পর্যায় সারণি কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | পর্যায় সারণির উদ্ভব | আধুনিক পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য | পর্যায় সারণি মনে রাখার ছন্দ

ভূমিকা: পর্যায় সারণি বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার, যা মৌলসমূহকে গঠনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে সাজায়। এটি বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল যা মৌলসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাতে সহায়ক। 

আজকের লেখায় পর্যায় সারণি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো, যা আপনাকে এর মৌলিক ধারণা আরও সহজভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। চলুন, সারণিটির অজানা তথ্যগুলো এক নজরে দেখে নেই!

পর্যায় সারণি কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | পর্যায় সারণির উদ্ভব | আধুনিক পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য | পর্যায় সারণি মনে রাখার ছন্দ

পর্যায় সারণি কাকে বলে?

একই ধর্ম বিশিষ্ট মৌল সমূহকে একই গ্রুপে এবং ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট মৌল সমূহকে পর্যায় বা সারিতে স্থান দিয়ে আবিষ্কৃত সকল মৌলকে নিয়ে বর্তমানে যে সারণিটি তৈরি করা হয়েছে তাকে পর্যায় সারণি বলে।

পর্যায় সারণি হচ্ছে এমন একটি সারণি যেখানে একই ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মৌলগুলোকে একই গ্রুপে এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মৌলগুলোকে পর্যায় বা সারিতে স্থান দিয়ে সাজানো হয়েছে। এটি মৌলসমূহের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাদের সঠিক অবস্থান নির্ধারণের একটি প্রক্রিয়া।

পর্যায় সারণির উদ্ভব

বর্তমান পর্যায় সারণি যে আমরা ব্যবহার করছি তা বহু বিজ্ঞানীর পরিশ্রমের ফল। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান দ্বিমিত্রি মেন্ডেলিফের, যিনি ১৮৬৯ সালে মৌলসমূহকে একটি বিশেষ সারণিতে সাজানোর প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। সেই জন্য মেন্ডেলিফকে আধুনিক পর্যায় সারণির জনক বলা হয়।

আধুনিক পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য

আধুনিক পর্যায় সারণিতে ৭টি অনুভূমিক পর্যায় এবং ১৮টি খাড়া গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপ এবং পর্যায়গুলোতে মোট ১১৮টি মৌল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

  • সারণির বাম থেকে ডানের দিকে পর্যায়গুলি বিস্তৃত এবং উপর থেকে নিচে গ্রুপগুলি বিস্তৃত।
  • প্রত্যেক পর্যায়ে মৌলসমূহের সংখ্যা আলাদা: ১ম পর্যায়ে ২টি, ২য় ও ৩য় পর্যায়ে ৮টি, ৪র্থ ও ৫ম পর্যায়ে ১৮টি, এবং ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ে ৩২টি করে মৌল রয়েছে।
  • গ্রুপের ভিত্তিতে মৌলসমূহকে ভাগ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রুপ ১-এ ৭টি এবং গ্রুপ ২-এ ৬টি মৌল রয়েছে।
  • গ্রুপ ৩ থেকে ১২ পর্যন্ত, প্রতি গ্রুপে ৪টি মৌল রয়েছে।
  • ল্যান্থানাইড এবং অ্যাকটিনাইড সিরিজের মৌলগুলো পর্যায় সারণির নিচে আলাদা ভাবে দেখানো হয়।

পর্যায় সারণি মনে রাখার ছন্দ

পর্যায় সারণি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপকরণ, যা মৌলগুলোর গঠন এবং তাদের বৈশিষ্ট্য বোঝাতে সাহায্য করে। তবে, এই মৌলগুলোর নাম মনে রাখা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। তাই আমরা কিছু মজার এবং সহজ ছন্দ তৈরি করেছি, যা মৌলগুলোর নাম ও তাদের গ্রুপ মনে রাখতে সাহায্য করবে। নিচে কিছু ছন্দ উল্লেখ করা হলো:

গ্রুপ ১:

হায় – হাইড্রোজেন (H)

লি – লিথিয়াম (Li)

না – সোডিয়াম (Na)

কে – পটাশিয়াম (K)

রুবি – রুবিডিয়াম (Rb)

ছেঁচে – সিজিয়াম (Cs)

ফেলেছে – ফ্রানসিয়াম (Fr)

এই গ্রুপে থাকা মৌলগুলো মূলত ক্ষার ধাতু হিসেবে পরিচিত, এবং এগুলো সাধারণত খুব প্রতিক্রিয়াশীল হয়।

গ্রুপ ২:

বিরিয়ানি – বেরিলিয়াম (Be)

মোগলাই – ম্যাগনেসিয়াম (Mg)

কাবাব – ক্যালসিয়াম (Ca)

সরিয়ে – স্ট্রোনসিয়াম (Sr)

বাটিতে – বারিয়াম (Ba)

রাখো – রেডিয়াম (Ra)

এই গ্রুপের মৌলগুলো ক্ষারীয় মাটি মৌল বলে পরিচিত এবং এগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।

গ্রুপ ১৩:

বো – বোরন (B)

য়াল – অ্যালুমিনিয়াম (Al)

গেলো – গ্যালিয়াম (Ga)

ইন্ডিয়া – ইনডিয়াম (In)

তেও যাই – থ্যালিয়াম (Tl)

গ্রুপ ১৩ এর মৌলগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে অ্যালুমিনিয়ামের কারণে, যা অত্যন্ত হালকা এবং শক্তিশালী।

গ্রুপ ১৪:

কাল – কার্বন (C)

সিলেট – সিলিকন (Si)

গেলে – জারমেনিয়াম (Ge)

স্বর্ণ – টিন (Sn)

পাবো – লেড (Pb)

এই গ্রুপের মৌলগুলো কার্বন ভিত্তিক যৌগগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং প্রযুক্তিগত ব্যবহারেও এগুলোর চাহিদা রয়েছে।

গ্রুপ ১৫:

নানা – নাইট্রোজেন (N)

পাটেকার – ফসফরাস (P)

আসলো – আর্সেনিক (As)

সব – অ্যান্টিমনি (Sb)

বিলিয়ে – বিসমাথ (Bi)

এই গ্রুপের মৌলগুলো জীববিজ্ঞান ও রাসায়নিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ্রুপ ১৬:

ও – অক্সিজেন (O)

এস – সালফার (S)

এস সি – সেলেনিয়াম (Se)

তে – টেলুরিয়াম (Te)

পড়ে – পোলোনিয়াম (Po)

অক্সিজেন, এই গ্রুপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৌল, যা জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য।

গ্রুপ ১৭:

ফকিরা – ফ্লোরিন (F)

কালু – ক্লোরিন (Cl)

বরিসাল থেকে – ব্রোমিন (Br)

ইস্টিমারে – আয়োডিন (I)

আসতেসে – অ্যাস্টাটিন (At)

এই গ্রুপের মৌলগুলো হ্যালোজেন হিসাবে পরিচিত, যা বিভিন্ন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

গ্রুপ ১৮:

হিলি – হিলিয়াম (He)

নিয়ন্তা – নিয়ন (Ne)

আর – আর্গন (Ar)

কিশোর – ক্রিপ্টন (Kr)

যাবে – জেনন (Xe)

রংপুর – রেডন (Rn)

এই মৌলগুলো দুর্বল প্রতিক্রিয়া এবং গ্যাস হিসাবে পাওয়া যায়, এবং এগুলো সাধারণত স্থিতিশীল।

পর্যায় ৩:

না – সোডিয়াম (Na)

মাযে – ম্যাগনেসিয়াম (Mg)

এসে – অ্যালুমিনিয়াম (Al)

সিজদায় – সিলিকন (Si)

পড়ে – ফসফরাস (P)

সবাই – সালফার (S)

কালেমা – ক্লোরিন (Cl)

আওড়ায় – আর্গন (Ar)

এই পর্যায়ে মৌলগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলি একটি বিস্তৃত পরিসরে পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন যৌগ গঠনে সাহায্য করে।

এই ছন্দগুলো সাহায্য করবে মৌলগুলোর নাম এবং তাদের গ্রুপ সহজে মনে রাখতে। তাই পরবর্তী সময়ে যখন আপনি পর্যায় সারণি দেখতে পাবেন, তখন এই মজার ছন্দগুলো মনে করে দ্রুত মনে করতে পারবেন মৌলগুলোর নাম ও বৈশিষ্ট্য।

পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন

পর্যায় সারণিতে বাম থেকে ডানদিকে যাওয়ার সাথে সাথে মৌলগুলোর বৈশিষ্ট্য ক্রমশ পরিবর্তিত হয়। একই গ্রুপের মধ্যে উপরের মৌলগুলোর বৈশিষ্ট্য নিচেরগুলোর থেকে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত গ্রুপের সব মৌলের ভৌত এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য প্রায় একই রকম থাকে।

ইলেকট্রন বিন্যাস এবং পর্যায় সারণি

প্রত্যেক মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস অনুযায়ী তার গ্রুপ এবং পর্যায় নির্ধারণ করা হয়। একই গ্রুপের মৌলগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাসের একটি নির্দিষ্ট মিল থাকে। ধাতুগুলোর বাইরের শক্তিস্তরের ইলেকট্রন সংখ্যা সাধারণত ১টি বা ২টি হয়, যা ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হতে সহায়তা করে।

পর্যায় সারণির ব্যতিক্রম

হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের অবস্থান আধুনিক পর্যায় সারণির ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা যায়। হাইড্রোজেনের অনেক বৈশিষ্ট্য ক্ষার ধাতুগুলোর সাথে মিলে যায়, তবে এটি একটি অধাতু। হিলিয়াম গ্রুপ-২ এর মৌল হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু এটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস হওয়ার কারণে গ্রুপ-১৮ তে স্থান পেয়েছে।

উপসংহার: আশা করি, এই লেখাটি পর্যায় সারণি সম্পর্কে আপনাকে নতুন কিছু শিখতে সাহায্য করেছে। আরও বিজ্ঞান সম্পর্কিত পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট studytika.com-এ ভিজিট করুন।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.