চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

ভূমিকা: বিজ্ঞান আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। এই ব্লগপোস্টে “চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান” নিয়ে একটি সুন্দর ও বিস্তারিত রচনা রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা ১

ভূমিকা: বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিশ্ব সভ্যতার উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। আধুনিক সভ্যতার ভিত্তিই গড়ে উঠেছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ওপর। আদিম যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অসাধারণ অবদান রেখেছে। বিশেষ করে, সভ্যতার বিকাশে দুটি আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—মুদ্রণযন্ত্র ও বিদ্যুৎ। এই বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞানের উন্নতির পথ আরও প্রসারিত হয়েছে। বিশেষত, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।

উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির ফলে মানুষের জীবন রক্ষা ও সুস্থ থাকার সুযোগ বহুগুণ বেড়েছে। ‘Health is wealth’—অর্থাৎ ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ কথাটি সর্বজনবিদিত। প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হলেও যদি স্বাস্থ্য ভালো না থাকে, তাহলে প্রকৃত সুখ পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষের এই মূল্যবান সম্পদ, অর্থাৎ স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির আবির্ভাব ঘটছে, যা দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিজ্ঞান শব্দের অর্থ: বিজ্ঞান শব্দের অর্থ হলো বিশেষ জ্ঞান। অনুসন্ধান প্রিয় মানুষের বস্তুগত বিষয় সম্পর্কে ধারণা এবং বিভিন্ন কৌশলে তার ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা থেকেই নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে। এরূপ প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে কার্যকারণ সম্পর্ক। আর এ ধরনের যুক্তিযুক্ত আবিষ্কারকেই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বলা হয়। বিজ্ঞানের নানাবিধ আবিষ্কারের পেছনে কাজ করছে মানুষের প্রয়োজন, মানুষের কল্যাণ ও মানুষের বিকশিত হবার দুর্নিবার ইচ্ছা। বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনে সাথে বিজ্ঞান এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে, বিজ্ঞানই যেন মানবজীবনের গতি নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত সৃষ্টিমুখর হয়ে উঠছে।

সভ্যতার উৎকর্ষে বিজ্ঞানের যাত্রা : সভ্যতার বিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর বিকাশ। যেদিন মানুষ আগুন আবিষ্কার করল, ঠিক সেদিন থেকেই বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। বিজ্ঞান মানুষের সীমাবদ্ধতা দূর করে উন্নত জীবনযাপনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মূলত সহস্র বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমানে বিজ্ঞান লাভ করেছে পূর্ণতর সমৃদ্ধি।

প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা: প্রাচীনকালে মানুষ ছিল অসহায়। তখন রোগ নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা ছিল না বলে সামান্য রোগেও মানুষের করুণ পরিণতি ঘটত। চিকিৎসার জন্য তাদের প্রকৃতির শরণাপন্ন হতে হতো। অসুস্থতার সময় তারা বিভিন্ন গাছ-গাছালি, তাবিজ, কবজ, দোয়া- কালাম, পানি পড়া এবং ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তখন মানুষের জীবনও ছিল খুবই সংকটাপন্ন। মানুষের মতো ইতর প্রাণীরাও ছিল অসহায়।

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সূচনা: আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে মানুষের ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে প্রাচীন পদ্ধতির কবিরাজি চিকিৎসার স্থলে হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভাবন করা হয়। পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন ইত্যাদি ঔষধ আবিষ্কারের ফলে মানুষ তথাকথিত শাস্ত্রীয় চিকিৎসা, তাবিজ-কবজ ও ঝাড়ফুকের মতো কুসংস্কারের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এসব। চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিক বিজ্ঞানেরই বিস্ময়কর অবদান।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান: বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। অধ্যাপক রঞ্জনের আবিষ্কৃত রঞ্জন রশি', অধ্যাপক কুরি ও মাদাম কুরি আবিষ্কৃত 'রেডিয়াম' বিজ্ঞান জগতে যুগান্তর এনেছে। পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন ও স্ট্রেপটোমাইসিন ইত্যাদি মহৌষধ মানুষকে নানা প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে রক্ষা করছে। বসন্তের জীবাণু ধ্বংস করার জন্য জেনর ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন। এছাড়া আধুনিক কম্পিউটারের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় কৌশল চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবিশ্বাস্য সাফল্য এনে দিয়েছে।

রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান: প্রাচীনকালে মানুষের দেহে কোনো রোগব্যাধি হলে তা নির্ণয়ের ব্যবস্থা ছিল না। চিকিৎসকরা তখন নিজেদের মন গড়া অভিজ্ঞতার সাহায্যে ঔষধপত্র নির্ধারণ করতেন। ফলে অনেক সময় ঠিক চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠত না। কিন্তু কালক্রমে রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসা পদ্ধতি অনেকটা সহজতর হয়েছে। অধ্যাপক রঞ্জনের আবিস্কৃত রঞ্জন রশ্মি, এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাফি এবং অধ্যাপক কুরি ও মাদামকুরি আবিস্কৃত রেডিয়াম চিকিৎসাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। রঞ্জন রশ্মির সাহায্যে শরীরের অদৃশ্য বস্তু দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এবং রেডিয়ামের সাহায্যে ক্যানসারের মতো ভয়ংকর ক্ষতের স্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। এক্স-রে মেশিন না হলে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হতো এবং এর ফলে সুচিকিৎসা কোনোদিনই সম্ভব হতো না। তাছাড়া রোগীর রক্ত, মল-মূত্র ইত্যাদি উপাদান পরীক্ষার জন্য আধুনিক যেসব পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, তাও বিজ্ঞানেরই অবদান। বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমেও রোগ নির্ণয়ের সুন্দর ব্যবস্থ। আবিস্কৃত হয়েছে। ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: এমন কিছু রোগব্যাধি আছে, যা প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞান পূর্বেই ব্যবস্থা নির্দেশ করেছে। যেমনশিশুর জন্মের পর বিভিন্ন মেয়াদে ডিপিটি পোলিও, হাম, গুটি বসন্ত, যক্ষ্মা, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস ইত্যাদি টিকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেক রোগ দেহে সৃষ্টি হওয়ার আগেই প্রতিরোধক ব্যবহৃত হচ্ছে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে অগণিত শিশু রক্ষা পাচ্ছে।

রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান: রোগ নির্ণয় এবং রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থাই চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড়ো অবদান। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বড়ো সাফল্য হলো বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য নানা রকম ঔষধপত্রের আবিষ্কার। এক সময় দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। বিজ্ঞান সেসব রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। যেমন- যক্ষ্মার ব্যাপারে একটি প্রবাদ বাক্য প্রচলিত ছিল যে, যার হয় যক্ষ্মা তার নেই রক্ষা'। এখন আর যক্ষ্মা কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। তাছাড়া ভয়ংকর জলাতংক রোগ, কুষ্ঠরোগ ইত্যাদি নিরাময়ের জন্যও বিজ্ঞান কার্যকর ঔষধ ও ইনজেকশন আবিষ্কার করেছে। বর্তমান বিশ্বে যে দুটি রোগ সবচেয়ে দুরারোগ্য বলে গণ্য হচ্ছে তা হলো ক্যানসার ও এইডস। এই দুই রোগের চিকিৎসার কোনো সুব্যবস্থা করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়ে। উঠেনি। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এর প্রতিরোধের উপায় নিরূপণের জন্য। এক কালের মহামারি বসন্ত রোগ থেকে মুক্তির জন্য আবিস্কৃত হয়েছে ভ্যাক্সিন। মানবদেহে অন্য মানুষের হৃৎপিণ্ড সংযোজনের মতো অলৌকিক ক্ষমতা বিজ্ঞানেরই এক বিস্ময়কর অবদান। এখন আবার কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড তৈরি করা হচ্ছে এবং রোগীর দেহে সংযোজন করে তা দীর্ঘদিন। কর্মক্ষম রাখার কৃতিত্বপূর্ণ দৃষ্টান্তও বিজ্ঞানেরই সৃষ্টি। প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে আজকাল অসুন্দর ও অমসৃণ চেহারাকে সুন্দর ও মসৃণ করা হয়। তারুণ্যকে কীভাবে স্থায়ী করা যায়, সে বিষয়েও বিজ্ঞান নিরন্তর গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য রোগের মতো সমস্ত রোগব্যাধি নিরাময়ের ব্যবস্থাই বিজ্ঞান নিশ্চিত করতে পারবে।

বিজ্ঞান চিকিৎসা ক্ষেত্রের বড়ো আশীর্বাদ: বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতায় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞান অনেক অসাধ্যকে বাস্তব রূপ দান করেছে। বিজ্ঞান অন্যান্য ক্ষেত্রে আশীর্বাদ ও অভিশাপ বয়ে আনলেও চিকিৎসাক্ষেত্রে এনেছে শুধু আশীর্বাদ। এ ব্যাপারে কিপলিং বলেন, বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বিশ্বমানবতা কখনো উল্লসিত হয়, আবার কখনো তার বিভীষিকাময় রূপ বিশ্বসভ্যতাকে থামিয়ে দেয়, কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে শুধুই আশীর্বাদ।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নতুন সংযোজন : সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে যা বিশ্ব সভ্যতায় যুগান্তকারী প্রভাব ফেলেছে। জেনেটিক টেকনোলজির রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি শনাক্ত করে চিকিৎসা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সৃষ্টির পথ বিজ্ঞান উন্মোচন করেছে। আবার কৃত্রিম রক্ত, প্রোটিন ইত্যাদি আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। টেস্টটিউব শিশুর জন্মদান পদ্ধতিও বর্তমানে বাংলাদেশে চালু হয়েছে। মূলত বিজ্ঞানে তথা চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসম্ভব বলে কোনোকিছুই আর থাকছে না।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যর্থতা: চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান যেমন উন্নতি সাধন করছে পাশাপাশি এর কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান যেমন মানবসমাজের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনছে আবার বিজ্ঞান-সৃষ্ট নানা যন্ত্র সভ্যতার অবাধ বিকাশের কারণে অনেক জটিল রোগেরও জন্ম হচ্ছে, যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বর্তমান সময়ে এইডস একটি মারাত্মক ব্যাধি। বিজ্ঞানীরা এখনও এ রোগের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারেনি। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সম্প্রতি সার্স, ইবোলা ভাইরাসও বিজ্ঞানকে ফাঁকি দিয়ে মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপসংহার: বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতার জন্য একাধারে আশীর্বাদ ও অভিশাপ দুটোই। তবে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান কেবল আশীর্বাদই নিয়ে এসেছে। প্রবাদ আছে যে, 'সুস্থ শরীরে সুস্থ মন বিরাজ করে। মানুষের এ সুস্থ শরীরের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য বিজ্ঞান নিঃসন্দেহে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা ২

ভূমিকা: বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বর্তমানে সকল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করছে বিভিন্ন মাধ্যমে। যার কারণে চিকিৎসা ক্ষেত্রটি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। আগের যুগে উন্নত চিকিৎসার অভাবে অনেক মানুষ মারা যেতেন। এমনকি অসংখ্য রোগের চিকিৎসা ও মিলতো না মানুষদের। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে ইতোমধ্যে অনেক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন।

যার কারণে রোগীর যত্ন নেওয়া সহজ হয়ে যাচ্ছে এবং রোগীরা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ব্যবহারের কারণে অনেক রোগ বালাই কমে গিয়েছে। বর্তমানে যেকোনো ছোট বড় রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। যার মাধ্যমে সহজে রোগ নির্ণয় করা যায়। এগুলো সবই হলো বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অবদান।

১. চিকিৎসকদের দক্ষতা অর্জন: বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে লেখাপড়া করতে যায় এবং বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করে থাকে। বর্তমানে চোখ, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি জটিল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সফলভাবে সার্জারি করতে সক্ষম চিকিৎসকরা। কেননা চিকিৎসকদের কাছে উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান রয়েছে।

২. রোবট এর মাধ্যমে অপারেশন: মাঝে মধ্যে বিভিন্ন রোগীকে জটিল অপারেশন করানো হয়। অনেক ডাক্তার রয়েছেন জটিল অপারেশন করার ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুল করে থাকেন। ডাক্তারের সামান্য ভুলের কারণে একজন মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

কিন্তু বর্তমানে এমনও রোবটিক সিস্টেম চলে এসেছে যার মাধ্যমে একদম সূক্ষ্মভাবে এবং সফলভাবে যেকোনো অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন মেশিন বা রোবটের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। তবে এটি বেশ ব্যয়বহুল। কিন্তু আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে এই মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা সকলের জন্য সহজলভ্য হবে।

৩. অনলাইনে চিকিৎসা: বিজ্ঞানের অন্যতম বড় আশীর্বাদ হলো ইন্টারনেট ও অনলাইন সুবিধা। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা সম্ভব। অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করা যায়। বাংলাদেশে এমন অনেক অ্যাপ ও ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া যায়। বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. রোগীদের যত্ন: বর্তমানে অনেক হাসপাতালে রোগীদের যত্নে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক রোগের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমনকি রোগীর রুমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এয়ার-কন্ডিশন (AC) ব্যবহার করা হচ্ছে।হঠাৎ করে কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে গেলে অনলাইনের মাধ্যমে ডাক্তারের মোবাইল নাম্বার অথবা হাসপাতালের ঠিকানা সহজেই পাওয়া যায়।

এমনকি আপনি যদি কোথাও ভ্রমণে থাকেন, আর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আশেপাশে হাসপাতাল কোথায় রয়েছে তা না জানেন, তাহলে আপনি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে সহজেই জেনে নিতে পারবেন। এগুলো সবই হচ্ছে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অবদান।

৫. ঔষধ উৎপাদন এবং সরবরাহ: বর্তমানে ঔষধ উৎপাদন করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণা চালাচ্ছেন। তবে এটি বেশ কয়েক যুগ আগে থেকেই চলমান। তবে আগের যুগে গবেষণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা তেমন কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি পেতেন না।

কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান উন্নত হওয়ার কারণে গবেষণার জন্য অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছেন। যার মাধ্যমে তারা একসঙ্গে অনেক ঔষধ তৈরি করতে পারে। আর সকল ঔষধ অনেক সহজ লক্ষ্য যা ফার্মেসির দোকানে পাওয়া যায়।

৬. টিকা বা ভ‍্যাকসিন: বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বর্তমানে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরি করে থাকেন বিজ্ঞানীরা। এটি কেবলমাত্র সম্ভব উন্নত গবেষণার মাধ্যমে। আর উন্নত গবেষণার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে বিজ্ঞান।
আরও পড়ুন নতুন শিক্ষাক্রমের সুবিধা ও অ-সুবিধাসমূহ
অর্থাৎ বিজ্ঞান ছাড়া উন্নত মানের গবেষণা করে বিভিন্ন ধরনের টিকা বা ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব নয়। বর্তমান যুগে মানুষ জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের টিকা গ্রহণ করে আসছে। যার মাধ্যমে অনেক ধরনের জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।

৭. কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ: আপনি কি জানেন বর্তমানে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। যেমন হার্ট, কিডনি ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা বর্তমানে হার্টের বিকল্প, কিডনির বিকল্প এবং বিভিন্ন অঙ্গের বিকল্প তৈরি করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বারা।

কিডনি নষ্ট হলে বিজ্ঞানীরা যে কিডনি তৈরি করেছেন সেটি ব্যবহার করে অনেকদিন সুস্থ থাকা যায়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট এর মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।

৮. ক্যান্সার নিরাময়: বেশ কয়েক বছর আগেই ক্যান্সার হলেই মানুষ মারা যেত। কিন্তু বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি বা বিজ্ঞানের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মাধ্যমে ক্যান্সার নিরাময়ের উপায় আবিষ্কার করেছেন।

কেমোথেরাপি, ইমিউনো-থেরাপি এবং রেডিও-থেরাপি এর সাহায্যে ক্যান্সার রোগ ভালো করা যায়। সুতরাং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট এর মধ্যে এই পয়েন্টটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৯. বংশগত রোগ: আমাদের মধ্যে অনেকেই বংশগত রোগের আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অর্থাৎ আপনার পরিবারের বড়দের যদি কোন রোগ হয় তাহলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এটি বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের সাহায্যে ডিএনএ (DNA) বিশ্লেষণ করে এসব রোগ নির্ণয় করে থাকেন। আর বর্তমানে বিজ্ঞানের যুগে বংশগত রোগ নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে বংশগত রোগ অনেক রয়েছে যেমন ডায়াবেটিস, অ‍্যালার্জি, অতিরিক্ত খাটো হওয়া ইত্যাদি।

১০. মানসিক চিকিৎসা: বর্তমান সময়ে শুধু শারীরিক নয় বরং মানসিক চিকিৎসাও করা সম্ভব। বিজ্ঞান এতো দূর এগিয়ে গিয়েছে যে বিজ্ঞানীরা মানুষের মন বোঝার জন্য অনেক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। আর সে অনুযায়ী তারা চিকিৎসা করে থাকেন। সুতরাং কেউ যদি যদি মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তাহলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করা সম্ভব।

১১. প্রজনন চিকিৎসা: বর্তমানে আইভিএফ, সারোগেসি ইত্যাদির মাধ্যমে গর্ভধারণ ছাড়াই সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাহলেই বুঝুন বিজ্ঞান কতদূর এগিয়ে গিয়েছে। তবে এ সকলের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দান করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম একটি কাজ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট এর এটি ছিল ১১ নং পয়েন্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।

১২. মহামারী রোগ নিয়ন্ত্রণ: আগে প্রায়ই মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়ত বিভিন্ন স্থানে। তবে বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে এটি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। সর্বশেষ ভয়াবহ মহামারী দেখা দেয় ২০১৯ সালে, যা করোনা মহামারী নামে পরিচিত। এই মহামারীতে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। তবে উন্নত দেশগুলো দ্রুত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এর নিয়ন্ত্রণে সফল হয়।

১৩. সচেতনতা বৃদ্ধি: বর্তমানে দিন দিন মানুষ অনেক সচেতন হচ্ছে। কেননা মোবাইল অথবা কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি এবং অন্যদের জানিয়ে সতর্ক করতে পারছি। বর্তমানে আপনি যদি কোনো কিছু জানতে চান তাহলে মোবাইলে অথবা কম্পিউটারের মাধ্যমে গুগলে সার্চ করলেই আপনি যা জানতে চান সবই জানতে পারা যায়।

এক্ষেত্রে ইন্টারনেট থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়ে থাকি যা অবলম্বন করলে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে আপনাকে অবশ্যই ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল না হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত যে কোনো চিকিৎসা ক্ষেত্রে।

১৪. দ্রুত হসপিটালে পৌঁছা: সঠিক সময় চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে অনেক রোগী মারা যায়। আর বর্তমানে সাইন্সের যুগে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার অনেক উপায় রয়েছে।

যেমন আপনি যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দ্রুত হসপিটালে যাওয়ার প্রয়োজন পরে, আর আপনি উন্নত জায়গায় অবস্থান করেন, তাহলে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে দ্রুত হসপিটালে পৌঁছতে পারবেন।

১৫. জীবাণুর কার্যকারিতা: মাইক্রোবায়োলজি ও বায়োটেকনোলজির সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জীবাণু সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেগুলোর মাধ্যমে ছড়ানো রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও নতুন ওষুধ আবিষ্কার করছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উন্নতির ধারায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

১৬. রোগ বালাই কম: বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি যার মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। যেমন অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা, অতিরিক্ত খাবার খেলে শরীর মোটা হয়ে যায় এবং বিভিন্ন রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। এছাড়া দাঁড়িয়ে পানি পান করা যাবে না, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কিডনির ক্ষতি হয়। এ সকল তথ্য আমরা বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে পেয়েছি।

১৭. রোগ নির্ণয়: বর্তমানে যে কোনো রোগ নির্ণয় করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। অনেক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা, হরমোন পরীক্ষা করে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। এমনকি বডি স্ক্যান করে পুরো শরীরের যেকোনো স্থানে জটিল রোগ বাসা বাধলে তা সনাক্ত করা সম্ভব।

১৮. বিজ্ঞানীরা অনেক সময় ঔষধ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক নিয়ে কাজ করে। এ সময় সচেতন না থাকলে বিভিন্ন ধরনের নতুন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই দিকটি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

১৯. চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যর্থতা: চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট এরমধ্যে এই পয়েন্টটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক রোগ রয়েছে যার চিকিৎসা এখনো বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি। যেমন এইডস রোগ, সার্চ এবং ইবোলা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগ ইত্যাদি। তবে গবেষণা এখনো চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

২০. বিজ্ঞানের ক্ষতিকর প্রভাব: বিজ্ঞান মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সুবিধাজনক করার জন্য অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে, যেমন মোবাইল ও কম্পিউটার। তবে বর্তমানে অনেক মানুষ এসব ডিভাইসের প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ সময় ব্যবহার করার ফলে চোখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং অনেকে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে।

উপসংহার : বর্তমানের উন্নত বিজ্ঞান আবিষ্কারের ফলে যে কোন ধরনের রোগ নির্ণয় করা ও প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করা সহজ হয়ে গিয়েছে। তবে আমাদের সচেতন হতে হবে যে, ঔষধ মানুষের রোগ ভালো করতে যেমন সাহায্য করে তেমনি ঔষধ যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয় তাহলে এটি শরীরে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা ৩

সূচনা : বিশ্বসভ্যতা বিজ্ঞানের প্রভাবে অনেক দূর এগিয়েছে। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ভূমিকা ব্যাপক। বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতির ধারায় চিকিৎসাক্ষেত্রে এসেছে অকল্পনীয় পরিবর্তন। স্বাস্থ্যই সকল মুখের মূল- একথা খুবই পরিচিতি। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্রমোত্তর সফলতায় মানুষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণে বিজ্ঞান অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষের জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধি প্রশমিত হচ্ছে।

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা : প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সূচনা হয়। আধুনিক চিকিৎসার ধারণা, কৌশল ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিজ্ঞানের ধারাবাহিক অবদানের ফলে কবিরাজি চিকিৎসার পরিবর্তে হোমিওপ্যাথিক ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসার বিকাশ ঘটে এবং তা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে। এর ফলে মানুষ লতাপাতা, পানি-পড়া, দোয়া-তাবিজের মতো প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে মুখ ফিরিয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য বহু কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার করেছে, যার মধ্যে পেনিসিলিন, অ্যাসপিরিন, ক্লোরোমাইসিন ও স্ট্রেপটোমাইসিন উল্লেখযোগ্য।

রোগ নির্ণয় : রোগ নির্ণয় করাই রোগ নিরাময়ের পূর্ব ও প্রাথমিক শর্ত। সঠিক রোগ নির্ণয় করা না গেলে কোনো রোগের চিকিৎসা যথাযথরূপে করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়করণে বিজ্ঞান অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এক্স-রে (রঞ্জনরশ্মি), আলট্রাসনোগ্রাফি প্রভৃতি রোগ নির্ণয়কারী যন্ত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশসমূহকে দৃশ্যমান করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা বিজ্ঞানের একটি অসামান্য অবদান।

রোগ প্রতিরোধ : রোগ নিরাময়ের চেয়ে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোগ প্রতিরোধ। রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে রোগের দুর্বিষহ ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানের আবির্ভাবের ফলে রোগ প্রতিরোধের বহুমুখী ব্যবস্থা আবিস্কৃত হয়েছে। যক্ষ্মা, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হাম, বসন্ত প্রভৃতি রোগের প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। এগুলো আধুনিক বিজ্ঞানেরই অবদান। বর্তমানে ভয়াবহ এইডস রোগ-এর টিকা উদ্ভাবনে জোর প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।

রোগ নিরাময় : আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেরই আশীর্বাদ। প্রাচীন গাছ-গাছালির পরিবর্তে পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভৃতি মহৌষধের আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে কেবল বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির ফলে। তা ছাড়া, নিত্যনৈমিত্তিক সাধারণ ছোটখাটো রোগ, যেমন— জ্বর, সর্দি কাশি, মাথা ধরা বা ব্যথা, জণ্ডিস গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদির জন্য আবিষ্কার করা হয়েছে নানা রকম ওষুধ। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী হেনরি ডেভিড বলেন, “ বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতায় অনেক বিস্ময়কর উপহার দিয়েছে।” আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা হলো এ বিস্ময়ের অন্যতম ।

জটিল রোগ : চিকিৎসাক্ষেত্রে অকল্পনীয় উন্নতি সাধনের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যোগসাজসের ফলে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মানুষ মুক্তি পাচ্ছে। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী রোগী আরোগ্য লাভ করে নতুন আশার আলো খুঁজে পাচ্ছে। অধ্যাপক কুরী ও মাদাম কুরী কর্তৃক আবিস্কৃত রেডিয়াম ব্যবহার করে ভয়ংকর দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার-এর চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরোগ্যলাভ করছে। এক কালের মহামারী রোগ বসন্ত। বর্তমানে এ রোগের হাত থেকে মুক্তির জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে ‘ভ্যাক্সিন' নামক টিকা। তা ছাড়া, বিজ্ঞানের আশীর্বাদের মানবদেহের হৃদপিণ্ড, কিডনি প্রভৃতি প্রত্যঙ্গ অন্য দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে মানুষের চেহারা বা আকৃতি পরিবর্তনের মতো দু:সাধ্য কাজও এখন বিজ্ঞানের আশীর্বাদে সাধন করা যাচ্ছে।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বড় আশীর্বাদ : বিশ্বসভ্যতার ক্রমবিকাশে বিজ্ঞান জন্ম দিয়েছে অসংখ্য বিস্ময়। অনেক দু:সাধ্য ও অসাধ্য সাধনের রূপকার বিজ্ঞান। চিকিৎসাক্ষেত্রের বিজ্ঞান শুধু আশীর্বাদই বয়ে এনেছে। এ প্রসঙ্গে কিপলিং বলেন “ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বিশ্বমানবতা কখনো উল্লসিত হয় চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে শুধু আশীর্বাদ আর আশীর্বাদ।” প্রোটিন

সর্বশেষ অগ্রগতি : জেনেটিক টেকনোলজির সদ্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি শনাক্ত ও চিকিৎসা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে উপনীতি হয়েছেন। ক্লোনিং পদ্ধতিতেও চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা আমূল পরিবর্তনের আশা করছেন। কৃত্রিম রক্ত, প্রভৃতি আবিষ্কারেও বিজ্ঞানীরা প্রয়াস গ্রহণ করেছেন। টেস্টটিউব শিশুর জন্মদান বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে।

ব্যর্থতা : বর্তমান মানব সভ্যতার হুমকি ‘এইড্‌স' রোগের চিকিৎসা আবিষ্কারে ব্যর্থতার সাথে সাথে সার্স ভাইরাস ও ইবোলা ভাইরাস বিজ্ঞানকে ফাঁকি দিয়ে মানুষকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এসব রোগের প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

উপসংহার : যুগ ও কালের বিবর্তনের বিশ্বসভ্যতা দ্রুতলয়ে বিকশিত হচ্ছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ চিকিৎসাক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের এ অগ্রযাত্রায় মানুষ মৃত্যুকে জয় করতে না পারলেও হাতেগোনা কয়েকটি রোগ ব্যতীত অধিকসংখক রোগকে নি:সন্দেহে জয় করতে পেরেছে। তবে ঐসব রোগের প্রতিষেধক-এর জন্য গবেষণা চলছে।

উপসংহার: চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান সম্পর্কে জানতে এই রচনাটি তোমার জন্য অনেক কাজে আসবে। আরও শিক্ষামূলক রচনা পড়তে ভিজিট করো StudyTika.com এবং নতুন নতুন রচনা উপভোগ করো!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.