এই ব্লগে আমি একটি সুন্দর রচনা লিখেছি যার শিরোনাম হলো "আমার প্রিয় শিক্ষক"। এখানে ক্লাস ৭ থেকে ১০, এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের জন্য উপযুক্ত সহজ ভাষায় রচনা পাওয়া যাবে। আশা করি আপনারা ভালো লাগবে এবং পুরো রচনা পড়বেন।
আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা
ভূমিকা : বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের কাছে সমানভাবে শ্রদ্ধার পাত্র। তবু প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে কোনো একজন শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী বিশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধার আসন লাভ করেন। কেউ সে অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে, কেউবা তা মনে রেখেই জীবন কাটায়। আমার জীবনেও তেমন একজন স্মরণীয় শিক্ষক রয়েছেন—তিনি অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী।
আমার প্রিয় শিক্ষক : আমার প্রিয় শিক্ষক হিসেবে আমি যাঁকে হৃদয়ের গভীরে স্থান দিয়েছি তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জ তোলারাম সরকারি মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী।
প্রিয় শিক্ষক হওয়ার কারণ :
তাঁর পাঠদান পদ্ধতি : আমি যখন একাদশ শ্রেণির ছাত্র তখন তাঁর সান্নিধ্য লাভ করি। তিনি শ্রেণিকক্ষে এসে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করতেন, আমরা কেমন আছি। আমাদের খোঁজখবর নিয়ে তারপর তিনি চেয়ারে বসতেন। চুপচাপ বসে থাকতেন কতক্ষণ। কী যেন ভাবতেন। তারপর চেয়ার ছেড়ে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেন। শুরু করতেন গল্প। গল্পটি শেষ করতেন চলতি দিনের পড়ার সাথে মিলিয়ে। মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট আলোচনা করতেন পাঠ্যপুস্তকের পড়া। তাতেই আমাদের পড়া একেবারে মনের মাঝে গেঁথে যেত। অন্যান্য শিক্ষকদের চেয়ে তাঁর পড়ানোর কৌশলটা ছিল ভিন্ন এবং আকর্ষণীয়। তাঁর ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থী টু-শব্দটি পর্যন্ত করত না। গল্পের ভঙ্গিতে তার এ পাঠদানের ভঙ্গিটাই ক্রমে ক্রমে আমার মনটাকে জয় করে নিল। তিনি হয়ে ওঠলেন আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক।
আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলি : প্রগতিশীল পৃথিবীতে আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলিতে পরিবর্তন সম্ভব—এমন ধারণা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। প্রকৃতপক্ষে, গুণ, নীতি ও আদর্শ সব সময়েই চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। তাঁর আদর্শ চরিত্র, কোমল কথাবার্তা, শিক্ষাদানের পদ্ধতি এবং হৃদয়ের উষ্ণতা আমাকে গভীরভাবে মুগ্ধ করত। তিনি স্পষ্ট উচ্চারণে ও সুন্দর বাচনভঙ্গিতে কথা বলতেন। তাঁর হাসিমাখা মুখ থেকে আসা প্রতিটি উপদেশ আমার মনে স্থায়ী ছাপ ফেলত। আমি ভুল করলেও তিনি কখনো রাগ করতেন না; বরং সহানুভূতির সঙ্গে তা সংশোধন করে দিতেন।
আদর্শ ব্যক্তিত্ব : অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী ছিলেন আদর্শ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। উচ্চ ডিগ্রিধারী হয়েও তিনি শিক্ষকতার মহান পেশাকে বেছে নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের মাঝে শিক্ষাদানের মাধ্যমে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে সচেতন করে তোলাই ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত। তিনি ছিলেন সদালাপী এবং মিষ্টভাষী। তবে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ক্ষেত্রে তিনি যেমন কঠোর ছিলেন তেমনি দরদিও। এভাবেই তাঁর ব্যক্তিত্বের নানা গুণ আমাদের মুদ্ধ করে।
দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যপরায়ণতা : একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাগুণ বিচারের ক্ষেত্রে তাঁর দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ বিশেষভাবে বিবেচ্য। আমার প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে এ দুটি গুণই ছিল প্রধান। তিনি যথাযথভাবে দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করতেন। তিনি স্কুলের বাইরে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা নিয়েও কথা বলতেন।
চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানবিক গুণাবলি : আমার প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী ছিলেন এক অসাধারণ চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনো মানবিক গুণাবলিকে তুচ্ছ করেননি, বরং সে গুণগুলোই ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের মূল ভিত্তি। তিনি সৌন্দর্য ও আনন্দের উপাসক ছিলেন, কিন্তু অন্যায়ের প্রতি তাঁর ছিল স্পষ্ট বিরোধিতা। অহংকার ছিল তাঁর সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়। তিনি প্রায়ই বলতেন, "অহংকার কখনোই করা উচিত নয়—এটি মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।" তাঁর কথা শুধু মুখে নয়, তাঁর জীবন ও কর্মে সেই নীতির পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটত।
পরিশ্রমী এবং সৎ : আমার প্রিয় শিক্ষক বুলবুল চৌধুরী ছিলেন একজন সৎ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি সৎ পথে থেকে পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকে ইবাদত হিসেবে জ্ঞান করতেন। আর তাই সুশিক্ষা দানের জন্য তিনি ছাত্রদের চেয়ে বেশি অধ্যয়ন করতেন। ছাত্রদের কোনো সমস্যায় তিনি বিরক্তবোধ না করে বরং যত্নসহকারে জটিল বিষয়সমূহ বুঝিয়ে দিতেন। তাঁর আদর্শনিষ্ঠ জীবন আমার মতো হয়তো আরও অনেকেরই জীবনচলার পথে প্রেরণা হয়ে থাকবে।
মানুষের প্রতি ভালোবাসা : মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে তিনি একই স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে ভালোবাসতেন। ধর্মানুরাগী এই শিক্ষক ধর্মের বিভিন্ন বিধিনিষেধ, শিক্ষার্থীদেরকে প্রসঙ্গক্রমে স্মরণ করিয়ে দিতেন। তাঁর সহজ-সরল জীবনযাপন যে কারও মনকে আলোড়িত করবে।
একজন সাহিত্যিক ও দার্শনিক : বুলবুল চৌধুরী একজন সুসাহিত্যিক। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনা করে ইতোমধ্যে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। তাঁর লেখাতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনদর্শন প্রকাশ পেয়েছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই প্রিয় মানুষ দেশ ও জাতির জন্য নিঃসন্দেহে অনেক গর্বের।
একজন পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব : বুলবুল চৌধুরী ছিলেন একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি নানা বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। প্রচুর অধ্যয়নের ফলে তাঁর মধ্যে নিজস্ব বোধের জন্ম হয়েছে। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল বিজ্ঞানসম্মত। সিলেবাস ও কোর্স সঠিক সময়ে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। ক্লাসে পঠিত বিষয়কে সহজ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য বাস্তব জীবনের বিভিন্ন বিষয় টেনে আনতেন। এতে পাঠের প্রতি আগ্রহ এবং কৌতূহল বেড়ে যেত।
উপসংহার : জনাব বুলবুল চৌধুরী শুধু আমার শিক্ষকই নন, তিনি আমার অকৃত্রিম বন্ধু, নির্ভুল উপদেষ্টা এবং আমার জীবন গড়ার কারিগর। তিনি নিজের ব্যক্তিত্বকে বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ করেন না। তাঁর মধ্যে আমি সত্য সুন্দরের পরম প্রকাশকে খুঁজে পেয়েছি। তিনি আমাকে যে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে ধন্য করেছেন, সেই স্নেহ এবং ভালোবাসা আমার জীবন থেকে নিঃশেষ হয়ে যায় নি ও যাবে না। আমার হৃদয় মুকুরে সেই ভালোবাসা দীপ্তিময় এক তারকারূপে শোভিত হয়ে থাকবে। স্নেহ-সহানুভূতিতে তিনি আমার হৃদয়ের অত্যন্ত সন্নিকটে, কিন্তু তাঁর বিরাট ব্যক্তিত্ব আমার বুদ্ধি এবং নাগালের বাইরে। তিনি আদর্শ শিক্ষক। তিনি আমার শিক্ষাজীবনের অপরিসীম প্রেরণার উৎস। আমার মনের মণিকোঠায় তিনি চিরদিন অম্লাণ হয়ে থাকবেন।
আমার এই রচনা পড়ে আপনার কেমন লাগল জানাবেন। আরও ভালো ভালো রচনা পড়তে চাইলে আমার ওয়েবসাইট StudyTika.com ভিজিট করুন। সেখানে অনেক রচনা আপনি সহজ ভাষায় পাবেন। ধন্যবাদ!