সমাজ শব্দটা শুনলেই মনে হয়, আমরা সবাই মিলে একসাথে থাকি, একে অপরের সাহায্য করি, ভালোবাসি। কিন্তু সমাজ আসলে কী? সমাজ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নগুলো আমাদের অনেকের মনেই ঘোরাফেরা করে।
এই পোস্টে, আমরা সমাজের সঠিক সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, এবং বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি, পুরোটা পড়লে আপনি সমাজ সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
সমাজ কাকে বলে?
সমাজ হল মানুষের মধ্যে একসঙ্গে বসবাস এবং সম্পর্কের একটি সহজ এবং স্বাভাবিক ব্যবস্থা। এখানে মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে, একসঙ্গে থাকে এবং বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে সহযোগিতা করে। সংস্কৃতি, রীতি, নিয়ম, এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজ পরিচালিত হয়।
সমাজের সঠিক সংজ্ঞা
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নিজের প্রয়োজনের জন্য সমাজ গড়ে তুলেছে। একসঙ্গে বাস করা এবং নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মানুষ দলবদ্ধ হয়েছে। প্রথমদিকে, মানুষ শিকার করে জীবনযাপন করত, তবে সময়ের সাথে সাথে কৃষি, প্রযুক্তি, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সমাজকে আরও উন্নত করেছে। আজকের সমাজ অনেক বেশি জটিল এবং বৈচিত্র্যময়।
সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ
- পারস্পরিক সম্পর্ক: সমাজে মানুষ একে অপরের সাথে পরিবার, বন্ধুত্ব, কাজ, ধর্ম, এবং রাজনীতির মাধ্যমে সম্পর্কিত থাকে।
- সংস্কৃতি: সমাজের মানুষের সাধারণ রীতিনীতি, মূল্যবোধ, এবং আচরণ থাকে।
- সামাজিক কাঠামো: বিভিন্ন স্তর ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা সমাজ নিয়ন্ত্রিত হয়।
- সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: আইন-কানুন ও নিয়ম সমাজকে সঠিক পথে রাখে।
- পরিবর্তনশীলতা: নতুন ধারণা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তিত হয়।
সমাজের গুরুত্ব
- প্রয়োজন পূরণ: সমাজ মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।
- নিরাপত্তা: সমাজ মানুষকে সুরক্ষা দেয়।
- সামাজিকীকরণ: সমাজ মানুষকে রীতি-নীতির সাথে পরিচিত করে তোলে।
- ব্যক্তিগত বিকাশ: সমাজ মানুষের ব্যক্তিগত উন্নতিতে সহায়তা করে।
- সামাজিক উন্নয়ন: সমাজ উন্নয়নের পথ তৈরি করে।
সমাজের বিভিন্ন প্রকারভেদ
শিকার ও সমাবেশ কেন্দ্রিক সমাজ: প্রাচীন সমাজ শিকার এবং বনজ ফল সংগ্রহের মাধ্যমে জীবনযাপন করত। প্রযুক্তির অভাব থাকায় মানুষ হাতের সাহায্যে শিকার করত এবং ব্যক্তিগত সম্পদের অভাব ছিল। এই সমাজে মানুষ সমান সম্পদ ভোগ করত, যাকে প্রাচীন সাম্যবাদী সমাজ বলা হয়।
উদ্যানকেন্দ্রিক সমাজ: এই সমাজ শিকার থেকে উৎপাদনের দিকে চলে আসে। এখানে মানুষ গাছের ডাল থেকে নতুন গাছ উৎপাদন করত। এই সমাজ কৃষিকাজের ধারণা তৈরি করে এবং স্থায়ী বসতির দিকে সমাজকে এগিয়ে নেয়।
পশু পালন কেন্দ্রিক সমাজ: শিকার থেকে পশু পালন শুরু হয় যখন মানুষ বুঝতে পারে পোষা পশু তাদের নিয়মিত খাদ্য দিতে পারে। এইভাবে মানুষ পশু শিকার থেকে পশু পালনে এগিয়ে যায়।
কৃষি সমাজ: লাঙ্গলের আবিষ্কার কৃষিকাজকে আরও সহজ করে তোলে এবং মানুষ স্থায়ী বসবাস শুরু করে। এই সময়ে মানুষ যাযাবর জীবন ত্যাগ করে।
শিল্পনির্ভর সমাজ: শিল্প বিপ্লবের ফলে সমাজে বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটে। এর ফলে সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, গণতন্ত্র, এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা জনপ্রিয় হয়।
বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা
বাংলাদেশের সমাজ বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, এবং সংস্কৃতির মানুষ এখানে বসবাস করে। গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ মানুষ বাস করে এবং কৃষি তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। এখানে পরিবারের গুরুত্ব খুবই বেশি এবং বেশিরভাগ পরিবার বৃহৎ। ধর্ম এখানে সমাজের বড় অংশ এবং ইসলাম প্রধান ধর্ম হলেও অন্য ধর্মাবলম্বীরাও রয়েছে।
বাংলাদেশের সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ
- গ্রামীণ প্রধান: অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং কৃষি তাদের প্রধান জীবিকা।
- পরিবার: বর্ধিত পরিবার ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলেও একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে।
- ধর্ম: ইসলাম প্রধান ধর্ম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, এবং খ্রিস্টানও রয়েছে।
- শ্রেণী: সমাজে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য স্পষ্ট।
- লিঙ্গ: পুরুষপ্রধান সমাজ হলেও নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে।
- শিক্ষা: শিক্ষার হার বাড়ছে, তবে মানসম্মত শিক্ষা এখনো সহজলভ্য নয়।
- অর্থনীতি: কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্প ও সেবা খাতে অগ্রসর হচ্ছে।
- রাজনীতি: গণতন্ত্রের চর্চা রয়েছে, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনো চ্যালেঞ্জ।