এই ব্লগপোস্টে দেওয়া আছে “বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা” রচনা। সহজ ভাষায় লেখা এই রচনাটি একবার পড়লেই ভালো লাগবে।
বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা রচনা ১
ভূমিকা:
দেহ ও মন উভয়ের সমন্বেেয় গঠিত হয় জীবন। মনের উন্নতির জন্য যেমন জ্ঞানচর্চার প্রয়োজন, তেমনি দেহের উন্নতির জন্য প্রয়োজন দেহ চালনা। খেলাধুলা শরীর সঞ্চালনের বিশেষ সহায়ক, এই জন্যই প্রত্যেক বিদ্যালেেয় বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয় এবং বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার মূল্যায়ন করা হয়।
ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি থাকে। সাধারণত বার্ষিক পরীক্ষার শেষে, অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের শেষভাগে বা কোথাও কোথাও নতুন বছরের শুরুতেই এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়, যখন শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার বাড়তি চাপ থাকে, তখন এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় না। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মূল দায়িত্ব ক্রীড়া শিক্ষকের ওপর বর্তায়। তবে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাগণও বিভিন্ন দায়িত্বে অংশ নেন। প্রধান শিক্ষক মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করেন এবং প্রতিযোগিতাটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি
ক্রীড়া শিক্ষক প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভায় মিলিত হন। সেই সভায় প্রতিযোগিতার তারিখ ও সময় নির্দিষ্ট করা হয়, একটি কার্যসূচি তৈরি করা হয় এবং ক্রীড়া শিক্ষককে সাহায্য করার জন্য অন্যান্য শিক্ষকগণের ওপর কিছু দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। প্রতিযোগিতার বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ চলতে থাকে। কে কোন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে তা এই বাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে স্থির করা হয়।
প্রতিযোগিতার দিনের বর্ণনা
অবশেষে আসে বহু প্রতিক্ষিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনটি। পত্রে পুষ্পে সুসজ্জিত করা হয় ক্রীড়া প্রাঙ্গন। ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত হয় সুসজ্জিত বেশে। এদের মধ্যে কেউবা প্রতিযোগী আর কেউবা দর্শক। আসেন শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকম-লী এবং নিমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। সাধারণত প্রধান শিক্ষকই থাকেন অনুষ্ঠানের সভাপতি। প্রশাসনের উচ্চপদসস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক বিশেষ ব্যক্তি অথবা একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে নিমন্ত্রণ করা হয় প্রধান অতিথিরূপে। সভাপতি ও সম্মানিত অতিথি বিশেষ আসনে উপবেশন করেন।
মূল প্রতিযোগিতা
সকাল আটটা বা ন’টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। তারপরে প্রতিযোগিদের কুচকাওয়াজ শুরু হয়। কুচকাওয়াজ শেষে তাদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। এরপর শুরু হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। উচ্চ লাফ, দীর্ঘ লাফ, বর্শা নিক্ষেপ, চাকতি নিক্ষেপ, তিন পায়ে দৌড়, মোরগ যুদ্ধ, বিভিন্ন দৈর্ঘ্যরে দৌড়, হাঁড়ি ভাঙ্গা প্রভৃতি ক্রীড়ায় প্রতিযোগী ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। এই অনুষ্ঠানের একটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ‘যেমন খুশি তেমন সাজ’ নামে বিশেষ প্রতিযোগিতা ।
বিচিত্ররূপে সজ্জিত হয়ে ছাত্রছাত্রীরা দর্শকদের মনে বেশ আনন্দের সঞ্চয় করে। শিক্ষক এবং অভিভাবকগণও দু’একটি খেলায় অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কাছি টানাটানি’ এবং ‘বালিশ নিক্ষেপণ’ খেলা। কখনো কখনো কার্যনির্বাহী কমিটি ও শিক্ষকদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। খেলা শেষে শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী। প্রধান অতিথিই সাধারণত পুরস্কার বিতরণ করেন। করতালি ও হর্ষধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে সমগ্র এলাকা। সবশেষে সভাপতি খেলাধুলার উপকারিতা সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সারগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
উপসংহার
ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুধু মাত্র জয়-পরাজয়ের লড়াই নয়, বরং এটি ক্রীড়া মনোভাব, সৌহার্দ্য এবং সম্মানবোধের এক অনন্য প্রকাশ। খেলোয়াড়রা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ন্যায্য নিয়ম মেনে অংশগ্রহণ করে, যা সত্যিকারের ক্রীড়া চেতনার পরিচায়ক। দর্শকরাও এই প্রতিযোগিতায় প্রাণভরে উৎসাহ দেন এবং আনন্দ উপভোগ করেন। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এমন এক অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যা অংশগ্রহণকারী ও দর্শক সবার জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। এটি আমাদের শেখায়—জয়ী হওয়া নয়, বরং আন্তরিক চেষ্টা, সততা এবং ক্রীড়া মনোভাব ধরে রাখা-ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা রচনা ২
ভূমিকা : ক্রীড়া বা খেলাধূলা শিক্ষার অঙ্গ। শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, জয়-পরাজয়য়ে সহজভাবে গ্রহণ করা প্রভৃতি গুণ ক্রীড়ার মাধ্যমে অতি সহজে অর্জিত হয়। আর এ’গুণগুলো জীবনপথে চলার জন্য খুবই অপরিহার্য।
বিদ্যালয়ে ক্রীড়া :
বর্তমানে প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ক্রীড়া কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে। সাপ্তাহিক পাঠসূচির মধ্যেও খেলাধুলার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত থাকে। অর্থাৎ, সারা বছর পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেলাধুলায় অংশ নেয়। এই নিয়মিত অনুশীলনেরই ফলাফল দেখা যায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। তবে হা-ডু-ডু, ফুটবল, ক্রিকেটের মতো দলগত খেলাগুলো সাধারণত এই প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত হয় না। তাই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে ব্যক্তিগত ক্রীড়া দক্ষতার মূল্যায়ন বলাই যায়।
ক্রীড়ার সময় : বছরের যে সময়টায় পড়াশুনার চাপ কম, তখনেই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বার্ষিক পরীক্ষার পরে যখন উত্তরপত্র পরীক্ষণ ও ফলাফল নিরূপণের কাজ চলতে থাকে, সেই সময়টাই এদিক দিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট। কিন্তু, বিভিন্ন অসুবিধার কারণে বহু বিদ্যালয়ই বছরের প্রথম ভাগে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে থাকে। এসব প্রতিযোগিতায় প্রকৃতপক্ষে আগের বছরের ক্রীড়া-ক্রিয়ার মূল্যায়ন হয়ে থাকে।
বছাই : বার্ষিক প্রতিযোগিতার প্রধান দায়িত্ব থাকে বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষকের উপর। তাঁকে সাহায্য করেন ক্রীড়ামোদী অন্যান্য শিক্ষক। অবশ্য, অন্যান্য শিক্ষকেরও কমবেশি ভূমিকা থাকে এ’ব্যাপারে। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ, প্রতিযোগিতায় কে কে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয় এ বাছাইয়ে।
ক্রীড়ার দিন : অবশেষে আসে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সেই দিনটি। উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। খেলার মাঠকে সাজানো হয় সুন্দর করে। একদিকে শামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে সভাপতি, প্রধান অতিথি ও অন্য অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। সাজিয়ে রাখা হয় বিজয়ীদের দেওয়ার জন্য বিবিধ পুরস্কার সামগ্রী। মাঠের মধ্যস্থলে স্থাপিত হয় পতাকা দণ্ড ও বিজয় স্তম্ভ।
প্রতিযোগিতাসমূহ : সাধারণত সকাল সাড়ে আটটা ন’টার দিকে প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। প্রথমে হয় পতাকা উত্তোলন, প্রতিযোগিদের কুচকাওয়াজ ও সালাম প্রদান শপথ পাঠ প্রভৃতি। তারপর অনুষ্ঠিত হয় এক এক করে প্রতিযোগিতাসমূহ- উচ্চ লাফ, দীর্ঘ লাফ, বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের দৌড়, লৌহ গোলক (shot put) নিক্ষেপ, চাকতি (discuss) নিক্ষেপ, বর্শা (javelin) নিক্ষেপ প্রভৃতি। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ক্রীড়া যেমন অনুষ্ঠিত হয়, তেমনি অনুষ্ঠিত হয় মোরগের লড়াই, লজেন্স দৌড়, চোখ বাঁধা দৌঁড়, তিন পায়ে দৌড়, বস্তাবন্দী দৌড়, কলসি ভাঙা প্রভৃতি সাময়িক উপভোগ্য ক্রীড়াসমূহ। শিক্ষকদের দৌড়, শিক্ষক-অভিভাবক দড়ি টানাটানিও উপভোগ্য হয়ে থাকে। দর্শকদের একটু ভিন্ন রকমের আনন্দ দেওয়ার জন্য ‘মনের মত সাজ’ প্রতিযোগিতায় ছাত্র-ছাত্রীরা বিচিত্র রকমের সাজ-পোশাক পরে মাঠে নেমে দর্শকদের পুলক হাস্যে মুখরিত করে তোলে।
পুরস্কার বিতরণ : প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সাধারণত প্রধান অতিথিই পুরস্কার বিতরণ করেন। বিজয়ীরা প্রধান অতিথির সামনে গিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে বসে থাকেন। যারা বিজয়ী হননি, তারা এবং অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরাও উপস্থিত থাকেন। ক্রীড়া শিক্ষক একে একে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন, আর প্রধান অতিথি নির্ধারিত পুরস্কার হাতে তুলে দেন। করতালি ও উল্লাসে পুরো জায়গাটি মুখরিত হয়ে উঠে। এই আনন্দঘন মুহূর্তে পুরস্কার না পাওয়া প্রতিযোগীরাও উৎসাহিত ও উৎফুল্ল হয়ে ওঠে।
উপসংহার : সবশেষে প্রধান অতিথি খেলাধুলার উপযোগিতা ও উপকারিতা সম্বন্ধে একটি নীতিদীর্ঘ ভাষণ দেন। এভাবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয়।
আপনি যদি এরকম আরও সহজ ও সুন্দর রচনা পড়তে চান, তাহলে ঘুরে দেখুন আমাদের ওয়েবসাইট — StudyTika.com। এখানেই পাবেন অনেক ভালো ভালো রচনা।