ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে “শৈশব স্মৃতি” নিয়ে একটি সুন্দর রচনা রয়েছে। সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে যেন সবাই সহজে বুঝতে পারে। একবার পড়া শুরু করলে পুরোটা পড়তে মন চাইবে!
শৈশব স্মৃতি রচনা ১
ভূমিকা
শৈশবের কথা মনে পড়লে মন কেমন অস্থির হয়ে ওঠে। সেই রঙিন দিনগুলো আজ আর নেই, কিন্তু স্মৃতির পাতায় সেগুলো যেন চিরকাল রয়ে গেছে। শৈশবের স্মৃতি হলো এক বহমান নদীর মতো, যা জীবনভর মনের গভীরে বয়ে চলে। সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে যেন মন কেমন একটি অদ্ভুত মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। শৈশবের সেই দিনগুলোর মতো আনন্দময় দিন আর কিছুতেই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানের কষ্ট আর বিধিবদ্ধ জীবনের চেয়ে শৈশবের সেই খোলা আকাশের স্বাধীনতা আর বিশুদ্ধ আনন্দ যেন এক আকাশের নীচে সব সুখ এনে দিয়েছিল।
শৈশবের বিশেষত্ব
জন্মের পর থেকে শৈশবের শেষ পর্যন্ত একজন মানুষ সেই মুক্ত এবং নির্ভার সময়টি উপভোগ করে। এই সময়ে থাকে খেলার স্বাধীনতা, ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ এবং সর্বত্র মুখরতা। শৈশবের সময়টিকে প্রায়শই মানুষ জীবনের সোনালী অধ্যায় হিসেবে স্মরণ করে। বাবা-মায়ের স্নেহ, শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা, আর ভাইবোনদের সাহচর্য—সবকিছু মিলে যেন এক কল্পনাতীত সুখের সময় কাটে। সেই ছোটবেলার নির্মল হাসি, খেলার মাঠে ছোটাছুটি, আর অজানা কৌতূহলের উত্তর খোঁজা—এসব মনে করলেই মনের কোণে এক মধুর অনুভূতি জাগ্রত হয়।
আমার শৈশবকাল
আমি বড় হয়েছি গ্রামে, যেখানে প্রকৃতি তার সবুজ শাড়ি পরে দোল খেতো, আর পাখির কলকাকলি ছিল আমার সঙ্গী। প্রকৃতির সাথে সেই ছোটবেলায় আমি যে বন্ধুত্ব করেছি, তা আজও আমার হৃদয়ে মলিন হয়নি। গ্রামের পথ দিয়ে হাঁটলে মনে হতো যেন স্বর্গের পথে হাঁটছি। চারপাশে সবুজের মেলা, আর মাঠের মাঝে শস্যের ঢেউ দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম। প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা আমার শৈশব যেন এক মধুময় সময় হয়ে উঠেছিল। আর সেই সময়ের বন্ধুদের সাথে ঘরবাড়ি পেরিয়ে খেলা, ছোটাছুটি—এসব যেন এক স্বপ্নময় জীবনের কাহিনি।
শৈশবের লেখাপড়া
আমার শৈশবের পাঠশালাই ছিল আমার ছোট্ট পৃথিবী। জানার আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড, প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুন শেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভব করতাম। বাবা-মা ও বড় ভাইবোনদের কাছ থেকে নানা বিষয়ে শিখতাম। স্কুলে যাওয়ার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ, কারণ সেখানে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মিশে ও শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিদিনই ভরে উঠতাম অভিজ্ঞতার ঝুলিতে। প্রতিটি স্কুলদিন যেন এক একটি নতুন জানালার মতো, যা জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করত। সেই দিনগুলোর স্মৃতি এখনো হৃদয়ে ঝলমল করে, যেন তারা একেকটি অমূল্য রত্নখণ্ড।
শৈশবের খেলাধুলা
শৈশবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল খেলাধুলা। গ্রামের অন্যান্য ছেলেদের সাথে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা খেলতাম, যার মধ্যে ছিল কড়িখেলা, কানামাছি, গোল্লাছুট, হাডুডু ইত্যাদি। পড়াশুনার পর বিকেলের সময়টা বরাদ্দ থাকত খেলাধুলার জন্য। সেই খেলার আনন্দ আজকের ব্যস্ত জীবনে আর কোথাও খুঁজে পাই না। শৈশবের মাঠের সেই খেলার দিনগুলোর স্মৃতি এখনো মনে করলেই মনে হয়, আজও যদি সময়টাকে ধরে রাখতে পারতাম!
বিদ্যালয়ের বিদায়ের স্মৃতি
বিদ্যালয়ের শেষ দিনগুলো মনে পড়লেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। শিক্ষক ও বন্ধুদের সাহচর্য ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট সেদিনের মতো আর কখনো অনুভব করিনি। ছোটবেলায় স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত ছিল এক অপূর্ব আনন্দের স্মৃতি। বিদ্যালয়ের বিদায়ের সময় সেই দিনগুলো আর কখনো ফিরে আসবে না, তবে তাদের স্মৃতি আমার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। এই স্মৃতি মনে পড়লে মনে হয় যে, জীবন যেমনই হোক না কেন, শৈশবের সেই আনন্দময় দিনগুলোই সবচেয়ে মূল্যবান।
উপসংহার
পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়মে সময় এগিয়ে চলে, আর আমরা সবাই সেই প্রবাহে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠি। শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে একসময় পৌঁছে যাই প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে। কিন্তু শৈশবের সেই স্বর্ণালী দিনগুলো আজও হৃদয়ে আলোড়ন তোলে। সেসব স্মৃতি মনে পড়লে মনে হয়, মনের গহিনে এক টুকরো স্বপ্নময় জগৎ আঁকা আছে। শৈশবের নিস্পাপ আনন্দ আর মধুর মুহূর্তগুলো কখনোই বিস্মৃত হওয়ার নয়। তাই আমাদের উচিত সেই স্মৃতিগুলোকে সযত্নে মনে রাখা এবং সেখান থেকে জীবনের জন্য প্রেরণা নেওয়া। শৈশবের নির্মল দিনগুলোই যেন আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়—জীবনের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে সরল আনন্দ আর নিখাদ বন্ধুত্বে।
(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)
শৈশব স্মৃতি রচনা ২
ভূমিকা :
জীবনটা আসলে কেমন যেন একটা নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। আজ যে সুন্দর দিন বয়ে যাচ্ছে কাল তা স্মৃতির পাতায় জমা হচ্ছে। ঘড়ির কাঁটায় সময় এগিয়ে যাচ্ছে। অতীত একটি ইতিহাসের ছায়া হয়ে ভেসে উঠছে চোখের সামনে। একসময়ের শৈশব, কৈশোরকে মনে হয় আজ অনেক দিনের ঘটনা। কিংবা এই তো দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল স্বপ্নময় সুন্দর সে রোমাঞ্চকর দিনগুলো।
শৈশব স্মৃতি :
শৈশব স্মৃতি মানে শৈশবের সুখময় কিছু স্মৃতি। যখনই শৈশবের কথা মনে পড়ে আত্মবিস্মৃত হয়ে যাই আমি। আমার দৃষ্টিপথে শৈশব এসে দাঁড়ায়। আমি এই কোলাহলমুখর শহর ছেড়ে অতীতের দিকে চলতে থাকি। অসংখ্য ঘটনা এসে উকি মারে আমার স্মৃতির জানালায়।
শৈশবের কিছু ঘটনা অস্পষ্ট ও জীবন্ত :
আমার শৈশবের প্রথম চার বছরের ঘটনা আমি সম্পূর্ণ ভুলে গেছি। তবুও, যতদূর মনে পড়ে, তখন আমি পরিবারের সবার দুলাভাই, আদরের সন্তান ছিলাম। বিশেষ করে দাদীজান আমাকে অশেষ ভালোবাসতেন। প্রতিরাতে তিনি আমাকে রূপকথা আর গল্প শোনাতেন, যা আমি সত্যি মনে করতাম এবং সেগুলো শুনে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম। আমার স্মৃতিতে আছে, দাদীজান তার বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক, ন্যায়পরায়ণ এবং নম্রস্বভাবের।
আমার শৈশব :
আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে সুন্দর সাজানো প্রকৃতির একটি শোভাময়— ছায়াময় গ্রামে। যার পাশে অবস্থিত ছোট উপশহর। গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বৈরাগী খাল। ভরা জোয়ারে বৈরাগীর কোল রূপকথার ছবির মতো অবস্থিত— এখানেই জন্মেছি আমি।
কি অপূর্ব মায়াময়, ছায়াঢাকা, পাখিডাকা, সবুজ শ্যামলিমাময় আমার ‘খাটরা’ গ্রামখানি। যার সারাটা বুক জুড়ে আমি পেয়েছি পরিচ্ছন্ন আলো-বাতাস, ফুলের সৌরভ, গাছের ছায়া। সে আমাকে অকাতরে দিয়েছে প্রকৃতির ভালোবাসা, স্নেহমায়া ঠিক যেন আপন মায়ের মতো।
শৈশবের দিনগুলো :
এখানেই কেটেছে আমার শৈশব ও কৈশোর। সে শৈশবের কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে আজো স্পষ্ট ভেসে ওঠে একটি কাঠের পুল, বাড়ির পাশের লম্বা তাল গাছের সারি। লম্বা মেঠো পথ। তার পাশেই বড় মাঠ। পুল পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে আমেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শৈশবে সময়ে অসময়ে এ স্কুল মাঠে বিকেল হলেই ছুটে আসতাম।
খেলার সাথিদের নিয়ে ঘুড়ি উড়াতাম। এপার ওপার বৈরাগীর কোল ঘেঁষেই সাথিদের বাড়ি। তারপর ফসলের ক্ষেত আর ক্ষেত। মটরশুঁটি আর সরিষার ক্ষেতে পৌষে আনন্দধারা বয়ে যেত। হলুদে হলুদে চারদিক মৌ মৌ করত। ক্ষেতের মাঝেই খেলতাম লুকোচুরি। মটরশুঁটির গা ঘেঁষে পালিয়ে থাকতাম। এভাবেই কেটে গেল আমার শৈশব।
কৈশোরের দিনগুলো :
আমার কৈশোর কেটেছে এক অনাবিল আনন্দ সুমধুর কলতানে ভরা স্বপ্নিল রূপকথার মতো পরিবেশে। জীবনটা তখন ছিল একটা ছোট্ট ভাবনা নিয়ে। আমার আমি, পরিবার, খেলার সাথি, গাঁয়ের পথঘাট আর বৈরাগীর খালই ছিল আমার পুরো পৃথিবী। দু’চোখ জুড়ে তখন স্বপ্নময় জগৎ।
মাঝে মাঝে মনে হতো আমি সব পেয়েছি। আমার পৃথিবী কতই না সুন্দর। সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে শাসনে বাঁধনে বাড়ির ভেতর ছুটাছুটি কিংবা বর্ণমালার পাঠ উল্টানো। তারপর ক্লাসে যাওয়া। দুপুরে বাড়ি ফেরা। একটু বিকেল হলেই সাথিদের কাছে ছুটে যাওয়া। দল বেঁধে ফুটবল খেলা ।
পাঠশালায় গমন :
শৈশব প্রান্তে পা রেখেই আমাকে যেতে হয় পাঠশালায়। শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত স্কুলেই ভর্তি হতে হয় আমাকে। প্রতিদিন পাঠশালার নিয়ম বাঁধনে আমি আবদ্ধ হতে থাকি। একমাত্র বোন আর আমি দু’জনে একসাথে স্কুলে যাওয়া। ফিরে আসা। বাড়ির শাসন মেনে চলা। ধীরে ধীরে এভাবে সময় ফুরাতে থাকে ৷
আনন্দঘন দিনগুলো :
শৈশব-কৈশোরে কত কিছুই করেছি। সাথিদের নিয়ে বউ বউ খেলেছি, মিছেমিছি কত রান্না করেছি মাটি আর পানি দিয়ে। পুতুল বিয়ে দিয়ে দু’হাতে চোখ ঘঁষে কেঁদেছি। অবেলা স্কুল মাঠে ঘুড়ি উড়িয়েছি। সাথিদের সাথে করেছি মারামারি। আবার গলায় গলায় হাত দিয়ে করেছি বন্ধুত্ব। বৈরাগীর খালে সাঁতার কেটেছি সাথিদের নিয়ে। সরিষা ক্ষেত, মটরশুঁটিতে গড়াগড়ি দিয়েছি— দৌড়ে ফিরেছি ক্ষেতের কোল ঘেঁষে।
স্মৃতি তুমি বেদনা :
মধুর জীবন যখন অতীতের ভাঁজ খুলে বসে, হৃদয় আঙিনায় সত্যিই তা হয় এক চরম বেদনার। হৃদয়টা হাহাকার করে ওঠে। বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চায় চাপা দুঃখগুলো। বারবার মনে হয়- আহ! সে দিনগুলো যদি ফিরে পেতাম।
কিন্তু জীবন তো চলে তার নিজস্ব গতিতে। দিনে দিনে সবকিছুর পরিবর্তন ঘটে। জীবন খুঁজে নেয় সম্মুখ গতি। এগিয়ে চলে অবিরাম। জীবনের ব্যস্ততা ঘিরে কর্মমুখর হয়ে ওঠা মুহূর্তগুলো চলে দিনরাত্রির মতো। ভোরের আলোয় ঘুম ভাঙে, ব্যস্ততা বাড়ে।
উপসংহার :
জীবনটা আসলেই দু’দিনের খেলাঘর। নিরন্তর পাওয়া আর হারানোর বেদনার খেলা। তবু শৈশব এক অমূল্য স্মৃতি। সে চলে যায় ওপারে, অতীত হয়। আর ফিরে আসে না। অতীতের দীর্ঘশ্বাস নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আগামীদিনের কথা ভাবি। অতীত ঘিরে কখনো সূরের মূর্ছনায় গেয়ে উঠি-‘রইলো না, রইলো না, সেই আমার নানান রঙের দিনগুলি।
উপসংহার: রচনাটি যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে আরও অনেক সহজ ও সুন্দর রচনা পড়তে ভিজিট করুন আমার ওয়েবসাইট — StudyTika.com। এখানে অনেক রচনা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে