অনুপাত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধারণা। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে আমরা দুটি সমজাতীয় রাশির তুলনা করতে পারি। এই তুলনাটি করতে আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যা বা অংশের মাধ্যমে রাশিগুলোকে প্রকাশ করি।
অনুপাতের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে এবং তা বোঝার মাধ্যমে আমরা গণিতের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারি। আসুন, অনুপাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
অনুপাত কাকে বলে?
যে সংখ্যা দ্বারা একই জাতীয় বা একই এককবিশিষ্ট্য দুইটি রাশির মধ্যে তুলনা করাকে, অর্থাৎ, একটি অপরটির কতগুণ বা কত অংশ তা প্রকাশ করা হয়, তাকে অনুপাত বলে।
অনুপাত হচ্ছে দুটি সমজাতীয় রাশির তুলনা, যা একটি ভগ্নাংশের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এটি বুঝাতে বোঝায় যে একটি রাশি অপরটির তুলনায় কত গুণ বা অংশ। এই ভগ্নাংশটিই অনুপাত (Ratio) হিসেবে পরিচিত।
প্রথমত, অনুপাত একটি ভগ্নাংশ, এবং এটি কোন নির্দিষ্ট একক নেই। গাণিতিকভাবে, ‘ : ’ চিহ্নটি অনুপাত বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন, ১২ : ১১।
যদি x এবং y দুইটি রাশি হয়, তাহলে তাদের অনুপাতকে x : y = x/y হিসেবে প্রকাশ করা হয়। x এবং y অবশ্যই সমজাতীয় এবং একই এককে প্রকাশিত হতে হবে।
অনেক সময় আমরা আনুমানিক পরিমাপ করতে অনুপাত ব্যবহার করি। যেমন, দুপুর ৩ টায় রাস্তায় যে পরিমাণ গাড়ী থাকে, বিকেল ৫ টায় তার দ্বিগুণ গাড়ী থাকে। এখানে গাড়ীর প্রকৃত সংখ্যা জানা না থাকলেও অনুপাত বের করা যায়। আবার আমরা বলি, আমাদের স্কুলের কক্ষটির আয়তন আমার ঘরের আয়তনের তিনগুণ হবে। এখানে ঘরের সঠিক আয়তন জানার প্রয়োজন নেই। বাস্তব জীবনে এরকম অনেক ক্ষেত্রেই আমরা অনুপাতের ধারণা ব্যবহার করি।
অনুপাতের বৈশিষ্ট্য
অনুপাত হলো ভাগের একটি সংক্ষিপ্ত রূপ।
অনুপাত লিখতে রাশিগুলিকে একই এককে প্রকাশ করতে হয়।
যদি দুটি রাশি 0 ছাড়া অন্য কোনো একসঙ্গে সংখ্যা দিয়ে গুণ বা ভাগ করা হয়, তবে অনুপাতের মান অপরিবর্তিত থাকে।
অনুপাত হলো একটি বিশুদ্ধ সংখ্যা, যার কোনো নির্দিষ্ট একক নেই।
ভিন্ন জাতীয় রাশির অনুপাত তৈরি করা সম্ভব নয়।
অনুপাতের প্রকারভেদ (Types Ratio)
অনুপাত সাধারণত ৭ প্রকার হয়ে থাকে। যেমন:
১। সরল অনুপাত
যদি কোনো অনুপাতে দুটি রাশি থাকে, তাকে সরল অনুপাত বলা হয়। এখানে প্রথম রাশিকে পূর্ব রাশি এবং দ্বিতীয় রাশিকে উত্তর রাশি বলা হয়। যেমন, 5 : 7 একটি সরল অনুপাত। এখানে 5 হলো পূর্ব রাশি এবং 7 হলো উত্তর রাশি।
২। মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত
যদি একাধিক সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিগুলোর গুণফল এবং উত্তর রাশির গুণফল নেওয়া হয়, তবে সেটিকে মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৩ : ৫ এবং ৫ : ৭, এই দুইটি সরল অনুপাতের মিশ্র অনুপাত হবে (৩ × ৫) : (৫ × ৭) = ১৫ : ৩৫।
৩। ধারাবাহিক অনুপাত
যদি দুটি অনুপাতের মধ্যে প্রথম অনুপাতের উত্তর রাশি এবং দ্বিতীয় অনুপাতের পূর্ব রাশি সমান হয়, তাকে ধারাবাহিক অনুপাত বলা হয়। উদাহরণ, ২ : ৫ ও ৫ : ৭। এখানে ধারাবাহিক অনুপাত হবে ২ : ৫ : ৭।
৪। বহুরাশিক অনুপাত
তিন বা তার বেশি রাশির অনুপাতকে বহুরাশিক অনুপাত বলা হয়।
৫। গুরু অনুপাত
যদি কোনো সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি উত্তর রাশি থেকে বড় হয়, তাকে গুরু অনুপাত বলা হয়। উদাহরণ, ৩ : ২, ৬ : ৫ ইত্যাদি।
৬। লঘু অনুপাত
যদি সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি উত্তর রাশির থেকে ছোট হয়, তাকে লঘু অনুপাত বলা হয়। উদাহরণ, ২ : ৫, ৪ : ৭ ইত্যাদি।
৭। একক অনুপাত
যদি পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশি সমান হয়, তাকে একক অনুপাত বলা হয়।
৮। ব্যস্ত অনুপাত
কোনো সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিকে উত্তর রাশি এবং উত্তর রাশিকে পূর্ব রাশিতে রূপান্তর করে যে অনুপাত পাওয়া যায়, সেটাকে পূর্বের অনুপাতের ব্যস্ত অনুপাত বলা হয়। উদাহরণ, ১৩ : ৫ এর ব্যস্ত অনুপাত হবে ৫ : ১৩।
এই পোস্টে অনুপাতের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আরও সহজ ভাষায় গাণিতিক ধারণা ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে, আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ুন। StudyTika.com-এ আরও অনেক শিক্ষামূলক বিষয় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!