হিসাব বিজ্ঞান কাকে বলে?
যে পদ্ধতি বা কৌশল ব্যবহার করে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল (লাভ/ক্ষতি) এবং আর্থিক অবস্থা (সম্পদ/দায়) সম্পর্কে জানা যায়, তাকে হিসাববিজ্ঞান বলা হয়।
হিসাব বিজ্ঞান হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যবসায়ের লেনদেনগুলোকে সঠিকভাবে সংগৃহীত, লিপিবদ্ধ, এবং সংরক্ষণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে এবং পরবর্তীতে সেই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
জনসন-এর মতে, হিসাববিজ্ঞান এমন একটি প্রক্রিয়া যা সঠিক অর্থের হিসাব ও আর্থিক অবস্থা নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অপরিহার্য অংশ।
হিসাব বিজ্ঞানের ইতিহাস
হিসাববিজ্ঞানের ইতিহাস বহু প্রাচীন হলেও, এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল লুকা প্যাসিওলির মাধ্যমে। তিনি লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বন্ধু ও গৃহশিক্ষক ছিলেন এবং ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সমসাময়িক ছিলেন। প্যাসিওলি তার গ্রন্থে প্রথমবারের মতো আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের আলোচনার মাধ্যমে এটির উদ্বোধন করেন। তার ‘দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতি’ আজও হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ব্যবসায়ের সংগঠিত লেনদেন
ব্যবসায়ে অর্থের লেনদেনগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করা হয়, যেমন লেনদেন সংগ্রহ, চিহ্নিতকরণ, লিপিবদ্ধকরণ, তথ্য প্রদান, এবং আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করা। এই প্রক্রিয়াগুলি ব্যবসার মূল কাঠামো তৈরি করে এবং ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। হিসাববিজ্ঞান এক ধরনের সামাজিক বিজ্ঞান, কারণ এটি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে।
হিসাব বিজ্ঞানের পদ্ধতি
হিসাব বিজ্ঞানের মূল কাজ হলো ব্যবসার আর্থিক অবস্থা ও ফলাফল বিশ্লেষণ করা। এর মধ্যে লাভ-ক্ষতি এবং সম্পদ-দায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এটি ব্যবহৃত হয়, যাতে তারা তাদের আর্থিক অবস্থার সঠিক পর্যালোচনা করতে পারে। হিসাব বিজ্ঞান খুব সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কাজ করে, যা ব্যবসার স্থিতি এবং উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
হিসাব বিজ্ঞানের জনক
লুকা প্যাসিওলি, যিনি হিসাববিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত, তিনি আধুনিক হিসাব বিজ্ঞানের সূচনা করেন। ১৪৯৪ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ “সুম্মা এরিথমেটিকা জিওমেট্রিকা প্রপোরশনিয়েট প্রপোরশনালিটা” প্রকাশিত হয়। এই বইটিতে তিনি প্রথম হিসাব বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং ‘দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতি’ বা ‘ডাবল এন্ট্রি সিস্টেম’ এর উল্লেখ করেন। এই পদ্ধতিই আজকের হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হিসেবে পরিচিত। প্যাসিওলির এই কাজই হিসাববিজ্ঞানের উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হিসাব বিজ্ঞানের প্রকারভেদ
হিসাববিজ্ঞান মূলত দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত:
- আর্থিক হিসাববিজ্ঞান: এটি ব্যবসার সাধারণ আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত। এর মাধ্যমে ব্যবসার মোট আয়, ব্যয়, সম্পদ এবং দায় সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
- বিশেষায়িত হিসাববিজ্ঞান: এখানে কিছু নির্দিষ্ট কাজের জন্য হিসাব তৈরি করা হয়, যেমন ট্যাক্স হিসাব, খরচ হিসাব, ব্যবস্থাপনা হিসাব ইত্যাদি।
এই দুই ধরনের হিসাববিজ্ঞানই ব্যবসার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আর্থিক হিসাববিজ্ঞান পরিচালিত হয়, কিন্তু অনেক সময় বিশেষায়িত হিসাববিজ্ঞানও ব্যবহার করা হয় নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে।
হিসাব বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য
হিসাব বিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো নিচে দেওয়া হলো:
১. নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সঠিকভাবে লেনদেনগুলো হিসাবের বইয়ে লিপিবদ্ধ করা।
২. আয়, ব্যয়, দায়, সম্পদ ও মালিকানা নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান।
এছাড়াও, হিসাব বিজ্ঞানের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে:
- আর্থিক লেনদেনগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা।
- প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পক্ষকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।
- নির্দিষ্ট সময়ের আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা।
- আয়-ব্যয়ের বিশ্লেষণ ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা।
- তহবিলের চুরি ও জালিয়াতি প্রতিরোধ করা।
- ভ্যাট ও কর সঠিকভাবে নির্ধারণ করা।
আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের জনক লুকা প্যাসিওলি (১৪৪৫-১৫১৭)। তিনি ১৪৯৪ সালে প্রকাশিত তাঁর বই 'সুম্মা এরিথমেটিকা'য় হিসাববিজ্ঞানের "দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতি"র উল্লেখ করেন, যা হিসাববিজ্ঞানের স্বর্ণসূত্র হিসেবে পরিচিত।
হিসাব বিজ্ঞানের স্বর্ণ সূত্র
হিসাববিজ্ঞানে ‘দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতি’ (ডাবল এন্ট্রি সিস্টেম) ব্যবহৃত হয়, যা লেনদেনের ডেবিট এবং ক্রেডিট উভয় দিককে লিপিবদ্ধ করে। এই পদ্ধতিই হিসাববিজ্ঞানের স্বর্ণসূত্র হিসেবে পরিচিত। লুকা প্যাসিওলিই এই সূত্রের প্রবর্তক। এটি সম্পদ, দায়, আয়, এবং ব্যয়ের সঠিক হিসাব প্রদানে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবসায়ের আর্থিক লেনদেনকে সহজে নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্লেষণ করা যায়, যা সঠিক হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
হিসাব বিজ্ঞান ব্যবসায়িক জগতে অপরিহার্য। সঠিক হিসাব পরিচালনা ব্যবসার উন্নতির জন্য জরুরি। আরও জানতে চাইলে, আমাদের ওয়েবসাইটে অন্যান্য পোস্ট পড়ুন। আশা করি, সেগুলো আপনার জ্ঞান বাড়াতে সহায়ক হবে!