রিজিক বৃদ্ধি এবং বরকত লাভের জন্য আমরা সবাই নানা দোয়া ও আমল খুঁজে থাকি। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে এই বিষয়টি নিয়ে নানা দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। কীভাবে আল্লাহর রহমত পেতে পারেন, কীভাবে আয়-রোজগারে বরকত আনতে পারেন—এটি জানতে আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পোস্টে আমরা এমন কিছু দোয়া এবং আমলের কথা বলব যা আপনার রিজিক বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আল্লাহর সাহায্য ও রহমতকে আকাঙ্ক্ষা করে চলুন, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।
রিজিক বৃদ্ধি এবং বরকত লাভের জন্য দোয়া ও আমল
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনিই তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে আহার করো।’ (সুরা মুলক: ১৫)
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়-রোজগার বাড়ার জন্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। দোয়াটি হলো,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي وَوَسِّعْ لِي فِي رِزْقِي وَبَارِكْ لِي فِيمَا رَزَقْتَنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসি লি ফি রিজকি, ওয়া বারিক লি ফিমা রাজাকতানি। (তিরমিজি: ৩৫০০)
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, আমার রিজিক প্রশস্ত করে দিন এবং আপনি আমাকে যে জীবিকা দান করেছেন তাতে বরকত দান করুন।
আরেকটি দোয়া হলো-
اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক। (তিরমিজি: ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ: ১৩২১)
অর্থ: হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে আপনার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করুন। আর আপনাকে ছাড়া আমাকে কারও মুখাপেক্ষী করবেন না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে সচ্ছলতা দান করুন।
রিজিক বৃদ্ধি এবং বরকত লাভের জন্য দোয়া ও আমল | |
---|---|
দোয়া ১ |
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي وَوَسِّعْ لِي فِي رِزْقِي وَبَارِكْ لِي فِيمَا رَزَقْتَنِي উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসি লি ফি রিজকি, ওয়া বারিক লি ফিমা রাজাকতানি। (তিরমিজি: ৩৫০০) অর্থ: হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, আমার রিজিক প্রশস্ত করে দিন এবং আপনি আমাকে যে জীবিকা দান করেছেন তাতে বরকত দান করুন। |
দোয়া ২ |
اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক। (তিরমিজি: ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ: ১৩২১) অর্থ: হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে আপনার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করুন। আর আপনাকে ছাড়া আমাকে কারও মুখাপেক্ষী করবেন না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে সচ্ছলতা দান করুন। |
তাকওয়া অর্জন |
‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ বের করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ২-৩) |
পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা |
‘কেবল দোয়াই ভাগ্য প্রতিহত করে, নেক কাজে আয়ু বাড়ে আর বান্দা পাপের কারণে জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২৪১৩) |
হালাল পন্থায় আয় |
‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজসমূহের পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি; কানযুল উম্মাল: ৯২০৩) |
দান করা |
‘হে আদম সন্তান! তুমি খরচ করো, তোমার জন্য খরচ করা হবে (অর্থাৎ প্রাচুর্য আসবে)।’ (বুখারি: ৫৩৫২) |
সূরা আল-ওয়াকিয়া তিলাওয়াত |
সূরা আল-ওয়াকিয়া-কে রিজিক বৃদ্ধির একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকিয়া পাঠ করবে, তার রিজিকের কোনো অভাব হবে না। |
আয়-রোজগার বাড়ানোর জন্য কিছু আমল
আয়-রোজগার বাড়ানোর বেশ কিছু আমল রয়েছে। তবে এ কথা মনে রাখতে হবে, অঢেল আয়-রোজগারেই সুখ ও মানসিক শান্তি নেই। এর জন্য বেশকিছু আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে জীবনে বরকত আসে, অল্পতেও অনেক তৃপ্তি ও মানসিক প্রশান্তি মেলে।
তাকওয়া অর্জন করা
তাকওয়া মানে হচ্ছে মহান আল্লাহর ভয়। এটি আয়-রোজগার লাভের অন্যতম একটি উপায়, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ বের করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ২-৩)
হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) উপরোক্ত আয়াত দুটির তাফসির প্রসঙ্গে বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশাবলি পালন করে এবং তার নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে বিরত থেকে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সব বিপদাপদ থেকে মুক্ত হওয়ার পথ করে দেবেন এবং যেখান থেকে সে রিজিক লাভ করার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করে না; সেখান থেকে তাকে রিজিক দেবেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির ৪/৪০০)
পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা
সবসময় পাপাচার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা। কারণ নেক আমল ও ভালো কাজে যেমন মানুষের জীবন-জীবিকায় বরকত আসে, তেমনি পাপ কাজ জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেবল দোয়াই ভাগ্য প্রতিহত করে, নেক কাজে আয়ু বাড়ে আর বান্দা পাপের কারণে জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২৪১৩)
হালাল পন্থায় আয়
রিজিকে বরকতের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হালাল পন্থায় আয় করা। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজসমূহের পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি; কানযুল উম্মাল: ৯২০৩)
দান করা
দান-সদকা মানুষের জীবনে বরকত নিয়ে আসে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি খরচ করো, তোমার জন্য খরচ করা হবে (অর্থাৎ প্রাচুর্য আসবে)।’ (বুখারি: ৫৩৫২)
আয়-রোজগার বৃদ্ধি করার জন্য কুরআন ও হাদিসের দিকনির্দেশনা
রিজিক বৃদ্ধির জন্য দোয়া ও আমল সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অনেক পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহর উপর ভরসা, নিয়মিত দোয়া এবং সৎকাজের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি করা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের হালাল উপায়ে রিজিক অন্বেষণের নির্দেশ দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
অর্থ: অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়, আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার। (সুরা জুমুয়াহ, আয়াত ১০)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব না। (তিরমিজি)
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
اللهم اغفر لي ذنبي وَوَسَحُ لِي فِي رِزْقِي وَبَارِك لي فيما رَزَقْتَنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসি লি ফি রিযকি, ওয়া বারিক লি ফিমা রাজাকতানি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, আমার ঘর প্রশস্ত করে দিন এবং আপনি আমাকে যে জীবিকা দান করেছেন তাতে বরকত দান করুন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে রাতে উল্লিখিত দোয়া পাঠ করতে শোনেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০০)
সূরা আল-ওয়াকিয়া তিলাওয়াত
সূরা আল-ওয়াকিয়া-কে রিজিক বৃদ্ধির একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকিয়া পাঠ করবে, তার রিজিকের কোনো অভাব হবে না।
প্রতিদিন মাগরিব বা ইশার পর এই সূরা তিলাওয়াত করলে আল্লাহ রিজিকে বরকত দান করেন।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
উপসংহার:
আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়ার জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দোয়া এবং আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আরও এই ধরনের দোয়া ও আমল সম্পর্কিত জানাতে চান, তবে আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলোও পড়ুন। আমাদের সাইটে রয়েছে আরও অনেক দিকনির্দেশনা যা আপনার জীবনে আল্লাহর বরকত আনতে সাহায্য করবে। তাই, আপনি যদি রিজিক বৃদ্ধি এবং বরকত লাভের জন্য আরও জানাতে চান, আমাদের সাথে থাকুন এবং নিয়মিত আমাদের পোস্টগুলো পড়ুন।