নৌকা ভ্রমণ রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

ভূমিকা: নৌকা ভ্রমণ নিয়ে একটি সুন্দর রচনা তোমার জন্য এখানে দেওয়া হলো। সহজ ভাষায় লেখা এই রচনাটি ক্লাস ৭, ৮, ৯, ১০, এসএসসি ও এইচএসসি সকল শিক্ষার্থীর জন্য উপকারী হবে। একবার শুরু করলে পুরোটা না পড়ে উঠতে পারবে না!

নৌকা ভ্রমণ রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

নৌকা ভ্রমণ রচনা 

ভূমিকা : বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই নৌকা ভ্রমণ এদেশে কারো অজানা নয়। কেননা, বর্ষাকালে যখন রাস্তা-ঘাট পানিতে ডুবে যায়, তখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে নৌকার প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ পথে নৌকাযোগে যাওয়াটাই মূলত ‘নৌকা ভ্রমণ’ বলে গণ্য করা হয়। আমরাও নৌকা ভ্রমণ করে পেয়ে থাকি অনাবিল আনন্দ। এছাড়াও নৌকাবাইচ খেলার মাধ্যমেও বাঙালিরা ব্যাপক আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে।

যাত্রার শুরু : নৌকা ভ্রমণ সত্যিই এক মনোমুগ্ধকর ও আনন্দময় অভিজ্ঞতা। গত বর্ষাকালে আমি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। বহুদিন পর প্রিয় গ্রাম্য বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় শহরের সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম। তখন পূজার ছুটি চলছিল। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, নৌকা ভ্রমণে বের হবো। ঠিক তখনই মা জানালেন, বড় আপুর বাড়িতে বেড়াতে যেতে হবে। এতে স্থান নির্ধারণ সহজ হয়ে গেল, আর আমরা মায়ের প্রস্তাবে রাজি হলাম। পরদিনই একটি নৌকা ভাড়া করে পরিকল্পনা শুরু করলাম। আপুর বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে হলেও আমরা পাঁচজন বন্ধু মিলে যাত্রায় রওনা দিলাম। বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হলো। ঠিক সকাল ৮টায় আমরা নৌকায় উঠলাম। নৌকায় মাঝি ছিল দুইজন—একজন বয়স্ক, যার যৌবন প্রায় পেরিয়ে গেছে, আর অন্যজন ছিল তারই ছেলে।

যাত্রাপথের বর্ণনা : সকাল ৮.১৫ মিনিটে নৌকা ছাড়ল। আকাশের অবস্থা ভালোই ছিল। ভাটার টানে নৌকা চলতে শুরু করল। দুপুর দুটার দিকে আমরা সাভার বাজারে এসে পৌঁছলাম। নদীর তীরে বাজারের দৃশ্য বড়ই মনোরম ও নয়নাভিরাম। সবাই মিলে বাজারে নেমে গেলাম। বাজারে সাজানো দোকানগুলোর যেন নববধূর সাজে অঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বর্ণালঙ্কার। এদিকে মাঝির রান্না প্রায় শেষ, সে আমাদের ডাক দিল। মাঝির ডাকে ফিরে এসেই ক্ষুধার্ত পেটকে সান্ত্বনা দিলাম। মাঝি সাড়ে তিনটার দিকে সাভার হতে নৌকা ছাড়ল। এবারও নদীর স্রোত ও বাতাস আমাদের ভ্রমণের অনুকূলে। মাঝি পাল খাটানোর সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই মনের আনন্দে হাল ধরে ভাটিয়ালি সুরে গান ধরল। নৌকা বেশ দ্রুতগতিতেই ছুটে চলল। নদীর দু পাশের সারিবদ্ধ গ্রাম ও ফসলের মাঠ যেন এক অপরূপ শোভা ধারণ করেছে। দুই কূলে দেখতে পেলাম অনেক বালক-বালিকা নদীতে সাঁতার কাটছে। কেউবা নদীর পাড়ে খেলাধুলা করছে। কেউবা মাঠে গরু চরাচ্ছে। নববধূরা আলতো পায়ে কলসি কাঁখে জল নিতে এসেছে নদীতে।

রাতের দৃশ্য : সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাতের অন্ধকার এসে জমাট বেঁধেছে। দূরের গাছগুলো আবছা দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বৃক্ষরাজির ফাঁক দিয়ে অদূরবর্তী গ্রামের আলো দেখা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, কে যেন সংকেত দিচ্ছে। আকাশে দেখতে পেলাম অসংখ্য তারকা। চারদিকের নীরবতায় শুধু শুনতে পেলাম আমাদের মতো কয়েকটি নৌকার ছপ ছপ দাঁড়ের শব্দ। এর স্তব্ধতা ভঙ্গ করে মাঝি গেয়ে উঠল-

“মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে

আমি আর বাইতে পারলাম না।”

বাইরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম বোনের বাড়ির নিকটে এসে গেছি। মাঝির গানের এ কলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললাম, “তুমি আর বাইতে না পারলেও চলবে।” মাঝি হো-হো করে হেসে বলল, “বুঝেছি, যাত্রার শেষ।” মাঝির গান থেমে গিয়েছিল কিন্তু গানের রেশ তখনও কানে বাজছিল। আমাদের নৌকা যখন বোনের বাড়ির ঘাটে এসে পৌঁছল তখন রাত আটটা।

উপসংহার : নৌকা ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক ও চমকবপ্রদ একটি ভ্রমণ। মাথার ওপর বিশাল আকাশ, চারিদিকে হু-হু বাতাস আর পানির ঢেউখেলানো শব্দে নৌকার সাথে সাথে আমাদের মন হারিয়ে যায় বহুদূর।

নৌকা ভ্রমণ রচনা ২ 

(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)

ভূমিকা : নদী মাতৃক আমাদের বাংলাদেশের এক বিরাট অংশ বছরের পাঁচ মাস বর্ষার পানিতে ডুবে থাকে। তখন পল্লী অঞ্চলে নৌপথে ভ্রমণ করার একমাত্র বাহন নৌকা। এমনি এক ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলাম ঈদের ছুটিতে। বহুদিন পর ছেলে বেলার সাথিদের সাথে দেখা হওয়ায় শহরের সবকিছু ভুলে আত্মহারা হয়ে গেলাম। আমাদের গ্রাম হতে মাইল তিনেক দূরে হাই স্কুল মাঠে কৃষি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে, সকলের সে কী আনন্দ! আমরা কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম ঈদের পর দিন হাই স্কুল মাঠে গিয়ে কৃষি প্রদর্শনী দেখে আসব। নৌ-পথ ছাড়া সেখানে যাওয়ার কোন উত্তম উপায় ছিল না। তাই আমরা নৌকায় করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ভ্রমণ শুরু : ক্রমে আমাদের কাঙ্ক্ষিত দিন এল। দিনটি ছিল বেশ আরামদায়ক। মেঘশূন্য আকাশে সূর্য যেন একটু একটু করেই কিরণ দিচ্ছিল। একটি পানসী নৌকা আগেই ভাড়া করা ছিল। দ্বিপ্রহরের পর সবাই নৌকায় উঠলাম। ছোট খাল ধরে আমাদের নৌকা পশ্চিম দিকে চলল। কিছু দূরে গিয়েই আমরা এক মাঠে পড়লাম। চারদিকে খোলা সেই মাঠের বাতাস যেন মাতামাতি করছিল, মাঝিরা পাল খাটিয়ে দিল। নৌকা কলকল শব্দে এগিয়ে চলল। মাঠ ছিল শস্যে পরিপূর্ণ, শুধু সবুজ আর সবুজ। যেন সবুজের সমারোহ।

প্রাকৃতিক দৃশ্য : আস্তে আস্তে সূর্য পশ্চিম গগনে ঢলে পড়ল। আকাশ লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে উঠল। আলো গেল ম্লান হয়ে। পানিতে কে যেন আবীর ছড়িয়ে দিয়ে গেল। এ মধুর দৃশ্য প্রাণভরে দেখতে লাগলাম। চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে এল। সূর্য ডুবে গেল।

আমাদের নৌকা এতক্ষণে মাঠ পার হয়ে পদ্মা নদীতে এসে পড়েছে। আকাশে দু-একটি তারকা উঁকি মারছে। এমন সময় পূর্ব দিকে দৃষ্টি পড়তে দেখি রূপালি থালার মত পূর্ণিমার চাঁদ। প্রকৃতির সেই অপরূপ রূপে প্রাণ মন ঢেলে দিলাম। পদ্মার বুকে রং-বেরঙের পাল তুলে ছোট বড় নৌকা ভেসে চলছে। মাঝে মাঝে তার ঢেউয়ের তালে তালে ছোট নৌকাগুলো দোল খাচ্ছে। দূরে দেখি একটি পাট বোঝাই নৌকা। এ স্তব্ধতা ভঙ্গ করে আমাদের এক বন্ধু গেয়ে উঠল-

“মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে-

আমি আর বাইতে পারলাম না।”

বন্ধুর কণ্ঠে ভেসে আসা ভাটিয়ালি সুর আমাদের মনকে মুগ্ধ করে দিল, যেন আমরা এক অন্য জগতে হারিয়ে গেলাম। গান শেষ হলেও তার মধুর রেশ এখনো কানে বাজছিল। হঠাৎ মাঝিদের ডাক কানে এল—“বাবারা, আল্লাহর রহমতে আইসা গেছ, ঐ যে আলো দেখা যায়।” বাঁক ঘোরাতেই চোখে পড়ল হাই স্কুল মাঠের কৃষি প্রদর্শনীর ঝলমলে আলোয় ভাসছে পুরো এলাকা।

উপসংহার : সেদিন প্রদর্শনী দেখে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হল। আমাদের এ আনন্দময় ভ্রমণে প্রথমে প্রকৃতির রুদ্র রূপের সাথে পরিচয় হয়েছিল। কিন্তু ফেরার পথে হেমন্তের ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় বিলের শেষে বাঁক ফেরার মুখে একটি গাছের সাথে ধাক্কা লাগায় নৌকা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কোনমতে সে রাতের মত বেঁচে গেলাম। বাড়ির ঘাটে এসে নৌকা থামল। মাটিতে নেমে সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

এই ছিল নৌকা ভ্রমণ রচনা। আরও সহজ ও সুন্দর রচনা পড়তে ভিজিট করো আমার ওয়েবসাইট — StudyTika.com। তোমার উপকারে আসবে ইনশাআল্লাহ।


Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.