হাদিস কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা | হাদীসের শ্রেণীবিভাগ

হাদিসহাদিস ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবন, কথা ও কার্যকলাপের একটি দর্পণ। যখন আমরা হাদিসের আলোচনা করি, তখন আমরা তাঁর সঠিক নির্দেশনা ও শিক্ষার উপর আলোকপাত করি। আজকের এই পোস্টে আমরা হাদিসের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো। 

আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনাদের জন্য উপকারী হবে এবং আপনারা পুরো লেখাটি পড়বেন।

হাদিস কী?

হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সরাসরি বক্তব্যকে বলা হয় 'আল হাদিস'।

হাদীসের সংজ্ঞা:

হাদীস (ﺣَﺪِﻳْﺖ ) মানে হলো নতুন। এর বিপরীতে প্রাচীন ও পুরাতন। হাদীস সেই কথা, কাজ এবং বস্তু, যা আগে ছিল না কিন্তু এখন আছে। হাদীস শব্দের আরেক অর্থ হলো কথা। ফক্বীহগণের ভাষায়, আল্লাহর রাসূল যা বলেছেন, করেছেন এবং যা বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন, তা হাদীস। মুহাদ্দিসগণ রাসুলের সাথে সম্পর্কিত বর্ণনা এবং তাঁর গুণাবলীর কথাও হাদীসে অন্তর্ভুক্ত করেন।

হাদিসের সংজ্ঞা সঠিকভাবে বলা:

কেউ কেউ বলেন, হাদিস মূলত ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ ঐশীবাণীবাহক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা ও জীবন। হাদিস মুসলমানদের জীবনযাত্রা ও আচরণের জন্য একটি নির্দেশিকা। আল কুরআন ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ এবং অসংখ্য হাদিস এটি ব্যাখ্যা করে।

আল্লামা হাফেজ সাখাবী (রহ) এর মতামত:

হাদীসের ভাষা অর্থে প্রাচীন ও অবিনশ্বরের বিপরীত। পরিভাষায়, এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে সম্পর্কিত। তাঁর কথা, কাজ, অনুমোদন এবং গুণাবলী সব কিছুই হাদীস।

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা:

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা বলে, হাদীস হলো বিশেষ জ্ঞান যা দিয়ে আমরা প্রিয়নবী (সঃ) এর কথা, কাজ ও অবস্থা জানতে পারি।

ফিক্হবিদদের মতে:

হাদীস হলো আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর কথা ও কাজ। বিখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) বলেন, হাদীস হলো রাসূল (সঃ) এর কথা, কাজ ও নীরবতা।

হাদিসের প্রকারভেদ:

হাদিস তিন প্রকার:

  1. কাওলী হাদীস: রাসুলের মুখের কথা।
  2. ফিলী হাদীস: যে কাজ রাসূল (সঃ) করেছেন।
  3. তাকরীরী হাদীস: সাহাবীদের কাজের প্রতি রাসূলের সমর্থন।

রাবীদের সংখ্যা অনুযায়ী হাদীস:

হাদিস তিন প্রকার:

  1. মুতাওয়াতির: এত বেশি রাবী যে, মিথ্যা বলার সম্ভাবনা নেই।
  2. মাশহুর: প্রত্যেক যুগে তিনজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন।
  3. ওয়াহেদ: যেটি গরীব এবং আজিজ।

হাদীসের শ্রেণীবিভাগ:

হাদিস দুই প্রকার:

  1. মারফু: যে হাদীসের সনদ রাসুল (সঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
  2. মাওকুফ: যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত।
  3. মাকতু: যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত।

বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে হাদীস:

হাদিস তিন প্রকার:

  1. সহীহ হাদীস: যার বর্ণনাকারীরা বিশ্বস্ত।
  2. হাসান হাদীস: যার কিছু দুর্বলতা আছে।
  3. যায়ীফ হাদীস: যে হাদীসে বিশ্বস্ততার অভাব।

হাদীসে কুদসী:

যে হাদীসে আল্লাহ সরাসরি রাসূলকে বলেছে।

মুদাল্লাছ হাদীস:

যে হাদীসে সনদের দোষ গোপন করা হয়।

সুনান:

যে কিতাব ফিক্হ অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।

সুনানে আরবায়া:

চার হাদীস গ্রন্থের সমন্বয়কে সুনানে আরবায়া বলা হয়।

মুসনাদ:

যে কিতাব সাহাবাদের অনুযায়ী লেখা হয়েছে।

সহীহাইন:

বুখারী শরীফ ও মুসলীম শরীফকে সহীহাইন বলা হয়।

মুত্তাফাকুন আলাইহি:

যে হাদীস উভয়েই একই সাহাবী থেকে নেওয়া।

জামেঃ

যে গ্রন্থে হাদীস বিষয়ভিত্তিক সাজানো হয়েছে।

সনদ:

হাদীস বর্ণনা কারীদের ধারাবাহিকতাকে সনদ বলে।

মতন:

হাদীসের মূল শব্দগুলোকে মতন বলে।

রেওয়ায়েত:

হাদীস বর্ণনা করাকে রেওয়ায়েত বলে।

দেরায়েত:

হাদীসের মূল বিষয়ে যুক্তির সমালোচনা।

রিজাল:

হাদীস বর্ণনাকারীর সমষ্টিকে রিজাল বলে।

শায়খাইন:

বুখারী ও মুসলিমকে শায়খাইন বলা হয়।

হাফিজ:

যে ব্যক্তি এক লক্ষ হাদীস মুখস্ত জানেন।

হুজ্জাত:

যে ব্যক্তি তিন লক্ষ্য হাদীস মুখস্ত জানেন।

হাদিস সম্পর্কে এই আলোচনা আপনাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করেছে বলেই আশা করি। ইসলামের এ অমূল্য রত্নগুলো আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করতে সহায়তা করে। আরও জানার জন্য দয়া করে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ুন। আপনারা সবসময় আমাদের সাথে থাকুন এবং শিখতে থাকুন!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.