বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

এই ব্লগপোস্টে তুমি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে একটি সুন্দর রচনা পড়তে পারবে। আশা করি, তুমি ভালো লাগবে।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রচনা ১

ভূমিকা

জাতীয় পতাকা একটি জাতির অস্তিত্বের প্রতীক। প্রতিটি স্বাধীন দেশের নিজস্ব একটি জাতীয় পতাকা থাকে, যা দেশের পরিচয় বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরে। জাতীয় পতাকা হলো দেশের গর্ব ও সম্মানের চিহ্ন। এর গৌরব অর্জন করা সহজ নয়; বহু সংগ্রাম, ত্যাগ ও ধৈর্যের পরে একটি দেশ স্বাধীন হয়ে জাতীয় পতাকা লাভ করে। এজন্য জাতীয় পতাকার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় পতাকার আকার ও আকৃতি বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। আমাদের জাতীয় পতাকা আয়তাকার, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। পতাকার মাঝখানে থাকা লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ পতাকার দৈর্ঘ্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। এই অনুপাত বজায় রেখে জাতীয় পতাকার বিভিন্ন মাপ তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

বহু ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা আমাদের জাতীয় পতাকা অর্জন করেছি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জাতীয় পতাকার সম্মান অর্জন করেছি। জাতীয় পতাকা আমাদের মহান ত্যাগের স্বাক্ষর। এই পতাকাই আজ বিশ্বদরবারে আমাদের পরিচিতি বহন করছে। জাতীয় পতাকার

জাতীয় পতাকার নকশাকার

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মূল নকশাকার শিবনারায়ণ দাশ। তাঁর নকশা করা ও পতাকায়
লাল বৃত্তের মাঝে হলুদ রঙে আঁকা ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র। ২ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনের সামনে ছাত্র সমাবেশে প্রথম এই পতাকা উত্তোলিত হয়। পরবর্তী সময়ে চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান মাঝের মানচিত্রটি বাদ দিয়ে জাতীয় পতাকার নকশা করেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকা

জাতীয় পতাকা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতি বহন করে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই স্বাধীনতা অর্জনে নানা ধর্ম, বর্ণ ও পেশার মানুষ একই জাতিসত্তার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই জাতীয় পতাকা স্বাধীনতাসংগ্রামের চেতনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এই চেতনাবোধ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে অক্ষুণ্ণ ও অটুটভাবে সংরক্ষিত থাকবে।

দেশপ্রেম ও জাতীয় পতাকা

জাতীয় পতাকা আমাদের দেশপ্রেমের স্বাক্ষর বহন করে। মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি অপরিমেয় দেশাত্মবোধের কারণেই বাংলার বীর সন্তানেরা আত্মাহুতি দিয়েছে। এই জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন দেশপ্রেমেরই নামান্তর । অন্যদিকে যারা জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান দেখায় না, পক্ষান্তরে তারা দেশদ্রোহী। তারা সবার কাছে নিন্দিত ও ঘূর্ণিত ।

জাতীয় পতাকার বিশেষত্ব

আমাদের গর্বের প্রতীক জাতীয় পতাকার কিছু বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। পতাকার চারপাশে সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতির পরিচয় বহন করে । মাঝখানের গাঢ় টুকটুকে লাল বৃত্ত উদীয়মান সূর্যের প্রতীক। তা ছাড়া শহিদদের লাল রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার প্রতীকও এটি। আমার পতাকা আমার অহংকার।

দেশের জন্য জাতীয় পতাকার গুরুত্ব

জাতীয় পতাকা আমাদের প্রেরণার উৎস। যেকোনো কাজে আমরা জাতীয় পতাকা থেকে উৎসাহ পাই। জাতীয় পতাকা কেবল লাল-সবুজের মিশ্রণে এক টুকরা কাপড় নয়, তা আমাদের জাতীয় চেতনার নাম। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা বাঙালিরা এক কাতারে এসে দাঁড়াই জাতীয় পতাকাকে সামনে নিয়ে। জাতীয় পতাকা মিশে আছে আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও ত্যাগের সাথে। তাই জাতীয় পতাকার গুরুত্ব অপরিসীম।

জাতীয় পতাকার সম্মান

জাতীয় পতাকা সম্মানের সাথে ব্যবহার করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সবসময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কখনো জাতীয় পতাকার অসম্মান না হয়। সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও পাড়ায় ও বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় পতাকাকে সম্মানের সঙ্গে উত্তোলন করা হয়।

উপসংহার

একটি দেশ ও একটি পতাকা সবারই পরম আরাধ্য। আমাদের জাতীয় পতাকা অনেক কষ্টের ফসল। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে লাল-সবুজের এই পতাকা আমরা পেয়েছি। তাই এর মর্যাদা রক্ষায় আরও সোচ্চার হতে হবে। পতাকার সম্মান মানে দেশের সম্মান । এই লাল-সবুজের জাতীয় পতাকাকে সম্মান করা তাই প্রতিটি বাঙালির অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রচনা ২

সূচনা : জাতীয় পতাকা হল একটি স্বাধীন জাতির মর্যাদার প্রতীক বা চিহ্ন। সব স্বাধীন দেশেরই একটি জাতীয় পতাকা থাকে। পরাধীন দেশের অধিবাসীরা কোন স্বতন্ত্র জাতি বলে স্বীকৃত নয় বলে এদের জাতীয় পতাকাও থাকে না। জাতীয় পতাকা প্রধানত স্ব-স্ব দেশের তাৎপর্য বহন করে।

পরিচয় : প্রথমে আমাদের পতাকাটি ছিল সবুজ পটভূমিতে গোলাকার একটি লাল বৃত্ত, যার মধ্যে সোনালি রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা ছিল। পরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এটি সামান্য পরিবর্তন করে নতুন নকশা গ্রহণ করে। নতুন পতাকাটি দুই রঙের সমন্বয়ে তৈরি, যেখানে ঘন সবুজ পটভূমির মাঝে একটি লাল বৃত্ত থাকে। পতাকার সাধারণ মাত্রা লম্বায় ১০ ফুট এবং চওড়ায় ৬ ফুট, অর্থাৎ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। এই অনুপাত অনুসারে বিভিন্ন আকারে পতাকা তৈরি করা যায়। পতাকার মাঝখানে থাকা লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের এক পঞ্চমাংশ।

তাৎপর্য : আমাদের পতাকার রং নির্বাচন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এর সবুজ রং তারুণ্য ও সজীবতার প্রতীক। লাল রংটি উদীয়মান সূর্য ও শহীদের তাজা রক্তের স্মৃতি বহন করছে। সূর্য যেমন অন্ধকারকে দূর করে অবারিত আলো বিচ্ছুরণ করে, তেমনি আমাদের পতাকার লাল বৃত্তটি বন্ধনহীন জীবন ও সংশয়হীন ভবিষ্যতের সূচনা স্বরূপ।

ব্যবহার : জাতীয় পতাকা আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে। প্রতি বছর ঐতিহাসিক ২৬শে মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর এ পাতাকা আনুষ্ঠানিক- ভাবে উত্তোলন করা হয়। দেশের স্বাধীনতা, ঐক্য ও সংহতির প্রতীক ও পতাকাকে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের শুরুতে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা দেখান হয়। এ পাতাকার সম্মান রক্ষার্থে সরকারী বিধিনিষেধ মানতে হয়। সাধারণত পার্লামেন্ট, সরকারি অফিস, আদালত প্রভৃতির ওপরে এটি নিয়মিত ওড়ান হয়। রাষ্ট্রপতি, উপ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী এবং বিশেষ কিছু ব্যক্তি ছাড়া সাধারণ লোক গাড়িতে এ পতাকা ব্যবহার করতে পারে না। শহীদ দিবসে এবং কোন বড় নেতার মৃত্যুতে এ পাতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরসমূহ ছাড়া সিনেমা হলগুলোতে ছবি প্রদর্শনের পূর্বে জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয় এবং সবাই দাঁড়িয়ে এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। তা না হলে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়। বিদেশে প্রেরিত খেলোয়াড় দলের সাথে এ পতাকা প্রেরিত হয়। এটি বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পরিচয় দেয়। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহে আমাদের জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। জাতিসংঘ এবং অলিম্পিক অনুষ্ঠানে প্রত্যেক সদস্য দেশের পতাকা ওড়ান হয়। জাতীয় পতাকা প্রত্যেকটি দেশের স্ব-স্ব পরিচয় বহন করে।

উপসংহার : জাতীয় পতাকা আমাদের কষ্টার্জিত বস্তু বলে তা আমাদের প্রাণ প্রিয়। এর মান অক্ষুণ্ণ রাখা যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।

তোমাদের জন্য আরও অনেক রচনা আমার ওয়েবসাইট StudyTika.com এ আছে। সেগুলোও পড়ে যাও।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.