আপনি কি জানেন ইসবগুলের ভুসি কিভাবে আপনার শরীরের নানা সমস্যার সমাধান করতে পারে? অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে।
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ইসবগুল পেট ব্যথা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর মিউসিলেজিনাসের কারণে আলসারজনিত পেট ব্যথা কম অনুভূত হয়। ইসবগুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে দুই বা তিন চামচ ইসবগুল মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলে।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে অনেকের। তাদের ক্ষেত্রে উপকারী একটি খাবার হলো—ইসুবগুলের ভুসি। এটি নিয়মিত খেলে কমবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এটি সকাল-বিকেলে খেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিকের দূর করে
কমবেশি সবারই রয়েছে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন আর ভুলভাল খাদ্যাভ্যাস গ্যাস্ট্রিকের বড় কারণ আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার অন্যতম ঘরোয়া উপায় ইসুবগুলের ভুসি। এটি পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। যে কারণে অ্যাসিডিটির বার্ন থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা পায়। এটি হজম ঠিক রাখার জন্য পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে সাহায্য করে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে
ডায়রিয়া প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে ইসুবগুলের ভুসি। এটি দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক যা পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে কাজ করে। এদিকে ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়রিয়া দ্রুতই সেরে ওঠে।
হার্ট ভালো রাখে
ইসুবগুলের ভুসি নিয়মিত খেলে হার্ট ভালো থাকে। কারণ এতে থাকা খাদ্যআঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। এটি পাকস্থলীর দেয়ালে এক ধরনের পাতলা স্তর সৃষ্টি করে। যা খাদ্য থেকে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়; বিশেষ করে রক্তের সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এ ছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দিতে কাজ করে। ফলে ধমনীতে ব্লক সৃষ্টির ভয় থাকে না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
ইসবগুলের ভুসিতে আছে জিলাটিন নামক একটি উপাদান। যা দেহে গ্লুকোজের শোষণ ও ভাক্সগার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এতে রক্তে সহজে সুগারের পরিমাণ বাড়তে পারে না। এর ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিস।
এ ছাড়াও হজমের সমস্যা, কোলেস্টেরল, উচ্চ-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন কমাতে ইসবগুল বিশেষ উপকারী।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
ইসবগুল অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সঙ্গে খেতে হবে। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ভুসি মিশিয়ে পানি করুন। এটি পানি বা শরবতের সঙ্গে ভালোভাবে নেড়ে ভুসি মিশিয়ে নিন। মেশানোর সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে নিতে হবে।
শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসুবগুলের ভুসির জুড়ি মেলা ভার। তবে এই ভুসি খাওয়ার নিয়ম নিয়ে নানা কথা প্রচলিত রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, খাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে পান করা উচিত। দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখা ভুসি উপকারের বদলে ক্ষতিই করে বেশি।
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা এবং অপকারিতা | |
---|---|
উপকারিতা (Benefits) | |
✅ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে | ✅ পেট ব্যথা কমায় |
✅ প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে | ✅ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায় |
✅ ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে | ✅ হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে |
✅ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে | ✅ ওজন কমাতে সহায়ক |
অপকারিতা (Drawbacks) | |
❌ দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখা ভুসি খাওয়া উচিত নয় | ❌ অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে |
❌ যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে, তাদের কিছু সময় এড়িয়ে চলা উচিত | ❌ গরম পানির সঙ্গে না খাওয়ার জন্য সতর্ক থাকতে হবে |
ইসবগুলের ভুসি কী?
ইসবগুলের ভুসি মূলত এক প্রকার দ্রবণীয় ফাইবার যা সাইলিয়াম (প্ল্যান্টাগো ওভাটা) বীজের খোসা। রেচক বা ল্যাক্সেটিভ হিসেবেও পরিচিত। ইসবগুলের ভুসি মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ, হার্ট বা হৃৎপিণ্ড এবং অগ্নাশয় সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় প্রমাণিত।
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ
ইসুবগুলে রয়েছে অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান। সেসব উপাদান শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। ১ টেবিল চামচ ইসবগুলে থাকে:
- ৫৩ শতাংশ ক্যালোরি
- ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
- ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন
- ০ শতাংশ ফ্যাট
- ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম
- ১৫ গ্রাম শর্করা