এই ব্লগপোস্টে আছে একটি চমৎকার রচনা – “মেট্রোরেল প্রকল্প রচনা Class 7 8 9 10 SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)”। আসুন, রচনাটি পড়ে দেখি।
মেট্রোরেল প্রকল্প রচনা
ভূমিকা: বিশাল জনসংখ্যার চাপে ঢাকার পথ ও পরিবহন আজ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। তার ক্রমবর্ধমান লোকসংখ্যার কথা ভেবে যদি নতুন নতুন রাস্তা নির্মিত না হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরীর পরিবহনব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়বে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে তার পথ ও পরিবহনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। এই সমস্যা কমিয়ে আনার জন্য বর্তমান সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ একটি মেগা প্রকল্প ‘ঢাকা মেট্রোরেল’। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার বর্তমান লোকসংখ্যা দেড় কোটির বেশি। ফলে যানজট লেগেই থাকে। ঢাকায় এই ভয়াবহ যানজট ও ট্রাফিক সমস্যা দূর করার জন্য বর্তমান সরকারের মেট্রোরেল প্রকল্প সময়োচিত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ঢাকা মহানগরের যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং পরিবহন-সংকট নিরসনে মেট্রোরেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মেট্রোরেল কী
‘মেট্রোরেল’ শব্দটি মেট্রোপলিটন রেলের সংক্ষিপ্ত রূপ। বিশ্বের জনবহুল মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকা একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলসমূহকে সংযুক্ত করে গণপরিবহনের উদ্দেশ্যে যে রেলব্যবস্থা নির্মিত হয়েছে, সেটিই মেট্রোরেল। এটি একটি বিদ্যুৎচালিত পরিবহনব্যবস্থা। ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (MRT)’। এই দ্রুতগামী রেলসেবার মাধ্যমে নগরবাসী নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবে, পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে।
মেট্রোরেলের গুরুত্ব
ঢাকা মহানগরের আশপাশে শিল্প-প্রসারের ফলে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বহু লোক ব্যবসা-বাণিজ্যের আকর্ষণে অথবা কর্মের অন্বেষণে ছুটে আসে এখানে। প্রতিদিন লাখ লাখ লোকের এক বিশাল জনস্রোত রুজি-রোজগারের আশায় ঢাকায় আসে। ফলে মহানগরের পরিবহনব্যবস্থায় মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে।
জনবহুল এই শহরের বাস, ট্রাক, ট্যাক্সি, অটোরিকশা, হোন্ডা এবং রিকশা মিলিয়ে কয়েক লাখ যানবাহন চলাচল করে প্রতিদিন। কিন্তু সকালে ঘর থেকে বেরিয়েও মানুষ যথাসময়ে কর্মস্থলে বা গন্তব্যে পৌছতে পারে না। যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীদের, প্রতিদিন নাকানিচুবানি খেতে হয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সরকার ইতোমধ্যে মহানগরের বিভিন্ন স্থানে উড়ালসেতু, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, লিংকরোড ইত্যাদি নির্মাণ করেছে। কিন্তু যানজট সমস্যা নিরসনে তেমন কোনো সাফল্য আসেনি।
এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঝড়, বৃষ্টি বা হরতালের দিনে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এই দুর্ভোগ থেকে জনগণকে বাঁচাতে বর্তমান সরকার মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু করে। মেট্রোরেল একদিকে যেমন সময়ের অপচয় অনেক কমিয়েছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থল ও গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হচ্ছে। কাজেই উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেট্রোরেলের গুরুত্ব অপরিসীম।
মেট্রোরেলের সুবিধা
বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। এর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে জনবহুল ঢাকা মহানগরের পরিচিত রূপ বহুলাংশে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সূচনালগ্নে ঢাকার প্রাণপ্রবাহ ছিল বুড়িগঙ্গা। নদীর পরিবহন ক্ষমতাকে অবলম্বন করে সেদিন নদীবন্দর গড়ে উঠেছিল। নৌকা, জাহাজ ইত্যাদি ছিল সেদিনের আশা-ভরসা। পরবর্তীকালে চালু হয়েছে ট্রেন সার্ভিস। তাতেও সমস্যা বাড়তে থাকায় বর্তমান মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ রেল সার্ভিসের চেয়ে মেট্রোরেলে আরো বেশি আধুনিক সুবিধা থাকবে। যেমন:
ক. মেট্রোরেল চলাচল করবে মূল সড়কের মাঝ বরাবর উড়ালসড়ক দিয়ে। উড়ালসড়কের উপর নির্মিত রেললাইনের উপর দিয়ে চলবে মেট্রোরেল। এতে যানজট সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা থাকবে না।
খ. ঢাকা মহানগরের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ২০.০১ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথে থাকবে ১৬টি স্টেশন। স্টেশনগুলোর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত থাকবে ৯টি স্টেশন। যেমন: উত্তরা নর্থ, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা সাউথ, পল্লবী, মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর, কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৭টি স্টেশন থাকবে। যেমন: বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (টিএসসি), বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল শাপলা চত্বর।
গ. মেট্রোরেলের প্রত্যেকটিতে ৬টি করে বগি থাকবে। প্রতিটি সুপরিসর কামরায় যাত্রীদের জন্য থাকবে আরামদায়ক আসন। কামরাগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
ঘ. উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৪টি ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে ও ৭৫৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
ঙ. প্রতি ০৪ মিনিট পর পর স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে যাবে। ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। সর্বশেষ গন্তব্যে পৌছতে ট্রেনের সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। প্রত্যেক স্টেশনে ৪০ সেকেন্ড ট্রেন অবস্থান করবে।
চ. মেট্রোরেলে ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে দুই প্রান্তের ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। মেট্রোরেল ব্যবস্থায় যাত্রীদের সুবিধার জন্য স্টেশনে প্রবেশপথে মেশিনে ভাড়া সংগ্রহ করা হবে। স্বয়ংক্রিয় কার্ডের মাধ্যমে যাত্রীরা ভাড়া পরিশোধ করবেন।
মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণচুক্তি
মেট্রোরেল একটি অন্যতম মেগা প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার মধ্যে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির আগে ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকারের অগ্রাধিকারমূলক মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদিত হয়।
মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্বোধন
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৬ জুন দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রথম পর্যায়ে ২০১৭ সালের ০২ আগস্ট উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের কাজ শুরু হয়।
মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজের অগ্রগতি
৮টি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে পরিষেবা স্থানান্তর, চেক বোরিং, টেস্ট পাইল, মূল পাইল, পাইল ক্যাপ, আই গার্ডার, প্রিকাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিং ও পিয়ার হেড নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এমআরটি লাইন-৬ বাংলা দেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি প্রায় ৯০% শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ সম্পূর্ণ শেষ।
দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৫% শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম ও রোলিং স্টক (রেলকোচ) ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহের কাজও প্রায় শেষ। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সোশ্যাল স্টাডিও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
ডিপো এলাকার ওয়ার্কশপ শেডের অভ্যন্তরে ১১টি রেলাইনের মধ্যে ৪টি লাইনের কাজ প্যাকেজ-০৭ এর আওতায় সম্পন্ন হয়েছে। টঙ্গী এবং মানিকনগর গ্রিড সাব-স্টেশন নির্মাণ ও উত্তরা ডিপোতে রিসিভিং সাব স্টেশনের পূর্ত কাজও শেষ হয়েছে। অন্যান্য কাজ দ্রুতগতিতে চলছে এবং সিংহভাগ এগিয়েছে।
আনুষ্ঠানিক চলাচল
১১ মে ২০২১ আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল করে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। ট্রেন চলাচলের শুরুর এই প্রক্রিয়াটিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে পারফরম্যান্স টেস্ট। ডিপোর ভেতরে ট্রেনটির পারফরম্যান্স টেস্ট ও স্পিড টেস্ট শেষ হওয়ার পর আগামী আগস্টে ট্রেনটি ভায়াডাক্টের ওপর তোলা হবে। মেট্রোরেলের প্রথম ট্রেনটি পরিদর্শন ও পারফরম্যান্স কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে ওয়ার্কশপ থেকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটি আসে চোক আনলোডিং জোনে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেলের ট্রেনটি প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে আনা হয়।
মেট্রোরেল উদ্বোধন
২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে এমআরটি লাইন ৬-এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকায় মেট্রোরেল আংশিক চালু হয় এবং তিনি মেট্রোরেলের প্রথম আনুষ্ঠানিক যাত্রার অংশ ছিলেন, যা ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। নভেম্বর, ২০২৩ এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয়। এর মাধ্যমে ৬০তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে মেট্রোরেলে যুক্ত হয়।
গতিশীল যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন
মানুষের জীবন গতিশীল যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। বিপুল জনসংখ্যার ঢাকা মহানগর এত দিন স্থবির হয়ে ছিল যানজটের কবলে আটকা পড়ে। সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারার কারণে অর্থনীতি কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছিল না। মেট্রোরেল ব্যবস্থা সবকিছুই গতিশীল করে তুলবে। এ প্রকল্পের সুবাদে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারে। তাতে জিডিপি বাড়বে। গতিশীলতা আসবে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ও কর্মকাণ্ডে। নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে দেশের মানুষ। মেট্রোরেল ব্যবস্থায় পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর হবে মহানগরের পরিবেশ। সর্বক্ষেত্রে নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে।
উপসংহার
মেট্রোরেল সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহানগরের চেহারা বদলে যাবে। মানুষের যাতায়াত হবে অনেকটা সহজ। ফলে মানুষের কাজের আগ্রহ বেড়ে যাবে। স্থবিরতা মনের দিক থেকে মানুষকে পঙ্গু করে দেয়। মেট্রোরেল মানুষকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দেবে। মানুষের জীবনে এনে দেবে উজ্জীবনী শক্তি আর উন্নয়নের নতুন জোয়ার।
মেট্রোরেল প্রকল্প রচনা ২
ভূমিকা:
বর্তমান সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা মেট্রোরেল অন্যতম। বিশ্বের জনবহুল মেগা সিটিগুলোর মধ্যে ঢাকা অত্যধিক ঘনবসতিপূর্ণ।
এর বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। ঢাকার ভয়াবহ যানজট ও ট্রাফিক সমস্যা দূর করার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্প একটি সময়োচিত ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামাল দিতে মেট্রোরেলের মতো গণপরিবহনই হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা। তাই ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মেট্রোরেল কী :
মেট্রোপলিটন রেল-এর সংক্ষিপ্ত নাম হলো মেট্রোরেল। এটি একটি বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন ব্যবস্থা, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। ঢাকায় এই মেট্রোরেল প্রকল্পের নাম ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (MRT)’। এটি একটি দ্রুতগামী, আরামদায়ক, সুবিধাজনক ও নিরাপদ শহরভিত্তিক রেলপরিবহন ব্যবস্থা।
মেট্রোরেলের গুরুত্ব :
জনবহুল রাজধানী শহর ঢাকা যানজটের শহর হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। এই শহরে সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। এখানে বাস, ট্রাক, কার, অটোরিকশা, বাইক আর রিকশা মিলিয়ে কয়েক লাখ যান প্রতিদিন চলাচল করে। দুতিন ঘণ্টা আগে রওয়ানা হয়েও সঠিক সময়ে কখনো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না।
রাস্তায় যানজটে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেতে হয় যাত্রীদের। ইতোমধ্যে সরকার বেশ কয়েকটি উড়াল সেতু, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, লিংকরোড ইত্যাদি নির্মাণ করেছে। কিন্তু যানজট খুব একটা নিরসন হয়নি। এ কারণে যাত্রীদের সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাসের অপেক্ষায়। সিএনজি বা রিকশা চালকদের হাতেও জিম্মি হতে হয় কখনো কখনো। ঝড়, বৃষ্টি বা হরতালের সময় মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এমতাবস্থায় মেট্রোরেল চালু হলে সময়ের অপচয় যেমন হ্রাস পাবে তেমনই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হয়ে যাবে।
মেট্রোরেলের সুযোগ-সুবিধা :
সাধারণ ট্রেন সার্ভিসের চেয়ে মেট্রোরেলের ট্রেনে অধিকতর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- উড়াল সড়ক :মূল সড়কের মাঝ বরাবর উড়াল সড়ক নির্মিত হবে। উড়াল সড়কের উপর স্থাপিত রেললাইনের উপর দিয়ে চলবে ট্রেন। যানজট যাতে না হয়, সেভাবেই উড়াল সড়ক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
- মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য :রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ২০ দশমিক ০১ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ রুটে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এগুলোর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত থাকবে ৯টি স্টেশন।
- এগুলো হচ্ছে উত্তরা নর্থ, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা সাউথ, পল্লবী, মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকবে ৭টি স্টেশন । এগুলো হচ্ছে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (টিএসসি), বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল শাপলা চত্বর।
- বগি ও কামরা :প্রতিটি ট্রেনে ৬টি করে বগি থাকবে। প্রতিটি কামরা হবে সুপরিসর। সেখানে যাত্রীদের জন্য থাকবে আরামদায়ক আসন। এছাড়া প্রতিটি কামরা হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
- ট্রেন সংখ্যা ও সময় :উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলাচল করবে ১৪টি ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে এবং ৭৫৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবে। প্রতি ০৪ মিনিট পর পর ট্রেন ছেড়ে যাবে। ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। শেষ গন্তব্যে পৌঁছতে ট্রেনের সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। প্রতি স্টেশনে ট্রেন অবস্থান করবে ৪০ সেকেন্ড।
- যাত্রী বহন ক্ষমতা ও ভাড়া আদায় :মেট্রোরেলে ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে দুই প্রান্তের ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম হবে। মেট্রোরেলের ভাড়া জনপ্রতি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৫টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ২০ টাকা। মেট্রোরেল ব্যবস্থায় যাত্রীদের সুবিধার্থে স্টেশনে প্রবেশের সময় মেশিনে ভাড়া সংগ্রহ করা হবে। স্বয়ংক্রিয় কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করবেন যাত্রীরা।
প্রকল্প ব্যয় ও অর্থায়ন :
পুরো ২০ দশমিক ০১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা প্রকল্পের ৮৫ শতাংশের ব্যয় বাবদ ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেবে কয়েক ধাপে। বাকি ৫ হাজার ৪ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ১.১৬ কি.মি. বাড়ানোর কারণে প্রকল্প ব্যয় ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ।
নির্মাণকাজের অগ্রগতি :
২০২৪ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও, ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন এবং এরপর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ যাত্রীদের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ২০২৩ সালের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল এবং ২০২৪ সালের মধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গতিশীল অর্থনীতি ও সহজ যাতায়াত :
বিপুল জনসংখ্যার রাজধানী শহরে যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা তথা স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান নিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ডিটিসিএ-এর তত্ত্বাবধানেই বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
যথাসময়ে প্রকল্পের সমাপ্তিতে যাত্রী পরিবহন শুরু হলে মেট্রোরেল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সরকার এ প্রকল্প থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবে এবং জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ অভিমত বাস্তবসম্মত ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাছাড়া মেট্রোরেলের স্বস্তিদায়ক সেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু, প্রতিবন্ধী ও নারীরা দুর্বিষহ কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে। উল্লেখ্য যে, যাত্রীরা নির্ধারিত স্থান থেকে ওঠানামা করার ফলে গড়ে উঠবে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর ঢাকা মহানগরী।
উপসংহার :
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে প্রথম ও প্রধান শর্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে নতুন একটি অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে এটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে উঠবে। এর ফলে দেশের মানুষের মূল্যবান অর্থ ও সময়ের অপচয় কমবে এবং মানুষ যানজট এড়িয়ে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।
আপনি যদি এমন আরও সহজ ও সুন্দর রচনা পড়তে চান, তাহলে এখনই ঘুরে আসুন আমাদের ওয়েবসাইটে – StudyTika.com। সেখানে পাবেন আরও অনেক ভালো রচনা আপনার ক্লাসের জন্য।