ব্যাকরণ কাকে বলে?
যে শাস্ত্র পাঠ করিলে ভাষা শুদ্ধ রূপে বলিতে, পড়িতে ও লিখতে পারা যায় তাকে ব্যাকরণ বলে।
ব্যাকরণ হলো সেই শাস্ত্র, যেখানে ভাষার সঠিক ব্যবহার, তার নিয়ম এবং প্রকৃতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ব্যাকরণ শেখার মাধ্যমে আমরা ভাষাকে শুদ্ধভাবে বলতে, লিখতে ও পড়তে পারি।
ড. সুনিত কুমার চট্টোপধ্যায় ব্যাকরণের ব্যাখ্যা
যে বিদ্যার দ্বারা কোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তার স্বরূপটি আলোচিত হয় এবং সেই ভাষার পঠনে, ও লিখনে এবং তাহাতে কথোপকথন শুদ্ধরূপে প্রয়োগ করা যায়, সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ বলে।
ড. ডক্টর সুকুমার সেন ব্যাকরণের সংজ্ঞা
যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার স্বরূপ ও প্রাকৃতির বিচার ও বিশ্লেষণ আছে এবং যে শাস্ত্র জ্ঞান থাকলে বাংলা ভাষার শব্দরূপে বলতে, শিখতেও লিখতে পারা যায় তাকে বাংলা ভাষা ব্যাকরণ বলে।
মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ব্যাকরণেরর সংজ্ঞা
যে শাস্ত্রে কোন ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় ও বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগ বিধি বিষদভাবে আলোচিত হয় তাকে ব্যাকরণ বলে।
ব্যাকরণ কত প্রকার ও কি কি?
ব্যাকরণকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
- বর্ণনামূলক ব্যাকরণ
- ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
- তুলনামূলক ব্যাকরণ
- দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ
বর্ণনামূলক ব্যাকরণ
বর্ণনামূলক ব্যাকরণ হলো সেই ব্যাকরণ, যা নির্দিষ্ট সময়ে একটি ভাষার ব্যবহার এবং বিশ্লেষণ করে। এই ব্যাকরণ ভাষার নিয়মকে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করে।
ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
ঐতিহাসিক ব্যাকরণ ভাষার পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করে। ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশের ধারা ব্যাখ্যা করা হয় এই ব্যাকরণে।
তুলনামূলক ব্যাকরণ
তুলনামূলক ব্যাকরণ হলো সেই শাস্ত্র, যা বিভিন্ন ভাষার বাক্যগঠন ও প্রয়োগরীতির মধ্যে তুলনা করে। এতে ভাষার আদি রূপের সঙ্গে অন্যান্য ভাষার তুলনাও করা হয়।
দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ
দার্শনিক ব্যাকরণ ভাষার মূল চিন্তা ও তার উৎপত্তি এবং বিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ করে।
ব্যাকরণ চর্চা
ব্যাকরণ চর্চা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। ভারতে ব্যাকরণ চর্চার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সংস্কৃত এবং প্রাকৃত ভাষার ব্যাকরণ প্রাচীনকাল থেকেই লেখা হয়েছে। ইউরোপীয় ভাষার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও সংস্কৃত ও গ্রীক ব্যাকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলা ব্যাকরণের প্রয়োজনীয়তা
ভাষা সুশৃঙ্খল হওয়ার জন্য ব্যাকরণের প্রয়োজন। এটি ভাষাকে শুদ্ধভাবে বলতে, পড়তে ও লিখতে সাহায্য করে। ব্যাকরণের নিয়ম না জানলে ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখা কঠিন। সঠিকভাবে কথা বলা, লেখা এবং পড়ার জন্য ব্যাকরণের জ্ঞান জরুরি।
ভাষার সৌন্দর্য এবং তা সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্যও ব্যাকরণের জ্ঞান দরকার। যারা সাহিত্য চর্চা করেন, তাদের জন্য ব্যাকরণের জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা ব্যাকরণের পরিধি ও বিষয়বস্তু
বাংলা ভাষায় চারটি প্রধান অংশ থাকে: ধ্বনি, বাক্য, শব্দ এবং অর্থ। এই চারটি বিষয়ই মূলত ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়। এগুলো নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয় ব্যাকরণে।
ব্যাকরণের চারটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ
- ধ্বনিতত্ত্ব
- শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব
- বাক্যতত্ত্ব
- অর্থতত্ত্ব
অভিধানতত্ত্ব, ছন্দ ও অলংকার
ব্যাকরণে অভিধানতত্ত্ব, ছন্দ ও অলংকার সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। এসবের সঠিক প্রয়োগ এবং ব্যবহার শেখার জন্য ব্যাকরণে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ থাকে।
ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়
ধ্বনিতত্ত্বে ভাষার ধ্বনি এবং তাদের উচ্চারণ প্রণালি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ধ্বনির উৎস, উচ্চারণের জায়গা, ধ্বনির প্রতীক ও বর্ণের বিন্যাস, ধ্বনি পরিবর্তন ইত্যাদি এই অংশে শেখানো হয়। এছাড়াও, ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব নিয়মেরও আলোচনা এখানে থাকে।
শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়
শব্দতত্ত্বে শব্দের শ্রেণিবিভাগ, পদ, শব্দ গঠন, উপসর্গ, প্রত্যয়, লিঙ্গ, বচন, ধাতু, শব্দরূপ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর আলোচনা করা হয়। এর পাশাপাশি, কারক, সমাস এবং ক্রিয়াপদের নিয়মগুলোও এখানে শেখানো হয়।
বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়
বাক্যতত্ত্বে বাক্য গঠন, বাক্যের শ্রেণিবিভাগ এবং বাক্যের রূপান্তর নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। বাক্যের প্রতিটি অংশ এবং তাদের সঠিক ব্যবহারও এখানে শেখানো হয়।
অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়
অর্থতত্ত্বে শব্দ এবং বাক্যের অর্থ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। এর পাশাপাশি, অভিধানতত্ত্ব এবং ছন্দ ও অলংকার সম্পর্কেও সূক্ষ্ম আলোচনা থাকে, যা ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
ব্যাকরণ চর্চা কেবল ভাষাকে শুদ্ধভাবে ব্যবহার করার জন্য নয়, বরং ভাষার প্রকৃতি এবং ইতিহাস জানার জন্যও অপরিহার্য। ব্যাকরণের বিভিন্ন শাখা এবং এর বিশ্লেষণ ভাষাকে আরো সুশৃঙ্খল ও সুশোভিত করে তোলে। যদি এই পোস্টটি আপনাকে উপকৃত করে, তবে আমাদের ওয়েবসাইটে আরো অনেক শিক্ষামূলক পোস্ট রয়েছে, যা আপনাকে ভাষা এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান দেবে।