সালাতুল হাজতঃ জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই আর সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। কখনো দুশ্চিন্তা, কখনো অভাব, কখনো মানসিক চাপ আমাদের গ্রাস করে। এমন সময়ে, আমরা অনেকেই হতাশায় ভুগি। কিন্তু ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, এই সব সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় আল্লাহর প্রতি ভরসা এবং নামাজের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই বিষয়ে রয়েছে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। এই পোস্টে, আমরা আলোচনা করেছি সালাতুল হাজত নামাজের গুরুত্ব, নিয়ম এবং দোয়া সম্পর্কে। আশা করি, এটি আপনাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আপনার সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে।
সালাতুল হাজত
মানুষের জীবনে নানা সময়ে বিপদ, অভাব বা প্রয়োজন দেখা দেয়। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, এমন সময়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার জন্য নামাজ আদায় করা উচিত। কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কিরাম কোনো সমস্যায় পড়লে সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতেন।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত
সালাতুল হাজতের জন্য আরবিতে নিয়ত করা বাধ্যতামূলক নয়। নিজের ভাষায়ও নিয়ত করা যেতে পারে। নিচে আরবি ও বাংলা উভয় ভাষায় নিয়ত দেয়া হলো।
আরবি নিয়ত:
نَوَيُتْ اَنْ اصَّلي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتيْ صَلّاه الحاجَه سَنُّهُ رَسول اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا الى جهَه اَلْكَعْبه الشَّريفُه اللَّهُ اكَّبِرْ
বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াতুআন উসল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকাতাই সলাতিল হাজাতি সুন্নাতু রসুলিল্লাহি তা’য়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি "আল্লাহু আকবার।"
বাংলায়:
আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজতের নিয়ম অন্যান্য নফল নামাজের মতোই। নিয়তে সালাতুল হাজতের কথা উল্লেখ করতে হবে। সাধারণত দুই রাকাত করে এ নামাজ পড়া হয়। তবে চার রাকাত বা বারো রাকাত আদায়ের কথাও পাওয়া যায়।
সালাতুল হাজত নামাজের পর দোয়া
সালাতুল হাজত নামাজ শেষে নিম্নের দুটি দোয়ার মধ্যে যেকোনোটি পাঠ করা যায়।
১ম দোয়াটি হলঃ-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ الْحَلِيْمُ الْكَرِيْمُ سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ الْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ. اَسْأَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيْمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلاَمَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ لاَتَدَعْ لَنَا ذَنْبًا إِلاَّ غَفَرْتَهُ وَلاَ هَمًّا إِلاَّ فَرَّجْتَهُ وَلاَ حَاجَةً هِىَ لَكَ رِضًا إِلاَّ قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণঃ- লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল হালীমুল কারীমুন সুবহা-নাল্লাহি রাব্বিল আ’রশীল আ’জীমি, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি রাব্বিল আ’লামীন, আস্আলুকা মূজিবা-তি রাহমাতিকা ওয়া আ’যাইমা মাগ্ফিরাতিকা, ওয়াল গনীমাতা মিন্কুল্লি বিররিন, ওয়াস্ সালা-মাতা মিন্ কুল্লি ইসমি, লা-তাদা’লানা-জাম্বান ইল্লা গফারতাহু অলা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু অলাহাজাতা হিয়ালাকা রিদন ইল্লা কাদাইতাহা-ইয়া-আরহামার রা-হিমী-ন।
অর্থঃ- আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি ধৈর্যশীল, মহামহিমান্বিত। আমি মহান আরশের প্রভু আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। হে পরম দয়ালু ও করুণাময়, আমি তোমার নিকট তোমার রহমত লাভের কারণসমূহ, তোমার ক্ষমালাভের সংকল্পরাজি, প্রত্যেক সৎ কাজের সার এবং অসৎ কাজ হতে শান্তি প্রার্থনা করছি। তোমার ক্ষমা ব্যতীত আমার কোন অপরাধকে তুমি ছেড়ে দিও না, আমার বিপদকে দূরবীত করে দাও, এবং আমার সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করে দাও, যা তোমার সন্তোষ লাভের কারণ হয়। (তিরমিজি/ ইবনে মাজাহ)
২য় দোয়াটি হলঃ-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ ”
উচ্চারণঃ- সুবাহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা অতাবারকাসমুকা ওয়ালাইলাহা গইরুক।
অর্থঃ- হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসা জড়িত পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, তোমার নাম অনেক বরকতমণ্ডিত হোক, তোমার মহানত্ব সমুন্নত হোক। আর তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই।
পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা
يٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ
হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
(সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)
পবিত্র হাদিসের বার্তা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ আউফা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যার কোনো প্রয়োজন থাকে, সে যেন উত্তমরূপে ওযু করে, দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং তারপর আল্লাহর প্রশংসা ও নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করে একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করে।"
হযরত হুজাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোনো বিষয়ে চিন্তিত হলে কিছু নফল নামাজ আদায় করতেন।(আবু দাউদ শরীফ)
সালাতুল হাজতের ফজিলত
যখন কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলে প্রয়োজন পূর্ণ হয়। উক্ত নামাজ শেষে গুনাহের মাফ এবং প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করা উচিত।
সালাতুল হাজতের জন্য সাধারণত দুই রাকাত পড়া হয়। তবে চার রাকাত বা বারো রাকাত আদায়ের কথাও হাদিসে পাওয়া যায়।
সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়
সালাতুল হাজতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। দিনে বা রাতে, সুবিধামত সময়ে (তবে নিষিদ্ধ সময় বাদে) এ নামাজ আদায় করা যায়। আপনার আর্থিক সমস্যা, মানসিক চাপ বা যেকোনো প্রয়োজনের জন্য এটি পড়া যেতে পারে।
সালাতুল হাজত সম্পর্কিত FAQ
সালাতুল হাজত সম্পর্কিত FAQ
পরিসংহার
সালাতুল হাজত আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। নিয়ম মেনে এই নামাজ আদায় করলে আল্লাহ আমাদের প্রয়োজন পূরণ করেন। ইসলামের শিক্ষা মেনে জীবনের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য এই নামাজে আশ্রয় নিন।
আপনার যদি আরও ইসলামিক বিষয় বা অন্যান্য শিক্ষামূলক তথ্য জানতে ইচ্ছা হয়, তবে আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com-এ আরো পোস্ট পড়ুন। জ্ঞান অর্জনের এই যাত্রায় আমরা সবসময় আপনার