৩৪+ আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা [সঠিক তথ্য]

আপেল সিডার ভিনেগার শুধু রান্নায় ব্যবহৃত হয় না, এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। এটি শরীরের নানা সমস্যায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে, যেমন: পেটের মেদ কমানো, ত্বক সুন্দর রাখা এবং ওজন কমাতে সাহায্য করা।

৩৪+ আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা [সঠিক তথ্য]

 আপনি জানেন কি, এটি আপনার স্বাস্থ্যকে আরও শক্তিশালী করতে পারে? চলুন, আজকে আমরা জানব আপেল সিডার ভিনেগারের আশ্চর্যজনক উপকারিতা এবং কীভাবে এটি আপনার জীবনযাত্রায় সহজ পরিবর্তন আনতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা

  • পেটের জমে থাকা মেদ কমায়।
  • ত্বক সুন্দর ও ব্রণ কমাতে এটি কাজ করে। Anti-aging properties রয়েছে।
  • ওজন কমাতে BMR বা Basal Metabolic Rate কে বাড়ায়। ফলে দেহের ওজন কমে।
  • হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
  • এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • চিনির পরিমাণ কমিয়ে টাইপ 2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার মাধ্যমে সহজেই শরীরের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। তবে এর অনেক উপকারিতা থাকার পরেও, আপনি যদি বিশেষ কোনো রোগে ভুগে থাকেন, তবে এটি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা
পেটের জমে থাকা মেদ কমায়।
ত্বক সুন্দর ও ব্রণ কমাতে কাজ করে।
Anti-aging properties রয়েছে।
ওজন কমাতে BMR (Basal Metabolic Rate) বাড়ায়।
হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
টাইপ 2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
আপেল সিডার ভিনেগারের অপকারিতা
বেশি পরিমাণে খেলে গলা জ্বলতে পারে।
দাঁতের এনামেল ক্ষতি হতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে খাবার হজম হতে বেশি সময় লাগে।
ডায়াবেটিসের ওষুধের সঙ্গে ব্যবহার করলে বিপদ হতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা এবং ব্যবহার

আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। শরীরের ওজন, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোসহ অনেক উপকার করে এ ভিনেগার।

আপেল সিডার ভিনেগার কি?

অন্যান্য ভিনেগারের মতই আপেল সাইডার ভিনেগারও এক প্রকার ভিনেগার, যা আপেল থেকে প্রস্তুত করা হয়। এতে রয়েছে ৫-৬% অ্যাসিডিটি (Acetic acid)।

প্রকারভেদ

আপেল সিডার ভিনেগারের কয়েক ধরনের হয়। এর মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং উপকারী।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার কিঃ

যখন apple cider vinegar প্রস্তুতির ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির মেয়াদকাল আরো বাড়ানো হয়, তখন এতে বেশকিছু উপকারী এনজাইম, ইস্ট এবং এসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়ে যায়। এই উপকারী উপাদানসমূহকে একত্রে “মাদার” বলা হয়।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার দেখতে ঘোলাটে ও তুলনামূলকভাবে ঘন হয়ে থাকে।

আপেল সিডার ভিনেগারের বৈজ্ঞানিক গুণাবলি

আপেল থেকে গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয়। এ ভিনেগারে ৫-৬ শতাংশ অ্যাসেটিক এসিড থাকে। এটি শরীরের জন্য উপকারি। এছাড়া আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ লবণ।

ব্যাকটেরিয়া নিধন করতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। তাই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নখের ছত্রাক, আঁচিল, উকুন, কানের ইনফেকশন উপশম করতেও এ ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। কয়েক হাজার বছর আগে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করা হতো। 

খাবার সংরক্ষণ করতেও ব্যবহার করা হয় ভিনেগার। এতে খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মায় না। প্রাকৃতিকভাবে খাবার সংরক্ষণ করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন আপেল সিডার ভিনেগার। এছাড়া ব্রণসহ ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে এ ভিনেগার খুব কাজের। তবে ত্বকে দিতে হলে ভিনেগারের সঙ্গে অবশ্যই পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে নেবেন।

টাইপ- ২ ডায়াবেটিসে উপকারিতা

টাইপ- ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারি। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেলে, সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমবে চার শতাংশ। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারাও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। 

তবে যারা ইতোমধ্যে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিনেগার খাওয়া তাদের জন্য ঠিক হবে না।

ওজন কমাতে সহায়তা

ওজন কমাতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময়ে সহজে ক্ষুধা লাগে না। ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া রোগে আক্রান্ত ১৭৫ জনকে নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, প্রতিদিন আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে।

সেসঙ্গে কমে পেটের মেদ। তবে অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরিমাণও কমাতে হবে, শুধু ভিনেগারই ওজন কমাবে না।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা

বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

ক্যানসার প্রতিরোধী গুণাবলি

আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ভিনেগার ক্যানসার কোষ নির্মূল ও টিউমার সারাতে ভূমিকা রাখে। তবে এটি এখনো সর্বব্যাপী স্বীকৃত নয়। এ নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করার পদ্ধতি

সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, রান্নায় এ ভিনেগার ব্যবহার করা। ঘরে মেয়োনিজ তৈরির সময় বা সালাদেও দিতে পারেন ভিনেগার। পানির সঙ্গে মিশিয়ে পানীয় হিসেবেও পান করা যেতে পারে এটি। যেমন, এক গ্লাস পানিতে ১/২ টেবিলচামচ (৫-১০ মিলিলিটার) আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে পারেন।

চুলের যত্ন

চুলের যত্ন নিতে বাজার চলতি রাসায়নিক প্রসাধনীর বদলে অনেকেই ভরসা রাখেন ঘরোয়া টোটকায়। ইদানীং ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের পরিচর্যার প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার। শ্যাম্পুর পরিবর্তে অনেকেই এই উপাদান দিয়ে চুল ধোওয়া শুরু করেছেন।

চুল পড়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন বহু মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত হারে চুল পড়ার ফলে চুল পাতলা হয়ে যেতে থাকে। এই চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারেন অ্যাপেল সিডার ভিনিগার। দুই চামচ ভিনিগারের সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মালি‌শ করলে চুল পড়ার সমস্যা কমবে।

সাবধানতা

শুরুতে অবশ্যই অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া উচিত। খুব বেশি পরিমাণ ভিনেগার খেলে গলা জ্বলতে পারে। ক্ষয় হতে পারে দাঁতের এনামেল। পানিতে না মিশিয়ে সরাসরি ভিনেগার খাওয়া কখনোই উচিত নয়। এ ভিনেগার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এটা ঠিক। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে খাবার হজম হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে। 

ফলে দেখা দিতে পারে ক্ষুধামন্দা। ডায়াবেটিস ও অন্য বেশকিছু রোগের ওষুধের সঙ্গে ভিনেগার খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভালো করে জেনেশুনে নিশ্চিত হয়ে ভিনেগার ব্যবহার করা উচিত।

ত্বক সংবেদনশীল হলে পানির সঙ্গে মিশিয়ে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে হবে। দাগ দূর করে দাঁত সাদা করতে আপেল সিডার ভিনেগার বেশ কাজে দেয়। কিন্তু ভিনেগারের অ্যাসিড দাঁতের গোড়ায় লাগলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তুলার বলে ভিনেগার নিয়ে দাঁতে হালকা করে লাগাতে হবে। খাওয়ার আগে না পরে আপেল সিডার ভিনেগার পান করবেন এটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে বা পরে এটি পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

আপেল সিডার ভিনেগারের অসংখ্য উপকারিতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি শুধু শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে না, বরং ত্বক এবং হজমের ক্ষেত্রেও কার্যকর। আপনি যদি আরো স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জানার জন্য আগ্রহী হন, তবে আমাদের সাইটে আরও অনেক পোস্ট পড়তে পারেন। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে থাকুন এবং সুস্থ থাকুন!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.