বাংলাদেশের বসন্তকাল রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

 পরিচিতি: এই ব্লগপোস্টে আছে “বাংলাদেশের বসন্তকাল” নিয়ে একটি সুন্দর রচনা। পড়লে ভালো লাগবে।

বাংলাদেশের বসন্তকাল রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

বাংলাদেশের বসন্তকাল রচনা ১

ভূমিকা: পাহাড়, নদ-নদী, শস্যময় সবুজ সমভূমি শোভিত প্রকৃতির লীলানিকেতনের এই দেশে পরপর ছয়টি ঋতু আসে। প্রকৃতি সযতনে পরিয়ে নেয় ভিন্ন ভিন্ন সাজে। কখনো সে সাজ হয় রুদ্র কঠোর। এ সাজ গ্রীষ্মের। বর্ষায় এদেশ ক্রন্দসী নারীর মতো সজল শোকাতুরা শরতে শিউলিমালা পরে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে ঝলমল করে হেসে ওঠে সে। হেমন্তে পাকা ফসলের সম্ভারে প্রকৃতি হয় দেবী অন্নপূর্ণা, শীতে পরে সে বৈরাগ্যের বেশ। বৈরাগ্যের ধ্যান ভেঙে সুকঠোর সাধনা শেষ করে বসন্তকালে প্রকৃতি যেন রূপে-রঙে-রসে ঝলমল করে ওঠে। বসন্তকালকে বলা হয় ‘ঋতুরাজ’।

সময়সীমা ও বৈশিষ্ট্য : ফাল্গুন ও চৈত্র হলো বসন্ত ঋতুর দুই মাস। এই সময় প্রকৃতি এক নতুন রূপে সেজে ওঠে। রঙিন ফুল, পাখির ডাক, সবুজ পাতার মেলা আর মিষ্টি হাওয়ার ছোঁয়ায় চারপাশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। গাছপালা নতুন কুঁড়িতে ভরে যায়, বনজুড়ে শুরু হয় ফুল ফোটার উৎসব। কোকিল ডাকে ‘বউ কথা কও’, দোয়েল আর পাপিয়া খুশিতে গান তোলে। আবহাওয়া থাকে আরামদায়ক—না বেশি গরম, না বেশি ঠান্ডা। মাঠে থাকে রবিশস্য আর বোরো ধান। আমগাছের ডালে ডালে দেখা যায় নতুন মুকুল, যার ঘ্রাণে চারদিক মধুর হয়ে ওঠে। বসন্তের হালকা দখিনা বাতাস শরীর ও মনকে প্রশান্ত করে তোলে।

প্রাকৃতিক দৃশ্য : প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিক দিয়ে বসন্তকাল সকল ঋতুর সেরা। অজস্র পত্রপুষ্পে সুশোভিত হয় চারদিক। বন-বনানীতে ফোটে নানা জাতের ফুল নানা বর্ণে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চারদিক। সৌরভে আমোদিত হয় পরিবেশ। শিমুলের শাখায় থোকা থোকা লাল ফুলের আড়ালে কালো কুচকুটে শরীর লুকিয়ে আনন্দে কু-উ করে ডেকে ওঠে কোকিল। ময়না হলুদ ঠোঁটে ঠুকরে খায় শিমুলের বীচি। মাঠে মাঠে সরষে ফুলের ক্ষেতে প্রকৃতি হলুদ গালিচা পেতে দেয়। তার উপর দিয়ে ঢেউ তুলে নেচে যায় দক্ষিণা বাতাস। আমের শাখায় দেখা যায় ঝুরঝুরে বোল অথবা কচি আমের গুটি। তারই লোভে গাছের তলায় ভিড় জমায় লোভী শিশুর দল। নির্মল মেঘশূন্য আকাশের তলায় গলা ছেড়ে গান গেয়ে গরুর পাল নিয়ে রাখাল চলে মাঠে। চাষি বোরো ধান কেটে ধানের বোঝা মাথায় করে বাড়ি ফিরে।

বনে বনে যে রং, যে সুর, প্রাণের যে উচ্ছ্বাস বসন্ত ছড়িয়ে দেয়, তা কবিচিত্তেও আলোড়ন সৃষ্টি করে। কবি সে কথা এভাবে বলেন-

“এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
বনে বনে মনে মনে রঙ সে ছড়ায় রে
চঞ্চল তরুণ দিগন্ত।”

বসন্ত উৎসব : বসন্তকাল কবি ও সাহিত্যিকের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। চমৎকার আবহাওয়া এবং ফুল ও ফলের প্রাচুর্যের জন্য এ সময় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনও মুখরিত হয়ে ওঠে। উদযাপিত হয় বাসন্তী উৎসব, হোলি উৎসব ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আধুনিক কালে শহরের যান্ত্রিক জীবনেও বসন্ত একটি প্রাণোচ্ছল আনন্দের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়। চারুকলার বকুলতলায় রমনার বটমূলে ইত্যাদি জায়গায় এবং রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি গণমাধ্যমে গান, আবৃতি, নাটক ও আলোচনার মাধ্যমে মহাসমারোহে বসন্ত বরণ উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।

উপসংহার : বসন্তকাল মানুষের মনে নতুন চেতনা আনে। প্রকৃতির হাস্য ও লাস্য মানুষের মনকে প্রভাবিত করে বলে মানুষ এ সময় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়। রোমান্টিক চেতনার উৎস এই বসন্তকাল যেমন কবি ও সাহিত্যিকের কাছে আদরণীয়, তেমনি সাধারণ মানুষের কাছেও আকাঙ্ক্ষিত এবং প্রিয়।

বাংলাদেশের বসন্তকাল রচনা ২


ভূমিকা

আমাদের দেশ ঋতু বৈচিত্র্যে সৌন্দর্যময়, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতি বছর বয়ে যায় প্রকৃতির নতুন নতুন পর্যায়, কখনো প্রখর তাপদাহ, কখনো প্রবল বর্ষন আবার কখনো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, এভাবেই প্রকৃতি যেন রুপে-রঙে-রসে ঝলমল করে ওঠে, বারবার জেগে ওঠে নতুন আনন্দে, ভিন্ন ভিন্ন রুপে ও বৈচিত্র্যে বাংলার প্রত্যেকটি ঋতুই আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়, ঋতু কালচক্রের সর্বশেষ ঋতু বসন্ত। বসন্তকাল তার ফুল ফলের রঙিন ডালি নিয়ে সকলের মনে দোলা দিয়ে যায়। ছয়টি ঋতুর মধ্যে বসন্ত চির রঙীন তাই একে ঋতুরাজ বসন্ত বলা হয়।

বসন্তের সময়সীমা

ঋতুরাজ বসন্ত উত্তর বাংলা ঋতুচক্রের ছয়টি ঋতুর মধ্যে শেষ ঋতুটি হল বসন্ত । বাংলায় প্রধান ঋতু হল গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত প্রবল শৈত্যের পর আসে বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস নিয়ে বসন্তকাল৷

বসন্তে প্রকৃতির রুপ

বসন্তকাল তার অপার সৌন্দর্য ও শোভায় আমাদের মনকে মুগ্ধ করে। এই ঋতুর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সবার হৃদয়ে আনন্দ জাগায়। শুকনো পাতার গাছে নতুন পাতা গজায়, আমগাছে মুকুলে ভরে যায়। দক্ষিণ দিক থেকে হালকা বাতাস বইতে থাকে, যা বসন্তের আগমনবার্তা বহন করে। কৃষ্ণচূড়া, পলাশ আর শিমুল ফুলে গাছে গাছে রঙের উৎসব লেগে থাকে। কোকিলের কুহুতানে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে, যেন বসন্ত তার আগমনী গান গাইছে। রঙ-বেরঙের ফুলে ফুলে প্রজাপতিরা উড়াউড়ি করে, মৌমাছিরা মধু খুঁজে গাছে গাছে বাসা বাঁধে, আর ফুলের ঘ্রাণে ও পাখির গানেই প্রকৃতি হয়ে ওঠে জীবন্ত ও আনন্দময়।

বসন্ত উৎসব

বসন্তকাল যুগ যুগ ধরে কবি ও সাহিত্যিকদের জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই ঋতুর মনোরম আবহাওয়া ও ফুল-ফলের প্রাচুর্যের জন্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও দেখা যায় ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য। এই সময়ে বসন্ত উৎসব, হোলি উৎসব, দোলযাত্রা ইত্যাদি আনন্দঘন অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমায় দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়, যা রঙ ও ভালোবাসার এক চমৎকার উৎসব। এই উৎসব মনকে রাঙায়, জীবনের দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দেয়, মানুষ আনন্দে একত্রিত হয়ে রঙে রঙে ভরে ওঠে। বসন্ত তাই শুধু প্রকৃতির রঙ নয়, জীবনেরও এক রঙিন উৎসব।

উপসংহার

বসন্তকাল মানুষের মনে চেতনা আনে প্রকৃতির হাস্য ও লাস্য মানুষের মনকে প্রভাবিত করে বলে মানুষ এ সময়ে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পায়,  এই ঋতুটি হল সকল ঋতুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তাই একে ‘ঋতুরাজ’ বলা হয়ে থাকে। প্রকৃতির রাজ্যে বুড়ো শীত চলে যাওয়ার পর ঋতুরাজ বসন্তের আবির্ভাব ঘটে। বসন্তের আগমন ঘটলে চারদিকে খুশির স্পর্শ অনুভূত হয়। শীতকালে গাছ থেকে যেসব পাতা ঝরে পড়ে, বসন্ত এলে সেসব গাছে আবার নতুন করে পাতা জন্মায়। দক্ষিণ দিক থেকে মৃদুমন্দ বাতাস বইতে থাকে। ঋতুরাজ বসন্ত যাবার আগেও দু-হাত ভরে দিয়ে যায় নতুন একটা বছর, বৈশাখীর আনন্দে বাঙালীকে মাতিয়ে বিদায় নেয় ঋতুরাজ।

আপনি যদি এই রচনাটি পছন্দ করে থাকেন, তাহলে StudyTika.com এ আরও অনেক রচনা আছে। দয়া করে সেগুলোও একবার দেখে নিন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.