সুন্দরবনের প্রাণী রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

এই ব্লগপোস্টে আপনি পড়তে পাবেন সুন্দরবনের প্রাণী নিয়ে একটি সহজ ও সুন্দর রচনা। যারা Class 7, 8, 9, 10 কিংবা SSC, HSC পরীক্ষার জন্য রচনা খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী হবে।

সুন্দরবনের প্রাণী রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

সুন্দরবনের প্রাণী রচনা ১

উপস্থাপনা  

সুন্দরবন বাংলাদেশের এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ, যা শুধু দেশের নয়, বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্র। এই লীলাভূমিতে রয়েছে হাজারো উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির আবাস। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দিন দিন এসব উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে। বিশেষভাবে যেসব প্রাণী হারিয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে, তাদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, ওলবাঘ, গণ্ডার, হাতি ও শকুনের নাম উল্লেখযোগ্য। মানুষের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ, বন উজাড়, বাসস্থান ধ্বংস, শিকার ও দূষণের কারণে এসব প্রাণীর সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা রোধে আমাদের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে—প্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়ানো, আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা মানেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক সমৃদ্ধ পৃথিবী সংরক্ষণ।

জীবজন্তু ও প্রাণিজগতের প্রয়োজনীয়তা  

যেকোনো দেশের জীবজন্তু, পশুপাখি দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, উদ্ভিদ জগৎ, প্রাণিজগৎ ইত্যাদি পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখে। যদি কোনোটির অভাব দেখা দেয় তবে জীবজন্তুর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। 

পৃথিবীতে কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রাণী বা বৃক্ষলতা নেই এ বিষয়টি আমাদের স্মরণে রাখা কর্তব্য। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনের প্রাণী রক্ষা আজ একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শকুন  

শকুনকে কেউ সুন্দর পাখি বলে না। যাবতীয় অখাদ্যকে সে তার খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করে। তাই শকুন কেউ পোষে না। অথচ শকুন ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে বলে গবেষকগণ খুবই চিন্তিত। মানুষের পক্ষে যা ক্ষতিকর সেইসব আবর্জনা শকুন খেয়ে ফেলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। শকুন সত্যিকার অর্থে মানুষের উপকার ছাড়া অপকার করে না ।

বাঘ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ  

বাঘ হিংস্র হলেও এটি প্রকৃতির এক অপরিহার্য উপাদান। প্রাণিবিদদের মতে, বাঘ খাদ্যচক্রের শীর্ষে থেকে সুন্দরবনের প্রাণিজগতের ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে দুঃখজনকভাবে দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আইন করে বাঘ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাঘ শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। বিশ্বজুড়ে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ নামটি সুপরিচিত, আর এই বিরল ও রাজসিক প্রাণী শুধু বাংলাদেশেই প্রকৃত পরিবেশে দেখা যায়। তাই এ জাতীয় সম্পদকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুন্দরবন, বাঘ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ — এ তিনটি একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাই বাঘ সংরক্ষণ মানেই প্রকৃতি সংরক্ষণ।

উপসংহার  

সুন্দরবনের অধিকাংশ প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে। বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শুধু টাইগার নয়, অন্যান্য প্রাণীও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খুবই দরকারী। প্রাণী, বৃক্ষলতা ইত্যাদি প্রকৃতির দান। এগুলো ধ্বংস করলে প্রকৃতির নিয়মকেই ধ্বংস করা হয় এবং একসময় প্রকৃতির ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে, ঘটে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তাই সুন্দরবনের প্রাণীদের রক্ষা করা উচিত।

সুন্দরবনের প্রাণী রচনা ২

ভূমিকা  

প্রকৃতির রয়েছে অপার রহস্য। পৃথিবীর এক বিস্ময় হলো প্রাণিজগৎ। অরণ্যের গভীরে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব লক্ষ্যনীয়। সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর প্রাকৃতিক আশ্চর্য। এখানে রয়েছে বিচিত্র গাছপালা ও বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু।

সুন্দরবনের অবস্থান  

বাংলাদেশের খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী চিরসবুজ বনাঞ্চলের নাম সুন্দরবন। একে ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ বা লবণাক্ত জলাভূমির বনও বলা হয়। এর আয়তন প্রায় ছয় হাজার সতের বর্গ কিলোমিটার।

সুন্দরবনের প্রাণী/জীবজন্তু  

সুন্দরবনের গভীরে নানা ধরনের পশুপাখি ও বন্যপ্রাণী বসবাস করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর, বন্য শূকর, হাতি, গন্ডার ও সজারু। এ ছাড়াও এখানে অসংখ্য পাখি ও বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণীর দেখা মেলে, যা সুন্দরবনকে আরও বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার  

সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় প্রাণী হলো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। এ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবী বিখ্যাত। এ বাঘের গায়ে রয়েছে বড় বড় ডোরাকাটা দাগ। এ প্রাণীটি তুলনাহীন, অনন্য। সুন্দরবন ছাড়া এ জাতীয় বাঘ অন্য কোথাও দেখা যায় না। এছাড়া এখানে অনেক চিতাবাগ ও ওলবাঘ রয়েছে। .

হরিণ

হরিণ সুন্দরবনের আর একটি বিশেষ আকর্ষণ। এটি দেখতে খুব সুন্দর ও নিরীহ প্রকৃতির। এর মাংস খুব সুস্বাদু। হরিণের চামড়া বেশ মূল্যবান। হরিণ সব সময় বাঘের ভয়ে ভীত থাকে। এটি দ্রুত দৌড়াতে পারে। 

বানর  

বানর অত্যন্ত চঞ্চল ও দুরন্ত স্বভাবের প্রাণী। সুন্দরবনে এদের দেখা যায় প্রচুর সংখ্যায়। এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে বেড়ানো, খেলা করা এবং দলবদ্ধভাবে চলাফেরা এদের স্বভাবজাত আচরণ। বনজ ফলমূল খেয়ে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক সময় বানরের সরব উপস্থিতি ও সতর্ক সংকেত হরিণকে বাঘের মতো হিংস্র শিকারির হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। এজন্যই বলা হয়, সুন্দরবনের প্রাণীজগতের ভারসাম্য রক্ষায় বানরেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

অন্যান্য প্রাণী
  
এক সময় সুন্দরবনে অনেক হাতি ও গন্ডার ছিল। আজ এগুলো বিলুপ্তির পথে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাতি দেখা যায়। এছাড়া সুন্দরবনে বন্যশূকর ও সজারুর বিচরণ দেখা যায় ৷

পাখি ও সরীসৃপ  

সুন্দরবনের পাখিদের মধ্যে রয়েছে-টিয়ে, ময়না, শালিক, শ্যামা, দোয়েল, ঘুঘু, বক, সারস, বুনোহাঁস, বনমোরগ ইত্যাদি। এছাড়া সরীসৃপ প্রজাতির মধ্যে আছে-কুমির, হাঙ্গর, সাপ, গুইসাপ ইত্যাদি। বনের জলাশয় ও জঙ্গলে নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। শীতকালে সুন্দরবনে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।

প্রাণীদের বিলুপ্তি ও রক্ষা  

বর্তমানে সুন্দরবনের অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ বনভূমির গভীরতা কমে যাওয়া, মানুষের ব্যাপক পদচারণা, বনে আগুন লাগা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস, খাদ্যাভাব, শিকারিদের উৎপাত ইত্যাদি। সুন্দরবনের প্রাণীদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে প্রাণী নিধন আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

উপসংহার  

পরিশেষে বলা যায়, সম্পদে, প্রাচুর্যে ও জীবন্তুর বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ আমাদের সুন্দরবন। এটি কেবল বাংলাদেশের নয়; এটি বিশ্ববাসীরও সম্পদ। ইউনেস্কো সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য ভারত ও বাংলাদেশকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদেরও উচিত সুন্দরবন ও তার প্রাণীদের রক্ষার জন্য আরো সচেতন ও কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়া।

আপনি যদি আরও সুন্দর রচনা পড়তে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com-এ আরও অনেক রচনা আছে। দয়া করে সেগুলোও দেখে নিন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.