বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

 ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে আছে “বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ” বিষয়ক একটি সুন্দর রচনা। সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে যেন সবাই বুঝতে পারে। একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে থাকা যাবে না।

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ১

ভূমিকা : ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অতি সম্প্রতি কালের গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত কুমেরু ও হিমালয়ের বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, জলবায়ুর সাম্যাবস্তা ভেঙে যাওয়ায় অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, জলকম্পের ঘটনাও বাড়ছে, নষ্ট হচ্ছে স্থল ও জলজ জীববৈচিত্র্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব পড়ছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর, যেমন- শুষ্ক এবং প্রায় শুষ্কভূমির পরিবেশ, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় পরিবেশ, কৃষি পরিবেশ, বন পরিবেশ, দ্বীপ পরিবেশ, পর্বত পরিবেশ, মেরু পরিবেশ প্রভৃতি। এসব বিষয়কে সামনে রেখেই ৭-১৮ ডিসেম্বর, ২০০৯, ডেনমার্কের রাজধানী কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন। আর এর আলোচনায় ওঠে এসেছে বিশ্ব জলবায়ুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহে জলবায়ু সংরক্ষণের জন্যে করণীয় ভূমিকা।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন দিক : ১৯৮০’র দশক থেকে গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে প্রতিবছর গড়ে ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিনিয়ত এই উষ্ণায়নের ফলে সুমেরু অঞ্চলে বরফ গলার পরিমাণ আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, জলবায়ুর এ পরিবর্তন রোধ করা না গেলে অচিরেই সর্বনাশা ক্ষতি হবে, যেমন- সাগরের উচ্চতা কয়েক মিটার বেড়ে গিয়ে তালিয়ে যাবে উপকূলবর্তী অনেক শহর-বন্দর। গ্রিনল্যান্ডের বরফের ছাদ গলে যাবে, প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের প্রায় ২৫ ভাগ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দেখা দিতে পারে খরা, তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টি, ফলে ফসল উৎপাদন ও জীবন ধারন অসম্ভব হয়ে পড়বে। অরণ্য সম্পদ ও ধ্বংস হয়ে যাবে অনেকাংশে। ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের এসব প্রভাবের কিছু কিছু ঘটতে শুরু করেছে। ফলে সারা বিশ্বেই জলবায়ু সংরক্ষণের জন্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ : সাম্প্রতিককালে সাতজন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা সত্যি হলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। ফলে কোটি কোটি মানুষ হবে পরিবেশ শরণার্থী। খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাহত হবে, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর প্রকোপ বাড়বে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ দেশের জীববৈচিত্র্য। জলবায়ু পরিবর্তনের যে সম্ভাব্য প্রভাব বাংলাদেশে ঘটতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

(১) সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের প্রায় ১২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
(২) সুন্দরবনের অনেকাংশ সমুদ্রে তলিয়ে গিয়ে জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদ প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
(৩) অতিবৃষ্টির কারণে বন্যার প্রকোপ বাড়বে। অপরদিকে গ্রীষ্মের সময় প্রচণ্ড তাপদাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরার প্রকোপ দেখা দেবে। আবহাওয়ার এ প্রকট তারতম্যের কারণে ফসল উৎপাদন বিপুলাংশে ব্যাহত হবে।
(৪) শুকনো মৌসুমে দেশের প্রধান প্রধান নদীর প্রবাহ হ্রাস পাবে। নদীর ক্ষীণপ্রবাহের কারণে সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেবে। এতে একদিকে বৃষ্টিতে সেচের জন্যে ও পানযোগ্য পানির অভাব দেখা দেবে, অপরদিকে স্বাদুপানির মৎসসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
(৫) দেশের দক্ষিণাঞ্চল বহুলাংশে প্লাবিত হলে সামুদ্রিক লোনা পানি ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ভূগর্ভস্ত পানির লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেবে। ফলে দেশে তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দেবে।
(৬) জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা ও পৌনঃপুনিকতা বাড়বে। ফলে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ধ্বংস হবে বহু সম্পদ।
(৭) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। অচিরেই বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, যার মূলে রয়েছে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন। দেশের রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে ভূমিকম্পের ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, মারা যেতে পারে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব : সমগ্র বিশ্বে ইতোমধ্যেই জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্টের কুপ্রবাহ লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মেরু অঞ্চলের বরফের সামগ্রিক আয়তন হ্রাস। শুধু মেরু অঞ্চলেই নয়, সুইজ্যারল্যান্ডের জমাটবদ্ধ বরফের পরিমাণও কমেছে, কমেছে কেনিয়া পর্বতমালা ও ফিলিমাজ্যারো পর্বতের বরফের পুরুত্ব। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য প্রভাবের মধ্যে আছে:
(১) নাইজার নদী, শাদ হ্রদ এবং সেনেগাল নদীর পানি হ্রাস।
(২) বিশ্বের ৭০% বালুকাময় তটরেখার বিলুপ্তি।
(৩) আলাস্কার উত্তরাঞ্চলের বনভূমির স্থানচ্যুতি।

জলবায়ু সংকট রোধে করণীয় : জলবায়ু সংকট রোধে বিশ্বের সকল মানুষকেই সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর প্রধান প্রধান করণীয় হতে পারে-

(১) ওজোন বান্ধব গ্যাস ব্যবহার। ফ্রিজ, এসি ইত্যাদি এবং অ্যারোসল, এয়ারফ্রেশনারে ব্যবহৃত সি এস সি গ্যাস ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে, ফলে গ্রিন হউজ প্রভাবের কারণে বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে যায়। তাই সি এস সি গ্যাস পরিত্যাগ করা ও সে স্থলে ওজোন বান্ধব গ্যাস ব্যবহার করা জরুরি।
(২) উপযুক্ত বর্জ্যব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা নেয়া যেন বায়ু, পানি দূষণ এবং স্থল দূষণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনা যায়।
(৩) ভূমণ্ডলের ক্রমউষ্ণায়ন প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে সাধারণ বৃক্ষ নিধন রোধ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বনায়নের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা।
(৪) প্রাকৃতিক জলাশয় উষ্ণায়ন প্রতিরোধ করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট প্রতিরোধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
(৫) বিশ্বের সামগ্রিক ভূমি ব্যবহার পরিবেশসম্মত করা।
(৬) পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন নিশ্চিত করা।
(৭) যানবাহনের কালো ধোঁয়া পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। এছাড়া প্রাকৃতিক জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ কল্পে ও বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার ক্ষতি কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও দরকার।

উপসংহার : ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে জলবায় পরিবর্তনের প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে দেখা যাচ্ছে। আইলা ও সিডরের মত ঘূর্ণিঝড় মুহুমুর্হু আঘাত হানছে। ফলে বহু মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ফসলের জমি, চিংড়ির ঘের তলিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত এই পরিস্থিতি মোকাবেলা বাংলাদেশের জন্যে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই সংকট নিরসেন বাংলাদেশকে যেমন বস্তুনিষ্ঠ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে তেমনি বিশ্বের অন্যান্য জাতির সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা জলবায়ু পরিবর্তন কেবল বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২

ভূমিকা : কোনো জায়গায় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন যার ব্যাপ্তি কয়েক যুগ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারে, তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বা Climate Change বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল। যেমন : জৈব প্রক্রিয়াসমূহ, পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের পরিবর্তন, ভূ-ত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (plate tectonics), আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ইত্যাদি। তবে বর্তমান কালে সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বললে সারা পৃথিবীর ইদানীং সময়ের মানবিক কার্যক্রমের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন বোঝায়, যা ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি বেশি পরিচিত।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ : জলবায়ুর পরিবর্তন বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া এবং বহির্জগতের প্রভাব। বহির্জগতের প্রভাব বলতে বোঝায় যেমন সৌর বিকিরণের মাত্রা, পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন বা সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান। বর্তমান সময়ে মানবসৃষ্ট গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলতে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে যে অস্থায়ী ও স্থায়ী নেতিবাচক ও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে, সেগুলোর বিশ্লেষণ বোঝায়। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন কেবল প্রাকৃতিক কারণেই নয়, মানবসৃষ্ট কারণেও সংঘটিত হয়। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০ সালের গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির দিক দিয়ে শীর্ষ ১০ ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব :

লবণাক্ততা বৃদ্ধি : বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নদ-নদীর পানিপ্রবাহ শুকনো মৌসুমে স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না। ফলে নদীর পানির বিপুল চাপের কারণে সমুদ্রের লোনাপানি যতটুকু এলাকাজুড়ে আটকে থাকার কথা ততটুকু থাকে না। পানির প্রবাহ কম থাকার কারণে সমুদ্রের লোনাপানি স্থলবাগের কাছাকাছি চলে আসে। ফলে লবণাক্ততা বেড়ে যায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই সুন্দরবনের সুন্দরী গাছে ব্যাপক মাত্রায় আগামরা রোগ দেখা দিয়েছে। অনেকে একে মানবসৃষ্ট কারণ হিসেবে উল্লেখ করতে চাইলেও গবেষকরা একে প্রাকৃতিক কারণ হিসেবেই শনাক্ত করেছেন। সুন্দরবনের অন্যান্য গাছও আগামরা ও পাতা কঙ্কালকরণ পোকার আক্রমণের শিকার হচ্ছে।

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা : বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও, গত কয়েক বছরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে এই পরিচিতি এখন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের তাপমাত্রার নথিভুক্ত পরিসংখ্যান দেখা গেলে, ১৯৭২ সালের ৩০ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৯৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। superficially এই পরিসংখ্যানে মনে হতে পারে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে, কিন্তু বাস্তবে অতীতের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কম ছিল, আর বর্তমানে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অনেক বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ঢাকায় মে মাসের গড় তাপমাত্রা ১৯৯৫ সালের তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। নভেম্বরে গড় তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা গড়ে ০.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২১০০ সালের মধ্যে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।

মরুকরণ : দিনে দিনে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে, সময়মত হচ্ছে না বন্যা। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৩০০ মিলিমিটার, বরেন্দ্র এলাকায় গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১১৫০ মিলিমিটার। এরকম স্বল্প বৃষ্টিপাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গিয়ে খরায় আক্রান্ত হবে বিপুল সংখ্যক মানুষ, এর মধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লোকই বেশি। এরকম খরায় কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন উৎস থেকে আলাদা আলাদা উপাত্ত পাওয়া যায়। কারো মতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ খরায় উদ্বাস্তু হবে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ।

ভূগর্ভস্ত পানির স্তর হ্রাস : বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভস্ত পানির স্তর হ্রাস পেয়ে দেখা দিচ্ছে স্থায়ী মরুকরণ। রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। যদিও এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণ, বিশেষ করে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবও দায়ী। তবে অনাবৃষ্টির কারণে ভূগর্ভস্ত পানির স্তর হ্রাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সুপেয় পানির অভাবে ভূগর্ভস্ত পানির ব্যাপক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্ত পানি কমে যাচ্ছে।

সুপেয় পানির অভাব : ২০০৯ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেলের পানিসম্পদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ সমুদ্রতীরের বেশ কয়েকটি দেশে সামনের দিনে মিঠা পানির তীব্র সংকট দেখা দেবে। ভূগর্ভস্ত পানির স্তর হ্রাস পাওয়ায় অনেক এলাকায় দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির অভাব। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এই অভাব প্রকট।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি : জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এরমধ্যে ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙন এবং ভূমিধ্বসের মাত্রাবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পরপর বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে ২ থেকে ৩ বছর পরপরই বড় ধরনের দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্র্যাফ্ট-এর তালিকায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার আগে।

জলোচ্ছ্বাস : জলোচ্ছ্বাস বা সাইক্লোন যদিও স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জন্য একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতি বছরের এপ্রিল, মে, জুন এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ ও নিম্নচাপের ‍সৃষ্টি হয় ও তা জল-ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। আর সেই তান্ডবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় উপকূলবর্তী হাজার হাজার একর স্থলভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনে একদিকে যেমন বাড়ছে এসব জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা, তেমনি বাড়ছে এদের সংখ্যা। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। তার মারাত্মক প্রভাব রেখে যেতে না যেতেই ২০০৮ সালের ২ মে ধেয়ে আসে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস। একই বছর ২৬ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় রেশমি, ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় খাইমুক, ২৬ নভেশ্বর নিসা, ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল বিজলি, এবং ওই বছরই ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে।

অতিবৃষ্টি ও তীব্র বন্যা : বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত তালিকায় বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে হিমালয়ের বরফগলা পানিসহ উজানের নেপাল ও ভারতের বৃষ্টিপাতের পানি, বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদ-নদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। প্রতি বছর গড়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০৯৪ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং প্রতি বছরই প্রায় ১৫ লক্ষ হেক্টর চাষের জমি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। এছাড়াও শিলাবৃষ্টি, ভূমিধ্বস দিনে বেড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে।

নদীভাঙন : বাংলাদেশে, সাধারণত বর্ষাকালে উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের দরুন নদীর পানি বেড়ে যায় এবং তা প্রচন্ড গতিতে সমুদ্রের দিকে ধাবিত হয়। এসময় উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসংলগ্ন স্থলভাগে পানির তীব্র তোড়ের সৃষ্টি হয় নদীভাঙনের কারণে। বাংলাদেশে এটা স্বাভাবিক চিত্র হলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় তা আর স্বাভাবিক বলে পরিগণিত হচ্ছে না।

ভূমিধ্বস : ভূমিধ্বস বিশ্বের অন্যান্য দেশে বেশ পরিচিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশেও সীমান্তবর্তী উঁচু পাহাড়-সংলগ্ন এলাকায় এই দুর্যোগ ইদানিং বেড়ে চলেছে।

সুনামির সম্ভাবনা : বাংলাদেশের সামগ্রিক ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থা পর্যালোচনাপূর্বক ভূতাত্ত্বিকদের অভিমত, বঙ্গোপসাগর অভ্যন্তরে F1, F2, F3, Ges F4 নামে ৪টি ভূ-কম্পন উৎস রয়েছে। এগুলোর প্রতিটিই রিখটার স্কেলে ৭-৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করতে পারে এবং যেকোনো সময় ভূমিকম্প সৃষ্টি করে সুনামী ঘটাতে পারে। আর ভূমিকম্প সংঘটনের মাত্র ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে সুনামি, বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।

সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি : বঙ্গোপসাগরের সাথে বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলভাগ থাকায় দিনে দিনে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ডুবে যাবার আশঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রস : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানারকম প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে বাংলাদেশে। অনেক প্রজাতিই হারিয়ে যেতে বসেছে। গাছ, মাছ, পাখি, ফুল, ফল সবকিছুতেই এই প্রভাব পড়ছে। ইউনেস্কোর “জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ” শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের ৭৫% ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। একথা অনস্বীকার্য যে, এই বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাসে পরিবেশের উপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়বে।

মৎস্য সম্পদ হ্রাস : অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকারী দেশ। মাছ চাষের ক্ষেত্রে এদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশ, বছরে ৩,০০০ কোটি টাকার মাছ রপ্তানি করে। এদেশের জাতীয় আয়ের ৩.৭০ ভাগ এবং রপ্তানি আয়ের ৪.০৪ ভাগ আসে মৎস্য খাত থেকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে এই মৎস্য খাতের উপর পড়ছে বড় প্রভাব। বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিক আচরণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। মৌসুমী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং অসময়ে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাছের প্রজননে নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে।

পক্ষী প্রজাতির বিলুপ্তি : বাংলাদেশে পাখি শুমারির হাসেব মতে, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে মোট ১৬০ প্রজাতির পাখি দেখা গেলেও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এসে তার সংখ্যা মাত্র ৬৮। সংখ্যা হ্রাসের পাশাপাশি পাখিদের প্রজাতিগুলোও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে জলচর পাখিরা।

কৃষিভিত্তিক উৎপাদন হ্রাস বা ধ্বংস : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক উৎপাদনের জন্য যেখানে ছিলো যথাযোগ্য তাপমাত্রা, ছিলো ছয়টি আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ঋতু, সেখানে দিনে দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতু হারিয়ে যেতে বসেছে এবং তার সাথে সাথে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা সবকিছুতে আমূল পরিবর্তন আসছে। ফলে অনিয়মিত, অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত; সেচের পানির অপর্যাপ্ততা; উপকূলীয় অঞ্চলে বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বিভিন্ন সময় উপকূলীয় বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধিতে লবণাক্ত পানিতে জমি ডুবে যাওয়া এবং শুষ্ক মৌসুমে মাটির নিচের লবণাক্ত পানি উপরের দিকে বা পাশের দিকে প্রবাহিত হওয়ার মতো নানাবিধ সমস্যায় বাংলাদেশের কৃষির ভবিষ্যৎ আজ চরম হুমকির মুখে।

খাদ্যসংকট : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ উদ্ভুত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি নদ-নদীর পানি হ্রাস, জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে ধীরে ধীরে দেখা দিবে খাদ্য সংকট।

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ : জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। শ্বাসকষ্ট, হিটস্ট্রোক বা গরমজনিত মৃত্যু কিংবা তীব্র ঠাণ্ডাজনিত মৃত্যু ইত্যাদি এখন খুব সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি : ব্যক্তিগত পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষ তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহায়-সম্বল হারাতে বাধ্য হয়। গৃহস্থালির গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস-মুরগি, গাছপালা, শস্য, মৎস্য সম্পদ, শস্যবীজ, গবাদিপশুর শুকনো খাদ্য, এমনকি মাছ ধরার জাল বা জমি চাষের লাঙ্গলও ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে নষ্ট হয়ে যায়। বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাসের পর গবাদিপশুর শুকনো খাদ্যের অভাবে অনেক পরিবার বড় সংকটে পড়ে। তদুপরি, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের ফলে লবণ পানির প্রভাবে জমি লবণাক্ত হয়ে অনুর্বর হয়ে পড়ে। এর ফলে দুর্যোগ-আক্রান্ত মানুষরা কখনো সাময়িক, কখনো দীর্ঘ সময় ধরে এক বিরাট আর্থিক অনটন ও দুর্যোগের সম্মুখীন হন।

জলবায়ু পরিবর্তন : পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতিসংঘের ‘রেড-অ্যালার্ট’ জাতিসংঘের একটি বিজ্ঞানী প্যানেল হুঁশিয়ার করেছে – মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন দ্রুত হারে সাগর-পৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে এবং বরফ গলছে। সেই সাথে, জীব-জন্তুর বিভিন্ন প্রজাতি তাদের আবাসস্থল বদলাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফের আচ্ছাদন বিলীন হওয়ার কারণে কার্বন নিঃস্বরনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে, পরিস্থিতি দিনকে দিন বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্যানেলের সাম্প্রতিক একটি বিশেষ রিপোর্টে এসব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষ এই রিপোর্টে দেখা হয়েছে, তাপমাত্রার বাড়ার কারণে সমুদ্র এবং বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চলের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এবার যা পেয়েছেন, তা আগের রিপোর্টগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ভীতিকর।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর দাবিতে বিক্ষোভ : গত ২০ সেপ্টেম্বর (২০১৯) জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার দাবি নিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তারা চাইছেন, জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করা হোক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষা করা হোক। সুইডেনের কিশোরী গ্রেটা থানবার্গের শুরু করা এই বিক্ষোভে সামিল হওয়ার জন্য ১১ লক্ষ শিশু ২০শে সেপ্টেম্বর তাদের ক্লাস বর্জন করে। বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন : গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের সদরদপ্তরে এই সম্মেলনে বিশ্বের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করেন। সাধারণ অধিবেশনের আগে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে বিস্তৃত আলোচনা করেন। প্রায় ৭০টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নতুন ও কঠোর নীতিমালা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। সম্মেলনের তিন দিন আগে বিশ্বের ১৫০টি দেশে সবচেয়ে বড় জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। চিলি সরকার জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরে (২-১৩ ডিসেম্বর) তারা চিলির সান্তিয়াগো শহরে এই বিষয়ে পরবর্তী সম্মেলন আয়োজন করবে। ইতোমধ্যে ৬৯টি দেশ কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবং ৬৫টি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যের লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চিলির নেতৃত্বে গঠিত এই জোটে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইকেয়া, নেসলে, ইউনিলিভার, ইবেরদ্রোলা এবং মার্কিন অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার সুইস রে ও অ্যালিয়ানজ। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের দেশগুলোকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলতে উৎসাহিত করা। ২০১৬ সালে প্রস্তাবিত ওই চুক্তির আওতায় ১৯৭টি দেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

উপসংহার : বিশ্বের এই জলবায়ু সংকটের মূহুর্তে আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভোগকারী প্রথম প্রজন্ম এবং এ বিষয়ে কিছু করার মতো একমাত্র প্রজন্মও হচ্ছি আমরা।

আপনি রচনাটি পড়লেন, ধন্যবাদ! এমন আরও সহজ ও সুন্দর রচনা পড়তে চাইলে এখনই ঘুরে আসুন আমার ওয়েবসাইটে – StudyTika.com। আরও অনেক রচনা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.