শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়াঃশয়তান মানুষের এক ভয়াবহ শত্রু, যার কুমন্ত্রণা থেকে আমরা সবাই রক্ষা পেতে চাই। কিন্তু কীভাবে? আল্লাহ তাআলা আমাদের শয়তান থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। আজকের পোস্টে, আমি আপনাদের সঙ্গে একটি শক্তিশালী দোয়া শেয়ার করবো যা আপনাকে সারাদিন শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিরাপদ রাখবে। এই দোয়া কীভাবে পড়তে হবে, এর ব্যাখ্যা কী, এবং কিভাবে এটি আপনার জীবনে উপকার বয়ে আনতে পারে, তা জানলে আপনি সত্যিই মুগ্ধ হবেন। আসুন, দোয়ার মাধ্যমে শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তি লাভ করি।
দোয়াটি কী?
এই দোয়াটি হাদিসে এসেছে এবং এটি শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পেতে অত্যন্ত কার্যকর। হাদিসের বর্ণনায় দোয়াটি হলো:
أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
উচ্চারণ: ‘আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বিওয়াঝহিল কারিম ওয়া সুলত্বানিহিল কাদিমি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’
অর্থ: ‘আমি মহান আল্লাহর কাছে; তাঁর মহানুভব চেহারার কাছে; তাঁর অনাদি-অনন্ত কর্তৃত্বের কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।’
হাদিসের বর্ণনা
হজরত হায়াওয়াহ ইবনু শুরায়িহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি হজরত উক্ববাহ ইবনে মুসলিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বলেন, ‘আমি জানতে পারলাম যে, আপনার কাছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় বলতেন:
أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অতীব মর্যাদা ও চিরন্তন পরাক্রমশালীর অধিকারী মহান আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে।’
হজরত উক্ববাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রশ্ন করলেন, ‘এতটুকুই?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’
হজরত উক্ববাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যে কেউ এই দোয়া পড়বে, শয়তান বলবে, ‘এ লোকটি আমার প্ররোচনাগুলো থেকে আজ সারাদিন নিরাপদ।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মুসনাদে আহমাদ, বুখারি ও মসলিম)
ধারা | বিবরণ |
---|---|
দোয়া | أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ |
উচ্চারণ | ‘আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বিওয়াঝহিল কারিম ওয়া সুলত্বানিহিল কাদিমি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’ |
অর্থ | ‘আমি মহান আল্লাহর কাছে; তাঁর মহানুভব চেহারার কাছে; তাঁর অনাদি-অনন্ত কর্তৃত্বের কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।’ |
প্রভাব | যে কেউ এই দোয়া পড়বে, শয়তান বলবে, ‘এ লোকটি আমার প্ররোচনাগুলো থেকে আজ সারাদিন নিরাপদ।’ |
উল্লেখযোগ্য হাদিস | হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় এই দোয়া পড়তেন। |
অতিরিক্ত দোয়া | ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতুয়ানির রাজিম; মিনহামজিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফছিহি।’ |
বাড়ির নিরাপত্তা | বাড়িতে আয়াতুল কুরসি পড়লে এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে মূল্যবান মালামাল সিন্দুকে সংরক্ষণ করা উচিত। |
শয়তানের ধোঁকা | যখন আল্লাহর নাম স্মরণ করে খাওয়া ও ঢোকার সময় শয়তান তার সঙ্গীদের বলবে, ‘তোমাদের রাত কাটানোর জায়গা নেই।’ |
শয়তান থেকে সুরক্ষা | রাতে পাত্র ঢেকে রাখা, মশকের মুখ আঁটকে দেওয়া এবং দরজা বন্ধ করা উত্তম। ঘরে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করা উপকারী। |
মনে রাখার বিষয়
এই দোয়াটি শুধুমাত্র মসজিদে প্রবেশের জন্য নয়, বরং সারাদিন শয়তানের আক্রমণ (অনিষ্টতা ও কুমন্ত্রণা) থেকে রক্ষা পেতে এটি প্রতিদিন পড়া উচিত। যদিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় এই দোয়া পড়তেন, তবে এটি সারাদিনের জন্য প্রভাবশালী।
তাহলে, যেহেতু মুমিন মুসলমান প্রতিদিন মসজিদে প্রবেশ করেন, ততবার এই দোয়া পড়া হলে শয়তান মানুষের ধোঁকা দিতে পারবে না। বরং সে সারাদিনের জন্য শয়তানের অনিষ্টতা ও কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সাহায্য করুন
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবির শেখানো দোয়াটি পড়ার তাওফিক দান করুন। সারাদিন শয়তানের অনিষ্টতা ও কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন।
শয়তান থেকে বাঁচার আরও দোয়া
শয়তানের যেকোনো মন্দ প্ররোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের পরম রক্ষাকর্তা। এজন্য, আমাদের পড়তে হবে:
‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতুয়ানির রাজিম; মিনহামজিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফছিহি।’
অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা ও ফুৎকার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
বাড়ির নিরাপত্তা
বাড়িতে নফল নামাজ পড়া মোস্তাহাব। তবে মসজিদেও নামাজ পড়া জায়েজ। বাড়িতে প্রবেশ করার সময় দোয়া পড়লে এবং সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পড়লে বাড়ি মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকে। এছাড়া, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে মূল্যবান মালামাল সিন্দুকে সংরক্ষণ করা ভালো।
শয়তানের ধোঁকা
হাদিসে আছে, ‘যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘরে ঢোকার ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান তার সঙ্গীদের বলে, তোমাদের রাত কাটানোর কোনো জায়গা নেই; তোমাদের রাতের খাবারও নেই।’ (মুসলিম)
এছাড়া, জিন ও শয়তানের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতের বেলা পাত্রগুলো ঢেকে দাও; মশকগুলোর মুখ আটকে রাখো; ঘরের দরজা বন্ধ করো এবং আলো নিভিয়ে দাও। শয়তান মশকের বাঁধন খুলতে পারে না। দরজা খুলতে পারে না, পাত্রও উন্মুক্ত করতে পারে না। তবে, যদি কেউ কাঠির বদলে অন্য কিছু না পায়, তাহলে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে তা বন্ধ করে দাও।’ (মুসলিম)
শয়তান থেকে সুরক্ষার আরও উপায়
এছাড়া, রাতে পাত্র ঢেকে রাখা, মশকের মুখ আঁটকে দেওয়া, দরজা বন্ধ করা এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা উত্তম। ঘুমের সময় আগুন নিভিয়ে দেওয়া এবং সন্ধ্যার পর শিশু ও গৃহপালিত জন্তুগুলোকে (বাড়িতে) আটকে রাখা উত্তম।
সকাল ও সন্ধ্যায় দোয়া করা, জিকির পড়া এবং ঘরে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করা এসব ক্ষেত্রেও উপকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ঘরে সুরা বাকারা পড়া হয়, শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়।’ (মুসলিম)
বিশ্বাসীদের কর্তব্য
শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার এই দোয়া একেবারে সহজ, তবে এর গুরুত্ব খুবই গভীর। প্রতিদিন এটি পড়লে আপনি শয়তানের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার FAQ
শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার FAQ
আপনার জানাশোনা বাড়ানোর জন্য আরও অনেক পোস্ট রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে। দয়া করে আরও পোস্ট পড়তে থাকুন এবং আপনার ধর্মীয় জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করুন। StudyTika.com-এ আমাদের সাথে থাকুন, শিখুন, এবং নিজের জীবনকে আল্লাহর হেদায়েতের পথে পরিচালিত করুন।