ধ্বনি কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | ধ্বনি কি/কাকে বলে | ধ্বনি সৃষ্টিতে বাগ্ যন্ত্র | ধ্বনি প্রকারভেদ

আপনারা কি জানেন, আমাদের চারপাশে প্রতিদিন কত ধরনের ধ্বনি তৈরি হচ্ছে? এই শব্দগুলো আমাদের অনুভূতি, চিন্তা এবং কথোপকথনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজকের পোস্টে আমরা ধ্বনির সম্পর্কে আলোচনা করবো। 

ধ্বনি কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | ধ্বনি কি/কাকে বলে | ধ্বনি সৃষ্টিতে বাগ্ যন্ত্র | ধ্বনি প্রকারভেদ

জানাবো কীভাবে আমাদের বাগযন্ত্র থেকে এই শব্দগুলো তৈরি হয়। আমাদের জীবনে ধ্বনির গুরুত্ব কেমন এবং এটি কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে এক সুন্দর আলোচনা হবে। আসুন, বিস্তারিত জানার জন্য একসাথে চলি।

ধ্বনি কাকে বলে?

বাগযন্ত্রের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া শব্দকে ধ্বনি বলে। 

এটি মানুষের বাকযন্ত্রের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। মানুষের বাকযন্ত্রে বিভিন্ন অঙ্গ থাকে, যা ধ্বনি উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে। এই অঙ্গগুলোর মধ্যে ফুসফুস, স্বরযন্ত্র, নাক, মুখ ও জিহ্বা অন্তর্ভুক্ত।

ধ্বনি কি/কাকে বলে

ধ্বনি হলো শব্দের যে রূপ বায়ু মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। শব্দ তৈরি করতে বাতাসকে তরঙ্গিত করতে হয়। এই তরঙ্গগুলি বাতাসের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে এবং যখন মানুষের কানে পৌঁছায়, তখন আমরা এটি শব্দ হিসেবে শুনি।

ধ্বনি সৃষ্টিতে বাগ্ যন্ত্র

বেঁচে থাকার জন্য আমাদের পরিবেশ থেকে বাতাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হয়। এ কাজে সহায়ক অঙ্গ হলো আমাদের ফুসফুস। কোন শব্দ বা ধ্বনি উৎপন্ন করার জন্য শ্বাসবায়ুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফুসফুস ছাড়াও আরও অনেক বাগ্ যন্ত্র রয়েছে, যেমন:

  • ফুসফুস
  • শ্বাসনালি
  • খাদ্যনালী
  • আদমের আপেল
  • মূর্ধা
  • শক্ত তালু
  • নাসিকা
  • নাসারন্ধ্র
  • দাঁত
  • স্বরযন্ত্র
  • জিহ্বা
  • অধর
  • ওষ্ঠ

ফুসফুস থেকে শ্বাস বায়ু বেরিয়ে শ্বাসনালীর মাধ্যমে মুখবিবরে পৌঁছায়। এখানে একটি ছোট নলের মতো অংশ রয়েছে যা স্বরযন্ত্র নাম পরিচিত। স্বরযন্ত্রের গঠন জটিল এবং এটি ধ্বনির গভীরতা নির্ধারণ করে। এই স্বরযন্ত্রে স্বর তন্ত্রী রয়েছে, যা বায়ুর দ্বারা কম্পন সৃষ্টি করে এবং আওয়াজ বা ধ্বনির উৎপত্তি করে।

কণ্ঠনালি

আমাদের খাদ্যনালি ও শ্বাসনালি এই অংশে এসে মিলিত হয়েছে। এরপরের অংশগুলো পরস্পর মিলিত হয়ে আমাদের পুরো বাগ্ যন্ত্র তৈরি করেছে।

ধ্বনি প্রকারভেদ

ধ্বনিকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয়:

  1. স্বরধ্বনি
  2. ব্যঞ্জনধ্বনি

স্বরধ্বনি

স্বরধ্বনি হলো কিছু ধ্বনি যা উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ু মুখের মধ্যে অবাধে প্রবাহিত হয়। এই ধ্বনিগুলি উচ্চারণের জন্য মুখের কোনো অঙ্গের সাথে বাধা সৃষ্টি হয় না। বাংলায় স্বরধ্বনির সংখ্যা ১১টি: অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।

স্বরধ্বনি এর প্রকারভেদ

স্বরধ্বনিকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয়:

  • মৌলিক স্বরধ্বনি: যেগুলি বিশ্লেষণ করা যায় না, যেমনঃ অ, আ, ই, উ, এ্যা।
  • যৌগিক স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনিগুলি দুটি স্বরধ্বনি মিলে হয়, যেমনঃ ঐ, ঔ।

উচ্চারণের প্রকারভেদ

বাংলা স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ের প্রকারভেদের কারণে স্বরধ্বনিগুলোকে ভাগে বিভক্ত করা হয়:

  1. হ্রস্বস্বর
  2. দীর্ঘস্বর
  3. প্লুতস্বর

হ্রস্বস্বর

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় আমাদের শ্বাস বায়ুর ব্যবহার কম হয়, সেগুলোকে হ্রস্বস্বর বলা হয়। বাংলা ভাষায় মাত্র তিনটি হ্রস্বস্বর আছে: অ, ই, উ।

দীর্ঘস্বর

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় আমাদের শ্বাস বায়ুর ব্যবহার বেশি হয়, সেগুলোকে দীর্ঘস্বর বলা হয়। বাংলা ভাষায় মোট সাতটি দীর্ঘস্বর আছে: আ, ঈ, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ।

প্লুতস্বর

যে কোনো স্বরধ্বনিকে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চারণ করে যে ধ্বনির সৃষ্টি হয়, তাকে প্লুতস্বর বলা হয়। এটি তখনই সৃষ্টি হয় যখন আমরা গান করি বা কিছু দূরে থাকা কাউকে জোরে ডাকতে হয়।

ব্যঞ্জনধ্বনি

ব্যঞ্জনধ্বনি হলো সেই ধ্বনি যা উচ্চারণকালে ফুসফুস থেকে নিঃসারিত বায়ু মুখ দিয়ে বের হবার সময় পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাধা পায়, ঘর্ষণ পায়, অথবা সংকুচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, “প” ধ্বনিটি দুই ঠোঁটে বাধা পেয়ে উচ্চারিত হয়।

ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ

ব্যঞ্জনধ্বনি ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাধারণত এটি ৩ ভাগে ভাগ করা হয়:

  1. উচ্চারণ স্থান
  2. উচ্চারণ রীত
  3. ঘোষ ও অঘোষ

উচ্চারণ স্থান

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় উচ্চারণ স্থান অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রধান শ্রেণীগুলো:

  • ওষ্ঠ্য: ঠোঁট দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “প”, “ব”, “ম”)।
  • dent- দাঁত দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “ট”, “ঠ”, “ড”, “ঢ”)।
  • তালুয়ি: তালুর বিভিন্ন অংশ দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “ত”, “থ”, “দ”, “ধ”, “ন”, “ল”)।
  • মূর্ধন্য: মূর্ধন্য দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “র”)।
  • কণ্ঠ্য: কণ্ঠনালী দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “ক”, “খ”, “গ”, “ঘ”, “ঙ”)।
  • নাসিক্য: নাক দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “ম”, “ন”)।

উচ্চারণ রীতি

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় উচ্চারণ রীতি অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়:

  • ব্যঞ্জন: বাধাযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “প”, “ট”, “ক”)।
  • ঘর্ষণধ্বনি: ঘর্ষণযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “ফ”, “স”)।
  • নাসিক্যধ্বনি: নাকের মধ্য দিয়ে বাতাস বেরিয়ে আসার ফলে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “ম”, “ন”)।

ঘোষ-অঘোষ

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরযন্ত্রের কম্পন অনুসারেও বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়:

  • ঘোষ: স্বরযন্ত্র কম্পিত হয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “প”, “ট”, “ক”)।
  • অঘোষ: স্বরযন্ত্র কম্পিত না হয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি (যেমন: “ব”, “ড”, “গ”)।
এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা ধ্বনি এবং তার উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানলাম। আশা করি, ধ্বনি সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও আকর্ষণীয় তথ্য জানতে আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ুন। ধন্যবাদ!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.