শিল্প কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | শিল্পের প্রকারভেদ | শিল্পের গুরুত্ব

আমরা প্রতিদিন এমন অনেক জিনিস দেখি যা মানুষ তৈরি করেছে—কাপড়, চেয়ার, গাড়ি, ভবন, এমনকি আমাদের ব্যবহৃত সাবানটিও। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এসব জিনিস কীভাবে তৈরি হয় বা এর পেছনে কত বড় একটা প্রক্রিয়া কাজ করে? 🤔 এইসব জিনিস তৈরি করার পেছনেই আছে এক বিস্ময়কর বিষয়—“শিল্প”। শিল্প শুধু পণ্য তৈরির প্রক্রিয়া নয়, এটি মানুষের সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমের প্রতিফলন। আজকের এই পোস্টে আমরা সহজ ভাষায় জানব শিল্প কী, এর প্রকারভেদ এবং কেন এটি আমাদের জীবনের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তাই চলুন ধীরে ধীরে জেনে নেই শিল্প সম্পর্কে বিস্তারিত—

শিল্প কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

শিল্প কাকে বলে?


প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য যে সব প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় তাকেই শিল্প বলে।

আরো বিস্তারিত বললে, শিল্প মানে হচ্ছে সৃষ্টি। অর্থাৎ প্রকৃতি থেকে পাওয়া কাঁচামালকে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী পণ্যে রূপান্তর করাই শিল্প। সহজভাবে বলা যায়, প্রকৃতির সম্পদকে রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপযোগ সৃষ্টি করাকেই শিল্প বলে। যেমন: তুলা থেকে কাপড় তৈরি করা।

শিল্পের গুরুত্ব

শিল্পকে উৎপাদনের প্রধান শক্তি বলা হয়, কারণ এর মাধ্যমেই বিভিন্ন পণ্য ও সেবা তৈরি হয়। শিল্প কাঁচামাল সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করে নতুন ও প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে। যেমন, কাঠ প্রক্রিয়াজাত করে চেয়ার, টেবিল বা খাট বানানো হয়। এতে কাঠের আকার ও ব্যবহার বদলে গিয়ে নতুন মূল্য সৃষ্টি হয়।

শিল্পের প্রকারভেদ

শিল্পকে মূলত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. প্রজনন শিল্প
  2. নিষ্কাশন শিল্প
  3. নির্মাণ শিল্প
  4. উৎপাদন শিল্প
  5. সেবা শিল্প

১. প্রজনন শিল্প

যে শিল্পে উৎপাদিত জিনিস আবার নতুন সম্পদ সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়, তাকে প্রজনন শিল্প বলা হয়। অর্থাৎ প্রজনন প্রক্রিয়ায় নতুন সম্পদ তৈরি করাই এই শিল্পের কাজ।

উদাহরণ: হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন, রেশম চাষ, পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালনা ইত্যাদি।

২. নিষ্কাশন শিল্প

প্রকৃতির বিভিন্ন উৎস থেকে সম্পদ আহরণ বা উত্তোলন করাকেই নিষ্কাশন শিল্প বলে। এই শিল্পে প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ করে সেগুলোকে ব্যবহারযোগ্য পণ্যে রূপান্তর করা হয়।

উদাহরণ: খনি থেকে কয়লা আহরণ, ট্রলার দিয়ে মাছ ধরা, বন থেকে মধু সংগ্রহ ইত্যাদি।

৩. নির্মাণ শিল্প

যে শিল্পের মাধ্যমে রাস্তা, সেতু, বাঁধ, ভবন ইত্যাদি তৈরি করা হয়, তাকে নির্মাণ শিল্প বলে। এটি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প। পুরনো ভবন মেরামত বা সংস্কার করাও এই শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।

উদাহরণ: বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ডকইয়ার্ডে জাহাজ তৈরি ইত্যাদি।

৪. উৎপাদন শিল্প

যে শিল্পে শ্রম ও যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষিজাত পণ্য বা প্রাকৃতিক সম্পদকে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী জিনিসে রূপান্তর করা হয়, তাকে উৎপাদন শিল্প বলা হয়।

উদাহরণ: গার্মেন্টস কারখানা, সাবান তৈরি, চিনি উৎপাদন ইত্যাদি।

৫. সেবা শিল্প

যে শিল্পের মাধ্যমে মানুষকে সেবা প্রদান করা হয় বা সেবা দেওয়ার কাজ করা হয়, তাকে সেবা শিল্প বলা হয়। এই শিল্পের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের চাহিদা পূরণ ও সন্তুষ্টি প্রদান করা।

উদাহরণ: পরিবহন, চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যাংকিং, বীমা, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি।

আকার অনুযায়ী শিল্পের প্রকারভেদ

আকার অনুযায়ী শিল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. বৃহৎ শিল্প
  2. মাঝারি শিল্প
  3. ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প

১. বৃহৎ শিল্প

যে শিল্পে অনেক শ্রমিক, বেশি মূলধন এবং প্রচুর কাঁচামাল লাগে, তাকে বৃহৎ শিল্প বলা হয়। সাধারণত যেখানে ২৩০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করে, সেটি বৃহৎ শিল্প।

উদাহরণ: পাট শিল্প, বস্ত্র শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, কাগজ শিল্প, সার শিল্প ইত্যাদি।

২. মাঝারি শিল্প

যে শিল্পে ২০ থেকে ২৩০ জন শ্রমিক কাজ করে, তাকে মাঝারি শিল্প বলে।

উদাহরণ: চামড়া শিল্প, সাবান শিল্প, দিয়াশলাই শিল্প ইত্যাদি।

৩. ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প

যে শিল্পে ২০ জনের কম শ্রমিক কাজ করে, তাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলা হয়। আর যে শিল্প পরিবারভিত্তিকভাবে পরিচালিত হয়, তাকে কুটির শিল্প বলে।

উদাহরণ: মাটির পাত্র তৈরি, বাঁশের কাজ, হস্তশিল্প ইত্যাদি।

শিল্প আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু পণ্য উৎপাদন নয়, বরং সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। প্রতিটি শিল্পের পেছনে লুকিয়ে আছে মানুষের পরিশ্রম, জ্ঞান এবং সৃজনশীলতা। আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনি শিল্প সম্পর্কে স্পষ্ট ও সহজভাবে ধারণা পেয়েছেন। 😊 আরও এমন শিক্ষামূলক ও সহজ ভাষায় লেখা পোস্ট পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com – শেখার সহজ ঠিকানা!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.