শৃঙ্খলাবোধ / নিয়মানুবর্তিতা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

এই রচনাটিতে শৃঙ্খলাবোধ বা নিয়মানুবর্তিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিয়ম এবং শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা কীভাবে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি আপনি এই রচনাটি পড়ে নিয়মানুবর্তিতার প্রকৃত অর্থ এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন।

শৃঙ্খলাবোধ / নিয়মানুবর্তিতা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

শৃঙ্খলাবোধ / নিয়মানুবর্তিতা রচনা ১

ভূমিকা: পৃথিবীর সর্বত্রই নিয়মের রাজত্ব। আকাশের চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই নিয়মের অবাধ গতি। পৃথিবী আপন কক্ষ পথে ঘুরছে, সূর্য পূর্বে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়। ষড়ঋতুপর্যায়ক্রমে ঘুরে আসে। রাতের পর দিন আসে। কোন কিছুই নিয়ম বহির্ভূত নয়। সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়মের উৎপত্তি এবং সৃষ্টির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ নিয়ম চলতে থাকবে। শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে Napoleon বলেছেন “Discipline is the keystone to success which is compulsory to follow to balance the system.”

প্রাণিজগতে নিয়ম: প্রাণিজগতের সর্বত্রই নিয়মের নিখুঁত সামঞ্জস্য বিরাজমান। নিয়ম মানা ছাড়া প্রাণিজগত বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। পাখিরা প্রতিদিন সকালে জেগে গান করে, সারাদিন খাবারের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে, এবং রাতে বিশ্রাম নেয়—সবই নির্দিষ্ট নিয়মে ঘটে। মৌমাছি ও পিঁপড়েরা দল বেঁধে তাদের নেতার নির্দেশ অনুসরণ করে, আর মৌমাছিরা সুশৃঙ্খলভাবে মৌচাক তৈরি করে জীবন পরিচালনা করে।

সমাজ জীবনে নিয়ম: নিয়মছাড়া সামাজিক জীবন চলতে পারে না। বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান যেমন- বিবাহ, ঈঁদ-পূজা, খাওয়া-পরা সবকিছুই নিয়ম অনুযায়ী হয়ে থাকে। নিয়ম না থাকলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা থাকে না। সমাজে কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে বলেই আমরা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারি। মোট কথা, নিয়মানুবর্তিতা সমাজ জীবনকে সুন্দর করে তোলে। তাই কবির ভাষায় “যে সমাজে শৃঙ্খলা আছে, ঐক্যের বিধান আছে, সকলের স্বতন্ত্র ও সধিকার আছে, সেই সমাজেই পরকে আপন করিয়া লওয়া সহজ।” --------------রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মানব জীবনে নিয়ম: মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এবং তার প্রধান বৈশিষ্ট্য বুদ্ধিমত্তা ও শৃঙ্খলাবোধ। নিয়মানুবর্তিতা মানব জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলে। আমাদের খাবার, চলাফেরা, কাজের ধারা—সবকিছুতে নিয়মের গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়ম মেনে যিনি নিজ দায়িত্ব পালন করেন, তার উন্নতি নিশ্চিত। মানব জীবনে শৃঙ্খলার গুরুত্ব সম্পর্কে এম. কে. গান্ধী বলেছেন, “Discipline maintains system, System maintain development, Development vibrates human-life. So discipline must be followed.”

ছাত্রজীবনে নিয়ম: ছাত্রজীবনে নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শৃঙ্খলাবোধ গড়ার জন্য ছাত্রজীবন হলো সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। একজন ছাত্রকে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হয় এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে সে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যায়।

সৈনিক জীবনে নিয়ম: নিয়মানুবর্তিতার উপযুক্ত চর্চা হয় সৈনিক জীবনে। দলনেতার হুকুম পালন করা তাদের প্রধান কর্তব্য। সকালে ঘুম থেকে উঠা, প্যারেড করা, খাওয়া, ঘুমান সবকিছুই তাদের নিয়মমাফিক করতে হয়। নিয়মানুবর্তিতার প্রতি সৈনিক জীবনে জোর দেয়ার কারণ হচ্ছে একজনের সামান্য নিয়মভঙ্গের কারণে হাজার হাজার সৈন্যের জীবন বিনষ্ট হতে পারে। তাই নিয়মভঙ্গের কারণে তাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।

নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা: জীবনের সর্বস্তরে তথা সামাজিক, পারিবরিক, রাষ্ট্রীয় জীবনে, খেলার মাঠ, কল-কারখানায়, দোকানে, রেলে, হাসপাতালে, বিমানে প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তী হওয়া অত্যাবশ্যক। নিয়ম-শৃঙ্খলার অভাবে অনেক সুপ্রতিষ্ঠানও ধ্বংস হয়ে যায়। খেলার মাঠে ও যুদ্ধের ময়দানে নিয়ম পালন না করলে পরাজয় অনিবার্য। সুতরাং নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবোধের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্তরায় নয়: অনেকের ধারণা, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী। কিন্তু এ ধারণা মোটেও সত্য নয় বরং নিয়ম মানার মাধ্যমে নিজের অধিকার রক্ষিত হয়। নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তির স্বাভাবিক বিকাশের পথকে সুগম করে। অন্যথায় অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার বিকাশ ঘটায়। পরিণামে জীবন দুঃখময় হয়ে উঠে। তাই নিয়মানুবর্তিতাকে ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী বলার কোন যুক্তি নেই। মনে রাখা দরকার, স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা এক জিনিষ নয়।

নিয়মানুবর্তিতা ভঙ্গের ফল বিপর্যয়: নিয়মভাঙ্গার ফলাফল সর্বদাই অশুভ। ব্যক্তিজীবনে, সমাজ জীবনে কিংবা জাতীয় জীবনে যেকোন নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। এ শুধু প্রকৃতিতে নয় মানব জীবনেও সত্য। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নির্দেশ অমান্য করে মুসলিম বাহিনী ‘ওহুদের যুদ্ধে’ বিশৃঙ্খলভাবে শত্রুর উপর আক্রমণ চালাতে গিয়ে চরম বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। নিয়মানুবর্তিতার অভাবে প্রতিভাশালী মানুষের জীবনও ব্যর্থ হয়ে যায়। যার জ্বলন্ত উদাহরণ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মোটকথা, নিয়মানুবর্তিতার অভাব জীবনের গ্লানিই শুধু বাড়ায়।

উপসংহার: নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়ামানুবর্তিতার ব্যর্থতায় ঘটে আরাজকতা, বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়; মানুষকে পদে পদে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। পাশ্চাত্যের দেশসমূহের শক্তি, ধন, জ্ঞান ইত্যাদি মূলে রয়েছে তাদের কঠোর শৃঙ্খলাবোধ। তাই আমাদেরও জাতীয় উন্নতির জন্য নিয়মানুবর্তী হওয়া আবশ্যক। এক কথায় ‘নিয়মানুবর্তিতাই উন্নতির চাবিকাঠি।’

(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)

শৃঙ্খলাবোধ / নিয়মানুবর্তিতা রচনা ২

ভূমিকা : সারা বিশ্ব প্রকৃতি এক অদৃশ্য নিয়ম ও শৃঙ্খলার অধীন। সৌরজগতের গ্রহ থেকে উপগ্রহ, পৃথিবীর গাছপালা, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট ও কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলায় নিয়ন্ত্রিত। কোথাও এর সামান্যতম ব্যতিক্রম বা বিপর্যয় নেই। তাই সম্রাট নেপোলিয়নের ভাষায় বলা যায়, “Discipline is the keystone to success which is compulsory to follow to balance the systems.” মানবজীবনেও সেই কঠোর নিয়মের শাসনের প্রয়োজন। মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তুলতে হলে তার জীবনেও শৃঙ্খলাবোধ বা নিয়মানুবর্তিতার দরকার। কারণ শৃঙ্খলাই সৌন্দর্য ও জাতীয় উন্নতির উপায়।

জীবনে শৃঙ্খলাবোধের প্রয়োজনীয়তা : জীবনে শৃঙ্খলাবোধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে চিন্তা করতে গিয়ে প্রথমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে বিশেষভাবে সচেতন থাকা দরকার যে, মানবসমাজ অন্যান্য জীবজন্তু ও প্রাণিকুল সবাই বিশ্বপ্রকৃতির অঙ্গ এবং নিয়ম-শৃঙ্খলার অধীন। প্রকৃতির রাজ্যে যে শৃঙ্খলা বিরাজিত তারই শাসনে মানুষের দেহ-মনে আসে অনিবার্য ক্রমবিবর্তন। কোনো মানুষ সেই নিয়মকে অস্বীকার করতে পারে না। শৈশবকালই মানবজীবনে প্রবেশের সিংহদ্বার। কাজেই শৈশবের শুভলগ্নেই নিয়মানুশীলনের শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। মানবজমিনে সোনা ফলাতে হলে চাই নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবোধের বিশ্বস্ত অনুশীলন। কঠিন নিয়মের বাঁধনে বাঁধতে না পারলে পরিবারে ভাঙন ধরে, সমাজ টিকে এই রাষ্ট্র বিপর্যস্ত হয় হয়ে পড়ে। সভ্যতা যতই প্রসার লাভ করেছে মানুষের সামাজিক আচরণবিধি ততই বিশিষ্ট রূপ পেয়েছে। অসভ্য, অর্ধসত্য ও সুসভ্য সমাজের চেহারাটি সঠিক চিনে নিতে পারা যায় সে সমাজের নিয়ম শৃঙ্খলা লক্ষ করে। জনগোষ্ঠীর সুশৃঙ্খল কার্যক্রম তার উন্নত সভ্যতার পরিচয় বহন করে।

শৃঙ্খলার শ্রেণিবিভাগ: জীবনে শৃঙ্খলাবোধকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—দেহ গঠনে শৃঙ্খলাবোধ এবং মনোগঠনে শৃঙ্খলাবোধ। সুস্থ জীবনের জন্য এ দুটিই অপরিহার্য। দেহকে সুস্থ রাখতে আমাদের খাদ্যাভ্যাস, নিদ্রা, এবং দৈহিক পরিশ্রমে শৃঙ্খলা প্রয়োজন। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়মে চলে, তাই শারীরিক সুস্থতার জন্য কাজ, আহার ও বিশ্রামের মধ্যে শৃঙ্খলা জরুরি। তেমনি মনোগঠনের ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলাবোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ হিসেবে আমাদের নিজেদের, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধ রয়েছে, যা মানবিকতারই অংশ। এ দায়িত্ববোধের বিকাশ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মনের সঠিক বিকাশও জরুরি।

সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা : প্রতিটি কর্মানুশীলনের আছে একটি বিশেষ ধারাক্রম, যার নাম ছন্দ। সে ছন্দই শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা, সে ছন্দই সাফল্যের পুরোহিত। শৈশব থেকে মানুষকে সমাজে বিচরণ করতে হয়, গ্রহণ করতে হয় নানা সামাজিক দায়িত্ব। কিন্তু সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি খেয়াল-খুশিমতো যথেচ্ছাচার শুরু করে, তাহলে সমগ্র সমাজটাই উচ্ছৃঙ্খলতার উন্মাদাগারে পরিণত হবে। অবিশ্রান্ত সংঘর্ষে মানবজীবনের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। সৌরজগতে নিয়মের সামান্যতম বাতিক্রম যেমন সর্বধ্বংসী বিপর্যয় ঘটাতে পারে, তেমনই নিয়মের বাতিক্রমে সমগ্র মানবজীবনে ঘনিয়ে আসতে পারে এক ঘোরতর বিশৃঙ্খলা।

পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলা : পরিবার সমাজের এক একটি ক্ষুদ্র পংক্তি। পারিবারিক শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে সামাজিক শৃঙ্খলা আসে। তাই পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রতিটি মানুষের উচিত পারিবারিক নীতিকে গুরুত্ব দেওয়া, যা মানুষের জীবনে সামগ্রিকভাবে শৃঙ্খলা এনে দেয়।

ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাবোধ : ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাবোধ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বলা যায়, ছাত্রজীবনই নীতিচেতনা-নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবোধ অনুশীলনের প্রকৃষ্ট সময়। অল্প বয়সে ছাত্রদের মানসিক বৃত্তিসমূহ কোমল থাকে, বলা যায় এক থাল কাদার মতো। কাদামাটি থেকে যেমন দক্ষ শিল্পী সুন্দর মূর্তি নির্মাণ করতে পারেন তেমনই উপযুক্ত নীতিনিয়মে শৃঙ্খলা রক্ষায় ছাত্রও উপযুক্ত হয়ে ওঠে— হয়ে ওঠে প্রকৃত মানুষ । প্রকৃতপক্ষে শৃঙ্খলাবোধ জীবন বিকাশের উজ্জীবন মন্ত্র। এবং ছাত্রকাল থেকেই জীবন উপযুক্তরূপে গঠিত হতে থাকে। তাই ছাত্রজীবনই জীবন গঠনের পরবর্তীকালে যথার্থ মানুষ হয়ে ওঠার প্রকৃত সময়কাল। সৈন্যদলের মতো ছাত্রদেরও মেনে চলতে হবে নিয়ম ও শৃঙ্খলা। নিয়ম-শৃঙ্খলা গড়ে তোলে সেনাবাহিনীকে তাদের জয়ের সম্মুখীন করে; নিয়মনিষ্ঠা এবং শৃঙ্খলাবোধ এভাবেই ছাত্রদেরও জয়ী করে, জীবনে সার্থকতা এনে দেয়। বিশিষ্ট যোদ্ধা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন বলেছিলেন – “শৃঙ্খলাবোধই সেনাবাহিনীর মূল শক্তি। শৃঙ্খলা স্বল্পসংখ্যক সৈন্যকে অদম্য করে, দুর্বলকে এনে দেনয় জয়, সকলকে অর্পণ করে মর্যাদা। ” “Discipline is the soul of an army. It makes small number formidable, procures success to the weak and esteem to all. অধ্যয়নকক্ষে পাঠ ও গঠনক্ষেত্রে প্রাতাহিক জীবনচর্চায় ছাত্রদেরও নিয়ম শৃঙ্খলা কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে। সব ছাত্র হয়তো মেধাবী নয়, অর্থ সামর্থ্যও সবার বেশি থাকে না, কিন্তু ছাত্র যদি নিয়মনিষ্ঠ জীবনযাপন করে, শিক্ষাক্ষেত্রে যদি উপযুক্ত শৃঙ্খলা মেনে চলে, জীবনযাপনেও যদি তার প্রয়োগ ঘটায়; তবে ছাত্র ভবিষ্যতের শ্রেষ্ঠ নাগরিক, শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকরূপে গড়ে উঠতে পারে। উচ্চ ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা অনেক স্বাধীনতা পায়, কিন্তু মনে রাখতে হবে সে স্বাধীনতা প্রকৃতপক্ষে আত্ম- উপলব্ধি ও আত্ম-বিতর্কের উপাদান। স্বাধীনতা তাকে লক্ষ্যচ্যুত বিপথগামী করবে না, তাকে উদ্বুদ্ধ করবে কর্মে, মনুষ্যত্বে। ছাত্রদের মনে রাখতে হবে – “Liberty is a beloved discipline” – George Casper Homans.

বর্তমানে ছাত্র-উচ্ছৃঙ্খলতার কারণ : সম্প্রতি ছাত্রসমাজের উচ্ছৃঙ্খলতায় সবাই উদ্বিগ্ন। তাদের উচ্ছৃঙ্খলতার কলঙ্কিত স্বাক্ষর পড়ে পরীক্ষাগৃহে, বাসে, রেলে, পথেঘাটে, সমাজজীবনের অলিতে গলিতে। ছাত্রসমাজ অগ্রযাত্রীর দল। তারা স্বভাবতই অগ্রসর হতে চায়, চায় কর্মব্যস্ততা। কিন্তু যেখানে অগ্রসরের পথ রুদ্ধ, সেখানে কর্মহীনতার বিশাল অবকাশ মানসক্ষেত্রকে শয়তানের কারখানায় পরিণত করে। দেশব্যাপী আশাহীনতা, কুরুচি ও দুর্নীতিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ছাত্রসমাজকে উচ্ছৃঙ্খলতার পথে পরিচালিত করে। ছাত্রসমাজে যদি শৃঙ্খলাবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তবে তাদের উচ্ছৃঙ্খলতার মূল কারণগুলোকে খুঁজে নিয়ে তা বিলুপ্ত করতে হবে। ছাত্রসমাজেরও মনে রাখতে হবে যে, ছাত্রজীবনই জীবন গঠনের প্রকৃত সময়, জীবনের প্রস্তুতির কাল। এসময় থেকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন না করলে ভবিষ্যতে জীবন শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে না, উন্নতির চরম শিখর স্পর্শ করবে না।

উপসংহার : শৃঙ্খলা মানুষকে সংযত করে, সভ্য করে, তার জীবনে আনে স্থিরতা। জীবনে শৃঙ্খলা না থাকলে মানুষই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, এতে সমগ্র সমাজ অস্থির হয়ে ওঠে। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, সমাজ ও পরিবারের প্রতি কর্তব্য পালনে, নিজের আত্ম-অনুশাসনে নিয়মানুবর্তিতা একান্ত প্রয়োজন। “The rule of conduct for a man is the rule of morals” — Goodel

আশা করি এই রচনাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আরও অনেক রচনা পড়তে চাইলে, দয়া করে আমাদের ওয়েবসাইটে ঘুরে আসুন। নতুন এবং আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে আসছি প্রতিনিয়ত।


Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.