ফুটবল খেলা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে দেওয়া হলো একটি সুন্দর ও সহজ রচনা— “ফুটবল খেলা” নিয়ে। চলো, রচনাটি শুরু করা যাক।


ফুটবল খেলা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

ফুটবল খেলা রচনা

ভূমিকা : বিশ্বের খেলাগুলোর মধ্যে ফুটবল অন্যতম। এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে এই খেলার প্রচলন ঘটে। এর পরেই ইউরোপ মহাদেশসহ সারাবিশ্বে এই খেলার পরিধি বিস্তার করে। প্রতি চার বছর পর পর আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বকাপে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশের সর্বত্রই এই খেলার প্রচলন দেখা যায়। ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় এ দেশেও খেলাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক দেশেই ফুটবলকে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

খেলার সরঞ্জাম ও সময় : ফুটবল খেলার জন্য ১২০ গজ দীর্ঘ ও ৮০ গজ প্রশস্ত একটি সমতল মাঠের প্রয়োজন। খেলোয়াড়গণ দুই দলে ভিভক্ত হয় এবং প্রতি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে। মাঠের দুই প্রান্তে দুটি করে গোলপোস্ট থাকে। প্রতিটি গোলপোস্ট মাটি থেকে ৮ ফুট উঁচু। দুটি খুঁটি পরস্পর আট গজ দূরে থাকে। এই খুঁটি দুটির অগ্রভাগ আবার কাঠ বা বাঁশ দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত থাকে। খেলার জন্য একটি চামড়ার বা রাবারের বল এবং রেফারীর সংকেত-ধ্বনি করার জন্য একটি বাঁশির প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে ফুটবল খেলা সাধারণত ৯০ মিনিট বা দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়। মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি দেওয়া হয়।

খেলার ব্যবস্থা : মাঠের মাঝখানে দুই দল মুখোমুখি দাঁড়িয়ে খেলা শুরু করে। প্রতি দলে ১১ জন খেলোয়াড় থাকে। এদের মধ্যে পাঁচজন সামনের সারিতে থাকে, যাদের বলা হয় ফরোয়ার্ড। তাদের পেছনে থাকে তিনজন হাফ ব্যাক, এরপর দুইজন ফুল ব্যাক, আর একেবারে পেছনে, গোলপোস্টের সামনে থাকে একজন গোলরক্ষক বা গোলকীপার।

ফরোয়ার্ডদের মূল কাজ হলো—পায়ে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ঘেরাও ভেঙে হাফ ব্যাক ও ফুল ব্যাকদের পাশ কাটিয়ে বলটি গোলপোস্টে পাঠানো। যদি সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়, তখন তারা বলটি পাশে বা পেছনে নিজের দলের অন্য খেলোয়াড়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়। হাফ ব্যাকরা ফরোয়ার্ডদের সহায়তা করে খেলা এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। ফুল ব্যাকদের দায়িত্ব হলো প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো এবং গোলরক্ষককে রক্ষা করা।

গোলরক্ষকের কাজ হলো—প্রতিপক্ষের শট যেন গোলের ভেতরে না যায়, তা প্রতিহত করা। খেলা সঠিক নিয়মে পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন একজন রেফারি। তিনি খেয়াল রাখেন, যেন উভয় দল নিয়ম মেনে খেলে। এজন্য তাকে সারা মাঠে ঘুরে বেড়াতে হয়। তাকে সহায়তা করার জন্য থাকে দুজন লাইন্সম্যান, যাদের কাজ হলো বল মাঠের সীমানার বাইরে গেলে তা নির্ধারণ করা এবং রেফারিকে জানানো।

খেলার নিয়ম-কানুন : প্রতিটি খেলার যেমন নিয়ম আছে তেমনি ফুটবল খেলারও নির্দিষ্ট কতকগুলো নিয়ম রয়েছে। খেলার মাঠ থেকে খেলার নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধান সবই ইংরেজ প্রণীত। প্রথমত বলটি মাঠের মধ্যস্থলে রাখা হয়। রেফারীর বাঁশি-ধ্বনির সঙ্গে খেলা শুরু হয়। তখন একমাত্র গোলরক্ষক ছাড়া অন্য কারও হাত দিয়ে বল মারার বা ধরার নিয়ম নেই। এ নিয়ম ভঙ্গ করলে হ্যান্ডবল হয়। তখন বিপক্ষের খেলোয়াড় নিয়মভঙ্গকারীর গোলের দিকে ফ্রি কিক মারার অধিকারী হয়। আবার কেউ বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে বিনাদোষে লাথি বা অবৈধভাবে ধাক্কা মারলে ফাউল হয়। তখন যে পক্ষের খেলোয়াড়কে লাথি বা ধাক্কা দেওয়া হয় সেই পক্ষের খেলোয়াড়কে বল মারার অধিকার দেওয়া হয়। বলটি কোন পক্ষের গোলপোস্টের মধ্য দিয়ে চলে গেলে সে পক্ষের গোল হয় এবং সেই পক্ষই পরাজিত বলে গণ্য হয়। আর সে পক্ষ বলটি বিপক্ষের গোলপোস্টের ভেতরে প্রবেশ করায় সে পক্ষের পক্ষে গোল হয় এবং তারাই জয়ী হয়। প্রত্যেকবার গোল হওয়ার পর মাঠের মধ্যস্থল থেকে গোল প্রদানকারীদের দিকে বল মারা হয়। কোন খেলোয়াড় নিয়ম ভঙ্গ করলে রেফারী তাকে অপরাধ অনুসারে সতর্কসূচক হলুদ বা বহিস্কারসূচক লাল কার্ড দেখাতে পারে।

ফুটবল খেলার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা : ফুটবল এখন আর শুধু অবসর বিনোদন বা হালকা শরীরচর্চার মাধ্যম নয়। এটি এখন এক বিশাল লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে, যার জাল ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। আজ ফুটবল আমাদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত, এটি আমাদের উত্তেজনা আর আবেগের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

ফুটবল নিয়মিত খেলায় যথেষ্ট ছুটাছুটি করতে হয় বলে শরীরের জন্য উত্তম ব্যায়ামও বটে। ফুটবল নিয়মিত খেললে শরীর পুষ্ট, বলিষ্ঠ, কর্মদক্ষ ও কষ্টসহিষ্ণু হয়। এ খেলায় সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় বলে খেলোয়াড়দের চারিত্রিক ও মানসিক বিকাশের সহায়তা করে। একজন ভালো খেলোয়াড় ফুটবলের মাধ্যমে যেমন প্রচুর অর্থ অর্জন করতে পারে তেমনি পেতে পারে বিশ্বজোড়া খ্যাতি।

ফুটবল খেলার বিস্তার : ফুটবল আজ আমাদের স্কুল-কলেজ, অফিস, দোকানপাঠ, বাসে, হাটে-বাজারে, অলিতে-গলিতে, মাঠে-ময়দানে, বৈঠকখানায়, খাবার ঘরে, এমনকি রান্নাঘরেও ঢুকে পড়েছে। তার সীমানা প্রসারিত হয়ে গেছে শহর ছেড়ে মফস্বল শহরে- এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও। ফুটবলের আধিপত্য আজ আমাদের জীবনের সর্বত্র। আমাদের প্রিয় ক্লাবগুলোর, যেমন- আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স, আরামবাগ ইত্যাদির জয়-পরাজয়ের সংবাদ আমাদের হৃদয় কখনও বাঁধভাঙা উল্লাসে উল্লসিত, কখনও দুর্বিষহ বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়। নিজ নিজ ক্লাব ও প্রিয় খেলোয়াড়দের ক্রীড়া-নৈপূণ্য নিয়ে ঘরে-বাইরে, মাঠে-ময়দানে, পথে-ঘাটে, রেস্তোরাঁয়, অফিসে-কাছারিতে চলে তুমুল তর্ক-বিতর্ক। মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায় পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে হয়ে যায় ছাড়াছাড়ি, কথা বন্ধ হয়ে যায় ভাইয়ের সঙ্গে। প্রিয় ক্লাবের জয়লাভে পোড়ে বাজি, ফাটে পটকা, মোড়ে মোড়ে ক্লাবের বিজয়-নিশান।

বিশ্ব-ফুটবলের তারকারা : আজ ফুটবলের কলা-কৌশলের উন্নতি ঘটেছে, পুরাতনের স্থানে নতুনের অভিষেক ঘটেছে। বাংলার ফুটবল ইউরোপীয় ফুটবলের কাছে প্রথম দীক্ষা গ্রহণ করেছিল। এখন ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবল বিশ্ব-ফুটবলে একটি নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ফুটবলের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে ফুটবলের ঝটিকাগতিসম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন রূপে। সেই সুবাদে আমরা ফুটবলের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রগুলোর ক্রীড়া-নৈপুণ্য উপভোগ করবার দুর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছি। তার ফলে ফুটবলের রাজা পেলে, ফুটবলের যুবরাজ বেকেনবাওয়ার, ম্যারাডোনা, প্লাতিনি, লোথার মাথ্যুজ, ভোয়েলার, ক্লিন্সম্যান, রুড গুলিট, ভ্যান বাস্তেন, সক্রেটিস, জিকো, লিনেকার, রজার মিল্লা আজ আমাদের ঘরের মানুষ, প্রিয় পরিজন। আসলে দুরদর্শনের সম্প্রসারণ ফুটবলের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে সম্পূর্ণ বদলে। তার পাশে আমাদের ঘরে নামী ও দামী ফুটবল নক্ষত্রকেও বড় নিষ্প্রভ মনে হয়। তখন বোঝা যায়, ফুটবলের ক্ষেত্রে আমাদের অনগ্রসরতা কত সুদূর, আমাদের ক্রীড়া-নৈপুণ্য কত সীমিত।

উপসংহার : ফুটবল একটি আনন্দদায়ক খেলা। ফুটবল আজ আমাদের জীবনের আনাচে-কানাচে অবাধ এবং গৌরবময় প্রবেশাধিকার লাভ করেছে।


এই ছিল আমাদের রচনা “ফুটবল খেলা”। আরও সহজ ও সুন্দর রচনা পড়তে ভিজিট করো আমার ওয়েবসাইট StudyTika.com — সেখানে অনেক রচনা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.