বাক্য কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | বাক্যের প্রকারভেদ | বাক্যের গঠন

ভূমিকা: বাক্য হলো ভাষার প্রাণ। এটি আমাদের মনের ভাব সহজে এবং স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। বাক্যের মাধ্যমে আমরা যেকোনো বিষয়কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারি। বাক্যের গঠন, প্রকারভেদ, এবং গুণাবলী আমাদের ভাব প্রকাশকে সহজ করে তোলে। এই পোস্টে আপনি বাক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন, যা আপনার ভাষার দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।

বাক্য কাকে বলে?

যে পদ সমষ্টির দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় তাকে বাক্য বলে। যেমন- রিফান গান গাইছে।

যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা একটি বিষয়ে বক্তার মনের ভাব প্রকাশ পায়, সেটিকেই বাক্য বলা হয়। যেমন-  সুমন মাঠে বল খেলছে।

কতগুলি পদ পর পর বসে যখন মনের ভাব বা অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে বাক্য বলে। 

 ড. সুনীতি কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, "পরস্পর অর্থসংবদ্ধ শব্দগুলো যখন একত্রিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বক্তব্য বা ধারণা প্রকাশ করে, তাকে বাক্য বলা হয়।" 

বাক্য হল ভাষার সবচেয়ে মৌলিক একক যা আমাদের ভাব প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

বাক্যের গঠন

বাক্য তৈরি করতে হলে বিভিন্ন শব্দকে একত্রিত করতে হয়। এই শব্দগুলো অর্থগত সম্পর্কের মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ ভাব বা বক্তব্য তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ:

  • আমি বই পড়ছি।
  • সে স্কুলে যায়।
  • রিফান স্কুলে যায়।
  • রহিম ক্রিকেট খেলছে।

উপরের বাক্যগুলো একটি সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করে এবং এটি বাক্যের মূল কাজ।

বাক্যের প্রকারভেদ

প্রতিটি বাক্য দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত হয়:

  • উদ্দেশ্য: বাক্যে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, "সে স্কুলে যায়" বাক্যে "সে" হলো উদ্দেশ্য।
  • বিধেয়: বাক্যে যে তথ্য বা ভাব প্রকাশ করা হয় সেটিকে বিধেয় বলা হয়। এটি সাধারণত ক্রিয়া দ্বারা প্রকাশিত হয়। উদাহরণ: "সে স্কুলে যায়" বাক্যে "স্কুলে যায়" হলো বিধেয়।

উদ্দেশ্য এবং বিধেয় উদাহরণ

  • সে স্কুলে যায়। (উদ্দেশ্য: সে, বিধেয়: স্কুলে যায়)
  • রহিম ক্রিকেট খেলছে। (উদ্দেশ্য: রহিম, বিধেয়: ক্রিকেট খেলছে)
  • আমি বই পড়ছি। (উদ্দেশ্য: আমি, বিধেয়: বই পড়ছি)

বাক্যের গঠন অনুসারে প্রকারভেদ

গঠন অনুসারে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

  • সরল বাক্য: যে বাক্যে একটি উদ্দেশ্য এবং একটি ক্রিয়া থাকে। উদাহরণ: "রহিম ক্রিকেট খেলছে।"
  • জটিল বাক্য / মিশ্র বাক্য: যে বাক্যে একটি সরল বাক্য এবং এক বা একাধিক খন্ড বাক্য থাকে। উদাহরণ: "যে রাধে সে চুলও বাঁধে।"
  • যৌগিক বাক্য: যখন একাধিক সরল বা জটিল বাক্য একসাথে মিশে একটি বাক্য গঠন করে। উদাহরণ: "লোকটি গরিব কিন্তু সৎ।"

বাক্যের গুণাবলি

একটি সার্থক বাক্যের তিনটি প্রধান গুণ থাকে:

  • আকাঙ্ক্ষা: বাক্যে একটি পদ শোনার পর অন্য পদ শোনার ইচ্ছা। উদাহরণ: "করিম স্কুলে" বাক্যটি অসম্পূর্ণ, কিন্তু "করিম প্রতিদিন স্কুলে যায়" বাক্যটি সম্পূর্ণ।
  • আসক্তি: বাক্যের শব্দগুলোর সুশৃংখল বিন্যাস। উদাহরণ: "আমি করি চেষ্টা পড়ার ওয়াক্ত পাঁচ নামাজ" ভুল, সঠিক হবে "আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করি।"
  • যোগ্যতা: বাক্যের ভাবগত মিলবন্ধন। উদাহরণ: "বর্ষার রৌদ্রে প্লাবন সৃষ্টি করে" ভুল, সঠিক হবে "বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবন সৃষ্টি করে।"

অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ

অর্থ অনুসারে বাক্যকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • নির্দেশক বাক্য: কোন ঘটনা বা তথ্য জানানোর জন্য ব্যবহৃত বাক্য। উদাহরণ: "নাদিয়া একটি কবিতা পড়ছে।"
  • প্রশ্নবোধক বাক্য: কোন কিছু জানতে চাইলে ব্যবহৃত বাক্য। উদাহরণ: "ইমন কি খেয়েছে?"
  • অনুজ্ঞাসূচক বাক্য: আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ বা অনুমতি বোঝাতে ব্যবহৃত বাক্য। উদাহরণ: "তুমি এখন যেতে পারো।"
  • বিস্ময়সূচক বাক্য: আবেগ বা বিস্ময় প্রকাশ করতে ব্যবহৃত বাক্য। উদাহরণ: "উঃ, প্রচন্ড শীত!"
  • প্রার্থনা সূচক বাক্য: প্রার্থনা বা কামনা প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত বাক্য। উদাহরণ: "তুমি যেন সফল হতে পারো।"

উপসংহার

বাক্য হল আমাদের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম, এবং বাক্যের বিভিন্ন ধরন এবং গুণাবলী আমাদের ভাবনাকে স্পষ্ট এবং সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে সহায়তা করে। সঠিকভাবে বাক্য ব্যবহার আমাদের ভাষার দক্ষতা বাড়ায় এবং যোগাযোগকে আরো সহজ করে তোলে।

আশা করি, এই পোস্টটি আপনাকে বাক্যের গঠন এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছে। আরও এমন অনেক শিক্ষামূলক পোস্ট রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে। দয়া করে সেগুলোও পড়ুন এবং আপনার জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করুন!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.