ভূমিকা: বিদ্যুৎ আমাদের আধুনিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই রচনায় বিদ্যুতের ভূমিকা ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ে জেনে নিই বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবনের সম্পর্ক।
বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন রচনা ১
ভূমিকা : জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি ও অবদানগুলোর মাধ্যমে আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের। এবং সেই বিজ্ঞানের সোনালী উদ্ভাবন হলো বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎই আধুনিক বিজ্ঞান ও সভ্যতাকে পৌঁছে দিয়েছে শব্দাতিগ (supersonic) যুগে এবং জৈব প্রযুক্তির (Bio-technology) অসীম সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে। বিদ্যুৎ ছাড়া বর্তমান বিজ্ঞানের অগ্রগতি কল্পনাও করা যায় না। আধুনিক সভ্যতার চালিকা শক্তি হলো বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎবিহীন সভ্যতা হয়ে পড়বে অস্পষ্ট, নিথর এবং নিষ্প্রাণ। বিদ্যুৎ ছাড়া সভ্যতার সমস্ত গতি ও প্রযুক্তি মুহূর্তেই থমকে যাবে। এ কারণেই বিদ্যুৎকে আধুনিক প্রযুক্তির জন্মদাতা বলা হয়।
আধুনিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ ও বিদ্যুৎ : আধুনিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের মূলে বিদ্যুতের ভূমিকা অনন্য। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুতের অপরিহার্য ব্যবহার। সুইচ টিপলেই জ্বলে ওঠে আলো। সে আলোর এমনই শক্তি যে স্টেডিয়ামে রাতের বেলায় দিনের ফুটবল খেলা যায়। প্রচণ্ড গরমে স্বাচ্ছন্দ্য আনে বৈদ্যুতিক পাখা। আরও শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ ঘরবাড়িতে, গাড়িতে, ট্রেনে, বাসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় টেলিফোন, টেলিগ্রাফের মাধ্যমে বিপ্লবের সূচনা করেছে বিদ্যুৎ। তারই সর্বাধুনিক উদ্ভাবন ই-মেইল, যা মুহুর্তেই পৃথিবীর অপর প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে। বিদ্যুতের সাহায্যে মানুষ খাবার সংরক্ষণ রাখতে পারছে ফ্রিজে। শুনতে পারছে বেতার অনুষ্ঠান। মানুষের বিনোদন চাহিদা মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভিসিডি ইত্যাদির অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারছে। এভাবে আধুনিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ রাখছে অসামান্য অবদান।
শিল্পোৎপাদনে বিদ্যুৎ : দেশে দেশে আজ স্বল্প খরচে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে কাজে লাগানো হচ্ছে শিল্পোৎপাদনে। বিশাল বিশাল সব যন্ত্রদানব আজ বিদ্যুৎ শক্তির বলে পরিণত হয়েছে মানুষের ক্রীতদাসে। বৈদ্যুতিক তথা ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সারা বিশ্বের উৎপাদন-ব্যবস্থা। এর ফলে শিল্প ও কৃষি উৎপাদন বহু গুণে বেড়েছে। বিদ্যুতের সাহায্যেই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বিমান ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প। বিশালাকৃতি যেসব জাহাজ সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছে, যেসব ডুবোজাহাজ সমুদ্র তলে বিচরণ করছে সেগুলো চলছে বিদ্যুৎশক্তিতে। সভ্যতার পুরোভাগে যন্ত্রশিল্প যত বিকশিত হচ্ছে বিদ্যুতের ব্যবহারও তত বাড়ছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিদ্যুৎ : চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিদ্যুতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি তৈরি করতে বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রোগ নির্ণয়, উপশম এবং নিরাময়ে বিদ্যুৎ-চালিত যন্ত্রপাতি অসাধারণ অবদান রেখেছে। এক্স-রে, ইলেকট্রো কার্ডিওগ্রাম, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইকো কার্ডিওগ্রাম, ক্যাটসক্যান ইত্যাদি রোগ নির্ণয়ের যন্ত্র এবং পরমাণু চিকিৎসাসহ নানা ধরনের থেরাপি চিকিৎসা-বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এসব সবই বিদ্যুৎ নির্ভর।
মহাকাশ অভিযানে বিদ্যুৎ : মহাকাশ অভিযান ও মহাকাশ বিজয়ে মানুষের সমস্ত সাফল্যের মূলে বিদ্যুতের অবদান বিস্ময়কর। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম গণনা, নির্ভুল দিকস্থিতি নির্ণয়, পরিমিত তাপমাত্রা সংরক্ষণ এবং মহাকাশ অভিযানের হুবহু ছবি পৃথিবীতে প্রেরণ ইত্যাদির মতো অকল্পনীয় কাজ এখন বাস্তবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে বিদ্যুৎ। গ্রহে-উপগ্রহে বিভিন্ন নভোযান ও নভোখেয়া উৎক্ষেপণও চলছে বিদ্যুতের সাহায্যে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা (NASA) সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক প্রযুক্তিনির্ভর।
যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ : যাতায়াত ব্যবস্থায় অভাবনীয় উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করছে বিদ্যুৎ। বৈদ্যুতিক ট্রেন ও পাতাল রেল দিনকে দিন আয়ত্ত করেছে অভাবনীয় গতি। বুলেট ট্রেন, বিলাসবহুল আরামপ্রদ এয়ারবাস ও শব্দাতিগ বিমান পৃথিবীর এপ্রান্ত এবং ওপ্রান্তের দূরত্ব কমিয়ে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে বিপ্লব।
অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ : বিশ্বের যে কোনো দেশে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র বিদ্যুৎ ছাড়া আজ কাজ করতে পারে না। আধুনিক সভ্যতার আরেক অসাধারণ অবদান, যন্ত্রমানব রোবট, তার কাজও চলে বিদ্যুতের সাহায্যে। সাগর তলের রহস্য উদঘাটনসহ অনেক অসাধ্য ও বিপদজনক কাজে রোবট মানুষকে সাহায্য করছে। বর্তমানে বিস্ময়কর যে জৈব-প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে, তার পেছনেও পরোক্ষভাবে বিদ্যুৎ কাজ করছে। বিশ্বের বহুল আলোচিত পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতেও বিদ্যুৎ অপরিহার্য। আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জিন প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে, আর তার জন্যও প্রয়োজন বিদ্যুৎ। এক কথায়, বর্তমান সভ্যতা ও আগামী প্রজন্মের অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ ও বাংলাদেশ : অত্যধিক জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক মেরুকরণ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা-পীড়িত বাংলাদেশের বিদ্যুতের ঘাটতি একটা বড়ো সমস্যা। এ ঘাটতি সমাধানে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া বিদ্যুৎ ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে এবং চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে অনুৎপাদনশীল খাতে বিদ্যুতের অপচয়ও একটি বড় সমস্যা। ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকছি।
উপসংহার : জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে হলে এবং উন্নয়ন প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে গেলে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের চলবে না। তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশ আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতির ধারা থেকে ছিটকে পড়েছে বিদ্যুতের অভাবে। আমাদের দেশেও বিদ্যুৎকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে না পারলে অগ্রগতি ব্যাহত হবে। উপরন্তু অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কবল থেকে জনগণ বেরিয়ে আসতে পারবে না। তাই বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করা এবং উন্নয়ন প্রযুক্তিতে বিদ্যুতের ব্যবহারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগ দরকার। বিদ্যুৎ ছাড়া প্রযুক্তি এখন অকল্পনীয়। আর প্রযুক্তির ছোঁয়া না পেলে আমাদের দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে না।
বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন রচনা ২
(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)
উপস্থাপনা: আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। আর এ বৈজ্ঞানিক যুগের এক বিশিষ্ট আবিষ্কার হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের এ আবিষ্কারে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সূচিত হয়েছে এক কালজয়ী অধ্যায়। এর অবদানে মানবজীবন ও সভ্যতার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এর শক্তি গোটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে মানুষের হাতের মুঠোয়, আমাদের আধুনিক জীবনকে করেছে আরো অত্যাধুনিক। এর অভাব আমাদের কর্মচঞ্চল দিনকে করে দেয় স্থবির, প্রাত্যহিক জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ।
বিদ্যুতের আবিষ্কার: বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে বিদ্যুৎ শক্তি আবিষ্কার করেন । আর এ বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োগ-কৌশল কার্যকর করেন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। বর্তমান সভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতি সাধনে ফ্যারাডে ও এডিসনের এ আবিষ্কার এক অনন্য অবদান ।
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের গুরুত্ব : বর্তমান সভ্যতার সমৃদ্ধির চাবিকাঠি হলো বিদ্যুৎ। পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে আধিপত্যে আনার জন্য মানুষ বিদ্যুৎকে বিভিন্ন দিক থেকে ব্যবহার করছে। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন অর্থহীন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ব্যবহার অসীম। এটি ছাড়া আমরা আধুনিক জীবন কল্পনাও করতে পারি না।
১. বৈদ্যুতিক পাখা : গ্রীষ্মের উষ্ণ আবহাওয়ায় আমাদেরকে প্রশান্তি এনে দেয়ার ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক পাখার গুরুত্ব অত্যধিক । এটি ছাড়া আমরা একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না। আর এর প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ।
২. বৈদ্যুতিক বাতি : বৈদ্যুতিক বাতি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মধ্যে একটি। আমাদের বাসগৃহ, অফিস আদালত ইত্যাদিকে আলোকিত করতে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । এটি ছাড়া শহর-বন্দরকে একটি ভূতুড়ে জনপদ বলে মনে হয়।
৩. রেফ্রিজারেটর ও এয়ার-কন্ডিশনার : রেফ্রিজারেটর বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর অবদান। এতে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা হয়। আবার আবহাওয়ার উষ্ণতা শোষণ করে আমাদের বাসগৃহ ও অফিস আদালতকে শীতল ও আরামপ্রদ করার কাজে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহৃত হয়, যা বিদ্যুতের সাহায্যেই চলে ।
৪. বেতার ও টেলিভিশন : রেডিও টেলিভিশন হচ্ছে এমন দুটি উপকরণ, যাদের সাহায্যে আমরা দেশ-বিদেশের চলতি ঘটনাবলির খবরা খবর জানতে পারি । তাছাড়া এগুলোতে চিত্তবিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্যাদি প্রচার করা হয় । আর এ যন্ত্রগুলোর কার্যক্রম বিদ্যুতের সাহায্যই সম্পাদিত হয় ।
৫. টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স ও ই-মেইল : দূরবর্তী স্থানে সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স ও ই-মেইল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মূলে রয়েছে বিদ্যুৎ।
৬. কম্পিউটার : বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে- কম্পিউটার। এটি দ্রুত ও নির্ভুল গণনা করে তথ্য রাখে। আজকাল ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা শাস্ত্র, খেলাধুলা, প্রকাশনা মাধ্যম, শিল্প-কারখানা, শিক্ষা, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে ব্যাপক হারে। আর মানব সভ্যতার অগ্রদূত কম্পিউটারের এসব কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে বিদ্যুৎ শক্তির অবদান ।
৭. মুদ্রণশিল্প : জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশের জন্য মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার বিজ্ঞানের একটি বিষ্ময়কর সাফল্য। আর মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে আজ হাজারো জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই প্রকাশিত হচ্ছে, যা আমাদের সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। মুদ্রণযন্ত্রের এসব কর্মকান্ড বিদ্যুতের সাহায্যে সম্পাদিত হচ্ছে।
৮. শিল্পোন্নয়নে বিদ্যুৎ : আধুনিক সভ্যতার উন্নত জীবনযাপনের পূর্বশর্ত হলো শিল্পোন্নয়ন। এবং এই শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ। কারণ, বিদ্যুৎ ছাড়া কল-কারখানা চালু করা সম্ভব নয়। কল-কারখানার স্থবিরতা দূর করে শিল্পোৎপাদনে গতি সঞ্চারের মূল দিক হলো বিদ্যুৎ।
৯. যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ : যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর ও দ্রুত করার লক্ষ্যে প্রগতিশীল দেশগুলো তৈরি করেছে রেলগাড়ি ও আধুনিক কনকর্ড বিমান, যেগুলো তৈরির মূলে রয়েছে বিদ্যুতের অবদান ।
১০. চিকিৎসাক্ষেত্রে বিদ্যুৎ : সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে চিকিৎসাক্ষেত্রে যে উন্নতি সাধিত হয়েছে তাতে বিদ্যুতের ভূমিকা অপরিসীম । কারণ মানবদেহের জটিল রোগ-ব্যাধি; যেমন- যক্ষ্মা, আলসার, ক্যান্সার নিরসনে এবং কিডনী অপসারণ ও সংযোজন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় সেগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চালিত হয়ে থাকে ।
১১. বিদ্যুতের ক্ষতিকর দিক : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের অসংখ্য উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে । অনেক সময় বিদ্যুৎ কেড়ে নেয় মানুষের মূল্যবান জীবন । তাছাড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডের ফলে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ধন-সম্পদ, শিল্প কারখানা ও উৎপাদিত শিল্প দ্রব্য ।
উপসংহার : বিদ্যুৎ আধুনিক জীবন ও সভ্যতায় মূল চালিকাশক্তি। এটি ছাড়া উন্নত ও অভিলাষী জীবন কল্পনা করা যায় না। মাইকেল ফ্যারাডে বলেন, “Electricity is the soul of civilization.” অর্থাৎ, বিদ্যুৎ হচ্ছে সভ্যতার প্রাণ । সুতরাং জাতীয় জীবনে উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যুতের স্বাভাবিক উৎপাদন ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন রচনা ৩
(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)
ভূমিকা: সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের চরম উৎকর্ষে বিদ্যুতের ভূমিকা অপরিসীম। বিদ্যুতের অপরিমেয় শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই মানবজাতি সভ্যতার আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। মানুষের বর্তমান জীবনব্যবস্থার এমন কোনো দিক নেই যেখানে বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে যত বিষয় জড়িত, সব বিষয়েই বিদ্যুৎ এমনভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে যে, একটি মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ এটা ছাড়া ভাবতে পারে না। ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্পকলকারখানা, চিকিৎসা, কৃষি, বিনোদন, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং বিজ্ঞানের বহুবিধ অবদানের চালিকাশক্তি হিসেবে বিদ্যুৎ আজ মূল ভূমিকায় চলে এসেছে। এককথায় বিদ্যুতের অফুরন্ত শক্তি আর সম্ভাবনা বর্তমান সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের উৎকর্ষে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছে যা অবিচ্ছেদ্য।
বিদ্যুৎবিহীন পৃথিবী: বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পূর্বে পৃথিবীর অবস্থা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন । মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং জীবনধারণের উপায় ও পদ্ধতি ছিল খুবই জটিল। নানা কুসংস্কার মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল বলে মানুষ উন্নতির দিকে যেতে পারছিল না। তাদের কৃষি, যোগাযোগ এবং দৈনন্দিন জীবনব্যবস্থা ছিল দুর্বিষহ।
বিদ্যুৎসেবিত পৃথিবী: বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর পৃথিবী যেন আলোর ঝলমলে জগতে পরিণত হলো। মানুষ পেল অগ্রগতির সঠিক বাহন, এবং সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসলো। এই পরিবর্তন ছিল উন্নয়নমুখী, যা মানুষের চিন্তা-চেতনায় ও জীবনযাপনের পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মানুষ অনেক অসাধ্যকে সাধন করতে সক্ষম হলো। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনাকে নিয়ন্ত্রণে আনা, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি, এবং কায়িক শ্রমের সাশ্রয় সম্ভব হলো বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি মানুষের সময় বাঁচিয়ে দিলো এবং দূরত্ব কমিয়ে মানুষে-মানুষে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করলো। মোটকথা, বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর পৃথিবী নতুন আঙ্গিকে সজ্জিত হলো।
গৃহস্থালির প্রয়োজনে বিদ্যুৎ: আজ বিদ্যুৎ মানবজীবনের নানা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের নিপুণ কারিগর। বৈদ্যুতিক বাতি, বৈদ্যুতিক পাখা, টেলিগ্রাম, টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন সবই বিদ্যুতের বিস্ময়কর অবদান। বিদ্যুতের সাহায্যে ঘরের কোণে আজ দূর-দূরান্তের পৃথিবীকে প্রত্যক্ষ করতে পারি, অনায়াসে তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। বিভিন্ন রোগ ব্যাধিকে জয়ের কাজেও বিদ্যুৎ লাগিয়েছে তার আরোগ্যময় হাত। বিদ্যুৎ রাত্রির অন্ধকারকে আলোকিত করেছে, তাপদগ্ধ গ্রীষ্মের নিদারুণ অস্বস্তির অবসান ঘটিয়ে ঘোরাচ্ছে পাখা, চালাচ্ছে এয়ার কুলার, বাসগৃহকে করেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত । রান্নাবান্নায়ও বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কৃষি ও শিল্পে বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ আজ বিশ্বের উৎপাদনের ইতিহাসে এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। আজ কলকারখানায় দ্রুততর উৎপাদনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বিদ্যুতের কল্যাণেই। কুটিরশিল্প ও ক্ষুদ্রায়তন শিল্পগুলোতেও বিদ্যুতের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একে কাজে লাগিয়ে ছোট বড় অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এতে করে মানুষের একদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে মানুষ তার ভোগ্যপণ্যসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে। কৃষিকাজে বিদ্যুতের অবদান কম নয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃষিকাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি সূচিত হয়েছে ।
সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিদ্যুতের অবদান: সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিদ্যুতের অবদান অপরিসীম। বিদ্যুৎই আজ চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতি সম্ভব করেছে। এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মির মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভব হয়েছে, যা অনুমাননির্ভরতা থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞাণকে মুক্তি দিয়েছে। এছাড়া, বিদ্যুৎ-চালিত রশ্মির মাধ্যমে ক্যানসারসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা করা হচ্ছে। লেজার রে আজ আধুনিক শল্যচিকিৎসার অন্যতম উপকরণ। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা সভ্যতার অন্যতম স্তম্ভ, তা বিদ্যুৎ দ্বারা বিপ্লবিত হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিবহন ও যানবাহনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, যা স্থল, জল ও আকাশপথে গতিময়তা নিয়ে এসেছে। গগনচুম্বী অট্টালিকায় লিফট মানুষের ওঠা-নামাকে সহজ করেছে এবং বন্দর বা রেল স্টেশনে মাল উঠানো-নামানো সহজ হয়েছে। টেলিগ্রাম, টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার, ই-মেইল—এসব প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুততর করেছে, যা সম্ভব হয়েছে বিদ্যুতের সাহায্যে। জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিন এখন অতীত। আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিকরা পৃথিবীর খরস্রোতা নদীগুলোকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাধা দেওয়ার মাধ্যমে অফুরন্ত জলবিদ্যুৎ খুঁজে পেয়েছেন, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। বর্তমানে পরমাণু বিদ্যুৎ উন্নত দেশগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও সুবিধাজনক করেছে। মহাকাশ অভিযানেও বিদ্যুতের অবদান চমকপ্রদ। মহাকাশের হুবহু ছবি প্রেরণ, সূক্ষ্মতর তথ্য সরবরাহ, তাপমাত্রা সংরক্ষণ, নির্ভুল দিকনির্দেশ প্রভৃতি বিদ্যুতের সাহায্যে সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা (NASA) সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক প্রযুক্তিনির্ভর রোবটের সাহায্যে কাজ করে, যা বিপজ্জনক কাজগুলো সমাধান করতে সাহায্য করে। সাগরতলের রহস্য উদঘাটনে রোবট মানুষের মতো কাজ করছে। পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগানোও সম্ভব হয়েছে বিদ্যুতের সাহায্যে, এবং জিন প্রযুক্তিও বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল।
উপসংহার: সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে এমনকি অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে বিদ্যুতের কোনো বিকল্প নেই । বিদ্যুতের সঠিক ও সর্বজনীন ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে সভ্যতাকে আরও কয়েক ধাপ যেমন এগিয়ে নেওয়া যাবে, তেমনি সকল মানুষ বিদ্যুতের দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।
উপসংহার: আশা করি, এই রচনা পড়ে তোমাদের ভালো লেগেছে। আরও সুন্দর ও দরকারি রচনা পড়তে ভিজিট করো StudyTika.com। এখানে তোমাদের জন্য রয়েছে আরও অনেক রচনা!