রসায়ন পড়তে গিয়ে আমরা প্রায়ই এমন কিছু শব্দ শুনি যা একটু জটিল মনে হয়, যেমন—“আয়নিক যৌগ” বা “তড়িৎযোজী বন্ধন”। কিন্তু আসলে এগুলো বোঝা একদম কঠিন নয়, যদি সহজভাবে জানা যায়। আজকের এই লেখায় আমরা খুব সহজ ভাষায় জানব আয়নিক যৌগ ঠিক কী, কীভাবে এটি তৈরি হয়, এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন। পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে তুমি সহজেই এই বিষয়টি বুঝে ফেলবে।
তড়িৎযোজী বন্ধন (আয়নিক বন্ধন) কাকে বলে
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এক পরমাণুর বহিস্তর থেকে অপর পরমাণুর বহিস্তরে এক বা একাধিক ইলেকট্রন স্থানান্তরিত হয়ে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন সৃষ্টি হয়। এই বিপরীত চার্জযুক্ত আয়নদ্বয় স্থির বিদ্যুৎ আকর্ষণ শক্তির দ্বারা যুক্ত হয়ে যে বন্ধন গঠন করে তাকে তড়িৎযোজী বন্ধন বা আয়নিক বন্ধন বা ইলেকট্রোভ্যালেন্ট বন্ধন বলা হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, ইলেকট্রন আদান-প্রদানের মাধ্যমে গঠিত ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নসমূহ যে আকর্ষণ বল দ্বারা যৌগের অণুতে আবদ্ধ থাকে, তাকে আয়নিক বন্ধন বলা হয়।
উদাহরণ: NaCl এ Na এবং Cl এর মধ্যে যে বন্ধন গঠিত হয়, সেটি একটি আয়নিক বন্ধন। তাই NaCl একটি আয়নিক যৌগ।
আয়নিক বন্ধন কীভাবে গঠিত হয়
যেসব মৌলের মধ্যে তড়িৎঋণাত্মকতার পার্থক্য বেশি থাকে, তাদের মধ্যে আয়নিক বন্ধন তৈরি হয়। তড়িৎঋণাত্মকতার এই পার্থক্যের কারণে একটি মৌল ধনাত্মক (ধাতু) আর অন্যটি ঋণাত্মক (অধাতু) হয়ে যায়। ধাতু ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়ন গঠন করে, আর অধাতু সেই ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে রূপ নেয়। এই বিপরীত চার্জযুক্ত আয়নগুলো স্থির বিদ্যুৎ আকর্ষণ বলের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌগ তৈরি করে। এই স্থির আকর্ষণ বলকেই বলা হয় তড়িৎযোজী বন্ধন বা আয়নিক বন্ধন।
আয়নিক যৌগ কাকে বলে?
যে যৌগ আয়নিক বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয়, তাকে আয়নিক যৌগ বা তড়িৎযোজী যৌগ বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, ইলেকট্রন গ্রহণ ও বর্জনের মাধ্যমে বিপরীত চার্জযুক্ত আয়নের স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণে যে যৌগ সৃষ্টি হয়, সেটিই আয়নিক যৌগ।
উদাহরণ: NaCl একটি আয়নিক যৌগ। এটি গঠিত হয় যখন সক্রিয় ধাতু সোডিয়াম (Na) এবং সক্রিয় অধাতু ক্লোরিন (Cl) পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে।
আয়নিক বন্ধন গঠনের শর্তসমূহ
আয়নিক বন্ধন গঠনের জন্য নিচের শর্তগুলো পূরণ হওয়া প্রয়োজনঃ
- আয়নিক বন্ধনে অংশগ্রহণকারী এক পরমাণু তড়িৎ ধনাত্মক ধাতু এবং অন্যটি তড়িৎ ঋণাত্মক অধাতু হতে হবে।
- গঠিত আয়নিক যৌগটির ল্যাটিস শক্তি বেশি হতে হবে।
- পরমাণুর বহিস্তর নিউক্লিয়াস থেকে যথাযথ দূরত্বে থাকতে হবে।
- ধাতব পরমাণুর আয়নাইজেশন শক্তি কম এবং অধাতব পরমাণুর ইলেকট্রন আসক্তি বেশি হতে হবে।
আয়নিক যৌগের বৈশিষ্ট্যসমূহ
- আয়নিক যৌগসমূহ সাধারণত পোলার (মেরুক) প্রকৃতির হয়।
- আয়নিক যৌগসমূহ অপোলার দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় না, কিন্তু পোলার দ্রাবকে খুব সহজে দ্রবীভূত হয়।
যেমনঃ NaCl পানিতে দ্রবণীয় কিন্তু CCl₄ এ অদ্রবণীয়। - আয়নিক যৌগ কঠিন অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়, কিন্তু দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবাহিতা প্রদর্শন করে।
- এগুলো সাধারণত দানাদার বা কেলাসাকার (crystalline) গঠনবিশিষ্ট।
- আয়নিক যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অনেক বেশি।
যেমনঃ NaCl এর স্ফুটনাঙ্ক 1470℃, অথচ সমযোজী যৌগ CCl₄ এর স্ফুটনাঙ্ক মাত্র 77℃।