শীতের সকাল রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

শীতের সকালে চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে খুবই ভালো লাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঠান্ডা আবহাওয়ার মেলবন্ধন আমাদের মনকে প্রশান্তি দেয়। এই রচনাটি পড়তে থাকুন, যেখানে শীতের সকাল নিয়ে একটি সুন্দর বর্ণনা রয়েছে।

শীতের সকাল  রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

শীতের সকাল  রচনা ১

ভূমিকা : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। পালাক্রমে ছয়টি ঋতু এসে বাংলাদেশকে নব নব রূপে সাজায়। সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে তারা আসে আর যায়। বসন্ত ঋতুর আগে এর আগমন ঘটে। প্রকৃতিকে কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে নিতে আবির্ভাব ঘটে শীতকালের। আর শীতের সকাল এক বিচিত্র অনুভূতির সঞ্চার করে মানবমনে। এ সময় প্রকৃতি রিক্ততার সন্ন্যাসী রূপ ধারণ করে যেন। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে মানুষের মনে অলসতা ভর করে। চাদর মুড়ি দিয়ে শীতকে দূরে ঠেলার প্রগাঢ় চেষ্টায় লিপ্ত মানুষ বারবার ব্যর্থ হয়। ধরণীর বুকে শীতের আগমন আনে বৈরাগ্যের সুর। এর সাথে সাথে শীতের সকালও একই রূপ পরিগ্রহ করে। তাই বুঝে কবি বলেন:

“হিম হিম শীত শীত
শীত বুড়ি এলো রে,
কনকনে ঠান্ডায়
দম বুঝি গেলো রে।”

শীতকালের বৈশিষ্ট্য : ষড়ঋতুর মধ্যে পঞ্চম ঋতু হলো শীতকাল। পৌষ ও মাঘ এ দুই মাস শীতকালের ব্যাপ্তি থাকে। ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুসারে মোটামুটি নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত অনুভূত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালের বিপরীত অবস্থানে থাকে শীতকাল। বর্তমান সময়ে শীতকালে আবার বৃষ্টি হতেও দেখা যায়। প্রবল শৈত্যপ্রবাহে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য সাধারণ মানুষের প্রাণহানিও ঘটে।

শীতের সকালের স্বরূপ : কুয়াশার চাদরে মোড়া শীতের সকাল হাড় শীতল করা ঠান্ডা নিয়ে দেখা দেয়। এ সময় এক ফালি রোদ সকলের কাছে বহুল প্রতীক্ষিত হয়ে ওঠে। গ্রাম হোক কিংবা শহর, সব জায়গাতেই শীতের রয়েছে একটি ভিন্ন আমেজ। শীতের সকালে মানুষের মাঝে এক অজানা অলসতা ভর করে। লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকাতেই যেন তখন স্বর্গীয় সুখ অনুভূত হয়। কর্মব্যস্ত মানুষ ঘুমের জগতে হারিয়ে যায়। কুয়াশার অন্ধকারে সূর্যদেবতার দেখা পাওয়া ভার। তাই সকালের উপস্থিতি টের পাওয়াও কষ্টকর। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা শীতকেও দূরে সরিয়ে দেয়। তাই আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই হয় সকলকে। নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শীতের সকালে শান্ত প্রকৃতি ভোরের আলো-আঁধারিতে রহস্যময় রূপ ধারণ করে থাকে। তবে ধীরে ধীরে শীতের কুয়াশা কাটতে থাকে। অতঃপর শীতের আকাশে মুচকি হাসি নিয়ে দেখা দেয় রবির কিরণ। এর মধ্যেই শীতের সকালের অপার আনন্দের ছোঁয়া পাওয়া যায়। তাই কবি বলেন:

“ঋতুর দল নাচিয়া চলে
ভরিয়া ডালি ফুল ও ফলে,
নৃত্যলোকে চরণতলে মুক্তি পায় ধরা
ছন্দে মেতে যৌবনেতে রাঙিয়া উঠে জ্বরা।”

শীতের সকালে প্রকৃতি ও প্রাণীর অবস্থা : শীতের সকালে প্রকৃতি ও প্রাণীতে এক ভিন্ন ধরনের নিস্তব্ধতা ও শান্তিময় পরিবেশ অনুভূত হয়। এই সময় দিনের পরিসর হয় ছোট, আর রাত হয় দীর্ঘ। ভোর হলেও চারপাশ থাকে কুয়াশায় মোড়ানো, যেন সকাল এখনও পুরোপুরি জেগে ওঠেনি। মানুষ থেকে শুরু করে পশুপাখিরাও সূর্যের উষ্ণ স্পর্শের অপেক্ষায় নিরব প্রতীক্ষায় থাকে। হিমেল হাওয়ার তীব্রতায় সবাই জড়োসড়ো হয়ে পড়ে। শিশিরে ভেজা ঘাস ও পাতায় জমে থাকা জলকণা শীতের উপস্থিতিকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও শীতের তীব্রতায় বাইরে আসতে চায় না, যেন সবাই গুটিয়ে থাকে প্রকৃতির শীতল আঁচলে।

গ্রামের প্রকৃতিতে শীতের সকাল : শীতের সকালের প্রকৃত সৌন্দর্য ও আনন্দ গ্রামীণ জীবনেই সবচেয়ে বেশি অনুভব করা যায়। বাংলার গ্রামগুলোতে শীতের সকাল হয় শান্ত, নির্মল আর মনোমুগ্ধকর। মাঠের পর মাঠে শীতের কুয়াশা ছড়িয়ে থাকে, আর সেই কুয়াশা ভেদ করে গ্রামের পরিশ্রমী মানুষগুলো গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। সূর্যের কিরণ পড়তেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা উঠোনে বা মাঠে গিয়ে রোদ পোহাতে শুরু করে। শীতের তীব্রতা থেকে মুক্তি পেতে গ্রামবাসীরা খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহায়। আগুনের চারপাশে জড়ো হয়ে তারা উষ্ণতা খুঁজে নেয় একসাথে। তবে এই সৌন্দর্যের মাঝেও গ্রামীণ দারিদ্র্য এক নির্মম বাস্তবতা। অনেক দরিদ্র পরিবারে শীতবস্ত্রের অভাবে মানুষ কষ্ট পায়, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য শীত হয়ে ওঠে এক নির্মম দুর্যোগ—কখনো কখনো প্রাণহানিও ঘটে শীতের তীব্রতায়।

শীতের সকালে গ্রামের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত হলো পিঠা-পুলি খাওয়ার মুহূর্ত। গাছে গাছে খেজুরের রসের হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। সে হাঁড়ি নামালে ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা রস খাওয়ার লোভে ছুটে ছুটে আসে। এ রস দিয়ে নানা রকম পিঠা বানানো হয়। বাড়িতে বাড়িতে মা, চাচি কিংবা দাদিরা সকালবেলাতেই পিঠা তৈরি করতে বসে। অনেকে শীতের ছুটি উপভোগ করতে শহর থেকে ছুটে যায় গ্রামে। শীতের সকালে নানা পিঠা খাওয়ার চিত্রকে তুলে ধরতেই মনে হয় কবি বলেছেন,

“পৌষ মাসে পার্বণে খেতে বসে খুশিতে বিষম পেয়ে
আরও উল্লাস বেড়েছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।”

শহুরে জীবনে শীতের সকাল : শহুরে জীবনে শীতের সকালের রূপ ভিন্ন হয়ে থাকে। গ্রামীণ জীবনের আবেদন এখানে পাওয়া যায় না। ইট-কাঠ-পাথরের শহরে শীতের সকালের আমেজ একদম আলাদা। শহরে দেখা যায় বারান্দায় বসে রোদ পোহানোর দৃশ্য কিংবা গরম চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে খবরের কাগজ পড়ার দৃশ্য। লেপ জড়ানো কর্মব্যস্ত মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আরও একটু ঘুমিয়ে নিতে চায়। কিন্তু জীবিকার টানে তকে আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতেই হয়। নিজ নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গরম কাপড় পরিধান করে প্রস্তুত হতে হয় সকলকে। ঘাসের ওপরে টলমল করতে থাকা শিশির বিন্দু শহরে তেমন একটা দেখা যায় না। খেজুরের রস কিংবা নানা স্বাদের পিঠার সুঘ্রাণ এখানে খুঁজে পাওয়া বিরল। এখানে কেবল কাকের কর্কশ আওয়াজ, যানবাহনের শব্দ এবং মানুষের কোলাহলমিশ্রিত যান্ত্রিক জীবনই দেখা যায়।

উপসংহার : শীতের সকাল অন্য সব ঋতুর চেয়ে একদম আলাদা। শীতের রিক্ততা প্রকৃতির সবুজকে ছিনিয়ে নিলেও দিয়ে যায় ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা। কুয়াশার চাদরে ঢাকা গোটা প্রকৃতি শীতকে যে একেবারেই উপভোগ করে না, তা ঠিক নয়। শীতের আবেদন চিরন্তন। হিমঠাÊার কনকনে অনুভূতি প্রতিটি মানুষকে আলোড়িত করে। তাই শীত চলে গেলেও এর রেশ থেকে যায় এবং প্রকৃতি বসন্তের আগমন হেতু অপেক্ষমাণ হয়। তাই তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,

‘এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরি জয়,
যুগের পরে যুগান্তরে মরণ করে লয়।


(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো) 

শীতের সকাল  রচনা ২

ভূমিকা : ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। এর মধ্যে শীত ঋতু আমাদের সামনে হাজির হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন আবেশে। উত্তরের হিমশীতল হাওয়া আর কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে শীত আসে কনকনে বুড়ির মতাে। মানুষের কাছে শীতের দিনের প্রধান আকর্ষণ শীতের সকাল। এ সময় প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। কুয়াশার ঘন সাদা পর্দা ভেদ করে নবীন সূর্যের আলাে পৃথিবীতে ঔজ্জ্বল্য ছড়াতে পারে না । হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতি ও প্রাণিজগতে শুরু হয় কাপন। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন 
শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে।
পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে । 

শীতের সকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : পৌষ ও মাঘ এ দুমাস শীতকাল । তখন কুয়াশার নাচন শুরু হয় প্রকৃতিকে নিয়ে । উত্তরের হিমেল হাওয়া বয়, গাছপালা পাতাহীন হয়ে পড়ে। নদ-নদীতে স্রোতের তীব্রতা হ্রাস পায়। শীতের সকালে যখন ঘন কুয়াশায় সবকিছু ঢেকে যায় তখন প্রকৃতিকে অপূর্ব সুন্দর মনে হয়। পাণ্ডুর প্রকৃতির মধ্যে এক নীরব সৌন্দর্য দেখা যায় শীতের সকালে । এ সৌন্দর্য অনেকটা বিমূর্ত। শীতের সকালে প্রকৃতি আশ্চর্য নিস্তব্ধতায় মগ্ন হয়ে পড়ে । কুয়াশার অবগুণ্ঠন ছিড়ে নিস্তব্ধতার বুক চিরে কোনাে পথিক হেঁটে গেলে মনে হয় শীতের কনকনে ঠান্ডায় তার শরীর কাঁপছে। টিনের চালে, গাছের ডালে, ঘাসের ডগায়, শিশির বিন্দু জমে থাকার মনােরম দৃশ্য শীতের সকাল ছাড়া আর দেখা যায় না। ঘন সাদা চাদর মুড়ে থাকা প্রকৃতির বুকে মুক্তার মতাে ফুটে থাকা শিশির বিন্দুগুলাে চিকচিক করে। প্রকতি হয়ে ওঠে সতেজ। মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয় হলুদ সরষে খেত আর ফুলের বাগান। কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্য যখন উঁকি দেয় তখন স্নিগ্ধ আলােয় ঝলমল করে কুয়াশায় ভেজা প্রকৃতি।


শহরে শীতের সকাল : শহরের শীতের সকালটা গ্রামের তুলনায় কিছুটা আলাদা। এখানে পাখির মধুর কলরবে ঘুম ভাঙে না, বরং কাকের কর্কশ ডাকেই দিন শুরু হয়। অনেকেই শীতের সকালে লেপের উষ্ণতায় মগ্ন থাকে, কাজে ফিরতে মন চায় না। যারা বাধ্য হয় ভোরে ওঠে, তারাও ছুটির দিনে অনেক দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে। তাই শহরের মানুষ গ্রামের মতো শীতের সকালের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না। শহরের পিচঢালা রাস্তা কুয়াশায় ঢেকে যায়, শিশির পড়ে, কিন্তু তাতে মন আন্দোলিত হয় না, যেমনটি হয় ঘাসে ভেজা গ্রামের পথে। ঠান্ডা পানিতে মুখ ধোওয়া যেমন বড়দের অপছন্দ, তেমনি ছোটরাও ঠান্ডার ভয়ে এদিক-সেদিক পালাতে চায়। শহরের মানুষ সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা সকালের কুয়াশার রূপ দেখার ফুরসত বা আগ্রহ পায় না—সবই যেন যান্ত্রিক জীবনের বাইরে আবেগের বিষয়। তবে তারা রঙিন ও আরামদায়ক শীতের পোশাকে এই ঋতুকে আপন করে নেয়—কোট, জ্যাকেট, সোয়েটার, টুপি, চাদর আর মাফলার পরে তারা শীতের সকালে রুটিনমতো কাজে বেরিয়ে পড়ে।


গ্রামে শীতের সকাল : গ্রামে-গঞ্জে শীতের সকালে সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব দৃশ্য। শীতের সময় শাকসবজি, তরিতরকারি উৎপন্ন হয়। বেশি। শীতের সকালে পাওয়া যায় টাটকা খেজুর রস। ভাপা পিঠার মৌ মৌ গন্ধে সকালবেলায় খিদে বেড়ে যায় । দুঃস্থ-দরিদ্র গ্রামবাসীদের শীতের সময় গরম জামাকাপড় থাকে না। রাতে তারা ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে। আর সুয্যি মামা উকি দেওয়ার আগে মনে হয় এই বুঝি সকাল হলাে, এই বুঝি সকাল হলাে। গ্রামের মসজিদে আজান হয়, ঘাের অন্ধকার ভেদ করে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা মসজিদে আসেন নামাজ পড়তে। ভরপেট পান্তা ভাত খেয়ে কৃষক কুয়াশাচ্ছন্ন ভাের বেলায় মাঠের কাজে যায়। গঞ্জের হাটে যায়। কেনাকাটার জন্য। গ্রামের মক্তবে ছেলেমেয়েরা পড়তে যায়। মসজিদে বা মক্তবের কাছ দিয়ে হেঁটে গেলেই ছাত্র-ছাত্রীদের সজোরে সমবেত কণ্ঠে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে। কানে আসে তাদের কণ্ঠস্বর । শীত একটু বেশি লাগলে সকালবেলায় নাড়ার আগুনে ছেলের দল মটরশুটি পুড়িয়ে খায় আর আগুন পােহায়।


শীতের সকালে নদ-নদী : আমাদের দেশে শীতকালে নদ-নদী গুলােতে তেমন পানি থাকে না। তখন নদী থেকে প্রচুর মাছ ধরা যায়। এজন্য শীতের খুব সকালে জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে চলে যায়। জেলে নৌকাগুলাে অল্প দূরে হলেও কুয়াশার ধূম্রজালে দেখা যায় না। আর সেই ধূম্রজাল ভেদ করে দূরযাত্রার নৌকা, লঞ্চ, ফেরি ইত্যাদি ভালােমতাে চলাচল করতে পারে না। তখন নদীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসে হাড় কাঁপানাে শীত লাগে।


শীতের সকালের প্রধান আকর্ষণ : শীতের সকালের প্রধান আকর্ষণ হলাে বিভিন্ন রকম পিঠা । তখন গ্রামে প্রচুর খেজুরের রস পাওয়া যায়। খুব সকালে খেজুর গাছ থেকে হাঁড়ি নামানাে হয়। শীতের সকালে এ রস খেতে খুবই ভালাে লাগে। সকাল হতে না হতেই গ্রামগঞ্জে সর্বত্র খেজুর রসের পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে রােদ পােহাতে পােহাতে মুড়ি-মুড়কি, পিঠাপায়েস এসব খেতে পছন্দ করে। এ সময়ের প্রধান আকর্ষণ হলাে চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠা। এছাড়া হরেক রকম পিঠা ঘরে ঘরে বানানাে হয়। তাই তাে কবি সুফিয়া কামাল বলেছেন—

পৌষ-পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে। 

শীতের সকালের সুখ-দুঃখ : শীতের সকালে লেপ-কম্বলের ভিতরে আরামে শুয়ে থাকার মতাে সুখ আর কিছুতে পাওয়া যায় না । শীতের সকালে বিভিন্ন পিঠা দিয়ে নাস্তা করা, নানা রকম শীতের সবজি প্রভৃতি মানুষের মধ্যে সুখানুভূতি সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, কনকনে শীতেও যাদের গায়ে দেওয়ার মতাে শীতবস্ত্র নেই, যারা রাস্তার পাশে শীতের হিমশীতল বাতাসে শুয়ে থাকে তাদের জন্য শীতের সকাল অনেক কষ্টের।


শীতের সকালের অসুবিধা : শীতের সকালে হাড় কাঁপুনে শীত পড়লে গ্রামের মানুষ জড়তা ও বিষন্নতায় ভােগে। মানুষের কাজের উদ্যম থেমে যায় । আরাম-আয়েস করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। গরিব মানুষগুলাে গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট করে। কবির ভাষায় তাদের মনে প্রার্থনা জাগে—

হে সূর্য!
তুমি আমাদের স্যাতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলাে দিও। 

যানবাহন চলাচলের অসুবিধা : শীতের রাত কিংবা সকালবেলা পরিবেশ ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে। চারপাশ যেন সাদা কুয়াশার এক পর্দায় ঢাকা, দূরত্বে কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না। মনে হয়, চোখের সামনে কেবল সাদা কুয়াশা ছাড়া আর কিছু নেই। এমন আবহাওয়ায় রাস্তায় যানবাহন চলাচল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, যার ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। নদীপথেও লঞ্চ বা স্টিমার চলাচলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই কুয়াশাচ্ছন্ন সময়ে সড়ক বা নৌপথে চলাচল এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে নিরাপদ।

উপসংহার : শীতের সকালে শিশির ভেজা সােনালি রােদের স্পর্শ কার না ভালাে লাগে? সুবিধা-অসুবিধা দুয়ে মিলে শীতের সকাল আমাদের জীবনে প্রতি বছর দুই মাস সময় অন্যরকম ভালােলাগার অনুভূতিতে আমাদের হৃদয়কে পরিপূর্ণ করে তােলে। কবির ভাষায় বলা যায়- ‘একটি ধানের শীষের উপরে একটি শিশির বিন্দু’ শীতের সকালের সৌন্দর্যকে দ্যুতিময় করে তােলে।

এই রচনার মাধ্যমে শীতের সকাল সম্পর্কে জানতে পারলেন। আরও অনেক রচনা পড়তে চাইলে আমার ওয়েবসাইটে এসে পড়ুন। আপনি সহজেই আরও অনেক রচনা পেতে পারবেন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.