নদী কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | নদী কত প্রকার ও কী কী?

আমাদের দেশের জীবনের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক অনেক গভীর। ছোটবেলা থেকেই আমরা নদী নিয়ে গল্প শুনেছি, কবিতা পড়েছি, এমনকি নদীর ধারে খেলার স্মৃতিও রয়েছে। কিন্তু তুমি কি জানো, আসলে নদী কাকে বলে? নদীর কত প্রকার আছে এবং কীভাবে নদী তৈরি হয়? এই লেখায় আমরা খুব সহজভাবে নদী সম্পর্কে সবকিছু জানব — যেন ছোট থেকে বড় সবাই সহজে বুঝতে পারে। চল একসাথে শিখে নিই নদী সম্পর্কে এই চমৎকার তথ্যগুলো। 🌊

নদী কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

নদী কাকে বলে (সহজ ভাষায় পূর্ণ ব্যাখ্যা)

যে জলশ্রোত কোনো হৃদ, পর্বত, প্রস্রবণ ইত্যাদি জলাধার হতে উৎপন্ন হয় এবং বিভিন্ন জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোনো জলাশয়ে পতিত হয়, তাকে নদী বলে। যেমনঃ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদি।

অন্যভাবে বললে নদী হল এমন একটি প্রাকৃতিক জলধারা যা কোনো হ্রদ, পর্বত, প্রস্রবণ বা জলাধার থেকে উৎপন্ন হয়ে স্থলভাগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোনো জলাশয়ে গিয়ে মিশে যায়। যেমন: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদি। সহজভাবে বললে, নদী হল এমন এক প্রবাহমান স্বাদুপানির ধারা যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়।

নদী প্রকৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু পানির উৎস নয়, এটি কৃষি, পরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও খুবই উপকারী। তবে পৃথিবীর সব নদী সমুদ্র বা মহাসাগরে গিয়ে মেশে না, কিছু নদী পথেই শুকিয়ে যায় বা অন্য জলাশয়ে মিশে যায়। মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে নদীর ভূমিকা অনেক বড়। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নদীর তীরে বসতি স্থাপন করেছে। কিছু কিছু নদীকে আদর্শ নদী বলা হয়। যেসব নদীতে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন – এই তিন ধরণের প্রবাহ একসাথে দেখা যায়, তাদের আদর্শ নদী বলা হয়। গঙ্গা নদী একটি আদর্শ নদীর ভালো উদাহরণ।

নদী কত প্রকার ও কী কী?

নদীর শ্রেণীবিভাগ সাধারণত নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর — নদীর উৎপত্তিস্থল, প্রবাহের গতি এবং ভূমির অবস্থা। এই ভিত্তিতে নদীকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

  • উৎপত্তির ভিত্তিতে
  • প্রবাহের গতির ভিত্তিতে
  • ভূমির উপর ভিত্তি করে

১. উৎপত্তির ভিত্তিতে নদীর প্রকারভেদ

উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে নদীকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় —

  • বৃষ্টিপাত জনিত নদী
  • হিমবাহজাত নদী
  • অববাহিকা নদী

বৃষ্টিপাত জনিত নদী

বৃষ্টির পানি থেকে অনেক ছোট ছোট নদীর সৃষ্টি হয়। এই নদীগুলোর পানি পুরোপুরি বৃষ্টির উপর নির্ভর করে। যখন বেশি বৃষ্টি হয়, তখন নদীর পানি বেড়ে যায়। আবার দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে নদীর পানি শুকিয়ে যায় এবং অনেক সময় নদী প্রায় মৃত অবস্থায় চলে যায়।

হিমবাহজাত নদী

যেসব নদীর উৎপত্তি বরফে ঢাকা হিমবাহ থেকে হয়, তাদের হিমবাহজাত নদী বলা হয়। এই হিমবাহ ধীরে ধীরে গলে নদীর সৃষ্টি করে। এসব নদীর পানি ঠান্ডা, পরিষ্কার এবং খনিজ পদার্থ মিশ্রিত থাকে। যেমন ভারতের গঙ্গা নদী গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

অববাহিকা নদী

যেসব নদী সমতল ভূমি থেকে উৎপন্ন হয়, তাদের অববাহিকা নদী বলা হয়। এই নদীগুলো ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়। নদীর পানির পরিমাণ অনেকটা ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করে।

২. প্রবাহের গতির ভিত্তিতে নদীর প্রকারভেদ

প্রবাহের গতির উপর ভিত্তি করে নদীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

  • দ্রুত প্রবাহী নদী
  • ধীর গতির নদী

দ্রুত প্রবাহী নদী

যেসব নদী পাহাড়ি এলাকা বা ঢালু ভূমি দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেগুলো দ্রুত প্রবাহী নদী। এই নদীগুলোর পানির গতি খুবই দ্রুত এবং প্রচুর পরিমাণে পানি বহন করতে পারে। এদের গভীরতা কম হলেও ক্ষয় করার ক্ষমতা অনেক বেশি। অর্থাৎ, এই নদীগুলো যে ভূমির উপর দিয়ে বয়ে যায়, সেই ভূমি ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়।

ধীর গতির নদী

বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী ধীরগতির। এসব নদী সমতল ভূমিতে অবস্থিত এবং তুলনামূলকভাবে ধীরে প্রবাহিত হয়। এই নদীগুলোর গভীরতা বেশি হলেও পানির প্রবাহ ধীর। দ্রুতগতি নদীর তুলনায় এরা বেশি পলি বহন করতে সক্ষম।

৩. ভূমির উপর ভিত্তি করে নদীর প্রকারভেদ

ভূমির উপর ভিত্তি করে নদীকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়:

  • নদীর যৌবন অবস্থা
  • নদীর পরিপক্ক অবস্থা
  • নদীর বৃদ্ধাবস্থা

নদীর যৌবন অবস্থা

যে নদী নতুনভাবে তৈরি হয়েছে এবং যার প্রবাহ দ্রুত, তাকে নদীর যৌবন অবস্থায় বলা হয়। এসব নদী সাধারণত পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয় এবং প্রবাহের দিক প্রায়ই পরিবর্তিত হয়। এই অবস্থায় নদী তরুণ ও সক্রিয় থাকে।

নদীর পরিপক্ক অবস্থা

যে নদী একসময় প্রবল গতিতে প্রবাহিত হত কিন্তু বর্তমানে কিছুটা স্থির হয়ে গেছে, সেই নদী পরিপক্ক অবস্থায় রয়েছে। এই সময়ে নদী ধীরে প্রবাহিত হয় এবং দিক পরিবর্তন খুব কম হয়। সাধারণত সমতল ভূমিতে প্রবাহিত নদীগুলো পরিপক্ক অবস্থার উদাহরণ।

নদীর বৃদ্ধাবস্থা

যে নদী বহু যুগ ধরে প্রবাহিত হচ্ছে এবং যার পানি প্রবাহ অনেক ধীর হয়ে গেছে, তাকে নদীর বৃদ্ধাবস্থা বলা হয়। এই অবস্থায় নদীর চারপাশ ধীরে ধীরে ভরাট হতে থাকে। যৌবন থেকে বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত নদীর জীবনের এটি শেষ ধাপ বলা যেতে পারে।


উপসংহারঃ নদী আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় না, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নদীর উৎপত্তি, প্রবাহ ও অবস্থা সম্পর্কে জানা আমাদের শিক্ষার অংশ। আশা করি এই লেখাটি থেকে আপনি নদী সম্পর্কে সহজভাবে ধারণা পেয়েছেন। আরও এমন সুন্দর ও শিক্ষামূলক তথ্য পড়তে ভিজিট করুন StudyTika.com

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.