সম্পদ হলো এমন একটি বিষয়, যা মানুষের চাহিদা পূরণে সহায়ক হয়। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উপাদান, মানুষের তৈরি সৃষ্টি কিংবা অন্য কোনো উপকরণ—সবই সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়।
এই পোস্টে সম্পদের বিভিন্ন সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, ও প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, সম্পদের এই আকর্ষণীয় দিকগুলো সম্পর্কে জানুন।
সম্পদ কাকে বলে?
সম্পদ হলো এমন উপকরণ যা মানুষের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। যখন কোনো জিনিস মানুষের অভাব পূরণ করে, তখন তাকে সম্পদ বলা হয়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সম্পদের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন।
অধ্যাপক জিমারম্যানের মতামত
জিমারম্যানের মতে, সম্পদ কোনো নির্দিষ্ট পদার্থ নয়, বরং যার মধ্যে কার্যকর শক্তি থাকে, সেটাই সম্পদ।
এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী
এনসাইক্লোপিডিয়া অব দ্য সোশ্যাল সায়েন্স অনুসারে, সম্পদ হলো পরিবেশের সেই উপাদান যা মানুষের প্রয়োজন পূরণে সাহায্য করে এবং সমাজের লক্ষ্য পূরণ করে।
সম্পদের বৈশিষ্ট্য
- কার্যকারিতা: যা মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারে, সেটাই সম্পদ। যেমন স্বর্ণের গহনা তখনই সম্পদ, যখন তা ব্যবহার করা হয়।
- সীমিত সরবরাহ: অনেক সম্পদ সীমিত, যেমন খনিজ সম্পদ।
- সুগম্যতা: সম্পদ ব্যবহার করতে হলে তা সহজে পাওয়া যেতে হবে, যেমন উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা দরকার।
- গ্রহণযোগ্যতা: সম্পদ সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, যাতে সবাই তা ব্যবহার করতে পারে।
- সর্বজনীন চাহিদা: সম্পদ তখনই সম্পদ যখন তা সবার চাহিদা মেটায়, যেমন পানি, বায়ু।
- উপযোগিতা: যা মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম, সেটাই সম্পদ।
- পরিবেশ মিত্রতা: সম্পদ ব্যবহার করতে হলে পরিবেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে।
- ক্ষয়শীলতা: দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে অনেক সম্পদ ফুরিয়ে যায়, যেমন খনিজ সম্পদ।
- প্রয়োগ যোগ্যতা: সম্পদের প্রয়োগ ক্ষমতা বেশি হলে সেটি বেশি কার্যকরী হয়।
সম্পদের শ্রেণীবিন্যাস
সম্পদকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা যায়:
উপাদান অনুসারে
- প্রাকৃতিক সম্পদ: যা প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায়, যেমন মাটি, পানি।
- মানবিক সম্পদ: যা মানুষ তৈরি করে, যেমন জনশক্তি।
- সাংস্কৃতিক সম্পদ: যা মানুষের সৃষ্টিশীলতার ফল, যেমন কারিগরি দক্ষতা।
জৈবিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে
- জৈব সম্পদ: যা জীব বা উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়, যেমন কয়লা।
- অজৈব সম্পদ: যা প্রাণহীন পদার্থ থেকে পাওয়া যায়, যেমন মাটি, পানি।
স্থায়িত্ব অনুসারে
- গচ্ছিত সম্পদ: যা ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে ফুরিয়ে যায়, যেমন ইস্পাত।
- অক্ষয় সম্পদ: যা ব্যবহারের পরও ফুরায় না, যেমন বাতাস, পানি।
- পুনর্ভব সম্পদ: যা ব্যবহারের পরে আবার পূরণ হয়, যেমন নদীর মাছ।
বন্টন অনুসারে
- সর্বত্র লভ্য সম্পদ: যা পৃথিবীর সব জায়গায় পাওয়া যায়, যেমন বাতাস।
- সহজলভ্য সম্পদ: যা সহজেই পাওয়া যায়, যেমন কৃষিজমি।
- দুষ্প্রাপ্য সম্পদ: যা খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেমন টিন।
- একমাত্র লভ্য সম্পদ: যা শুধুমাত্র একটি স্থানে পাওয়া যায়, যেমন ক্রায়োলাইট।
মালিকানা অনুসারে
- ব্যক্তিগত সম্পদ: যা একজন ব্যক্তির নিজের, যেমন জমি, বাড়ি।
- সামাজিক সম্পদ: যা সমাজের সবার জন্য, যেমন হাসপাতাল, স্কুল।
- জাতীয় সম্পদ: যা একটি দেশের মানুষের জন্য, যেমন খনিজ সম্পদ।
- সর্বজনীন সম্পদ: যা সবাই ব্যবহার করতে পারে, যেমন সমুদ্রের খনিজ সম্পদ।
প্রাপ্যতা অনুসারে
- বিকশিত সম্পদ: যা ক্রমাগত ব্যবহার করা হচ্ছে, যেমন জাপানের বিদ্যুৎ।
- সম্ভাব্য সম্পদ: যা ব্যবহারযোগ্য হলেও এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে না, যেমন কঙ্গোর জলবিদ্যুৎ শক্তি।