এবং দোয়া - সারসংক্ষেপ | |
---|---|
গোসলের ফরজ | ১. গড়গড়া করে কুলি করা। ২. নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছানো। ৩. পুরো শরীর ধোয়া। |
গোসলের নিয়ম | ১. গোসলের নিয়ত করা। ২. বিসমিল্লাহ বলে দুই হাত ধোয়া। ৩. শরীর পরিষ্কার করা। ৪. অজু করা। ৫. মাথায় পানি ঢালা। ৬. শরীরের পুরো অংশ ধোয়া। |
দোয়া | 'اَللّهُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِىْ وَوَسِّعْ لِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ' (অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমার পাপ মাফ করুন, আমার বাসস্থানে প্রশস্ততা দিন, এবং আমার রিজিকে বরকত দিন।') |
গোসলের পানি | বৃষ্টির পানি, কুয়ার পানি, ঝর্ণার পানি, সাগর বা নদীর পানি ব্যবহার করা যাবে, তবে অপরিচ্ছন্ন বা অপবিত্র পানি ব্যবহার করা যাবে না। |
গোসলের গুরুত্ব | গোসল ও অজু ইসলামের প্রধান ইবাদত। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করা যায়। |
গোসলের ফরজ
- এক. গড়গড়া করে কুলি করা
- দুই. নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছানো। তবে রোজাদার হলে গড়গড়া না করলেও হবে এবং নাকের গভীরের পানি দিতে হবে না।
- তিন. সমস্ত শরীর ধোয়া। পুরো শরীরের এক পশম জায়গা পরিমাণ শুকনো থাকা যাবে না। শরীর শুধু ভিজালেই হবে না বরং পানি প্রবাহিত করতে হবে।
ফরজ গোসলের নিয়ম
- গোসলের নিয়ত করা। যেমন: আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।
- গোসলের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ, বলে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধোয়া।
- এরপর শরীরের কোনো জায়গায় অপবিত্র বস্তু থাকলে পরিষ্কার করা।
- অজু করা। গড়গড়া করে কুলি করা (রোজাদার হলে গড়গড়া করা যাবে না)।
- তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।
- অজুর করার পর মাথায় এমনভাবে পানি ঢালা যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়।
- ডান কাঁধে পরে বাম কাঁধে পানি ঢেলে সমস্ত শরীর ধোয়া, যেন শরীরের কোনো অংশ শুকনো না থাকে।
- সর্বশেষে পা ধোয়া।
- এরপর সারা শরীর কোনো কাপড় বা গামছা দিয়ে মুছে শুকনো কাপড় পরা।
গোসলের পানি
গোসলের জন্য আগে কাপড় বাছাই করতে হবে, যেনতেন পানি ব্যবহার করা যাবে না। বৃষ্টির পানি, কুয়ার পানি, ঝর্ণার পানি, সাগর বা নদীর পানি, বরফ গলা পানি, বড় পুকুর বা ট্যাঙ্কির পানি প্রভৃতি ব্যবহার করা যাবে। তবে, অপরিচ্ছন্ন বা অপবিত্র পানি, ফল বা গাছ নিঃসৃত পানি, পানির মধ্যে কোনো কিছু মিশানোর কারণে বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং গাঢ়ত্ব পরিবর্তিত হওয়া পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না।
অপবিত্র জিনিস মিশে যাওয়া পানি (যেমন: মূত্র, রক্ত, মল বা মদ), অজু বা গোসলের পানি, অপবিত্র তথা হারাম প্রাণীর (যেমন: শূকর, কুকুর ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণী) পানকৃত অবশিষ্ট পানি দিয়েও গোসল করা যাবে না।
অজু এবং গোসলের গুরুত্ব
অজু হলো নামাজের চাবি। অজু ব্যতিত ইসলামের প্রধান ইবাদত নামাজ আদায় করা যায় না। আর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম গোসল। অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য অজু ও গোসলের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক।
গোসল ও অজুর নিয়ম অনুসরণ করার মাধ্যমে আমরা শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করি, যা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গোসলের নিয়ম এবং দোয়া সম্পর্কে জানার পর, আপনি নিশ্চয়ই আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে ইচ্ছুক। আমাদের ওয়েবসাইটে আরও অনেক পোস্ট রয়েছে যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে উপকারী হতে পারে। তাই, দয়া করে আরো পোস্ট পড়ুন এবং আমাদের সাইটে নিয়মিত আসুন।