উপাত্ত হচ্ছে এমন কিছু তথ্য যা আমাদের জীবনের নানা ক্ষেত্রকে সহজ ও বোধগম্য করে তোলে। এটি নির্দিষ্ট কোন বিষয় বা চলকের গুণগত ও পরিমাণগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। উপাত্ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পরিসংখ্যান, গবেষণা এবং বিভিন্ন বিশ্লেষণে ব্যবহার হয়। আসুন, বিস্তারিতভাবে উপাত্তের প্রকারভেদ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জানি।
উপাত্ত কাকে বলে?
নির্দিষ্ট কোন চলক বা একজাতীয় চলকের গুণগত এবং পরিমাণগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশকারী তথ্যকেই বলা হয় উপাত্ত।
সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত কাঁচামাল সমূহকে ডেটা বা উপাত্ত বলে। অন্যদিকে ডেটাকে প্রক্রিয়াকরণ করে যে অর্থবহ ফলাফল পাওয়া যায়, তাকে তথ্য বলে।
উপাত্ত মানে এমন কিছু তথ্য যা একটি বা একাধিক চলকের গুণ এবং পরিমাণ বুঝায়। উপাত্তের মধ্যে নানা ধরনের তথ্য থাকতে পারে, যা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। এই তথ্যগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা তথ্যকে উপাত্ত বলে। যেমন:
৯ম শ্রেণীর ৫ জন ছাত্রের বয়স হলো ১৩ বছর, ১৫ বছর, ১৯ বছর, ১৭ বছর, ১৭ বছর ৪ মাস। এই তথ্যগুলো উপাত্ত কারণ এগুলো গণনা করা যায়। এখানে বয়সের সংখ্যা আমাদের বোঝায় যে, এই ছাত্রদের বয়স কত এবং তারা কত বড়।
যদিও, ২ জন শিক্ষার্থী রাতুল এবং হাসিবের ক্ষেত্রে বলা যায়; হাসিব রাতুলের চেয়ে দ্রুত দৌড়াতে পারে। এটি উপাত্ত নয় কারণ এই তথ্য গুণ বা পরিমাণ বুঝাতে পারে না। এটি একটি তুলনা হলেও, সংখ্যা না থাকায় এটি নির্ভরযোগ্য উপাত্ত নয়।
উপাত্তের প্রকারভেদ
তথ্য সংগ্রহের উৎস অনুযায়ী উপাত্ত ২ ধরনের বিভক্ত করা যায়:
প্রাথমিক উপাত্ত
যখন সরাসরি উৎস থেকে তথ্য পাওয়া যায়, তাকে প্রাথমিক উপাত্ত বলে। এই ধরনের তথ্য ব্যবহার করে গবেষণা বা পরিসংখ্যানের ফলাফল বেশি নির্ভরযোগ্য হয়। প্রাথমিক উপাত্তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে সোজাসুজি তথ্য সংগ্রহ, যেমন সাক্ষাৎকার বা প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা।
যেমন: বার্ষিক পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ফলাফল এর উপাত্ত। যখন ছাত্রদের পরীক্ষায় নম্বর সংগ্রহ করা হয়, তখন তা সরাসরি প্রাথমিক উপাত্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে বিদ্যালয় বা কলেজের ফলাফল বের করা যায়।
মাধ্যমিক উপাত্ত
যখন সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, তখন পরোক্ষভাবে তথ্য ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের তথ্যকে মাধ্যমিক উপাত্ত বলে। মাধ্যমিক উপাত্তে সাধারণত পূর্বে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করা হয়, যা গবেষণায় ব্যবহার করা হয়।
যেমন: বিশ্বের বিভিন্ন শহরের তাপমাত্রা বা বৃষ্টিপাতের উপাত্ত। এখানে আপনি একাধিক সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে তা বিশ্লেষণ করতে পারেন, কিন্তু তা প্রাথমিক উপাত্তের মত নির্ভরযোগ্য নয়।
তথ্যের বিন্যাস
তথ্যের বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে উপাত্ত ২ ধরনের বিভক্ত করা যায়:
বিন্যস্ত উপাত্ত
যখন তথ্যগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সাজানো হয়, তাকে বিন্যস্ত উপাত্ত বলে। এই তথ্যগুলো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সাজানো যায়, যা বিশ্লেষণ করতে সহজ হয়।
যেমন: ৫ জন ছাত্র-ছাত্রীদের ওজন যথাক্রমে, ৫০,৫১ ৫৫, ৫৭, ৬৩ কেজি। এখানে ওজনের তথ্যগুলো সহজে বোঝা যায় এবং ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে।
অবিন্যস্ত উপাত্ত
যখন তথ্যগুলো কোনো নিয়ম অনুসারে সাজানো যায় না, তখন তা অবিন্যস্ত উপাত্ত হয়। এই তথ্যগুলো এলোমেলোভাবে থাকে এবং কোনো নির্দিষ্ট ক্রম অনুসরণ করে না।
যেমন: ৫ জন শিক্ষার্থীদের ওজন যথাক্রমে, ৫২, ৫৭, ৫৬, ৬০,৬৮ কেজি। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা কঠিন হতে পারে, কারণ তা কোন নির্দিষ্ট ফরম্যাটে নেই।
উপাত্তের বৈশিষ্ট্য
উপাত্তের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে উপাত্ত ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে:
গুণবাচক উপাত্ত
গুণবাচক উপাত্ত হলো তথ্য যা কোন বস্তু বা ঘটনার বর্ণনা, বৈশিষ্ট্য, বা অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই ধরনের তথ্য সংখ্যা, ছবি, বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
যেমন: টীকা বা ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা,মানবদেহে ওষুধ। এটি বোঝায় যে কীভাবে একটি নির্দিষ্ট ওষুধ মানবদেহে কাজ করে, কিন্তু এখানে সংখ্যার ব্যবহার নেই।
পরিমাণবাচক উপাত্ত
পরিমাণবাচক উপাত্ত হলো তথ্য যা সংখ্যা, দৈর্ঘ্য, ওজন, বা অন্যান্য পরিমাপযোগ্য একক ব্যবহার করে কোন বস্তু বা ঘটনার পরিমাণ নির্দেশ করে। এই ধরনের তথ্য সংখ্যা, গ্রাফ, বা চার্টের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়।
যেমন: জরিপ, মানুষের বয়স, আয়, নম্বর ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো সহজে তুলনা করা যায় এবং বিশ্লেষণ করা যায়।
উপাত্ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। আরও জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ুন।