ভূমিকা: পরমতসহিষ্ণুতা একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ, যা আমাদের সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই রচনায় পরমতসহিষ্ণুতার গুরুত্ব, উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পরমতসহিষ্ণুতা রচনা
ভূমিকা : সহিষ্ণু শব্দের আভিধানিক অর্থ বরদাস্তকারী, সহনশীল, ধৈর্যধারণকারী, ধৈর্যশীল। সহিষ্ণুতা ধৈর্যধারণ করার বা সহ্য করার ক্ষমতা। পরমত মানে অন্যের কথা বা মতামত। পরমতসহিষ্ণু হচ্ছে অন্যের মতামত সহ্য করা বা গ্রহণ করার ক্ষমতা বা মানসিক শক্তি। অন্যের মতপ্রকাশের সুযোগ দেওয়া বা অন্যের বাকস্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া অপরের মতামতকে বিবেচনার যোগ্য মনে করা বা ধৈর্য ধরে শুনে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে হলেও গ্রহণ করাই পরমতসহিষ্ণুতা। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে প্রমতসহিষ্ণুতার গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনের সার্বিক উন্নয়নে পরমতসহিষ্ণুতা একান্ত জরুরি। আজকের দিনে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ও অগ্রগতিতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতি বিরাজ করছে তার মূলে এই প্রমতসহিষ্ণুতার অভাব। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে পরমতসহিষ্ণুতার বিকল্প নেই কারণ পরমতসহিষ্ণুতার ফলেই একটি দেশের জাতীয় উন্নতির বাস্তব কর্মপন্থা, পরিকল্পনা, পদ্ধতি ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
পারিবারিক জীবনে পরমতসহিষ্ণুতার প্রভাব : জীবনের সর্বক্ষেত্রেই সহিষ্ণুতার মূল্য স্বীকৃত। সহিষ্ণুতা গুণটি মানুষের জীবনকে নানাভাবে অর্থবহ করে তোলে। সহিষ্ণুতা গুণে পারিবারিক জীবনে সুখ-শান্তি বজায় থাকে। সংসারে নানা কাজে, আঘাতে-সংঘাতে মানুষকে ধৈর্য ধারণ করতে হয়, সহিষ্ণু হতে হয়। অসহিষ্ণু হলে জীবনের উদ্দেশ্য সফল হয় না। পারিবারিক জীবনে নানা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। পরিবারের কেউ অসহিষ্ণু আচরণ করলে পরিবারে অশান্তি নেমে আসে, নানা রকম সমস্যা ও জটিলতা দেখা দেয়, পারিবারিক ভাঙন শুরু হয়। পারিবারিক সমঝোতা ও সহনশীলতার অভাবেই দাম্পত্য জীবনে অশান্তির সৃষ্টি হয়। পরিবারের প্রত্যেকের মতপ্রকাশের অধিকার আছে, তাদের প্রকাশিত মতামতের গুরুত্ব বিবেচনা করে সবার জন্য কল্যাণকর হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে পরিবারের কর্তাব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ধৈর্যশীলতার প্রমাণ দিতে হয়, হতে হয় পরমতসহিষ্ণু। পারিবারিকভাবে বিতাড়িত বা অস্থিরচিত্তের মানুষ পরিবারের পাশাপাশি সমাজ, রাষ্ট্র জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলে সে কারণে ব্যক্তিকে তার ক্ষুদ্র পরিসর অর্থাৎ পরিবার থেকে শুরু করে বৃহত্তর পরিসর তথা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরমতসহিষ্ণু হতে হয়।
সামাজিক জীবনে পরমতসহিষ্ণুতার প্রভাব : মানুষ সামাজিক জীব সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করাই মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। সমাজের প্রতিটি সদস্যের সহনশীল ও সাহায্যকারী মনোভাবই সমাজকে উন্নত ও সংহত করে। সমাজের উন্নতি ও কল্যাণের পেছনে থাকে এর সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। সভ্যতার উষালগ্নে মানুষ উপলব্ধি করল যে ঐক্যবদ্ধ জীবন ছাড়া এ পৃথিবীতে সে অসহায়। পৃথিবীর সমস্ত প্রতিকূলতার কাছে সে হীন, তুচ্ছ। ফলে তারা নিজেদের প্রয়োজনেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করার মধ্য দিয়ে সমাজ গঠন করেছিল। সেই গুহাবাসী মানুষের গড়া আদিম সমাজ অনেক পরিবর্তন হয়ে আজকের সভ্য সমাজের রূপ পরিগ্রহ করেছে। কিন্তু সামাজিকভাবে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ আজ ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্রভেদসহ নানা রকম সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ছে। পরমতসহিষ্ণুতার পরিবর্তে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। ফলে সামাজিক জীবনে শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যক্তির বিরোধের প্রভাব পড়ছে তার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় জীবনে। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যক্তি তার নিজের মতামতকেই শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করছে। যার ফলে সমাজে হানাহানি বাড়ছে। অসহিষ্ণু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সমাজের সর্বত্র শান্তি নষ্ট হয়ে অশান্তি নেমে আসছে। সমাজের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন দরিদ্র নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি পর্যন্ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতার অভাবে। কাজেই সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের কথা বিবেচনা করে সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে সহিষ্ণু হতে হবে পরমতসহিষ্ণু হয়ে জনকল্যাণমূলক কাজে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজের মতের সাথে অন্যের মতেরও গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে তা না হলে সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যাহত হবে।
জাতীয় জীবনে পরমতসহিষ্ণুতার প্রভাব : প্রত্যেক দেশপ্রেমিক নাগরিকই পরমতসহিষ্ণু। অন্যের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দিতে না পারলে নিজের মতামতের গ্রহণযোগ্যতার আশা করা যায় না। কোনো ব্যক্তি যদি তার সামগ্রিক জীবনের বোধ-বিবেচনা ও কল্যাণকর চিন্তাকে মানবতার সেবায় নিয়োগ করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই পরমতসহিষ্ণু হতে হয়। একটি দেশ ও জাতির ক্ষুদ্র একক সত্তা হচ্ছে ব্যক্তি। ব্যক্তির দেশাত্মবোধ, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম বৃহৎ অর্থে দেশ ও জাতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ। কাজেই একজন ব্যক্তি নিজে পরমতসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে তার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতির চাকাকেই গতিশীল করে। তাই জাতীয় জীবনে পরমতসহিষ্ণুতার প্রভাব ব্যাপক। জাতীয় জীবনে উন্নতি অগ্রগতির মূলে রয়েছে পরমতসহিষ্ণুতা। একটি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে রাজনৈতিক মতাদর্শের সমন্বয় সাধন করতে হয়। তা না হলে সেই চিন্তা ও পরিকল্পনায় ভুল থাকার সম্ভাবনা থাকে। জাতীয় স্বার্থে বৃহৎ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে পরমতসহিষ্ণুতার মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতেই নিতে হয়। কাজেই অন্যের মতামত ও সমালোচনাকে কেবল শত্রুপক্ষের বক্তব্য মনে করা উচিত নয়। আর বক্তব্য বা মতামতদানকারী ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীকে কেবল বিবেচনাহীন অযৌক্তিক বক্তব্য প্রদানের জন্যই বক্তব্য প্রদান করা নয়, জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে আন্তরিকতারও পরিচয় দিতে হবে কাজেই উভয়ক্ষেত্রেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে দেখে জাতীয় স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে।
পরমতসহিষ্ণুতা ও দেশপ্রেম : পরমতসহিষ্ণুতা হলো প্রকৃত দেশপ্রেমিক হওয়ার এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ। স্বদেশের কল্যাণের জন্য অন্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে, তাদের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে, ধৈর্যের সাথে দেশের উন্নতির জন্য কাজ করতে হয়। অন্যদের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাব প্রকৃত দেশপ্রেমিকের আচরণ হতে পারে না। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক বিচক্ষণতা, ন্যায়বোধ ও ত্যাগ স্বীকার করে দেশের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত রাখেন। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে যুক্তি, বুদ্ধি, শক্তি ও সময় দিয়ে সমস্যাগুলো মোকাবিলা করে তার লক্ষ্য অর্জন করেন। বৃহত্তর স্বার্থে ছোট ছোট ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করে, নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেন। যখন দেশের সবাই একত্রিত হয়ে একে অপরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়, তখনই দেশ প্রকৃত অর্থে গড়ে ওঠে। এজন্য পরমতসহিষ্ণুতা অপরিহার্য। জাতীয় স্বার্থে একতাবদ্ধ আন্দোলন গড়তে এবং তার সফলতা নিশ্চিত করতে ধৈর্যশীলতা এবং সহিষ্ণুতা অত্যন্ত প্রয়োজন। যদি মতবিরোধ সমন্বিত না হয়, তবে জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। এই সমন্বয়ের পূর্বশর্ত হলো পরমতসহিষ্ণুতা। যারা পরমতসহিষ্ণু না হয়ে শুধুমাত্র দেশপ্রেমের কথা বলেন, তাদের কথা কেবল শব্দের ফুলঝুরি ছাড়া কিছুই নয়। এসব উক্তি কেবল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, দেশের উন্নতির পথে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না। অসহিষ্ণুতা শুধু ব্যক্তির ক্ষতি নয়, বরং পরিবার, সমাজ, জাতি এবং রাষ্ট্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই স্বদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য প্রত্যেককে পরমতসহিষ্ণু হয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
পরমতসহিষ্ণুতার উদাহরণ : পরমতসহিষ্ণু ধৈর্যশীল ব্যক্তিরাই যুগে মানব জন্মকে সার্থক করে তুলেছেন। মহৎ জীবনে যাদের অধিকার, তারা পরমতসহিষ্ণুতারই প্রতিমূর্তি। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়েই তারা আপন আপন কর্মস্পৃহা ও ধৈর্য নিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেছেন। অবিচল নিষ্ঠার মাধ্যমে তৈরি করেছেন তাদের চলার পথ। জীবনের পথে চলতে গিয়ে তারা সীমাহীন লাঞ্ছনা, অপমান, নিন্দা, কুৎসা, নির্যাতন ভােগ করেছেন। প্রবলের রক্তচক্ষু, শাসন ভয়, কোনো হীনশক্তিই তাদের চলার গতিকে রোধ করতে পারেনি। ধৈর্য ও সহনশীল মানসিকতা নিয়ে তারা আপন আপন শক্তির নির্ভীকতায় মানুষের কাছে সত্য ন্যায় ও কল্যাণের আদর্শ তুলে ধরেছেন। নিজে গরল গ্রহণ করে অন্যের জন্য অমৃতের পাত্র জোগাড় করেছেন। সেইসব নীলকণ্ঠ মহামানব পরমতসহিষ্ণু পুণ্যাত্মার স্পর্শে সাধারণ মানুষের জীবন ধন্য হয়েছে। যিশু কী অপরিসীম সহনশীলতার প্রতীক রাজার দুলাল গৌতম বুদ্ধও একদিন জীবনের সত্য সন্ধানে স্বর্ণ সিংহাসন ছেড়ে পথের ধুলোয় নেমে এসেছিলেন। সেদিন কপিলাবস্তুর রাজপুরীতে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল, তা তিনি পরমতসহিষ্ণুতা দিয়েই করেছিলেন ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হজরত মুহম্মদ-এর সহনশীলতা মানুষের জীবনকে সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত করেছে। করুণাসাগর বিদ্যাসাগরের সমুন্নত মহিমা, সহিষ্ণুতার আদর্শেই প্রোজ্জ্বল। মাক্সিম গোর্কি, দস্তয়ভস্কি জীবনে বহু কষ্ট-যন্ত্রণা ভােগ করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানবকল্যাণে সাহিত্য সৃষ্টি করতে গিয়ে নানা নিন্দা-সমালোচনার শরবাণে জর্জরিত হয়েছিলেন চরম দারিদ্র্য ও হতাশার মধ্যেও মহৎ শিল্প সৃষ্টির জন্য কবি, সাহিত্যিক শিল্পীকে বারবার অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও, মাইকেল ফ্যারাডে, লুই পাস্তুর মাদাম কুরি, নিউটন, আইনস্টাইন এদের জীবনেও নানা প্রতিকূলতা এসেছে সহিষ্ণুতার প্রদীপ্ত আদর্শই তাদেরকে আপন আপন কর্মপথে অগ্রসর করে লক্ষ্যে পৌছে দিয়েছে কাজেই পরমতসহিষ্ণতা এবং সহিষ্ণ ক্ষমতা মানুষকে সব রকম বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে আপন আপন গন্তব্যে পৌছে দেয়।
পরমতসহিষ্ণুতা ও দুর্বলতা : পরমতসহিষ্ণুতা কোনোভাবেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। অন্যায় কখনোই সমঝোতার বিষয় হতে পারে না, এটি শাস্তির বিষয়। তাই পরমতসহিষ্ণুতায় দুর্বলতা বা স্বজনপ্রীতি কোনোভাবেই স্থান পায় না। চোখের সামনে মানবতার অবমাননা, অন্যায় বা নির্যাতন দেখেও ধৈর্য ধারণ করা কোনো সুস্থতার লক্ষণ নয়। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো অপরিহার্য। ভবিষ্যতে যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠন করা প্রয়োজন। এখানে সহিষ্ণুতা দেখিয়ে অন্যায়কারীর পক্ষ নেওয়া ঠিক নয়। "অন্যায় যে করে এবং অন্যায় যে সহ্য করে, তারা উভয়ই সমান অপরাধী," এ কথা কখনো ভুলে গেলে চলবে না। পরমতসহিষ্ণুতা মানবিকতাকে ক্ষুণ্ণ করে না, বরং তা শক্তি ও প্রাণশক্তিতে নতুন করে উজ্জীবিত করে। প্রতিবাদহীনতা, ভীরুতা বা নতশির হওয়া পরমতসহিষ্ণুতা নয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে সহিষ্ণু হওয়া কোনো গৌরবের বিষয় নয়; বরং এটি কলঙ্কের সূচনা হতে পারে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজদের দেয়া 'নাইট' উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। সুতরাং, সহিষ্ণুতা কখনোই সাধারণ মানুষের হিতের বিপরীত হওয়া উচিত নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, শত্রু বা অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলাও পরমতসহিষ্ণুতা। কারণ এতে বৃহত্তর জনগণের সমর্থনও যুক্ত থাকে।
উপসংহার : পরমতসহিষ্ণুতা ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই একান্ত জরুরি। কিন্তু কোনো দল বা গোষ্ঠীর হীনস্বার্থ চরিতার্থতার জন্য সহিষ্ণুতার পরিচয় দেওয়া উচিত নয়। জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে অন্যের গঠনমূলক মতামতের গুরুত্ব, মূল্য ও মর্যাদা দান করা যেকোনো দেশপ্রেমিক নীতিবান আদর্শ মানুষেরই কর্তব্য হওয়া উচিত। কিন্তু তা না হয়ে ব্যক্তির স্বার্থকে বড় করে তোলার জন্য সমর্থন বা সহনশীল হওয়া অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ারই নামান্তর। কাজেই পরমতসহিষ্ণুতা কোনো ব্যক্তির লাভালাভের জন্য নয়, সমষ্টির উন্নয়ন ও সংগঠনের জন্য তা প্রযোজ্য। পরমতসহিষ্ণুতা সমাজজীবনে পারস্পরিক শান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়ন করে। এটি জাতি, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জনগণের উন্নতি ও অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই প্রত্যেক নাগরিককেই পরমতসহিষ্ণু ও আত্মসচেতন হওয়া উচিত। আর তা হলেই দেশের সার্বিক উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত সম্ভব হবে।
পরমতসহিষ্ণুতা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই রচনা পড়ে তোমাদের উপকার হবে। আরও সুন্দর ও দরকারি রচনা পড়তে ভিজিট করো StudyTika.com!