এই ব্লগপোস্টে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল ধান নিয়ে একটি সুন্দর ও সহজ রচনা দেয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুবই উপকারী হবে এই রচনাটি। পুরো রচনাটি পড়ে দেখো, আশা করি ভালো লাগবে।
বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল : ধান রচনা
ভূমিকা : ধান বাংলাদেশের প্রধান কৃষিজাত ফসল। বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। আমরা এই ভাত ধান থেকে প্রস্তুত চাল থেকে আহরণ করি। এর অভাবে দেশের হাহাকার পড়ে যায়- দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়। সুতরাং ধানের সাথে আর কোনো কৃষিজাত দ্রব্যেরই তুলনা হতে পারে না।
উৎপত্তি স্থান : পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কম-বেশি ধানের চাষ হয়। এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি ধান উৎপন্ন হয়। আমাদের বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে ধান জন্মে। তবে শীতপ্রধান দেশে ধান একেবারেই জন্মায় না বললেই চলে।
প্রকারভেদ : ধান গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের প্রায় শতাধিক ধানের প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দেশে দুই প্রধান ধানের প্রকার ব্যাপক পরিচিত, যথা আউশ (আশু) এবং আমন (হৈমন্তিকা)। এর পাশাপাশি ‘বোরো’ নামে আরেক ধরণের ধান চাষ করা হয়। বোরো ধান উচ্চ ফলনশীল এবং বছরের যে কোনো সময়ে চাষ করা সম্ভব, তবে এর জন্য পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। বোরো ধান মূলত দরিদ্র কৃষকদের জন্য বিশেষ উপকারী, কারণ এটি কম খরচে সহজেই সংগ্রহযোগ্য।
চাষ প্রণালী : বৈশাখ মাসে আউশ ধানের বীজ বপন করা হয়। শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসে ধান পাকতে শুরু করে এবং কৃষকরা তা কেটে ঘরে তুলে রাখেন। এই ধান সাধারণত উঁচু জমিতে জন্মায়। আমন ধান সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ধান হিসেবে পরিচিত। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টি শুরু হলে কৃষকরা জমি চাষ করে ধানের বীজ বপন করেন। আষাঢ় মাসে যখন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে এবং জমি পানিতে সিক্ত হয়, তখন কৃষকরা ওই ধানের চারা তুলে অন্য চাষযোগ্য জমিতে পুনরায় রোপণ করেন। কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ধান পাকলে কৃষকরা তা কেটে আঁটি বাঁধেন। এই আঁটিগুলো গুদামে গাদা করা হয় এবং পরে আছড়ে ধান থেকে আলাদা করা হয়। বোরো ধান পৌষ মাসে রোপণ করে বৈশাখ মাসে কাটা হয়।
ধানক্ষেতের দৃশ্য : ধানের ক্ষেত দেখতে বড়ই মনোরম। কচিকচি ধান গাছ যখন শীষ নিয়ে পানির ওপর মাথা তুলে ওঠে, তখন মনে হয়- পৃথিবী সবুজ আস্তরণে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। তারপর আশ্বিন-কার্তিক মাসে ধান পেকে উঠলে সূর্যকিরণে তার সোনালি আভা কী অপরূপই না দেখায়! ধানের ক্ষেতের ওপর যখন বাতাসের দোলা লাগে তখন মাঠের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঢেউয়ের শিহরণ জাগে। এমন দৃশ্য দেখে কবি মোহিত হয়ে লিখেছেন, “এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে?”
চাল প্রস্তুত প্রণালী : ধান থেকে চাল উৎপন্ন হয়, যা দুই ধরনের—আতপ চাল ও সিদ্ধ চাল। রোদে শুকিয়ে সরাসরি ধান থেকে যেটি বের করা হয়, সেটিকে ‘আতপ চাল’ বলা হয়। আর ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে প্রাপ্ত চালকে ‘সিদ্ধ চাল’ বলা হয়। আগে গ্রাম-গঞ্জে ঢেঁকির প্রচলন ছিল, যেখানে ধান ঢেঁকিয়ে ভাজা হতো। এখন ঢেঁকির পরিবর্তে আধুনিক ‘ধানকল’ ব্যবস্থাই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা : ধান আমাদের অতি-প্রয়োজনীয় ফসল। চাল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের খাদ্য। ধানের কোন অংশই ফেলার নয়। ধান ঝাড়ার পর শুষ্ক গাছগুলো খড় হিসেবে গো-মহিষাদির খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। ধান ভাঙানোর পর খোসাগুলো তুষ হিসেবে জ্বালানিতে কাজে লাগে। তুষের সাথে যে গুঁড়া বের হয় তাকে কুঁড়া বলে। এ কুঁড়া খেয়ে হাঁস, মুরগি ও গরু-বাছুর পুষ্টিলাভ করে। চাল থেকে ভাত ছাড়া আমরা পোলাও, পায়েস, পিঠা ইত্যাদি তৈরি করে খেয়ে থাকি। চাল আমাদের জীবনে কত প্রকারে ব্যবহৃত হয় এবং কতভাবে উপকার করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
উপসংহার : যে ধানের উপর আমাদের জীবন নির্ভরশীল, সেই ধান উৎপাদন এবং কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা করার জন্য দেশে উন্নত পদ্ধতি বা আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অভাব এখনও স্পষ্ট। এখনো আমাদের কৃষিতে পুরনো আমলের চাষাবাদের প্রণালী প্রধান। দেশের কৃষকরা আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা ও প্রেরণা পাননি। তারা এখনও প্রধানত প্রাকৃতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে কৃষিকাজ পরিচালনা করেন। তবে আশার কথা হলো, ধীরে ধীরে পুরনো পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে সৃষ্ট সেচ সমস্যার মোকাবেলায় কৃষকরা পানির সেচ, সার ও কীটনাশকের যথাযথ ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে শুরু করেছেন। সামগ্রিকভাবে কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ আরও ব্যাপক ও জোরদার করতে হবে। এতে ‘অধিক ফসল ফলাও’ কথাটির প্রকৃত অর্থ বাস্তবে প্রমাণিত হবে।
এই ছিল বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল ধান নিয়ে রচনা। আরও অনেক রচনা পড়তে চাইলে ঘুরে আসো আমার ওয়েবসাইটে — StudyTika.com।