আপনারা কি জানেন, সাধু ভাষা বাংলা সাহিত্যের একটি প্রাচীন এবং মূল্যবান অংশ? এই ভাষার মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সাহিত্যিক সৃষ্টি প্রকাশ পায়। সাধু ভাষা কি এবং কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ, তা জানতে চান?
আজকের ব্লগে আমরা সাধু ভাষার গূঢ় রূপ এবং এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। আসুন, একসাথে এই ভাষার জাদুকরী জগতে প্রবেশ করি এবং এর সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করি।
সাধু ভাষা কাকে বলে
সাধুভাষা হল একটি প্রাচীন বাংলা ভাষা, যেখানে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ সম্পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ: "উহারা ঘুমাইয়া রহিয়াছে" এবং "তাহারা খেলিতেছে"। সাধুভাষা বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা, যা মূলত গদ্য সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়।
ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সাধারণ গদ্য সাহিত্যে ব্যবহৃত বাংলা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে।"
সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য
প্রথমতঃ সাধু ভাষায় সমাপিকা ও অসমাপিকা, এই দুই প্রকার ক্রিয়াপদের পূর্ণ রূপ ব্যবহৃত হয়। এতে বেশ কিছু সর্বনাম পদের পূর্ণ রূপও ব্যবহৃত হয়, যেমন: আসিতেছে, করিয়াছিলাম, দেখিয়াছি, বলিয়া থাকিব, শুনিতাম, ইহা, উহা, তাহারা, যাহার ইত্যাদি।
দ্বিতীয়তঃ সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের আধিক্য দেখা যায়। যেমন: গৃহ, ভবন, গগন, বাটী, তৃণ, ঘৃত, মৃগয়া, বৎস, হস্ত, পদ, বৃক্ষ, কুজ্ঝটিকা, মৃত্তিকা ইত্যাদি।
তৃতীয়তঃ সাধু ভাষায় অনুসর্গগুলির পূর্ণ রূপ দেখা যায় এবং কিছু তৎসম অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়। যেমন: হইতে, চাহিয়া, থাকিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি।
চতুর্থতঃ সাধু ভাষা অনেকটা সংস্কৃত ভাষার অনুসরণে গঠিত হওয়ার কারণে এই ভাষার ধ্বনিঝংকার অপেক্ষাকৃত বেশি।
পঞ্চমতঃ সন্ধিবদ্ধ ও সমাসবদ্ধ শব্দের ব্যবহার সাধু ভাষায় তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়।
ষষ্ঠতঃ সাধু ভাষায় সংস্কৃত সংখ্যাবাচক শব্দের কিছু কিছু ব্যবহার দেখা যায়। যেমন: দ্বাদশ, চতুর্দশ, পঞ্চদশ ইত্যাদি।
সপ্তমতঃ সাধু ভাষা মানুষের মুখে প্রচলিত ভাষার উপর নির্ভর করে গঠিত হয়নি, তাই এই ভাষা অপেক্ষাকৃত দুর্বোধ্য।
সাধু ভাষা আমাদের বাংলা ভাষার এক অনন্য রূপ, যা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করে। আশা করি, এই পোস্টটি আপনার জন্য নতুন কিছু শিখতে সহায়ক হয়েছে। আরও অনেক আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু পড়তে, দয়া করে আমার ওয়েবসাইট স্টাডিটিকা.কম-এ আরও পোস্ট দেখুন।